মেনাজ দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকে। কেরোসিন কুপির মরা করুন আলোয় দ্যাখে রাহেলা চৌকিতে শোয়া। রাহেলা মেনাজের দিকে ফিরে তাকায়। রাহেলা ভাবে এত বৃষ্টি তাও মুন্সীর টুপিও কি ভেজে নাই। বা ভিজলেও কি রাহেলার চক্ষু গোচর হয় না? এই তো এখন বৃষ্টি হইলো ধুম। তাও মুন্সী ভিজলো না ক্যান। রাহেলার শীত শীত করলে কাঁথা গায়ে দিয়া কষ্টে পাশ ফিরে। মেনাজ মুন্সী মানুষ তাও কি রাহেলার মনে থাকেনা? নাকি পোয়াতি হইলে এমন হয়। মেনাজ ছিলো মসজিদ ঘরে মাগরিবের নামাজে। মেনাজ মাথা থেকে টুপি খুলে চৌকির কোনায় রাখে। মেনাজের মাথা ভরা টাক। সারা দিন রইদের মধ্যে থাকায় মেনাজের টাক মাথা টুপির আড়ালে থাকে। ফলে চুল ছাড়া ফাকা অংশ ফ্যাকাসে দেখায়। তা ছাড়া সাধারণত টাকের অংশ তৈল চিকচিকে। মেনাজের মাথার চাঁদিতে সুপারির আকারের এক টিউমার। মেনাজের টাকের চেয়ে ততোধিক চকচকে সেই টিউমার।
মেনাজের অভ্যাস কারনে অকারে মাথার টাকে হাত বুলায়। বিশেষ করে প্রায় নরম টিউমারের উপরেই য্যানো । রাহেলারে বিবাহ করার পর এই অভ্যাস হইছে তার। টিউমারে হাত বুলালে রাহেলার একটা গোপন বিষয় মনে পরে মেনাজের। বা গোপন বিষয়টা মনে পরলেই বুঝি টিউমারে হাত বুলায়। রাহেলার এই গোপন বিষয়টার কারনে তার সাথে সহজ হইতে পারে না মেনাজ।
রাহেলার গোপনীয় বিষয় বা গোপন অংশের বিষয়টা মানুষের চক্ষুগোচর হয় না বহুদিন। যতদিন না মেনাজের লগে তার বিবাহ হয়। রাহেলার দাদীই দেখছিলো শেষবার। কোন এক রাইতে যখন রাহেলা প্রথম রূতুবতী হয়। রাহেলা তো ঘুমায়ে ছিলো আর তার দাদী খুইলা নেয় তার ফ্রক। বউ তোর মাইয়ার তো বুনি হইছে তয় বুডি তো নাই! এই কথায় কি রাহেলার মায় শরমও পায় না, নাকি ডরাইয়া গ্যাছিলো? মাইয়ার বিয়া তো দিতে পারবিনা। আর যদিও হয় জামাই তো রাখবেনা।
বছর ছয় বয়সে একটা ফোঁড়াই তো ওঠে। বুকে, বুকে মানে বুকেই। ফোঁড়া পাকে আর ফাইটা যায়। ক্ষত ঘুচলে রাহেলার বুকে একটা দাগ থাকে। যৌবনে দাগ ভারি হয়। মরনের আগে রাহেলার বুকের দাগ দেখতে চাইছিল তার দাদি। তবে তার শেষ ইচ্ছা পূরন করে নাই রাহেলা।
রাহেলাও কি কম ডরে ছিলো তার বুক নিয়া। সে তো ভুইলাই থাকতো। তবে মাঝে মাঝে কি মনে পড়তো না? নাওনের সময় কিবা কামিজ পাল্টানোর কালে নজরে তো পড়তো। বাম বুকখান সমানে বাড়ছে ডানটার মত। তবে দাগখান ছড়াইয়া পড়ছে আরো। রাহেলা তার বাম বুকখান দেখলে শরম কি শরম তার চেয়েও ডরে কাবু হইতো ঢের। এই ডরটা তার মধ্যে বুইনা দিয়া গ্যাছে তার দাদি। রাহেলার মায় এ নিয়া মাইয়ারে কিছু কয় নাই কখনো। জোয়ান মাইয়া এই শরমের বিষয়ে আর কি কওয়ার আছে। এর কি কোন সমাধান আছে তার কাছে বা অন্য কারো কাছে।
