"ডেডপুল", অ্যামেরিকান কমিক মার্ভেলের এক ফিকশনাল ক্যারেকটার। তাকে হিরোও বলা যাবে না, ভিলেইনতো নয়ই। টেকনিক্যাল ভাষায় বলা যায়, ডেডপুল হলো অ্যান্টিহিরো। এখন প্রশ্ন হলো হোয়্যাট দ্যা ফুচকা ইজ অ্যান্টিহিরো? তাইলে প্রথমে সংজ্ঞায়িত করতে হবে, হিরো কি জিনিস? হিরো হইলো হিরো, ভিলেইনকে ধরো, ধইরা মারো তক্তা, ঠুকো পেরেক টাইপ জিনিস, তবে সব শেষ করিয়াও আইন নিজের হাতে তুলিয়া নিবেন না তিনি কিংবা সে ভিলেইন হইলেও সে তো মানুষ, আসুন তাকে শোধরানোর আরেকখান চান্স দেই এইটাইপ অ্যাট্রিবিউট যার আছে সেই হিরো। বাট অ্যান্টিহিরোর সাথে তার তফাৎ হইলো, মোরালিটি কিংবা আইডিওলজির। অ্যান্টিহিরোরা এইসব কনভেনশনাল সততা, ন্যায়, ফেয়ার জাজমেন্ট, বিবেকের দংশন এইগুলোর পরোয়া করে না।
এই ডেডপুল কিন্তু তথাকথিত সেই স্বর্ণযুগের কমিক ক্যারেক্টার না, বরং রিলেটিভলি মডার্ণ। ১৯৯১ এ প্রথম দ্যা নিউ মিউট্যান্টস#৯৮ এ আবির্ভাব হয় ডেডপুলের। ফার্স্ট অ্যাপিয়ারেন্সে সুপারভিলেইন হলেও আস্তে আস্তে অ্যান্টিহিরো হিসেবেই গ্র্যাজুয়ালি ডেভেলপ হতে থাকে তার চরিত্রটি। ডেডপুলের আসল নাম ওয়েইড উইলসন। যুবা বয়স থেকে আই মিন ডেডপুল হবার পূর্বে সে ছিলো "মার্সেনারি", অর্থাৎ "টাবিখা" অর্থাৎ টাকার বিনিময়ে খাদ্য, মানুষ কোনো প্রকার প্রব্লেমে পড়লে, কেউ কাউরে জ্বালাইলে ব্যাটা গিয়া সাইজ দিয়া আসতো। বিনিময়ে টাকা নিতো। শুধু তাদেরকেই মেরে ফেলতো, যাদের এই দুনিয়ায় বেঁচে থাকার ন্যুনতম অধিকার নাই। কমিক বই ঘাঁটলে তার মার্সিনারি লাইফের অনেক উদাহরণ পাওয়া যাবে। সেদিকে আর যাচ্ছি না। যাদের জানবার আগ্রহ আছে সিম্পল গুগল সার্চ করলেই বের করতে পারবেন। ওয়েইড উইলসনের মা ক্যান্সারে মারা যান। একসময় উইলসনের শরীরেও দানা বাঁধে ক্যান্সার। তখন সে রোমান্টিক্যালি ইনভল্ভড ভেনেসা নামের এক প্রস্টিটিউটের সাথে, টার্মিনাল ক্যান্সারের জন্য ভেনেসার সাথে তার ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ে ওয়েইড। একদিন বন্ধু উইজেলের বারে যায় ওয়েইড, তখন তার কাছে এক স্যুটেড বুটেড লোক আসে, আশ্বাস দেয় ক্যান্সার সারিয়ে দেয়ার। নিজেকে পরিচয় দেয় এক বিশেষ ফেসিলিটির রিক্রুটার হিসেবে, যাদের কাজ হচ্ছে শুধু ক্যান্সার নিরাময়ই নয় সাথে সুপারপাওয়ার ফ্রি টাইপ প্যাকেজও আছে। অনেকটা সুপারহিউম্যান এনহান্সমেন্ট প্রজেক্টের ব্যাপার স্যাপার আর কি। অনেক অনিচ্ছা স্বত্বেও ভেনেসাকে ছেড়ে সেই ফেসিলিটিতে জয়েন করে ওয়েইড, পরিচয় হয় অ্যায়াক্সের সাথে। শুরু হয় অ্যায়াক্সের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এক্সপেরিমেন্টাল প্রসিডিউর। শরীরের মিউট্যান্ট সেলগুলোকে অ্যাক্টিভেট করাতে