somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্মৃতির পাতায় ১৭দিন - পর্ব ১

১২ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১০:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সময়টা ২০১০ সালের শুরুর দিকে। সবেমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম। ক্লাস শুরু হল। হঠাৎ একদিন নোটিশ বোর্ডের একটি নোটিশের দিকে চোখ পড়ল। নোটিশটি ছিল সার্কভুক্ত দেশসমূহের সফর সম্পর্কিত। নোটিশটি পড়ে বিস্তারিত জানার প্রবল আগ্রহ জাগল। বিভিন্ন সূত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করলাম। তথ্যসমূহ ছিল এমন – আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবছর একটি সফরের আয়োজন করে। সার্কভুক্ত দেশগুলোই এই সফরের আওতাভুক্ত। ৬ষ্ট থেকে ৮ম সেমিস্টারের ছাত্ররাই এই সফরের অংশ হতে পারবে। এ সকল তথ্য জানার পর মনের মধ্যে একটা স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছিলাম। আমি জানতাম এই সফরের অংশ হতে হলে আমাকে অপেক্ষা করতে হবে আরো তিনটি বছর। এই তিন বছরকে মনে হচ্ছিল অনেক লম্বা একটি সময়। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের নামই তো বলা হল না। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্রগ্রাম।

সময় তার আপন গতিতেই চলতে থাকল। একের পর এক সেমিস্টার শেষ করতে করতে চলে এলাম ৬ষ্ট সেমিস্টারে। মনের অজান্তেই তিন বছর ধরে লালিত স্বপ্নের ঘন্টা বেজে উঠল। এরই মাঝে ফেসবুকে যুক্ত হয়েছিলাম সোহেল স্যারের সাথে। পূর্বের সফরের অংশ ছিলেন তিনি। স্যারের কল্যাণে ফেসবুকে যখন সফরের ছবিগুলো দেখি তখন এই সফরে অংশ নেওয়ার ইচ্ছা আরো কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এর সাথে যুক্ত হয়েছিল ফখরুলের ইচ্ছাশক্তিও। সে তো বলেই দিয়েছিল যেকোন উপায়েই সে এই সফরের অংশ হবেই। এরপর যখন জানতে পারলাম নকিব আর নাহিদও যেতে রাজি তখন আমাকে আর পাই কে!!

৬ষ্ঠ সেমিস্টারের ক্লাস শুরু হল। সফর নিয়ে ছোটখাটো আলোচনা হচ্ছিল সবার মাঝেই। যারা যাবে তারাও আলোচনা করেছে, যারা যাবে না তারাও আলোচনা করেছে। একদিন মার্কেটিং ম্যানেজম্যান্ট ক্লাসে রবিন স্যার সার্ক সফর নিয়ে কথা বললেন। তাঁর কাছ থেকে জানতে পারলাম এইবারের সফরে শিক্ষক যাচ্ছেন তিনজন। আর তাঁরা হলেন? নামগুলো না-ই বলি। কাহিনী থেকেই সেই তিনজনের নাম জানতে পারবে সবাই। এই তিনজন স্যারের নাম আমাদের স্বপ্নকে নিয়ে গিয়েছিল অন্য এক মাত্রায়। এই স্যারত্রয়ীকে পছন্দ করেনা এমন ছেলে আমাদের ডিপার্টমেন্টে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ আছে। রবিন স্যারের কথা শুনে অনেকেই সফরে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। যদিও পরে খালি কলসি বাঁজে বেশি প্রবাদের ন্যায় তারা সময়েয় সাথে সাথে হারিয়ে গিয়েছিল।

মিড টার্ম পরীক্ষা শেষ করে পাসপোর্টের আবেদনপত্র সংগ্রহ করলাম। কিন্তু অলসতার কারণে আবেদনপত্র জমা দেওয়া হল না। আমরা ভেবেছিলাম ফাইনাল পরীক্ষার পরেই সফরে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট অ্যাফেয়ার্স ডিভিশনের কর্মকর্তাও আমাদের এমনটা জানিয়েছিলেন। এই তথ্য পেয়ে আমি পাসপোর্টের জন্য আবেদন করলাম ৩রা জানুয়ারী, ২০১৩। ৬ই জানুয়ারী ৬ষ্ঠ সেমিস্টারের মার্কেটিং ম্যানেজম্যান্টের ক্লাস নিতে আসলেন রবিন স্যার। আমি হঠাৎ স্যারকে সফর সম্পর্কে বলতে বললাম। স্যার যা শোনালেন তাতে আমরা যেন আকাশ থেকে পড়লাম। ৩১ই জানুয়ারীর মধ্যে পাসপোর্ট জমা দিতে হবে। পাসপোর্ট আসতে সময় লাগবে এক মাস। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাসপোর্ট পাওয়া সম্ভব হবে না। আমি তো তাও পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছি নকিব তো তাও করেনি। মনের কোণে হতাশার কালো মেঘ জমা হল। আর বোধহয় যেতে পারছি না। কারণ আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছিলাম গেলে ৪জনই যাব। না গেলে কেউই নয়। উল্লেখ্য যে, ফখরুল আর নাহিদের পাসপোর্ট আগেই তৈরি ছিল।