রাহেলার মায় কি চেষ্টাও করে নাই। যে বছর এক পাগলি আইলো গ্রামে। তারে ধরছিলো বহু কষ্টে রাহেলার মায়। পাগলি তো পাগলি তার উপরে মানষের ভিড় মাইয়ার শরমের কথা ক্যামনে কইবে। তাও পাইছিলো একলা শ্যাষ রাইতে হাটের বাচারি ঘরে। পাগলি বেঘোরে ঘুমায়। হাগামুতার মধ্যেই ঘুমাইছে নাকি কেডা জানে। তাও বমি আসা গন্ধের মধ্যে পাগলিরে জাগায়। পাগলি তো পাগলি সেও চিক্কুর কি দ্যায় নাই আর হারামি কইয়া গালিও তো দিছিলো। তা পাগলিও কি অবাক হইছিলো এত রাইতে মাইয়া মানুষরে দেইখা? পরে রাহেলার মায় ডরেডরে রাহেলার বুকের বিষয়টা কয়। তাতে পাগলি কয় আমারো তো বুক নাই তাতে কি? তার পরেও রাহেলার মায় জানতে চায় এর কোন ফিকির আছে কিনা। তাতে পাগলি কইছিলো সমুদ্রের কচ্ছপের পিঠের হাড় গুড়া কইরা লাগাইতে।
মানষে কয় চাইলে বাঘের চক্ষু মেলে। রাহেলার মায় তাও সামান্য কচ্ছপের পিঠের হাড় পায় না। যদিও পায় তাও নদী কি পুকুরের বা ডোবার। তাতে পাগলির দেয়া দাওয়াই রাহেলার বুকে দেয়া হয় না। তার পরেও তো রাহেলার বিবাহ হয় শেষমেশ। বাপ মরা মাইয়ার সম্মন্ধ ফিরাতে পারে না রাহেলার মা। রাহেলার বুকের দাগ বা মাইয়ার খুত গোপন কইরা বিবাহ দেয় তার মা। ছেলে মুন্সী মানুষ গ্রামে নিজ গতর খাটাইয়া মসজিদ ঘর বানাইছে। আর আছে ঘর গৃহস্থ কৃষি-পাতা সামান্য কিছু। তাতে দিন চইলা যায়। প্যাটে পিঠে ভাই বইন মা বাপ কেউ নাই। এতিম খানায় মানুষ। তাতে দোষের কিছু দ্যাখেনা রাহেলার মায়।
মেনাজ তো খুশিই ছিলো। তার স্বজন বলতে তো কেউ ছিলো না। একটা বউ হইলো আর ওদিকে শ্বাশুরি আছে। তাও এই খুশিটা বেশিদিন আর থাকলো কই। মাস দুই নাকি আরো কম। নতুন বিবাহ করা বেটা মানষে তো হামলাইয়া পড়ে তা রাহেলা বুঝে। বউয়ের সব চাক্ষুষ হইতে চায় এক লহমায়। তার পরেও তো মাস দুই সামলাইয়া রাখছিলো। রাহেলা তো ব্লাউজ খুলতেই দেয় না মেনাজরে। তার উপর ওয়াদা করাইছে যাতে কখনোই না খোলে। মেনাজ কারন জানতে চাইলে রাহেলা কয় তার শরম করে। এর পরেও রাহেলার শেষরক্ষা হয়না। মেনাজের লগে গায়ের জোরে পারেনা রাহেলা। রাহেলা কি তার ওয়াদা স্মরণ করেও দেয় নাই। দিলেও মেনাজ তা মানবে ক্যান? সে মানেও না। জোরাজোরিতে