পোড়াদহ জংশনের তিন নং প্ল্যাটফর্মের শেষ প্রান্তে একটা ডেডবডি শুইয়ে রাখা আছে চাটাই দিয়ে মুড়ে। লাশের পায়ের পাতা চাটাইতে ঢাকা পড়ে নি, একটু বের হয়ে আছে। দুজন জিআরপি পুলিশ লাশটা পাহারা দিচ্ছে। এক পুলিশ ক্লান্ত ভঙ্গীতে একটা হাই তুলে বলল, ইব্রাহিম, তুই বডি পাহারা দে আমি এক কাপ চা খেয়ে আসি। প্রথম পুলিশ চায়ের স্টলে চলে যেতেই ইব্রাহিম কনস্টেবল ভিতু শিয়ালের মত একবার লাশের দিকে তাকালো আর একবার রেললাইনের দূর দিগন্তের দিকে তাকালো। ট্রেন আসছে কিনা তাই যাচাই করলো নাকি ভয় তাড়ানোর জন্য মনটাকে অন্যদিকে ফেরানোর চেষ্টা করছে বোঝা গেল না। এতক্ষণ হাবিলদার সাথে ছিল, ভয় পায় নি সে, এখন বড় একা একা লাগছে তার।
একটু আগে সন্ধ্যা নেমেছে। লাশটা পাওয়া গেছে জংশন থেকে খানিকটা দূরে রেললাইনের ধারে আজ বিকেলে। সম্ভবত চলন্ত ট্রেন থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছে ২৫ -৩০ বছর বয়সী লোকটার। রেললাইনের ধারে লাশ, তাই আইনত এটা রেল পুলিশের এখতিয়ারে পড়ে। ষ্টেশনের রেল পুলিশেরা লাশ উঠিয়ে এনে রেলওয়ে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল। ততক্ষণে লোকটা মরে গেছে সেই কখন। এখন চাটাই মুড়িয়ে লাশটা প্ল্যাটফর্মের প্রান্তে ফেলে রেখেছে। রাতের গোয়ালন্দ লোকালে করে কুষ্টিয়া পাঠাবে ময়না তদন্তের জন্য। ইব্রাহিম পুলিশের লোক হলেও মরা মানুষকে খুব ভয় পায়। জ্যান্ত মানুষ নিয়ে তার কোন ভয় নাই, ওরকম দুচার হালি জ্যান্ত মানুষকে সে পিটিয়ে আধ্মরা করে দিয়েছে জীবনে। মরা মানুষের সামনে দাঁড়ালে খালি মনে হয় এই বুঝি লাশটা নড়ে চড়ে উঠে বসবে। টেনশনের চোটে তার পেচ্ছাপ পেয়ে গেল। একটু এদিক ওদিক তাকিয়ে সে প্ল্যাটফর্মের পিছনের দিকের কাঁটাতারের বেড়ার ধারে প্যান্টের চেন খুলে দাঁড়িয়ে গেল। তলপেট খালি করে ফিরে এসে লাশের সামনে একবার টহল দিল। একটা কুকুর লাশটার আশেপাশে ঘুরাঘুরি করছিল, এবার লাশের উদাম পায়ের কাছে এসে গন্ধ শুঁকলো, তারপর যেন প্রচণ্ড ভয় পেয়ে ঘেউ করে চিৎকার দিয়ে পালিয়ে গেল। ইব্রাহিম কনস্টেবল কুকুরের চিৎকারের ধরণে আঁতকে উঠে লাশের দিকে ভয়ে ভয়ে আরেকবার তাকালো আর তাকিয়েই বুঝলো ভুল যা করার করে ফেলেছে সে। ভয়ে তার দৃষ্টি ভ্রম শুরু হয়ে গেছে। আগেও এরকম হয়েছিল তার। মনে হচ্ছে লাশের উদাম পা দুটো যেন নড়ে উঠলো। ভয়ে ইব্রাহিমের গলা শুকিয়ে কাঠ। হাঁটু ভেঙ্গে পড়ে যাবে মনে হচ্ছে। এবার লাশের দেহটাও যেন নড়ে উঠলো। ইব্রাহিম আর থাকতে পারলো না, ভয়ঙ্কর এক আর্ত চিৎকার দিয়ে ছুটল প্ল্যাটফর্মের চায়ের স্টলের দিকে। রিপোর্ট করবে চা খেতে যাওয়া হাবিলদারকে।