রবিন স্যারের সাথে বারবার যোগাযোগ করলাম। সিটি ক্যম্পাসের সিরাজ স্যারের সাথে যোগাযোগ করে তিনি আমাদের আশ্বাস দিলেন আমাদের জন্য তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টায় করবেন। এবং তিনি তা করেছেনও। তার সাথে যুক্ত হল আমাদের ভাগ্যও। একের পর এক হরতাল, পরীক্ষার সময়সূচী সবকিছু মিলিয়ে আল্লাহ আমাদের ভাগ্যটাকে সুপ্রসন্ন করে দিয়েছিলেন। আগের আবেদন বাতিল করে আমি ২৬ই জানুয়ারি ইমারজেন্সি পাসপোর্টের জন্য পুণরায় আবেদন করি। আমাকে বলা হয় ৫ই ফেব্রুয়ারি পাসপোর্ট পাব। এরই মাঝে জানতে পারি নকিবের সাথে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছে জাহিদ। সেও আমাদের সাথে সফরে যাবে। তাকে স্বাগত জানালাম আমরা। নকিব আর জাহিদের পাসপোর্ট পাওয়ার কথা ৭ই ফেব্রুয়ারি। জাহিদ ৭ তারিখেই পাসপোর্ট হাতে পেল। আমি আর নকিব ঠিক সময়ে পাসপোর্ট পেলাম না। রবিন স্যার জানালেন ২০ই ফেব্রুয়ারি ভারতের অ্যাম্বেসিতে যেতে হবে। আমার বিশ্বাস ছিল নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই পাসপোর্ট পেয়ে যাব। হরতালের কারণে ভারতের অ্যাম্বেসি যাওয়ার দিন তারিখ পেছানো হল। অবশেষে পাসপোর্ট হাতে পেলাম ২৬ই ফেব্রুয়ারি। অবশেষে হরতালের কারণে অ্যাম্বেসিতে গেলাম ২৮ই ফেব্রুয়ারি। সেদিনও ছিল হরতাল। কিন্তু ঐদিন না গেলে আমাদের সফরটাই বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। মজার ব্যাপার হল, নকিবের পাসপোর্ট তখনও আসেনি। সে অ্যাম্বেসিতে যায় মার্চের ৩ তারিখে। অ্যাম্বেসি যাওয়ার আগে অনেকেই তালিকা থেকে তাদের নাম প্রত্যাহার করে। তাদের মধ্যে ছিল জাহিদও। তার নাম প্রত্যাহারের কারণ ছিল ভারতের হায়দ্রাবাদে বোমা হামলা। যাইহোক, মার্চের ৭ তারিখকে সফর শুরুর দিন হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়।

দিন – ১ (০৭-০৩-২০১৩)