রাহেলার ব্লাউজের দুই একটা বোতামও কি ছিড়ে নাই। শেষে রাহেলা স্তব্ধ হইয়া পইড়া থাকে। চক্ষু বোঝা থাকেলেও চোখের পানি গাড়িয়ে পড়ে রাহেলার। মেনাজ নতুন কিছু পাইয়া যা করার তা করতে করতে সেও থমকায়। রাহেলার বাম বুক মেনাজরে থমকাইতে বাধ্য করে। ডান বুক আর বাম বুক তো এক জিনিস না মেনাজের মালুম হয়। যদিও আন্ধার ঘর তবুও মেনাজ বিষয়টা বিবিধ উপায়ে ঠাহর করে। আর মেনাজ অনুভব করে ডান বুকের তুলনায় বাম বুকখান কি মসৃণ! কি মসৃণ! গোল একখান মাংস পিন্ড য্যান। বাম বুকে কি পার্থক্য তা দেখতে চাইলে মেনাজ উইঠা পরে কুপি বাতি বা অন্য কিছু কি পায় তার জন্য। আর পেয়ে যায় তিন ব্যাটারির টর্চ লাইট খানা। লাইটের আলো পরে রাহেলার উপর তার মুখে বুকে। বাম বুকে আলো স্থির হয়। মেনাজ খোটায়ে দেখে। কি দ্যাখে? সে কি সোমত্ত মাইয়া মানষের বুক দেখছে কোন দিন? মেনাজ রাহেলার ডান বুকে আলো ফ্যালে এই বার বিষটা তার কাছে পষ্ট হয়। ডান বুকে যে এক খান বোটা আছে সে রকম একটা বোটা বাম বুকে তো নাই। শুধু দেখতে পায় পুরনো ক্ষয়ে যাওয়া বিস্তৃত এক দাগ। মেনাজ ঘর হইতে বের হইয়া পড়ে। রাহেলা দেখতে পায় একটা ইতস্তত আলো কই য্যানো মিলিয়ে গেল।
সেই রাইতের পর রাহেলা কি কিছু বলতে চাই নাই মেনাজরে। রাহেলা কি তা পারে, পারেনা মেনাজও। সে যেন এক নতুন মানুষ হইছে।সেই রাইত পর সব য্যানো কঠিন এক খোলস হইয়া তাগো সম্পর্করে আটকিয়ে রাখছে। কিছুতেই কেউ কারো ভিতরে ঢুকতে পারছে না। রাহেলা বিষটা খুইলা বলতে চাইলেও পারেনা। মেনাজ সেও তো বিষটা ভিন্নভাবে ভাবে। প্রায়ই তো শোনা যায় ডাকাইত দল যুবতি মাইয়াগো সর্বনাশ করে আর বুকটুকও কাইটা কুইটা ফ্যালে। নাকি অন্য কি কারনে রাহেলার এই খুত তা কে জানে। জানে, জানে রাহেলা আর তার মায়ে। রাহেলার মায়ের কাছে কি জানতে চাইতে পারে মেরাজ? পারেনা এমনকি রাহেলার কাছেও তো জিগাইতে পারে না সে। রাহেলাও ক্যান বিষটা গোপন করলো। এই সমস্ত প্রশ্ন খালি মাথার মধ্যে ঘুরতে থাকে, সে কেবল মাথার উপরে বা তার টিউমারে উপর হাত বুলাতে থাকে।
রাহেল বুক বিষয়ক জঠিলতার কারনে তাদের সমর্পকের যে টানাপোড়ন, তা ছাপিয়ে রাহেলা পোয়াতি হয়। রাহেলার পেট বড় হয় অর্থাৎ তার অনাগত সন্তান বাড়তে থাকে আর বাড়ে রাহেলার দুই বুক। যার একটি তার সন্তান বা স্বামী দুইয়ের কাছেই গুরুত্বহীন। একটি স্তনে তার সন্তানের প্রয়োজন মেটে কিনা সেই চিন্তাও রাহেলার আছে। আর আছে স্বামীর কাছে সহজ হবার বিষয়।