প্ল্যাটফরমে মানুষজন তেমন নেই। স্থানীয় দুএকজনকে ইতস্তত ঘোরাফেরা করতে দেখা যাচ্ছে। দুএকজন চা খাচ্ছে। প্রকৃত যাত্রী অতি নগন্য। ইব্রাহিম কনস্টেবল হাঁপাতে হাঁপাতে হাবিলদারকে লাশ নড়ার খবর দিচ্ছে।
টুটুল একটা চাদর বিছিয়ে শুয়েছিল ওভারব্রিজের উপর। কাঁধের ছোট ট্র্যাভেল ব্যাগটাকে কায়দা করে বালিশ বানিয়ে মাথার নীচে দিয়েছে। সে ঢাকা থেকে একটা ভর্তির ইন্টারভিউ দিয়ে বাড়ি ফিরছে। ইন্টারভিউ খুব ভাল হয়েছে। পোড়াদহ জংশনে ট্রেন বদল করার জন্য অপেক্ষা করছে। প্ল্যাটফর্মে মশার কামড় আর কয়েকটা দুষ্টু মেয়ের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে ওভারব্রিজের উপর এসে শুয়েছে। মেয়েগুলো মশার চাইতে বেশী জ্বালাচ্ছিল। তারা আবার চোখে কাজল, ঠোঁটে টকটকে লাল লিপস্টিক লাগিয়েছে, ভাবছে না জানি কী সুন্দরী লাগছে তাদের। আসলে লাগছে বাঁদরের মত। তাদের পাড়ার নিপা এরকম কাজল আর লিপস্টিক লাগালে পরীর মত লাগে। একই জিনিসে সবাইকে মানায় না। কাউকে লাগে হেমা মালিনী আবার কাউকে বাঁদর।
ট্রেন আসতে দেরী আছে, তাই একটু আরাম করে নিচ্ছে সে। সাথে আছে কাজী আনোয়ার হোসেনের কুয়াশা সিরিজের ৭৪নং বইটা; সেটাই পড়ছিল এতক্ষণ। রহস্য সিরিজ পড়া তার একটা নেশার মত। রহস্য সিরিজ পড়তে পড়তে নিজেকে মাঝে মধ্যে কিরীটী রায়, মাসুদ রানা অথবা শার্লক হোমস মনে হয় তার। দুয়েকটা রহস্য সমাধানে লেগে পড়ে নিজেই। যেমন গতবার তাদের বাগানের পেয়ারা চোরকে সে হাতে নাতে ধরে ফেলে পাড়ার সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। তারপর নিপার সাথে মতির বিশেষ খাতিরের ব্যাপারটাও সে হাতে নাতে ধরে ফেলেছিল তার বিশেষ চাতুর্য্য আর বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে। তবে সেবার পাড়ার মানুষকে সে তাক লাগায়নি বিশেষ কারণে। নিজে নিজেই তাক লেগে চুপচাপ ছিল। পৃথিবীতে কত মজার মজার তাক লাগানো ব্যাপার ঘটে যা অন্যের সাথে শেয়ার করা যায় না।
টুটুল পায়ের কাছে একটা রক্তখেকো মশাকে চটাস করে মারতে গিয়েই আজ এই পোড়াদহ জংশনের ওভারব্রিজের উপর থেকে যা দেখলো তাতে তার ওভারব্রিজের উপর থেকে সোজা নীচের খুলনাগামী রেললাইনের উপর পড়ে যাওয়ার কথা, যদি না পাশে লোহার মরচে ধরা রেলিংটা থাকতো। পুলিশটা যখন পরম তৃপ্তি সহকারে তলপেট খালি করছিল ঠিক তখনই প্ল্যাটফর্মের পাশের ঝোপ থেকে কাঁটাতারের ভাঙ্গা বেড়ার তলা দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে তিনজন লোক যে ভূতের মত লাশের পাশে এসে বসলো তা টুটুল ছাড়া আর কেউ দেখতেই পেল না। ইব্রাহিম পুলিশ তো দূরের কথা। বিদ্যুৎবেগে দুজনে চাটাইয়ের রোল থেকে লাশটাকে সড়াৎ করে টেনে বের করে ঝোপের ভিতর ফেলে দিয়ে নিজেরাও গায়েব হয়ে গেল আর তৃতীয় জন চট করে চাটাইয়ের রোলের ভিতর ঢুকে পড়ল। ছানাবড়া চোখে এরকম ভয়ানক দৃশ্য দেখে টুটুল কিছুক্ষণ হতভম্বের মত চেয়ে রইল, তারপর রহস্যভেদী কিরীটী রায়ের মত রহস্য ভেদ করতে লেগে পড়লো। বিশ্রাম আর কুয়াশা সিরিজ মাথায় উঠলো আপাতত। ব্যাগটা ঘাড়ে ঝুলিয়ে ওভারব্রিজ থেকে নামতে নামতে সে তার লাইন অফ অ্যাকশন ঠিক করে ফেলল। এই হাবাগোবা পুলিশ দুটোকে ঘাঁটিয়ে লাভ নেই, থানার অফিসার ইন চার্জকে জানাতে হবে সব। তারপর জ্যান্ত লোকটাকে চাটাইয়ের কফিন থেকে সবার সামনে বের করে দেখাতে পারলেই কেল্লা ফতে। হাতে নাতে আজ প্রমাণ হয়ে যাবে সব রহস্য। তারপর ব্যাটাকে কয়েক ঘা পুলিশি প্যাঁদানি দিলেই গড়গড় করে সে বলে ফেলবে আসল লাশটাকে তাদের দলবল কোথায় নিয়ে গেছে।
ষ্টেশনের পাশেই পোড়াদহ থানা কম্পাউন্ড। হনহন করে সেখানে ঢুকল টুটুল। ডিউটি অফিসার নাই, একজন কনস্টেবল কাঠের টুলে বসে বসে থানা পাহারা দিচ্ছে নাকি ঝিমাচ্ছে বোঝা গেল না তবে বলল অফিসার বাইরে গেছেন এক্ষুনি এসে পড়বেন। উত্তেজনায় টুটুল টানটান হয়ে আছে। অফিসার এলেই সব ফাঁস করে দেবে।
প্রায় আধঘণ্টা খানেক অপেক্ষা করার পর ওসি সাহেব এলেন। কম বয়সী ভদ্রলোক। কি কারণে যেন তাঁকে খুব প্রসন্ন দেখা যাচ্ছে। হাতে দামী ব্র্যান্ডের সিগারেট থেকে হাল্কা হাল্কা ধোঁয়া বেরোচ্ছে। মুখে পান। ডান হাতের আঙ্গুলে একটা দামী পাথর বসানো সোনার আংটি। বুক পকেটের উপর আটকানো নেমপ্লেটে নাম লেখা আছে ‘মকবুল’।
ওসি মকবুল সাহেব চেয়ারে বসতেই টুটুল উত্তেজনার চোটে হড়বড় করে লাশ চুরির ঘটনা এক নিঃশ্বাসে বলে ফেলল। ওসি সাহেবের পান চিবানো থেমে গেল। সিগারেটে টান দিতে ভুলে গেছেন। একটু আগের প্রসন্ন ভাবটা উড়ে গিয়ে মুখে সামান্য সামান্য ঘাম দেখা দিয়েছে।
‘নাম কি তোমার?’ এতক্ষনে মুখ খুললেন তিনি।
‘টুটুল চৌধুরী’
বাড়ি?
শহরের নাম বলল টুটুল।
গাঁজা খেয়ে এসেছ, শালা? দেখতে শুনতে তো ভদ্রলোকের শিক্ষিত ছেলে মনে হচ্ছে। কবে থেকে নেশা করা হয়?
থতমত হয়ে গেল টুটুল। এতবড় খবর পেয়ে কোথায় ওসি সাহেব পুলিশ ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটবেন তা না করে উল্টো তাকেই গালি দিচ্ছেন!!
