একটি জিনিস আপনারা খেয়াল করেছেন কিনা জানিনা, কিন্তু লক্ষ্য করলে দেখতে পারবেন স্নায়ু যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে এই প্রথম গত দু তিন বছর থেকে মহাকাশ বিজয়ের প্রতিযোগিতা অনেক বেড়ে গেছে। বেশেষ করে বেসরকারী সংগঠন গুলো যেভাবে তাদের মিশন গুলো সফল ভাবে সম্পূর্ণ করতেছে তা কল্পনাতীত। টেসলার নির্মাতা Elon Musk, আমাজনের মালিক Jeff Bezos প্রমুখ এখন স্পেসকে মানুষের পর্যটননের জন্য সহজলভ্য করার বিলিয়ন ডলারের প্রজেক্টে বিনিয়োগকরে ঢাকঢোল পিটাচ্ছেন। Elon Musk তো ইতিমধ্যে টেসলার একটি গাড়ী স্পেসে পাঠিয়ে ফেলেছে। পাশাপাশি তারা আগামী ১০-২০ বছরের মধ্যে মঙ্গলে মানুষ পাঠাতেও বেশ আত্মবিশ্বাসী। এছাড়াও ছোট খাটো কোম্পানি গুলোও তাদের জাত চিনিয়ে দিতে ভুল করতেছে না। এরই অংশ স্বরূপ ইসরায়েলের একটি মহাকাশযান চাঁদে আবারো প্রায় ৬০ বছর পর ল্যান্ড করার চেষ্টা করে।
মজার ইতিহাসঃ
যদিওবা চাঁদ হচ্ছে মহাজাগতিকভাবে পৃথিবীর সব থেকে কাছের বস্তু এবং আমাদের অতী আপনজন, তারপরও চাঁদ মামার বাড়িতে মনুষ্য নির্মিত যে কোনো জিনিস পাঠানো বেশ কঠিন। কারণ পৃথিবীর ভালোবাসার বাঁধন(মানে গ্রাভিটি) ছেঁড়াটা এতই কঠিন যে সেজন্য প্রচুর পরিমাণ শক্তি এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতার প্রয়োজন হয়। উপরন্তু চাঁদ মামার ঘরের ঠিক দরজার সামনে(মানে চাঁদে টার্গেট মতো ল্যান্ডিং) এসে ল্যান্ড করাটাও বেশ দুষ্কর। এখনো পর্যন্ত মাত্র তিনটি দেশ সফলভাবে চাঁদের মাটিতে মানুষ্য নির্মিত রোভার ল্যান্ড করাতে সক্ষম হয়। দেশগুলো হচ্ছে, যথাক্রমেঃ সোভিয়েত ইউনিয়ন, আমেরিকা এবং চীন। এর মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়ন সর্ব প্রথম ঠিক ৬০ বছর পূর্বে ১৯৫৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তাদের মহাকাশযান LUNA-2 সফল ভাবে ল্যান্ড করাতে সক্ষম হয়। এতে মোতেই খুশি ছিলো না সোভিয়েতের সৎ ভাই আমেরিকা। সোভিয়েতের পরবর্তী প্লান শোনেই(যা ছিলো চাঁদে মানুষ পাঠানো), আমেরিকা সিধান্ত নিলো যেভাবেই হোক তারা আগে চাঁদের মাটিতে পা রাখবে। যেই ভাবা সেই কাজ। আমেরিকার অতকালীন রাষ্ট্রপতি ছিলেন জন এফ, কেনেডি। তিনি ১৯৬১ সালে ক্ষণটায় আসেন এবং খুব গম্ভীরভাবে নাসাকে নির্দেশনা দেন এ নিয়ে কাজ করার জন্য। যেই ভাবা সেই কাজ। নাসাও এর জন্য প্রস্তুত ছিলো। কারণ এর মাত্র ৬ মাস আগে ১৯৬১ সালে আমেরিকা দ্বিতীয় দেশ হিসেবে স্পেসে মানুষ প্রেরণ করে। যাইহোক, মাত্র আট বছরের মাথায়, ১৯৬৯ সালে নাসা সফল ভাবে, পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম এবং একমাত্র দেশ হিসেবে চাঁদের মাটিতে পা রাখে। চাঁদের মাটিতে পা রেখেও আমেরিকার ঘা কমে নি। উপরন্তু, ১৯৬৯ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত তিন বছরের মাথায় তাদের Apollo Mission এর দ্বারা ১২জন মহাকাশচারী সফল ভাবে চাঁদে পা রাখতে সক্ষম হন। বেশ অফ টপিকে চলে গেছি, কোথায় যেন ছিলাম! ওহ… তিনটি দেশের কথা বলতে ছিলাম- প্রথম দুইটা তো শেষ। তৃতীয় দেশ হিসেবে চীন এ বছরের(২০১৯) জানুয়ারি মাসে চাঁদের মাটিতে একটি মহাকাশযান পাঠিয়ে ইতোমধ্যে গবেষণা শুরু করে দিয়েছে।
