[চার]
বাইরের প্রচন্ড শোরগোলের মধ্যে হঠাত আদ্রিতার মত গলা শোনতে পেয়ে ছুটে গেলেন রায়হান সাহেব। নিচে গিয়েই দেখেন ৫/৬ বছরের উস্কশুস্ক চেহারার ছেলেটিকে চুল ধরে টেনে হিঁচড়ে যাচ্ছে তাই ভাবে বকে যাচ্ছে তারই মেয়ে আদ্রিতা। আর চারপাশে তো রীতিমত ভিড় জমে গেছে যেন এক মনোরম সার্কাস চলছে! রায়হান সাহেব দ্রুত এগিয়ে ছেলেটিকে উদ্ধার করে দারোয়ান ডেকে ভিতরে পাঠালেন। আর আদ্রিতাকে থামিয়ে দিয়ে সাথে করে লিফটে উঠে গেলেন। তারপর ড্রাইভারকে দিয়ে এক সেট নতুন জামাকাপড় আনিয়ে আর পেট ভরে খাইয়ে দিয়ে ছেলেটিকে বিদায় করলেন।
এখন সন্ধ্যা। এই রোযার মাসে ঘরের বাকিদের এই মুহূর্তে ইফতার করার কথা। কিন্তু আদ্রিতার এসব একদমই ভাল লাগে না আর রোযাও বাবা রাখতে দেয় না। তাই এই সময়টা সে নিজ রুমে এটা সেটা করেই কাটিয়ে দেয়। তবে আজ একটু বেশিই বোরিং লাগছে তার। হাত বাড়িয়ে টেবিলের উপর থেকে আইফোন-৬ টা নিল। নাহ কারোর নাম্বারেই কল ঢুকছে না। মেজাজ খারাপের মাত্রাটা আরও কয়েকগুণ বেড়ে গেল। ভাবছে ফোনটাকে এই মুহূর্তে আছাড় মেরে ভাঙতে পারলে খুব শান্তি লাগত। সাথে সাথেই আবার কারেন্টও চলে গেল!
দশ মিনিটের মত হয়ে গেছে অথচ জেনারেটরটা এখনো ছাড়ছে না! 'আশ্চর্য বাড়ির মানুষগুলা সব অনুভূতিহীন যন্ত্র হয়ে গেল নাকি' বলতে বলতে নিজেই করিডোরের দিকে হাঁটা দিল। ড্রয়িং রুমে ডুকেই তো আদ্রিতার চোখ কপালে উঠে গেল। সে বড় বড় চোখ করে সবার দিকে তাকিয়ে আছে। অবাক হবেই বা না কেন? সবাই যে ডজন খানেক মোমবাতি জ্বেলে আর মস্ত একটা কেক নিয়ে তার অপেক্ষাতেই দাঁড়িয়ে আছে।
[পাঁচ]
কেক কাটা পর্ব শেষ। রায়হান সাহেব দক্ষিণের বারান্দায় পাতা ইজি চেয়ারটায় উদাস মনে বসে কি যেন ভাবছেন। তখনই সেখানে গিয়ে উপস্থিত হয় আদ্রিতা।
- কি ব্যাপার আম্মু... কিছু বলবে? তার আগে বল তো আজকের বার্থডে সারপ্রাইজটা কেমন লাগল?
- হু ছিল মোটামুটি। আমাকে বলে রাখলেই পারতে। এটলিস্ট ফ্রেন্ডদের আসতে বলতাম।
- স্যরি মা। রোজার মাস তো। তাই একটু ছোট করে নিজেরাই সেরে ফেললাম।
- হু সব না হয় বুঝলাম কিন্তু ঐ ড্রাইভার আর দারোয়ানকে ওখানে ডাকার কি দরকার ছিল??
- কেন কি হয়েছে তাতে?
- ডিসগাস্টিং।
- আশ্চর্য এখানে ডিসগাস্টিং এর কি হল? আর বলত বিকেলবেলা আসলে কি হয়েছিল? তুমি বাচ্চা ছেলেটাকে এইভাবে মারতেছিলা কেন?
- মারব না তো কি করব? বলতেসি ফুল নিব না তারপরও বারবার জ্বালিয়ে মারছিল। ছোটলোকের বাচ্চা একটা।
- আদ্রিতা মাইন্ড ইউর ল্যাঙ্গুয়েজ!
কথা শেষ করার আগেই আদ্রিতা হনহন করে চলে গেল। রায়হান সাহেব বিস্ময়ে হতবাক। এতদিনে মেয়েকে তিনি এই শিক্ষা দিয়েছেন!
_____________________________________________________________________
......চলবে। তিন পর্বের আজ দ্বিতীয় পর্ব প্রকাশিত হল। তৃতীয় ও শেষ পর্ব আসছে।
প্রথম পর্ব লিঙ্কঃ বাবার মেয়ে 'আদ্রিতা' (পর্ব-০১)
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৪