আমরা সবাই মোটামোটি জানি ১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাপোলো ১১ মিশন চাঁদে সর্বপ্রথম মানুষ পাঠাতে সফল হয়। মার্কিন মহাকাশচারী নীল আর্মস্ট্রং চাঁদের মাটিতে প্রথম মানুষ হিসেবে পা রাখেন। এর পরের ৩ বছর ১৯৭১ সাল পর্যন্ত মোট ৬টি অ্যাপোলো মিশন পরিচালিত হয় যেখানে আরো ১০জন মহাকাশচারী চাঁদের মাটিতে পা রাখতে সক্ষম হন। আর এবছরের ২০ জুলাই চন্দ্র বিজয়ের ৫০ বছর পূর্ণ হবে।
দূরত্ব?
চাঁদ আমাদের পৃথিবী থেকে গড়ে প্রায় চার লক্ষ কিলোমিটার বা ২ লক্ষ মাইল দূরে অবস্থিত। ক্লান্তিকর এ সংখ্যা গুলো দিয়ে আসলে চাঁদ ও পৃথিবীর মধ্যকার এ বিশাল দূরত্ব কল্পনা করা সম্ভব না। ৪ লক্ষ কিলোমিটার আসলেই বিশাল, এতই বিশাল যে আমাদের সৌরজগতের ৭টি গ্রহকে এই ফাঁকা জায়গার মধ্যে স্থাপন করা সম্ভব হবে। অ্যাপোলো-১১ সহ অন্যান্য অ্যাপোলো মিশনের মহাকাশচারীরা চাঁদের দূরত্ব সঠিক ভাবে নিরূপণ করার জন্য চাঁদে বিশেষ প্রতিফলক বস্তু স্থাপন করেছেন। নাসার তথ্য অনুযায়ী চাঁদ প্রতিবছর দেড় ইঞ্চি করে পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।
আকার?
চাঁদের ব্যাস পৃথিবীর চার ভাগের এক ভাগ। সহজ কথায় আপনি চাঁদের এক পৃষ্ঠে সম্পূর্ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বসিয়ে দিতে পারবেন।
চাঁদের রঙ?
স্বভাবতই চাঁদের নিজস্ব কোন আলো নেই। এটি শুধুমাত্র সুর্যের আলো প্রতিফলিত করে। কিন্তু আমরা বিভিন্ন ভাবে চাঁদের রঙকে উপস্থাপন করি। যেমনঃ ব্ল্যাক মুন, ব্লু মুন, ব্লাড মুন, সুপার মুন, সুপার ব্লু মুন ইদ্যাদি। মূলত চাঁদের সাপেক্ষে পৃথিবীর বিভিন্ন অবস্থান ও সূর্যের আলোর কারণে কিছু বিশেষ সময়ে চাঁদকে বিশেষ ভাবে দেখতে পাওয়া যায়। কাছে থেকে দেখলে চাঁদের রঙ ধুসর এবং অনেকটা আনরোমান্টিক।
আমরা কেনো সবসময় চাঁদের এক পাশ দেখতে পাই?
