somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি বাঘের আত্মকাহিনী (১)

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার নাম চম্পা। সেই ছোটবেলা থেকে আছি এই বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল সার্কাসে। সার্কাসের সাথে সাথে দেশের আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়াই, আর খেলা দেখিয়ে মানুষকে মুগ্ধ করি। তবে বাঘ বলে কথা, আমাকে মানুষের মত এমন সাহসী আর বুদ্ধিমান প্রাণীও যমের মত ভয় পায়। তাই সার্কাসের আর সব প্রাণী বাইরে থাকলেও আমাকে থাকতে হয় লোহার শিকের খাঁচায়। আমাদের বংশের নামকরণ করা হয়েছিল সেই ব্রিটিশ আমলে "দি রয়েল বেঙ্গল টাইগার" তবে ব্যঘ্রগত ভাবে সবার আলাদা আলাদা নাম তো আর সব বাঘের হয় না। আমার বেলাতেই শুধু ব্যতিক্রম। সার্কাসের মালিক আমার নাম দিয়েছিলেন চম্পা। সেই থেকে আমাকে চম্পা বলেই ডাকে সকলে। আমার দায় দায়িত্ব, খাবার দাবার আর খেলা দেখানো - সবকিছুরই ভার রিং মাস্টার নন্দবাবুর কাঁধে। তিনিই আমাকে মাংস খাওয়ান, স্নান করান আবার সার্কাসের স্টেজে তুলে খেলা দেখান। খেলা দেখে ছেলে মেয়ে বুড়ো সবাই মুগ্ধ হয়ে হাততালি দেয়। তখন আমার খুব ভাল লাগে। সেদিন দুপুরের শো এর সময় এক বেয়াদব ছেলে আমাকে নিয়ে টিপ্পনী কাটছিল আমি দেখতে নাকি বিড়ালের মত। একথা শুনে এমন এক গর্জন করেছিলাম যে ছেলেটা ভয়ে গ্যালারী থেকে উল্টে পড়ে গিয়েছিল।
খুলনা শহরে এসেছি সপ্তাহখানেক হল। মানুষের মাঝে থাকতে থাকতে মানুষের অনেক কথা বুঝতে পারি। তবে কিছু কিছু ব্যাপার একেবারেই বুঝতে পারিনা। সেদিন রাতের শো এর পর হয়েছে কি, আমি খাঁচায় শুয়ে আছি - এমন সময় আমাদের সার্কাসের একটা মেয়ে, নাম তার পারুল, বেরিয়ে এলো স্টেজ থেকে, তার তাঁবুর দিকে যাচ্ছে, হঠাৎ পাশ থেকে জোকার মশাই এসে পারুলের হাত ধরে গালটা চেটে দিল। অমনি পারুল জোকারের গালে ঠাস করে একটা চড় মেরে দিল। ঘটনার কিছুই বুঝলাম না, অথচ কয়েকদিন আগে নন্দবাবু এই পারুলেরই গাল চাটছিল তখন পারুল কী খুশি! সেও নন্দবাবুর দাড়ি চাঁচা গাল আদর করে চেটে দিয়েছিল। এই মানুষ জাতটা যে কী তা বুঝতে পারা মনে হয় বাঘ জাতির পক্ষে সম্ভব নয়। তবে মানুষের এই গাল চাটাচাটি দেখে আমার মনের মধ্যে কেমন যেন করে।
খুলনা শহরে খেলা দেখানো শেষ করে আমাদের সাজ সরঞ্জাম সব লঞ্চে তোলা হচ্ছে। কর্তাবাবু বলছেন এবার বরিশাল যাওয়া হবে। সব মালপত্র তোলা শেষ হলে আমাকে খাঁচাসমেত তোলা হল লঞ্চের ছাদে। লঞ্চ বরিশাল রওয়ানা দিল।
খালাসীরা বলাবলি করছে লঞ্চ নাকি সুন্দরবনের পাশ দিয়ে মংলা হয়ে যাবে।
গভীর রাত। আকাশে চাঁদের আলো। লঞ্চের শব্দ ভেদ করে অনেক দূর থেকে ভেসে এলো একটা বাঘের গর্জন। খুব ক্ষীণ গর্জন, কিন্তু তাতেই আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। বুঝতে পারলাম সুন্দরবনের আশে পাশে কোথাও আছি। মানুষের মুখে শুনেছি আমাদের আদি নিবাস নাকি সুন্দরবনেই। বাঘের গর্জন শুনে খাঁচায় মন টিকছে না। খাঁচার একটা শিক লক্ষ্য করে দিলাম এক লাফ। শিকটা আজ বাঁকা হয়ে গিয়েছিল লঞ্চে তোলার সময় লঞ্চের একটা থামে ধাক্কা লেগে। তারপর ওটা নড়বড়ে হয়েই ছিল। আমার ধাক্কা খেয়ে ওটা আর টিকলো না। মড়াৎ করে খুলে পড়ে গেল। আমি আর দ্বিধা না করে খাঁচা থেকে বেরিয়ে এসে লাফিয়ে পড়লাম নদীর পানিতে। চাঁদের আলোয় দূরে নদীর ধারে গভীর বন দেখা যাচ্ছে। সেদিকেই সাঁতার কাটতে লাগলাম। সাঁতার আমাদের জন্মগত অভ্যাস। জীবনে কোনদিন সাঁতার কাটিনি, তবুও দিব্যি সাঁতার কেটে কেটে একসময় তীরে এসে উঠলাম। পিছন ফিরে দেখলাম চলে যাওয়া লঞ্চের পিছনের আলো। অনেক দূরে চলে গেছে লঞ্চ। সাথে করে নিয়ে গেছে আমার এক দুর্বিসহ ঘৃণ্য বন্দী জীবন। আজ আমি মুক্ত। ফিরে চলেছি আমার আদি নিবাস সুন্দরবনে। যেখানে আছে আরো অনেক বাঘ, তাদের সাথে মিলে মিশে আমি কাটাবো এবার স্বাধীন জীবন।
সার্কাসের মানুষগুলোর কথা মনে পড়ল একবার। তারা সকালে উঠে যখন দেখবে আমি নেই, খাঁচা ভেঙ্গে পালিয়েছি, তখন তাদের অবস্থা কি হবে ভেবে আমার খুব হাসি এলো। তবে আমরা বাঘ জাতি, বেহায়া মানুষের মত হ্যা হ্যা হ্যা করে হাসতে পারি না হায়েনার মত। আমরা হাসি রাজকীয় ভাবে।

(আগামীতে সমাপ্য)
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৫৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×