‘স্যার, সত্যি বলছি, নিজের চোখে দেখলাম তারা লাশটাকে সরিয়ে ফেলল আর একজন জলজ্যান্ত মানুষ কফিনের ভিতর ঢুকে পড়ল।
‘এক্ষুনি ভাগো আমার থানা থেকে, নাহলে গাঁজা খেয়ে মাতলামী করার অপরাধে দিব তোমাকে হাজতে চালান করে। বুঝেছ ব্যাটা? সেন্ট্রি, সেন্ট্রি এই ব্যাটাকে ঘাড় ধরে বের করে দাও তো।
সেন্ট্রি আসার আগেই টুটুল থানা থেকে বের হয়ে ষ্টেশনের দিকে ফিরে চলল ভগ্ন মনোরথ হয়ে। মনটা খারাপ হয়ে গেছে তার। কফিনের কাছে গিয়ে দেখতে চায় ভিতরের লোকটা আর তার দলের ধান্দাটা কী। কিন্তু পোড়া কপাল, গোয়ালন্দ লোকাল ট্রেন এইমাত্র ছেড়ে গেল। ট্রেনের পিছনের লাল টেইল লাইটটা এখনো দেখা যাচ্ছে। চাটাইয়ের কফিন, ভুয়া লাশ, পুলিশ কোনটারই চিহ্নমাত্র নেই প্ল্যাটফর্মে। সব ট্রেনে উঠে চলে গেছে। মনে হচ্ছে কিছুই ঘটে নি এখানে।
টুটুল একটা হাই তুলল, তারপর খানিকটা হতাশ মত হয়ে চায়ের স্টলের দিকে এগোল। টেনশনের চোটে মাথাটা ধরে গেছে। কড়া করে এক কাপ চা খাওয়া দরকার। স্টলে গিয়ে দুটো বেলা বিস্কুট আর এক কাপ চায়ের অর্ডার দিল টুটুল। চায়ের স্টলওয়ালা একটা পিরিচে করে বেলা বিস্কুট দিল, তারপর চা বানাচ্ছে আর বারবার টুটুলের দিকে তাকাচ্ছে বিশেষ ভঙ্গীতে। মনে হচ্ছে এই দোকানদার ব্যাপারটার ভিতরের খবর জানে। টুটুল চায়ে চুমুক দিতে দিতে লোকটাকে জিজ্ঞাসা করলো লাশের ব্যাপারে সে কিছু জানে কি না। লোকটা অবাক হওয়ার মত করে জবাব দিল এ ধরণের কিছুই ঘটেনি এখানে। তারপর বলল এটা ভাল জায়গা নয়, টুটুল যেন চা শেষ করে জলদি বাড়ি চলে যায়। সে বলল, রাত একটার সীমান্ত এক্সপ্রেস ধরবে সে। মনে মনে গজ গজ করছে, তাকে ছোট পেয়ে সবাই উপদেশ দিতে চায়। কেউ তো আর জানে না কত বড় রহস্যভেদী গোয়েন্দা সে। ছোট হলে কি হবে, তার মাথায় যত বুদ্ধি তার এক কানাকড়িও নেই এইসব লোকজনের।
এখনো ঘণ্টা দুয়েক বাকী আছে ট্রেন আসার, প্ল্যাটফর্মে বসে থাকতে ভাল লাগছে না টুটুলের। সে পোড়াদহ বাজারের রাস্তায় পায়চারী করছে আর দোকানপাটে মানুষের আনাগোনা বেচাকেনা দেখছে। হাঁটতে হাঁটতে চলে এলো বাজারের শেষ প্রান্তে আর তখনই ঘটলো ঘটনাটা। লাশচোর লোক দুটোকে দেখা গেল, তারা পাশের গলি থেকে বেরিয়ে বাজারের ভিতরের দিকে যাচ্ছে। টুটুল তাদের পিছন পিছন একটু দুরত্ব বজায় রেখে চলতে লাগলো। লুঙ্গি পরা আর ময়লা সার্ট গায়ে দেওয়া সাধারণ গ্রাম্য মানুষ। কিন্তু এরা যেভাবে লাশ গায়েব করে তার পরিবর্তে জ্যান্ত মানুষ সেট করে দিল তাতে সাধারণ মানুষ হতেই পারে না। একজন আরেকজনকে ফিসফিস করে বলছে,
‘ওসিকে কত দিলি?
