সহীহ্ বিপ্লব/প্রতিবাদ স্টার্টআপ কিট
১. একটি কি-বোর্ড। যে কোনো কোম্পানির হলেই চলবে, তবে তাতে বাংলা হরফ মুদ্রিত থাকলে ভালো হয়।
২. একটি ফ্লাস্ক (বিপ্লব বা প্রতিবাদ কর্মসূচি চলাকালে চা পানের জন্য)।
৩. একটি ইন্টারনেট কানেকশন (ব্রডব্যান্ডের ক্ষেত্রে আবহাওয়া, আর ডায়ালআপের ক্ষেত্রে ব্যালেন্স দেখে নিন আগেভাগে)। মনে রাখবেন, প্রতিবাদ কর্মসূচি চলাকালে ইন্টারনেট কানেকশন ব্যাহত হওয়া চলবে না।
৪. একটি অতিরিক্ত জিহবা (রিচার্জেবল)।
এই চারটি জিনিস জোগাড় হলেই যুদ্ধের জন্য আপনি প্রস্তুত, কমরেড!
সশস্ত্র বিপ্লবের প্রথম ধাপ
১. প্রথম এক ঘন্টার মধ্যে ফেসবুক স্ট্যাটাস পরিবর্তন করে প্রতিবাদী কথাবার্তা লিখুন। প্রতিবাদী কথাবার্তার "রেডিমেইড সার্ভিস প্যাক"* এই লেখার নিচের দিকে পাবেন। গানের কলি বা কবিতার স্লোকও (উদাহরণস্বরূপ "কারার ঐ লৌহকপাট ভেঙে ফেল্...") ব্যবহার করতে পারেন স্ট্যাটাস হিসেবে।
২. ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপের ওয়ালে বড় বড় পোস্ট দেওয়ার কথা ভুলবেন না। সেটা আবার নির্বিচারে সবগুলো গ্রুপ মেম্বারকে মেইল করে দেবেন। শুরুতেই হতাশ হবেন না। দেখবেন, এমপিথ্রি ডাউনলোডের ফাঁকে ফাঁকে অনেকে হয়তো পড়েও ফেলতে পারে।
৩. "সাথে আছি" কথাটা সবসময় অন্যের কমেন্টের জবাব দিতে ব্যবহার করুন।
৪. বাংলা ব্লগগুলোতে জ্বালাময়ী পোস্ট দিন। লেখার মূল ফোকাস থাকবে সবসময় অন্যের দিকে। অন্যদের কী করা উচিত, কি করলে কী হবে, ঘটনার সময় কি করলে কী হতো, ভবিষ্যতে কী হওয়া উচিত- এইসব।
৫. হাতে সময় থাকলে ইউটিউব থেকে ভারী ভারী প্রতিবাদী ভিডিও ডাউনলোড করুন এবং তা মেইলে মেইলে ছড়িয়ে দিন। তবে মেইলগুলো প্রাপকের স্প্যাম ফোল্ডারে জমা হচ্ছে কিনা তার ফলোআপও করুন।
এখানেই মোটামুটি সশস্ত্র বিপ্লব বা প্রতিবাদী কর্মসূচির প্রথম ধাপ শেষ।
বিপ্লবের দ্বিতীয় ও শেষ ধাপ
এবার নিম্নলিখিত দুটি প্যাকেজের মধ্যে সুবিধামতো যে কোনোটি বেছে নিয়ে সামনে আগান-
১. পরিশীলিত প্যাকেজ ১.১
রিকোয়ারমেন্টস : সুললিত কণ্ঠ (অহেতুক উত্তেজিত হওয়া চলবে না) এবং রাষ্ট্র ও সমাজের অবক্ষয় দেখে আপনি যে কতোটা কাতর, সেটা যথাসম্ভব ফুটিয়ে তোলা। নয় হাজার ৯৯২ মাইল দূর থেকে এখন আপনার কী রকম রাগ-ক্ষোভ হচ্ছে, সেটাও উল্লেখ করুন বারেবারে।
পরিশীলিত বিপ্লব প্যাকেজ ১.১-এর ডেমো ও সংক্ষিপ্ত ট্যুরের জন্য এখানে দেখুন
২. ডাইরেক্ট সংগ্রামী প্যাকেজ ৪.৫০ বেটা
রিকোয়ারমেন্টস : সবসময় অতীত নিয়ে কথাবার্তা বলার দৃঢ় মানসিকতা, সায়েন্স ফিকশন ও ভৌতিক ছবির প্রতি অনুরাগ থাকলে তা আলাদা যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হবে। কখন কী করা উচিত ছিল, তখন কী করলে ভালো হতো, কী করলে মন্দ হতো, কোন্ দলের কারণে কী ক্ষতি হয়েছিল- এই ধরনের অতীতমুখী আলোচনা বেশি বেশি করার দক্ষতা। মোট কথা, আপনার সাধ্য ও আওতার বাইরে আছে, এমন বিষয় নিয়েই বেশি মন্তব্য করবেন। অবাস্তব হলেও অসুবিধা নেই।
ডাইরেক্ট সংগ্রামী প্যাকেজ ৪.৫০ বেটা সফটওয়্যারের ডেমো ও সংক্ষিপ্ত ট্যুরের জন্য এখানে দেখুন।
মোটামুটি এই কাজগুলো সম্পন্ন করতে পারলে প্রতিবাদী বিপ্লব সফল হওয়ার কথা। পুনরায় বলি, ফেসবুকের দিকে বিশেষভাবে নজর রাখবেন। অনেকেই হয়তো জানেন না, ফেসবুকের বিভিন্ন স্ট্যাটাস এবং খাজুরে কথাবার্তা সরাসরি ভূমি এবং এলজিইডি মন্ত্রণালয় থেকে নজরদারি করা হয়। ফলে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ফেসবুক প্রায় অদ্বিতীয়। তারপরই আছে বাংলা ব্লগ।
* প্রতিবাদী কথাবার্তার রেডিমেইড সার্ভিস প্যাক-১
সামাজিক অনাচার ও বিরহ-বিচ্ছেদমূলক পোস্টের ক্ষেত্রে যেসব মন্তব্য করবেন :
১. সাথে আছি। প্রথম থেকেই ব্যাপারটা খুব খারাপ লাগছে।
২. লিখাটি দেখে ভাল লাগল।
৩. এ জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্টদের অবিলম্বে সচেতন হতে হবে।
৪. হয়রানির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ। সাথে আছি...
৫. এ ব্যাপারে অবশ্যই কিছু করা উচিত।
৭. (অমুকের) কথার উপর আর কিছু বলার নাই।
৮. রাষ্ট্র আর কতো খেলবে এদের নিয়ে? আমাদের কি কিছুই করার নেই?
৯. কি দুর্ভাগ্য আমাদের! কি দুর্ভাগ্য (অমুকের) মতো হতভাগাদের!!
১০. আসুন, মিথ্যা আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই...
১১. এখনো ব্যারিকেড ভেঙ্গে দৌড়াতে পারবো/ উড়ে আসা টিয়ার শেল হাতে নিয়ে পারবো ছুঁড়ে দিতে/ কলার চেপে ধরলে গায়ের শার্ট খুলে দিয়ে আসবো... (উৎসাহ-উদ্দীপনামূলক)
বিশেষ সতর্কীকরণ :
সশস্ত্র বা নিরস্ত্র বিপ্লব কিংবা প্রতিবাদী কর্মসূচি চলাকালে কোনোভাবেই ঘর থেকে বের হওয়া চলবে না। কম্পিউটারের সামনে থেকে নড়ার তো প্রশ্নই আসে না।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ২:৩৬