হঠাৎ গাছ নড়ে ওঠায় থাকাতেই দেখি কাঠবিড়ালি(সিলেটি ভাষায় যাকে আমরা খটা! বলি) পেয়ারা গাছ থেকে একটি পেয়ারা নিয়া পালানোর চেষ্টা করছে। আমি তাড়াতাড়ি উঠে হাত তালি দেওয়াতেই কাঠবিড়ালি মুখ থেকে ফল ফেলে দিয়ে লাফিয়ে চলে গেল।
গিয়ে ফলটি কুঁড়িয়ে এনে দেখলাম এর কিছু অংশ কাঠবিড়ালি খেয়ে ফেলেছে। ফলটি যথেষ্ট বড় হওয়ায় এর আহত অংশকে কেটে ফেলে দিয়ে খাওয়ার উপযুক্ত করলাম। এ থেকে হঠাৎ শৈশবের ঘটনা মনে পড়ে গেল। বলেই ফেলি...
আমার শৈশব কেটেছে নানা-বাড়িতে। গ্রামে প্রায় বড় বড় বাড়িতে ঘর গুলোর কাঠামো থাকে এমন যে, মুখোমুখি দুটি ঘর থাকবে একটিকে সামনের ঘর এবং আরেকটিকে পূবের ঘর বলা হয়।বুঝাই যাচ্ছে সামনের ঘরটি পশ্চিম দিকে থাকে। নানা-বাড়ির ঘর গুলো ঠিক সে রকম। শুধু উত্তরের দিকে একটি বাড়তি ঘর আছে যাকে আমরা উৎরের ঘর বলি। আর সামনের এবং পূবের ঘরের মাঝের খালি অংশকে বলা হয় উঠান।নানা-বাড়ির সেই উঠোন জুড়ে একটি গাছ ছিল(এখন নেই)। পেয়ারা গাছ...। এত বড় পেয়ারা গাছ আজ অবধি দেখি নাই। গাছটি অতিরিক্ত বড় হওয়ায় এর সব ফল দেখা যেত না। আর দেখলেও গাছে উঠতে পারতাম না বা এত লম্বা বাঁশ ছিল না যার সাহায্যে ফলটি পাড়া যায়। তো আমরা অসহায়ের মত হাল ছেড়ে দিতাম আর বিকেল বেলার অপেক্ষা করতাম। আমরা বলতে আমি, ভাইয়া এবং আপু। বিকেল বেলার অপেক্ষা করতাম এজন্য যে, বিকেল বেলা কাঠবিড়ালি আসবে এবং সে এসে গাছের সেরা ফলটি বেছে নিয়ে যেইনা পালাতে চাইবে তখনই আমরা নিচ থেকে খটা খটা! বলে চিৎকার দিতাম। চিৎকার শুনে বেচারা কাঠবিড়ালি পেয়ারা ফেলে দিয়ে পালাতো।
এবার আসি আসল কথায়। বর্তমানে আমরা মানে মুসলমানরা সেই রকম কাঠবিড়ালির অপেক্ষায় থাকি। যেমন গত দিন সেলিম ওসমান নারায়ণগঞ্জের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক কে কান ধরে উঠ-বস করালেন। অভিযোগ ছিল ও নাকি আল্লাহ্ ও নবীকে নিয়ে কটূক্তি করেছে। যেই শুনলাম আমরা তখনই ওই হাততালির মত হাত তালি দিলাম। এবং এ থেকে কুড়ানো ফল নিয়ে ঘরে উঠে গেলাম।
হে জাতি! আর কতদিন এভাবে কাঠবিড়ালির অপেক্ষা করব! আমরা কি নিজে থেকে ঐ ফল গাছে উঠা শিখবনা।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০১৬ রাত ১০:৫৪