মেইন রোডে দাঁড়িয়ে আছি, হঠাৎ কিছুটা শূন্যের উপর দিয়ে শাঁ করে একটা বাইক পাঁশ কাটিয়ে চলে গেল... মনে হল এই শব্দটাই লাইফ।
গাড়ী করে যাচ্ছি, চোখের সামনে ভাসল আকাশ সম পাহাড়। এই পাহাড়গুলো আমাদের বাড়ি থেকে দেখা যায়। প্রতিদিন ঘুম থেকে ওঠে পাহাড়কে সুপ্রভাত বলে দিন শুরু করি কিন্তু এত এত কাছে থেকে দেখার সুযোগ হচ্ছিলনা। এখন মন চাইছে এখানকার সবচেয়ে উচু পাহাড়ের চূড়ায় ঊঠে মেঘের সাথে ডানা মেলে কিছুক্ষণ উড়তে। কিন্তু পারবনা, দুর্ভাগ্যক্রমে এর সব উচু উচু পাহাড় ভারতের মেঘালয় রাজ্যে পড়েছে। খুব আফসোস হচ্ছে, মনে হচ্ছে দেশ বিভাগের সময় ভারত খুব প্ল্যান করে আমাদের এসব নিয়ে গেছে। আমাদের সাথে অন্যায় করেছে। কিন্তু পরক্ষণে ভাবলাম ভালোই হয়েছে ভারতে এই পর্বত-মালা পড়ায়। নইলে হয়ত দেখারও সুযোগ পেতাম না। এখন তো প্রান খোলে দেখতে পাচ্ছি। ভূমিকম্প থেকে কিছুটা রেহাই পাচ্ছি।সময় মত বৃষ্টি পাচ্ছি।আর কি চাই? শুনেছি চিন নাকি ভারত থেকে মেঘ কিনতে চাচ্ছে। আরব আমিরাতে কৃত্রিম ভাবে পাহাড় তৈরি করা হবে শুধু মেঘের জন্য। পাহাড় খেকোর দল গুলো অতি বৃষ্টি থেকে রেহাই পেতে গাছ তো কাটতই সঙ্গে পাহাড়ও খেয়ে ফেলত।
যেতে হবে লোভা ছড়া চা বাগান। আমি একা না সঙ্গে পাঁচ জন। সেই ঈদের আগের দিন থেকে প্ল্যান...কোথায় যাব? কজন যাব? কিভাবে যাব?
সব শেষে সিদ্ধান্ত হল ঈদের পরের দিন সকাল ৯.৩০ এ বের হব, গন্তব্য লোভা ছড়া।
লোভাছড়াঃ এটি একটি চা বাগান।আমার বাড়ির পাঁশেই। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে এখনো যাওয়া হয়নি। সেদিন রাস্তা ধরে হাটছিলাম, পিছন থেকে একটা গাড়ী প্যাঁ প্যাঁ করতেছে। বিরক্তি চোখে তাকাতেই দেখি গাড়ির ভেতর থেকে কজন লোক হাত দিয়ে ইশারা করে ডাকতেছে। কাছে যাওয়ার পর একজন বলল 'ভাই আমরা ঢাকা থেকে এসেছি, লোভাছড়া চা বাগান কোন দিকে?'
প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ আসে, কত জনকে যে পথ দেখিয়েছি। আর আমি বাড়ির পাঁশে রেখেই যেঁতে পারছিনা!
মা এসে ঘুম থেকে ডেকে দিয়ে বললেন তর কে যেন ফোন দিয়েছে। আমার বুজতে আর দেরী হলনা ইডিয়টরাই ফোন দিয়েছে। আর সময় প্রতিবারের মত এবারো... হু এখন সময় ১০.৩০!
এবার প্রশ্ন, ওরা আমার ঘরের নাম্বার পেল কোথায়? ৩০ মিনিট ধরে ফোনে ট্রাই করে যখন আমায় পাচ্ছিল না, তখন নাকি ফেইসবুক থেকে আমার চাচাতো ভাইয়ের নাম্বার নিয়ে পেল। হাহা
যাক, তাড়াতাড়ি শাওয়ার সেরে রওয়ানা দিলুম। মেইন রোডে এসে মনে পড়ল ইস! আমি তো সকালে কিচ্ছু খাইনি। এক কাজ করা যায়, সামনের বাজার থেকে কিছু খেয়ে নেয়া যাক, তারা এই রাস্তা দিয়ে যাবে সঙ্গে আমায় নিবে। তার আগে আমার কাজ সমাধা হয়ে যাবে। নইলে ফইন্নি গুলোর জালায় কিচ্ছু খেতে পারবনা। যেই ভাবা সেই কাজ...
যেতে যেতে দেখি একটি পাহাড়ের নিচে ঝুপের মধ্যে কয়েকটি ছোট ছোট গাছের নড়াচড়া। ভয় পেলাম, বাঘ টাঘ নয়ত? কিন্তু না একটি মেয়ে কচুর লতি তুলতেছে। দেখলাম, মনে হল এই দৃশ্যটা দেখার জন্যই লাইফ!!
কিছুক্ষণ যাওয়ার পর দেখলাম একটা ছেলে ৮/১০ বছর হবে, হাতে একটি সিগারেট নিয়ে টানতেছে আর গরু রাখতেছে। মনে হল এইটাই লাইফ!
আমাদের পাশের নৌকার চালকটি এক হাতে স্টিয়ারিং ধরে অন্য হাত দিয়ে নৌকায় উটা পানি ফেলছে। মনে হল এই টাই লাইফ।
ছোট নৌকা শাঁ শাঁ করে এগুচ্ছে। কি নীলাভ পানি! মনে হচ্ছে এই তো আমার দেশের সম্পদ, এই তো হীরের খনি, এই তেল, এই গ্যাস! মনে হচ্ছে এই পানি এখান থেকেই বোতলজাত করা যাবে। কিন্তু তাও কি রাখতে দিল ওই বোকার দল? ল্যাট্রিনের পাইপ সরাসরি নদীতে ছেড়ে দিল। আবর্জনা যা আছে সব নদীতে।
নৌকা এগুচ্ছে তো এগুচ্ছেই। বড় বড় স্রোত এসে চোখমুখ ভিজিয়ে দিচ্ছে মনে হল লাইফ তো এখানেই!
পাঁশের নৌকায় একটি ছেলে নৌকার পিছে দাঁড়িয়ে হিসু করতেছে মনে হল লাইফ তো এই দৃশ্যেই!
যাক, আমাদের জার্নি শেষ হল। ভালোই কাটল। এই কয়েকদিনে মাথাটা হ্যাঁং হয়ে গেছিল। চা গাছের নতুন কুঁড়ি, উচু উচু পাহাড়ের দৃশ্য, নৌকা ভ্রমণ। সব মিলিয়ে মনটাকে কি আর খারাপ রাখতে দিল? নেক্সট রাঙ্গামাটি
নোটঃ 5 MP ক্যমেরা দিয়ে এর চেয়ে ভালো ছবি আসা করা বোকামো হবে
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১:২৯