কিন্তু ইসরায়েল খুব কাছে এসেও চতুর্থ দেশ হিবেসে চন্দ্র বিজয় করতে পারলো না।
ইসরায়েলের মহাকাশযানটির নাম ছিলো BARESHEET, যেটি এপ্রিলের ১১ তারিখ তাদের চাঁদে নামার কথা ছিলো। এটি সফল হলে আমরা বেশ কিছু নতুন রের্কডের খবর পেতাম। এটি হতো প্রথম ল্যান্ডিং যেটি নিয়ন্ত্রিত হয়েছে পুরোপুরি বেসরকারি কোম্পানী দ্বারা। BAREHSEET একটি হিব্রু শব্দ যার ইংরেজি অনুবাদ করলে হয়- “In the Benginning.” এটি ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, টেসলা গাড়ির মালিক Elon Musk এর স্পেস এজেন্সি “ SpaceX” এর ফ্যালকন-৯ রকেটে করে আমেরিকার ফ্লোরিডা থেকে যাত্রা শুরু করে। মহাকাশে পোঁছার পর সব কিছু মতামতই ভালোই চলছিলো, যদিওবা মেশিন বেশ কয়েকবার বন্ধ হয়ে পরে, কিন্তু তা খুব তাড়াতাড়ি সারিউয়ে তোলা হয়। এটি শেষমেশ এপ্রিলের ৪ তারিখ চাঁদের কক্ষ পথে পৌঁছাতে সক্ষম হয়, কিন্তু ল্যান্ড করার কিছু মূহুর্ত আগেই যান্ত্রিক গোলযোগের কারনে চাঁদের মাটিতে BARESHEET ক্রাশ করে। SPACEIL নামক কোম্পানি মহাকাশযানটি তৈরি করে এবং এটি বানাতে প্রায় ১০০ মিনিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় হয়।
কেন হঠাৎ এই চন্দ্র বিজয়ের চেষ্টা?
ইসরায়েল এই প্রচেষ্টার আসল কারণ ছিলো একটি প্রতিযোগিতা- GOOGLE X PRIZE. GOOGLE X PRIZE মূলত হচ্ছে google দ্বারা অর্থায়নকৃত একটি প্রতিযোগিতা যার মূল লক্ষ্য ছিলো বেসরকারি এবং ছোট খাটো স্পেস সংগঠন গুলিকে চাঁদের মাটিতে মহাকাশযান পাঠাতে উৎসাহ প্রদান করা। কিন্তু খালি কথায় তো আর চিড়া ভেজে না। তাই প্রতিযোগিতা চলাকালীন সময়ে সর্বপ্রথম যারা চন্দ্র বিজয় করতে সক্ষম হবে তাদের জন্য ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পুরষ্কার করা হয়। আর BARESHEET ছিলো এই প্রতিযোগিতা ফাইনালিস্ট। কিন্তু ৫টি ফাইনাল দলের মধ্যে কেউই নির্দিষ্ট সময়সীমা মার্চ ২১, ২০১৮ র আগে চাঁদে যেতে সক্ষম হয় নি। কিন্তু SPACEIL সিন্ধান্ত নেয় প্রতিযোগিতা শেষ হলেও তারা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাবে এবং নাসার কিছু টেকনক্যাল সাহায্য সহকারে তারা বেশ ফুরফুরে মেজাজেই ছিলো। কিন্তু কি আর করা চাঁদ মামার ভালোবাসাটা আর আগের মতো নেই।
আর হ্যাঁ, এ বিষয়ে আরো জানতে চাইলে অবশ্যই মন্তব্য করুন। শুভ ব্লগিং৷
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ৯:০৯