বিভিন্ন রকম টর্চার টেকনিকের মধ্যে দিয়ে যেতে হয় ওয়েইডকে, যার একেকটার চাইতে একেকটা ভয়াবহ। এই অ্যায়াক্স হইলো একটু স্যাডিস্টিক কিসিমের। একসময় সে ওয়েইডকে জানায় এই ফেসিলিটির মূখ্য উদ্দেশ্য সম্পর্কে। আর তা হলো, মিউট্যান্ট সেলগুলো ট্রিগার করলে তার ক্যান্সার সেলগুলো মরে যাবে, আর তার শরীরে আসবে সুপারপাওয়ার। তখন তাকে সুপার স্লেভ বানিয়ে খোলা বাজারে অকশান করে আইপিএল স্টাইলে বিক্রি করে দেয়া হবে। বাই দিস টাইম, ওয়েইড অ্যায়াক্সের আসল নাম জেনে ফেলে। ফলাফল অ্যায়াক্স তাকে একটা ইনকিউবেটরে ঢুকিয়ে অক্সিজেনের লাইন কেটে দেয়, এক্সট্রিম পর্যায়ে গিয়ে তার সারা শরীর ডিসফিগারড হয়ে যায়। তারপর অ্যায়াক্স ওরফে ফ্রান্সিস জানায়, মিউট্যান্ট সেল ট্রিগার করেছে, সে এখন ক্যান্সার মুক্ত। তারপর এক ফাইটিং সিকোয়েন্স শেষে কোনোরকমে প্রাণে বেঁচে সেইখান থেকে পালিয়ে যায় ওয়েইড। এইরকম বদখত ডিসফিগারড ফেস নিয়ে কিভাবে ভেনেসার সামনে যাবে, ততোদিনে আবার পেরিয়ে গেছে অলমোস্ট দুই বছর। আশেপাশের মানুষজন যেই তাকে দেখে রীতিমতো আঁতকে উঠে।
ভাঙ্গা মন আর ডিসফিগারড খোমা নিয়ে বন্ধু উইজেলের সেই বারটায় ফিরে যায় ওয়েইড। রিভেন্জ আর ভেনজেন্সের তাড়নায় বন্ধু উইজেলের পরামর্শে নতুন মিশন ঠিক করে ওয়েইড। স্যুট বা কস্টিউম যাই বলেন না কেন আপাদমস্তক ঢেকে সেই ফ্রান্সিস ওরফে অ্যায়াক্সকে খুঁজে বের করতে হবে এবং তাকে দিয়ে ডিসফিগারড ফেস ঠিক করাতে হবে। এইভাবেই লাল কালো কস্টিউমে ওয়েইড উইনস্টন উইলসন হয়ে উঠে ডেডপুল। ডেডপুল নামটাও এসেছে আচমকা,অদ্ভূতভাবে। উইজেলের যেই বার ছিলো, সেইখানে যখন কোনো বারফাইট হতো তাতে কে আগে মারা যাবে এইটা নিয়ে বাজি ধরা হতো, সেইটার নাম দেয়া হয়েছিলো ডেড পুল।
মুভি নিয়ে আর গল্প করবো না, সেইটা আপনারা নিজেরাই টিকেট কেটে দেখে আসবেন। ডেডপুল আর ডেডপুল মুভিকে ঘিরে কিছু অন্যরকম ডিসকাশানে যেতে চাই। কমিক রিডার্সদের মাঝে ডেডপুল ভীষণরকম জনপ্রিয় এক চরিত্র। তার ব্যাডঅ্যাস অ্যাটিচিউড, মারদাঙ্গা অ্যাকশান, ইভেন তার কথাবার্তাও মারদাঙ্গা টাইপের, খুবই স্মার্ট আর উইটি। তার আরেকখান স্পেশালিটি আছে, যেইটাকে ইংরেজীতে বলে "ব্রেক দ্যা ফোর্থ ওয়াল"। এইটা ডেডপুলের সিগনেচার জিনিস। রাইটাররা ডেডপুলের কমিকসে কিছু কিছু ডায়ালগের মাধ্যমে কমিক ওয়ার্ল্ডের সাথে রিয়েল ওয়ার্ল্ডের একটা সেতু বন্ধন করতেন। যেমন ধরুন, আপনার সামনে একটা মঞ্চ নাটক হচ্ছে, আপনি দর্শক। এখন সেই নাটকের কোনো চরিত্র যদি আপনার সাথে কাহিনীর প্রয়োজনে কোনো ডায়ালগ থ্রো করে কিংবা কমিউনিকেট করে সেইটা হইলো ব্রেকিং দ্যা ফোর্থ ওয়াল। ডেডপুলে এই টাইপ রেফারেন্স প্রচুর। ডেডপুল মাঝে মাঝেই ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে দর্শকের সাথে কমিউনিকেট করে, এক পর্যায়ে দেখা যায়, ক্যামেরার গায়ে চু্ইয়িংগামও লেগে আছে। আর প্রায়শই অন্য ইউনিভার্সের রেফারেন্স বা উদাহরণ টানে বিভিন্ন ডায়ালগের মাধ্যমে। যেমন, ঐ ফ্যাসিলিটির যেই স্যুটেড বুটেড লোকটির কথাই ধরা যাক, সিনেমার এক পর্যায়ে তাকে এজেন্ট স্মিথ হিসেবে সম্বোধন করে ডেডপুল। এই এজেন্ট স্মিথ হলো দ্যা ম্যাট্রিক্সের সেই সুপার ভিলেইন, যার অ্যাপিয়ারেন্স অনেকটাই সেই স্যুটেড বুটেড লোকটার মতোন। কিংবা নেগাসনিক টিনএজ ওয়ারহেডকে এলিয়েন থ্রি মুভির রিপ্লের সাথে তুলনা করে মক করার ব্যাপারটিও বলা যায়। এইরকম গাদা গাদা উদাহরণ আছে। ফল্টি টাওয়ার্স সেই ব্রিটিশ টিভি সিরিজ, লর্ড অফ দ্যা রিংগসের ফ্যাট গ্যান্ডাল্ফ, স্টার ওয়ার্স, ইভেন লিয়ান নিসনের টেকেন, ১২৭ আওয়ার্স আর সবশেষে পোস্ট ক্রেডিটসে ফেরিস বুয়েলার্স ডে অফের ডিরেক্ট রেফারেন্স। আরো হয়তো অনেক কিছুই ছিলো। খোলা চোখে এগুলো মোটামুটি নজরে এসেছে আমার। বাই দ্যা ওয়ে, মুভিটা যারা হলে দেখবেন, দয়া করে পোস্ট ক্রেডিটস পুরাটা শেষ করে আসবেন। দুইটা সিকোয়েন্স আছে, ভীষণরকম মজা পাবেন।
এইবার মুভিটির ব্যাপারে হালকা পাতলা রিভিউ দেই। মুভিটা মারাত্মক এন্টারটেইনিং। রেটেড ভার্সন কেটেকুটেই যে মজা পেয়েছি, পুরোটা দেখতে পারলে যে কি হতো সেইটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আমি জানতাম ডেডপুল ক্যারেক্টারটা এমুনই, তবে ব্যাটা যে এই লেভেলের ফাজিল কোনো আইডিয়া ছিলো না, ডার্টি মাইন্ডেড, ভায়োলেন্ট, রিভেন্জফুল, মারাত্মক একরোখা সাথে হামবড়া ভাব, আর হোপলেসলি রোমান্টিক। চরিত্রায়নের পুরাই জগাখিচুড়ি, বাট ডেফিনিটলি ইন এ টেরিফিক ওয়ে। মুভিটার স্টোরিটেলিংটাও মারাত্মক। প্রেজেন্ট টাইমলাইন আর ফ্ল্যাশব্যাকের জুক্সটাপোজিংটা খুবই চমৎকারভাবে মিশেছে। মুভিটার স্টার্টিংয়েই নড়েচড়ে বসেছি। আর বাকিটা ইতিহাস, ধুমধাড়াক্কা রোলার কোস্টার রাইড। অ্যাকশান সিকোয়েন্সগুলো ব্রিলিয়ান্টলি এক্সিকিউটেড ছিলো, সাথে চোখ ধাঁধানো সিজিআই। মুভিটার একটাই নেগেটিভ দিক যেইটা আমার কাছে মনে হয়েছে, আর তা হলো ডেডপুল যতোটা ব্যাডঅ্যাস, ভিলেনটা ঠিক সেইরকম জমে নাই। তবে ডেডপুল একাই কোপাইছে, সাথে আবার এক্স ম্যান থেকে কলোসাস আর নেগাসনিকতো ছিলোই। নেগাসনিকরে আমার হেব্বি লাগছে। আর সব মিলিয়ে, ইট'স এ ড্যাম গুড ফার্স্ট এন্ট্রি ইন এ ফ্রাঞ্চাইজি।