মেনাজ যে মেনাজ সেও তো নামেজে ভুল কইরা ফ্যালে, রাকাতে কি সূরায়। জামাতে দাড়াইলে তো বিষয়টা শরমের হইয়া যায়। এই সমস্ত বিষয়াদির মধ্যে তার মাথা যার মূলে টিউমার সেটি জটিল হইয়া দাড়ায়। টিউমিরের যন্ত্রণা ছড়িয়ে পড়ে মাথায় এমনি সমস্ত শরীরেই য্যানো। মেনাজের কি টিউমার কাটানোর ক্ষমতা আছে। নাকি তার গ্রামে আছে তেমন কোন ধন্বন্তরি ডাক্তার কিবা কবিরাজ। তার পরেও তো কেউ থাকে, দুনিয়ায় কি কারো শূন্যতা রাখে। তেমনি মেনাজও পায় একজন কবিরাজ। লতাপাতা জড়িবুটি তুকতাক সহ বিবিধ জটিল আর অদ্ভুত চিকিৎসা তার। মেনাজের চিকিৎসার ভার নিয়া হাজির হয় মেনাজের বাড়ি অবধি। সময় সাপেক্ষ ব্যাপার যেহেতু মাথার বিষয়। তাই ধীরে আগাতে চায় কবিরাজ। দুইটা আকন্দ পাতা লাগিয়ে দ্যায় মেনাজের মাথায়। আকন্দ যে পাতা তা লাগানোর নিয়ম-ও বইলা দ্যায় মেনাজরে কবিরাজ। পাতার উপরের দিক লাগাতে হইবে। পাতার নিচে যে চুনচুন থাকে তা বিষ, তাই নিচের দিক লাগানো যাবেনা। যদিও কবিরাজ নিজেই পাতা লাগায় মেনাজের মাথায়, টিউমারে। দুই দিন এই বিধিব্যবস্থা। এতে ব্যথা কমবে আর টিউমার নরম হবে তার পর শল্যচিকিৎসা।
দিন দুই পর কবিরাজ আবার আসে মেনাজের বাড়ি। মেনাজের মাথা কাটা হবে। মেনাজ তো ডরে ছিলো। চাকু বা খুর নাকি ব্লেডে তার মাথা কাটবে কবিরাজ। রাহেলাও তো চিন্তায় পইরা যায়। কিছু যদি হয় মানুষটার। পোয়াতি মাইয়া মানুষ রাহেলা। খালি পেরেশানি বাড়ে আর হাফিয়ে যায়। কবিরাজের একটা কাপরের পুরানো থলে ব্যাগ তো থাকেই। তবে কবিরাজ ব্যাগ ছাড়াও আজকে একটা কচি কলা পাতা নিয়া আসে। কলাপাতা মাটিতে বিছায় কবিরাজ আর তাতে দ্যাখা যায় গোটা কয়েক কাঁচা খেজুর কাঁটা। মেনাজ ডরে ডরে জিগায় কবিরাজরে, কাটা দিয়া কি তার মাথা ফুটা করা হইবে? তাতে কবিরাজ কয় লোহার চাকু কি খুরে তোমার মাথা কাটা যাবেনা, লোহায় থাকে হইলো বিষ। আর তোমার টিউমারও হইলো বিষ, বিষে বিষ ক্ষয় এখানে খাটবেনা মুন্সী। কাটা দিয়া তোমার বিষ বাহির করন লাগবে। ব্যাথা কিছুটা পাবা তবে ধৈর্য রাখতে হইবে। মেনাজ তো মেনাজ রাহেলাও ডর পাইয়া যায়। সে কি কিছু কইতে চায় নাই, তাও পারেনা মুন্সীর বউ বইলা। আড়ালে দাড়াইয়া দ্যাখে কবিরাজের কায়কারবার। কবিরাজ কয় বও মুন্সী কামডা ধীরে সুস্থে সারি। ব্যাথা পাইলে কবা তয় নড়ন চড়ন যাইবে না। মুন্সী বইসা পরে কবিরাজের সামনে একটা পিড়ির উপর আর মাথাটা