৭ই মার্চ। দুপুর ২টায় শুরু হওয়ার কথা ছিল আমাদের যাত্রা। বিপত্তি বাধাল হরতাল। সময় পিছিয়ে দেয়া হয়। সবাইকে জানানো হয় সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে চট্রগ্রামের গরীবুল্লাহ শাহ মাজার নিকটস্থ হানিফ এন্টারপ্রাইজের বাস কাউন্টারে যেতে। বাসা থেকে বের হয়ে ফখরুলকে সঙ্গে নিয়ে ৫টায় পৌছালাম বাস কাউন্টারে। দেখলাম মুহিত একা বসে আছে। আর কেউ আসেনি তখনও। একে একে সবাই আসতে থাকল। বাকী ভাইও চলে আসলেন। বাকী ভাই হলেন ট্যুরিজম গাইড। তিনি আমাদের এই সফরের সবকিছু দেখাশোনা করবেন, নেতৃত্ব দিবেন। তিনি সবার মাঝে যার যার পাসপোর্ট আর ভিসা বিলিয়ে দিলেন। অ্যাম্বেসি যেদিন গিয়েছিলাম সেদিনই জানতে পারি স্থায়ী ক্যাম্পাসের তিনজন স্যারের মধ্যে একজন যাচ্ছেন না। তিনি হলেন রাকিব স্যার। বাস কাউন্টারে গিয়ে জানতে পারি সিটি ক্যাম্পাসের দুইজন স্যারের মধ্যে সিরাজ স্যার যাচ্ছেন না। সিটি ক্যাম্পাসের শিক্ষক হিসেবে শুধুমাত্র হাসিব স্যারই যাচ্ছেন। সকল যোগ বিয়োগের পরও সফর শুরু হল। সন্ধ্যা ৬টায় বাস ছাড়ার কথা থাকলেও হরতালের কারণে বাস সঠিক সময়ে আসতে পারল না। এর সাথে যোগ হল রাস্তায় জ্যাম। বাস আটকে ছিল পাকা রাস্তার মাথা (সিটি গেইটের পরেই)। কোন উপায় না দেখে সন্ধ্যা ৭টায় হানিফের মিনি বাসে করে রওনা দিলাম পাকা রাস্তার মাথার উদ্দেশ্যে। গরীবুল্লাহ শাহর মাজার হতে সিটি গেইট যেতে সময় লাগল ২ঘন্টা! অবশেষে রাত ৯:৩০ মিনিটে হানিফের বড় বাসে করে আমাদের যাত্রা শুরু হল।

বুড়িমারী সীমান্তের উদ্দেশ্যে বাস চলা শুরু করল। বাসে ছিল অনেক অপরিচিত মুখ। প্রথমেই পরিচয় হয় সিটি ক্যাম্পাসের আদনানের সাথে। তারপর পরিচয় হয় সাফি, সানির সঙ্গেও। ভাটিয়ারি থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত আমাদের সাথে একে একে যোগ দিল আরো ৭জন। সবাই খুব রোমাঞ্চিত। তবে কিছুটা বিরক্তও ছিল সবাই। কারণ রাস্তায় খুব বড়সড় জ্যাম ছিল।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

১. ১২ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১০:৫৯

২. ১২ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১১:৩০

েবনিটগ বলেছেন: :((

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শুভ নববর্ষ। শুভ কামনা সব সময়।

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ ভোর ৬:৫০

শহুরে মঙ্গলের বলি, পল্লির হালখাতা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৭:৫১





ছবি টি সফিকুল আলম কিরন ভাইয়ের তোলা।

আজ পহেলা বৈশাখ মানেই শহরের রাস্তায় মুখোশ, কাগজের ঘোড়া, আর লাল-সাদা শাড়ির বাহার। তার নাম—মঙ্গল শোভাযাত্রা। জাতিসংঘ স্বীকৃত, উৎসবমুখর, মিডিয়ায় আলোচিত। কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামী শরীয়া মোতাবেক সংক্ষেপে তালাক দেওয়ার সঠিক পদ্ধতি

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:২০

ইসলামী শরীয়া মোতাবেক সংক্ষেপে তালাক দেওয়ার সঠিক পদ্ধতি

ছবি: অন্তর্জাল থেকে সংগৃহিত।

তালাক হচ্ছে সবচেয়ে ঘৃণিত হালাল কাজগুলোর একটি। পারিবারিক জীবনে বিশেষ অবস্থায় কখনও কখনও তালাকের প্রয়োজনীয়তা এড়ানো যায় না বিধায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৪৩২ বয়স!

লিখেছেন রাজীব নুর, ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১১:৩৪



বাংলা নববর্ষ নিয়ে অতি উচ্ছ্বাস -
উন্মাদনা বিশেষত যারা একদিনের জন্য নিখাঁদ বাঙালি হয়ে 'মাথায় মাল' তুলে রীতিমতো উত্তেজনায় তড়পাতে থাকেন তাকে খাস বাংলায় বলে ভণ্ডামি!

বাংলা বর্ষপঞ্জিকা আমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারত-বাংলাদেশে আলাদা দিনে বাংলা নববর্ষ কেন?

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৫:৪৪

ভারত-বাংলাদেশে আলাদা দিনে বাংলা নববর্ষ কেন?


বাংলাদেশে পহেলা বৈশাখ আসে ইংরেজি মাসের ১৪ এপ্রিল। অন্যদিকে পশ্চিম বাংলায় ১৫ এপ্রিল উদযাপন করা হয় উৎসবটি। যদিও ১৯৫২ সন পর্যন্ত বাংলাদেশের মানুষ এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×