স্ক্রিপ্ট, হিউমার, প্লেন্টি অফ সেক্স জোকস সব মিলিয়ে ব্যাপক হেসেছি মুভিটা দেখতে গিয়ে। স্ক্রিপ্টের কিছু কিছু ব্যাপারে রীতিমতো টাস্কি খেয়েছি। গ্রীণ ল্যান্টার্ন আর উইলভারিনকে যেইভাবে পচালো ডেডপুল তাতে পুরাই গড়াগড়ি অবস্থা। ওপেনিং ক্রেডিটসে যেইভাবে গড'স পারফেক্ট ইডিয়ট, এ হট চিক, অ্যান এন্টায়ারলি সিজিআই ক্যারেক্টার লেখাগুলো পড়ছিলাম তাতে পুরাই ভিমড়ি খাওয়ার যোগাড়। ব্যাপারটা অনেকটা মর্নিং গ্লোরি শোওস দ্যা ডে-এর মতোন ব্যাপার। ঐটা দেখেই আন্দাজ করছিলাম গোটা মুভিতে না জানি কি হবে! "Whose balls did I have to fondle to get my own movie? Can't tell ya — but it rhymes with Pulverine!" এইটা ছিলো ওয়ান অফ দ্যা ফানিয়েস্ট ডায়ালগ। আর "Please don't make the super-suit green. Or animated!" এইটাতো পুরাই সেল্ফ এক্সপ্ল্যানেটরি। গ্রীণ ল্যান্টার্ন আর রায়ান রেনল্ডসের সেই ডিজাস্টার কে বা ভুলিতে পারে। মজার ব্যাপার হইলো, গ্রীণ ল্যান্টার্ন আবার ডিসি কমিকসের। মুভিতে অনেক ইস্টার এগ ছিলো। কিছু আর্টিকেল ঘাঁটতে গিয়ে দেখি, স্পাইডারম্যান, ব্যাটম্যান, এক্সম্যানের প্রফেসর জেভিয়ার কাউকেই ছাড়েনি ডেডপুল। সিনেমার সেরা ডায়ালগ ছিলো, "With such a big mansion it's funny how I only ever see two of you. It's almost like the studio couldn't afford another X-Man!"
মুভিটার একটা দৃশ্য দেখে ভিতরে ভিতরে ভীষণরকম উত্তেজিত ছিলাম। জনপ্রিয় টিভি সিরিজ হাও আই মেট ইয়োর মাদার এ একটি এপিসোডে অভিনয় করেছিলেন ডেডপুলের নায়িকা মরেনো বাকারিন। সেইখানে একটা সিকোয়েন্সের সাথে ডেডপুলের একটা সিকোয়েন্সের হুবহু মিল খুঁজে পেয়েছি। এইটা কি ইন্টেনশনাল ছিলো নাকি আমার উর্বর মস্তিষ্কের কল্পনা খোদা মালুম। নীচে ছবি দিলাম সেই এপিসোডের, আপনারা এইবার মিলিয়ে দেখুন। আই এম ড্যাম শিওর এইটা একটা রেফারেন্স ছিলো।
যারা মুভিটি এখনও দেখেন নি, এক মুহূর্ত দেরি না করে হলে গিয়ে দেখে আসুন। এইরকম স্টাইলিশ, রিফ্রেশিং, মারদাঙ্গা উপভোগ্য মুভি খুব কমই দেখেছি। অলরেডি গ্রোবাল বক্স অফিসে ধুমাইয়া বিজনেস করছে মুভিটি। মাত্র ৫৮ মিলিয়ন ডলার বাজেটের এই মুভিটি যে অচিরেই ব্লকবাস্টার হতে চলেছে সেইটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না, আর মুভিটি দেখবার সময় চোখ কান খোলা রাখবেন, গুরু স্ট্যান লির একটা ক্যামিও আছে। কোনো মুহূর্তই যেনো মিস না হয়। আর শুরুতে ডেডপুলকে নিয়ে হিরো/অ্যান্টিহিরো যেই বয়ানটা দিলাম তার রেফারেন্সেও মুভিটায় একটা দৃশ্য আছে, মার্সেনারি থাকাকালীন অবস্থায় এক টিনএজ মেয়েকে ডিস্টার্ব করার কারণে পিজা ডেলিভারি বয়কে শাসানি দেয় ওয়েইড। টিনএজ মেয়েটা যখন তাকে ধন্যবাদ দিয়ে বলে, ইউ আর মাই হিরো, তখন ওয়েইড উইলসন তাকে শুধরে দিয়ে বলে, দ্যাট ইজ সামথিং আই এম নট।
আজ এ পর্যন্তই।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ভোর ৪:২৪