নোয়ায়ে দেয় কবিরাজের দিকে। কবিরাজ কয় তোমার মাথায় চুল নাই ভালই হইছে। থাকলে কামানো লাগতো তা আরেক যন্ত্রণা। কবিরাজ একটা খেজুর কাঁটা তুইলা নেয় আর বলে একটা কাঁটায়ই কাম হইবে তয় বেশিই আনছি না হলে হালকা দ্যাখায়। এই সব কথার মধ্যে মেনাজ পের পায় কাঁটা ফোরা হইছে তার মাথায়। নাহ্ যেমন ভাছিলো ব্যাথা তেমন না। কবিরাজ কয় কি মুন্সী কিছু টের পাইলা তাতে মেনাজ কয় পাইছি তয় ব্যাথা তেমন না। রাহেলা দেখতে ছিলো কাঁটাটা ফোড়ানো হইছে টিউমারের মাঝ বরাবর আর হালকা ঘুরায়ে ঘুরায়ে ছিদ্র বড় করছে কবিরাজ। ছিদ্র করার পর কাঁটার গোড়া দিয়ে চাপ দেয় কবিরাজ আর তাতে বের হয় নরম ভাত ভাত কিছু। কবিরাজ বলে এই হইলো তোমার বিষ। মেনাজ তো চক্ষু বোঝাই ছিলো। মেনাজ চক্ষু মেলে তাকালে দেখতে পায় কলাপাতার উপর শাদা নরম ভাত ভাত কিছু পইরা আছে। এই ভাবে আরো বেশ কিছু বের করে টিউমার থেকে। মেনাজের টিউমার তো নাই। মেনাজ না দেখলেও রাহেলা দ্যাখে টিউমারের জায়গায় পইরা আছে কুঁচকানো কিছু চামরা।
মেনাজ তো ভালো হয় আর রাহেলার খুঁতের বিষয়টা কি সে ভুইলা যায়? নাকি রাহেলার ছেলে হওনে মেনাজ সহজ হইতে পারে। রাহেলার ছেলে হয় আর সে যে ডরে ছিলো যে এক বুকে তার পোলার খাওন হইবে কিনা সে জটিলতাও কইটা যায়। রাহেলা পোলারে এক বুক খাওয়ায় আর পোলায় ঘুমায়ে যায়। তয় বার বার খাওয়ন লাগে, এক বুকে আর কত টুকু দুধ জমে। তবে বাম বুকেও কি দুধ জমেনা। জমে তো আর সে দুধ কিভাবে বের করবে বা যাতে না জমে তার কি বিহিত তা রাহেলা জানেনা। জানার চেষ্টাও সে করে নাই যত দিনে বুকে দুধ জমে টনটন না করে। যেন বুকে পাথর জমে আছে এম ভার আর ব্যাথায় টনটন। রাহেলার মায়েও তো আসছে প্রসূতি মাইয়ার দেখভাল করতে। সেও তো কখনো কিছু করতে পারে নাই। এবারেও কি কিছু করতে পারে, পারেনা। তবু সে এ বাড়ি ও বাড়ি, এ ঘর ও ঘরে যায়। তালাশ করে কি আছে ফিকির। আর মানষেরেও তো খুইলা কইতে পারে না সব বৃত্তান্ত, মাইয়ার শরমের কথা। যদিও বা কইতে পারে তা হইলো বুকের দুধ জমাট হবার কথা। তাতে মহিলা গলা নিচু কইরা কয় দুধে হাজর হইছে, এইটা কোন বিষয় না কাহারু কাকার কাছে যাও সে এর ফিকির জানে। কাহারু বুড়া লোক গ্রামের সকলের চাইতেও বুঝি বেশেই বুড়া। যদিও বুড়া তাও তো বেটা লোক তার কাছে ক্যামনে যায় রাহেলার মায়। তাও আবার মাইয়ার জামাইয়ের গায়ের মধ্যে। তাও পরেও তো রাহেলার মায় যায় আর শরমের মাথা খাইয়া বুড়ারে যতটা খুইলা বলা যায় বলে। বুড়া জিগায় কোন বুক তাতে রাহেলার মায় কয় বাম বুক। বুড়া তার নিজের ডান বুকে কি সব পইড়া তির বার ঝাড়া দেয়।