‘সাত’
‘বলিস কী, গত চালানে পাঁচ দিলাম, এবার সাত কেন? এই শালা দুর্নীতিবাজ ঘুষখোর লোকজনের জ্বালায় সৎভাবে ব্যবসা বাণিজ্য করে খাওয়ারও উপায় নেই।
‘আর বলিস না, ওসি বলছে উপর থেকে নাকি সিভিল ড্রেসে ডিআইবি না স্পেশাল ব্রাঞ্চের লোক এসে ষ্টেশনে ঘোরাঘুরি করছে, একে ওকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। থানা থেকেও খোঁজ খবর নিয়ে গেছে মালের ব্যাপারে। তাকে ঠাণ্ডা করতেই পয়সা বেশী ঝাড়তে হল। চল, দেরী করিস না। মাল ট্রেনে তোলা যাবে না আজ। ভটভটিতে তুলে রাতারাতি বর্ডার পার করতে হবে। বেলা দশটার মধ্যে কলকাতায় পৌঁছাতে না পারলে দাম পাওয়া যাবে না মালের।
টুটুল দম বন্ধ করে শুনলো ওদের কথা। ভয়ানক লোক ওরা। লাশের ব্যবসা করে!! শুধু ব্যবসা নয়, লাশ চোরাচালানের ব্যবসা। বেশী ঘাঁটাঘাঁটি করলে আবার না ওকেই লাশ বানিয়ে কলকাতায় বিক্রি করে দেয়। তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে ষ্টেশনে ফিরে এলো সে। বারবার ঘড়ি দেখছে, কখন সীমান্ত এক্সপ্রেস আসবে। আবার চারপাশে খেয়াল রাখছে, সেই লাশ চোররা এদিকে এলো কি না সেটা দেখার জন্য।
পরদিন সকাল সাড়ে দশটা। টুটুল এইমাত্র তার বাসায় ঘুম থেকে উঠে স্নান সেরে নাস্তার টেবিলে বসেছে। গতরাতের বিভীষিকাময় ঘটনা মনে করেই শিউরে উঠছে সে। শেষ রাতের দিকে বাড়ি ফিরেছে। কাউকে বলেনি ঘটনাটা। মা বাবা শুনলে খুব বকবে আর পাড়ার বন্ধুরা শুনলে বলবে সে চাপা মারার আর জায়গা পেল না বুঝি? তবে একটা ব্যাপার সে কিছুতেই মেলাতে পারছে না। জ্যান্ত লোকটা যে মরা সেজে কফিনে ঢুকে পুলিশের হাওলায় গেল তার পর তার কি দশা হল?
হাঁসের ডিমের অমলেট দিয়ে গরম গরম পরোটা চিবুচ্ছে আর কুষ্টিয়া থেকে প্রকাশিত স্থানীয় পত্রিকা কুষ্টিয়া বার্তায় চোখ বুলাচ্ছে টুটুল। হঠাৎ করেই একটা খবরে চোখ আটকে গেল তার।
পোস্টমর্টেমে বেঁচে উঠলো লাশ !!
স্থানীয় সংবাদদাতা
গতকাল বিকালে পোড়াদহ জংশনের কাছে এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি (২৫-৩০) ট্রেন থেকে পড়ে গেলে স্থানীয় রেলওয়ে হাসপাতালে তাকে নেওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পোড়াদহ জি আর পি থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা নথিভুক্ত করা হয়। মৃতদেহ ময়না তদন্তের জন্য ট্রেনযোগে কুষ্টিয়া মর্গে আনা হলে মৃতদেহটি সিভিল সার্জন ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সামনে নড়ে চড়ে উঠে বসে। তাৎক্ষণিক ভাবে তাকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করা হয়। সে পুলিশকে দেওয়া জবানবন্দীতে জানিয়েছে, সে ট্রেন থেকে এমনি এমনি পড়ে যায় নি, পিছন থেকে কেউ তাকে ধাক্কা দিয়ে ট্রেন থেকে ফেলে দিয়েছিল।
পোড়াদহ থানার তদন্তকারী পুলিশ অফিসার মকবুল ইসলাম এ ব্যাপারে এখনি মুখ খুলতে নারাজ। তিনি জানিয়েছেন চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেলেই শুধু মন্তব্য করা সম্ভব।
এদিকে ডাক্তার কর্তৃক জীবিত ব্যক্তিকে মৃত ঘোষণা করার এই ঘটনায় নাগরিক মহলে এক তীব্র প্রতিক্রিয়া ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অবিলম্বে এই দায়িত্বজ্ঞানহীন ডাক্তারের দৃষ্টান্তমূলক কঠোর শাস্তি দাবী করেছেন সুশীল সমাজ।
-X-