আমাদের অনেকের কাছে তথ্যটি নতুন মনে হতে পারে, কিন্তু আমরা সব সময় কেবল মাত্র চাঁদের এক পাশ দেখতে পাই। অন্যপাশ কখনোই আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়নি। সম্প্রতি চীন সর্বপ্রথম চাঁদের অন্ধকার পাশে মহাকাশযান প্রেরণ করতে সক্ষম হয়। যার নামঃ Chang'e 4। এটি চন্দ্র সম্পর্কিত গবেষণার এক নতুন অধ্যায় শুরু করে।
ঠিক পৃথিবীর মতো চাঁদও তার নিজস্ব অক্ষে আবর্তন করে। আর একই সাথে এটি নিজস্ব কক্ষপথে পৃথিবীকে কেন্দ্র করেও ঘুরছে। নিজ অক্ষে চাঁদের আবর্তনের পর্যায়কাল এবং তার কক্ষপথের পর্যায়কাল একই হওয়ায় আমরা পৃথিবী থেকে চাঁদের একই পৃষ্ঠ সবসময় দেখতে পাই। যদিও চাঁদের অপর পাশকে Dark Side বা অন্ধকার পাশ বলা হয়, কিন্তু চাঁদের কোনো অঞ্চলই স্থায়ীভাবে অন্ধকার নয়।
চাঁদের কলঙ্কঃ
চাঁদের দিকে তাকালে সর্বপ্রথম উজ্জ্বল আলোকিত অংশের পাশাপাশি কালো অন্ধকারাচ্ছন্ন অংশও আমাদের নজর কাড়ে। একটু গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করলে আমরা মানুষের মুখের আকৃতির ছায়া দেখতে পাবো। এটি Man on The Moon নামে পরিচিত।
Man on the Moon
পৃথিবী থেকে দৃশ্যমান চাঁদের কালো অংশগুলোকে একত্রে Maria ( একবচনে Mare) বলে। Mare হচ্ছে ল্যাটিন শব্দ যার অর্থ সমুদ্র। চাঁদের Mare গুলো একসময় বিশাল বিশাল সমুদ্র ছিলো। তবে এগুলোতে আমাদের পৃথিবীর মতো পানি ছিল না। প্রাচীনকালে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এই অংশগুলো পানি দ্বারা পূর্ণ বলে ভাবতেন বিধায়ই এ ধরণের নামকরণ করা হয়েছিল। ধারনা করা হয় যে, চাঁদ সৃষ্টি হবার পর কয়েক মিলিয়ন বছর ধরে চাঁদের বুকে প্রতিনিয়ত উল্কাপিণ্ড, ধূমকেতু ইত্যাদি আছড়ে পড়ে। আরে সংঘর্ষের ফলস্বরূপ চাঁদে বিশাল আকৃতির গর্তের সৃষ্টি হয়। আর গর্তগুলও জলন্ত লাভা দ্বারা পূর্ণ হতে থেকে। ক্রমান্বয়ে, ধীরে ধীরে চাঁদের পৃষ্ঠ ঠাণ্ডা হতে থাকে ও লাভা শীতল হয়ে মসৃণ Maria সৃষ্টি করে। সবথেকে বিখ্যাত Mare হচ্ছে Sea of Tranquility যার বাংলা মানে "শান্তির সাগর।" অত্যন্ত মসৃন এবং সমতল হওয়ার কারণে এটি অ্যাপোলো ১১ এর ল্যান্ডিং সাইট হিসেবে নির্বাচন করা হয়। চাঁদের Maria গুলো সমতল থেকে বেশ নিচু এবং এবড়ো থেবড়ো হওয়ায় এখান থেকে যূরর্যের আলো ভালো ভাবে প্রতিফলিত হতে পারে না। এগুলোই আমরা চাঁদের কলঙ্ক নামে চিনি।
নিজে দেখুনঃ
অ্যাপোলো-১১ কোথায় ল্যান্ড করে ছিলো নিজের চোখে দেখতে চান? তার জন্য সবার প্রথমে Sea of Tranquility খোজে বের করতে হবে। যা খুবই সহজ কাজ। পূর্ণিমায় কয়েকদিন আগে(পূর্ণিমায় চাঁদ অত্যন্ত উজ্জ্বল থাকার কারণে নাও দেখা যেতে পারে) বাসার ছাদে অথবা বাড়ির উঠোনে বেরিয়ে হাঁ করে চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকু। Sea of Tranquility দেখতে অনেকটা বাংলা ৪ এর মতো, কারণ দুটি বৃত্তাকার আকৃতির গর্ত পরস্পরকে স্পর্শ করে আছে। দুটি সাগরের মধ্যে Sea of Tranquility হচ্ছে নিচের গর্তটি। আর একবার খুঁজে বের করতে পারলে নিচের ছবির সাথে মিলিয়ে নিন। নিচে বর্ণীত চিত্রের লাল চিহ্নিত অংশে নীল আর্মস্ট্রং প্রথম পা রেখেছিলেন।
Image Credit: NASA/JPL-Caltech
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুলাই, ২০১৯ সকাল ১০:৩৫