রাইতে রাহেলার বাম বুকের পাথর ভার কাইটা যায়। ব্যাথাও কিছুটা কমে তবে একে বারে কমেনা আর সকালে ফের বাম বুক খান পাথর হইয়া যায়। এমন কি ব্লাউজও তো পরতে পারেনা রাহেলা। সে কি ব্লাউজ পরবেনা তা কি পারে কোন মাইয়া মানষে। আর তার মায়েও কি কাহারু বুড়ার কাছে যাইতে পারে দিনদিন শরমের মাথা খাইয়া। রাহেলার মায় থাকতেও তো পারেনা বেশি দিন তার খালি বাড়ি রাইখা। রাহেলার মায় চইলা গেলে বাম বুকের ব্যাথা য্যান বাইড়া যায় দ্বিগুণ। তার মায় যদিও মানষের লগে কিছুটা কইতে পারছে সে তো তাও পারেনা। এমনকি মেনাজের লগেও তো কইতে পারেনা। মেনাজরে কইতে না পারলেও তার মনে পরে মেনাজের টিউমারের কথা। রাহেলা ভাবে সেও কি আকন্দ পাতা লাগাবে তার বুকে। তবে ডর পায় যদি কোন ক্ষতি হয় তার বা তার পোলার। তার পরেও একদিন পাথর বুকে লাগায় দুইটা আকন্দ পাতা। রাইতে খুইলা রাখে, খুইলা রাখে এই কারনে যাতে মেনাজ না জানে। যদিও কাঁচা শরীর রাহেলার তবু সে সাবধানে থাকে। দিন দুই আকন্দ পাতা দেওনের পর রাহেলার মনে হয় তার পাথর বুক বুঝি কিছুটা নরম হইলো আর তাতে সে আশা দেখতে পায়। রাহেলা দিন দুই পর মেনাজ কাজে যাওনের পর নিয়া আসে কচি কলা পাতা আর গোটা কয়েক কাঁচা খেজুর কাঁটা। চিকিৎসার দ্বিতীয় পর্যায়ে গিয়া কিছুটা ডর আর উত্তেজনা ভর করে রাহেলা উপর। তার হাত কাঁপতে থাকে। কাঁপা কাঁপা হাতে খুলতে থাকে নিজের ব্লাউজ। যেন আনকোরা প্রেমিক খুলছে তার প্রেমিকার বুক। বাম বুক বের করে একটা কাঁটা হাতে নেয় রাহেলা। বাম বুকের মাঝ বরাবর ঢুকিয়ে দ্যায় কাঁটা। পাথুরে ব্যাথায় জর্জর বুকের মধ্যে ঢুকে পরে আরো তীক্ষ্ণ ব্যাধা। রাহেলা আলগোছে বের করে কাঁটা আর গড়িয়ে পরে লাল শাদা দুধ। আরো বেশি বের করার জন্য চাপ দেয় বুকে তাতে ফিনকি দিয়ে বেরিয়ে পরে রক্ত দুধ। কলা পাতায় জমা হচ্ছে রাহেলার সেই রক্ত দুধ। যেন তরল হয় ঝরে যাচ্ছে রাহেলার জীবনের গোপন কষ্ট সমুহ। কলা পাতার উপর পরে দুধ আর রক্ত মিছে যাচ্ছে আর তৈরি হচ্ছে নতুন এক রং যাকে লোকে বলো দুধেআলতা রং। রাহেলা আগে দুনিয়ার কেউ কি দেখছিল প্রকৃত দুধেআলতা রং। রাহেলাই বুঝি প্রথম দেখছিলো তার একান্ত এই দুধেআলতা রং!
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে আগস্ট, ২০২১ সকাল ১১:০৫