সকাল ১১টায় প্রবেশ করি যাদুঘরে এবং ৪ঃ৪৫ পর্যন্ত বিনা বিরতিতে মিউজিয়াম জুড়ে আমার গভীর পর্যবেক্ষণ চলতে থাকে। কিন্তু আফসোস এতক্ষণ থাকার পরও পুরো মিউজিয়াম দেখা সম্ভব হয় নি।
আজকের পর্ব শুরু করা যাক মহাকাশ থেকেঃ
১৯০৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডোতে দুই রাখাল বালক তাদের গরু চড়ানোর সময় ৩০৯ কেজি ওজনের লোহার তৈরি এই উল্কাপিণ্ডটি খুঁজে পায়। তারপর American Museum of Natural History একটি খণ্ডিত অংশ কিনে ফেলে যেটার নাম তারা পরবর্তীতে দেয় Guffey। বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন যে এই উল্কাপিণ্ডটি ভূপৃষ্ঠে আঘাত করার আগে বিশাল আকারের ছিলো, যদিও এর অন্যান্য অংশ খুঁজে পাওয়া যায় নি। আমেরিকার অন্য বিভিন্ন মিউজিয়ামে এই উল্কাপিণ্ডটির অন্যান্য অংশ সংরক্ষিত রয়েছে।
মহাজাগতিক বস্তু নিয়ে বিজ্ঞানীরা সবসময় কৌতুহল এজন্য বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীতে প্রাপ্ত মহাজাগতিক বিভিন্ন বস্তু নিয়ে গবেষণাও কম হয়নি আর উপরের এই উল্কাপিণ্ড নিয়ে অনেক গবেষণা পরিচালনা করা হয়েছে। লোহার তৈরি উল্কাপিন্ডের ভিতরের দিকটা অনেক সময় বাহির দিক থেকে অনেক বেশি আকর্ষণীয়। চিত্রে যেমন দেখতে পাচ্ছেন বাইরের দিকটা অনেকটাই মলিন এবং কালো, কিন্তু ভিতরের দিকটা খুব বেশি উজ্জ্বল। যখন উল্কাপিণ্ডতির একটি অংশ খণ্ডিত করে পালিশ করা হয় তখন সেটা উজ্জ্বল আয়নার মতো আচরণ করে এবং আলো প্রতিফলন করে। কিন্তু আমি নিশ্চিত নই পৃথিবীর ভূগর্ভ থেকে যে লোহার খন্ড সংগ্রহ করা হয় এগুলোকে পালিশ করলে কি ঠিক এভাবেই আলোর প্রতিফলন করবে কিনা।
Ahnighito মিউজিয়ামে প্রদর্শনকৃত সবচেয়ে বড় উল্কাপিণ্ড। প্রথম যখন আমি উল্কাপিণ্ডটি স্পর্শ করি তখন খুব একটা কোন অনুভূতি জাগে নি মনে। কিন্তু পরবর্তীতে যখন সামনে রাখা বিবরণ পড়ে জানতে পারলাম উল্কাপিণ্ড টি প্রায় ৪,৫ বিলিয়ন বছর পুরনো। তখন একটি আলাদা অনুভূতি জাগে মনে। এই উল্কাপিণ্ড গঠন এবং সূর্যের সৃষ্টি প্রায় একই সাথে হয়। তার মানে আমি সূর্যের বয়সের সমান একটি বস্তুকে স্পর্শ করলাম। এটা পড়ার পর নাজানি নিজেকে একটু হলেও আলাদা মনে হচ্ছিল। এই উল্কাপিণ্ড টি ১৮৯৪ সালে গ্রিনল্যান্ডে আবিষ্কৃত হয়। আর এটি প্রায় ১০হাজার বছর আগে পৃথিবীর মাটি স্পর্শ করে।
বিভিন্ন সময় বিজ্ঞানীরা সাধারণ পাথর খন্ড দেখলে সেটাকে উল্কাপিণ্ড বলে ভুল করে ফেলেন। ছবির পাথরগুলো উল্কাপিণ্ড নয়। খুব সাধারণ পাথর যেটাকে বিজ্ঞানীরা উল্কাপিণ্ড ভেবে সংগ্রহ করেছিলেন।
সেখানে আমার কৈতুহলী মনের জন্য একদম উপযুক্ত প্রিয় একটি জিনিসের দেখা পেয়ে গেলাম। উপরের ছবিটি হচ্ছে একটি ধূমকেতুর। যখন থেকে ধুমকেতু কি তা বুঝতে পারি তখন থেকেই আকাশে ধূমকেতু দেখার জন্য অনেকভাবে চেষ্টা করি। কিন্তু কখনই সেটা সম্ভব হয়নি। না হোক রাতের আকাশে, কিন্তু মিউজিয়ামে নিশ্চল অবস্থায় অবশেষে দেখা পেলাম।
৬৩ ফুট লম্বা এই নৌকাটি মিউজিয়ামের একটি অন্যতম মূল আকর্ষণ 1870 খ্রিস্টাব্দে Ceder নামক একটি গাছের মধ্যে খোদাই করে নৌকাটি নির্মাণ করা হয়। নৌকাটি আমেরিকার দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে বসবাসরত হাইডা(Haida) নামক আদি আমেরিকানদের দ্বারা নকশাকৃত। নৌকাটির উভয় পাশে খুনে তিমি মাছের (Killer Whale) নকশা করা যেটি হাইডা(Haida) ট্রাইবের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আফ্রিকা থেকে সংগ্রহকৃত হাতে লেখা আল কোরআন
মিউজিয়ামে একটি গ্যালারী ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন নিদর্শনের জন্য বরাদ্দকৃত ছিলো। শুধুমাত্র মধ্যপ্রাচ্যের দেশ না, বিশ্বের অনেক অংশে ইসলাম ধর্মের সামগ্রিক যাত্রা সম্পর্কে অনেক আকর্ষণীয় তথ্য পাওয়া যায় এখানে । বিশেষত ৭ম শতাব্দী এবং এর পরবর্তী সময়ের। যদিও ছোটবেলা থেকে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের জ্ঞান লাভ করি কিন্তু মিউজিয়ামে সরাসরি বিভিন্ন ধরণের আকর্ষনীয় নিদর্শন দেখে নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হচ্ছিল কারণ এতোদিন যা মানুষের মুখে শোনে এসেছি তা আজ স্বচক্ষে দেখার সুযোগ হলো।
এই গ্যালারির আরেকটি প্রদর্শনীতে চোখ আটকে যায়। সেটা হচ্ছে "মুসলমান নারী"। কারণ যদিও প্রদর্শিত পোশাকগুলো সংগ্রহ করা হয় কয়েকশ বছর আগে, তা সত্ত্বেও পোশাকগুলো খুব আধুনিক এবং ফ্যাশনেবল।
এখানে একদম আদিম মানুষ থেকে শুরু করে বর্তমান হোমো স্যাপিয়েন্স পর্যন্ত মানুষের মাথার আসল খুলি সংরক্ষিত করে রাখা হয়েছে। আধুনিক মানুষের বৈজ্ঞানিক নাম হোমো স্যাপিয়েন্স (Homo sapiens)। বর্তমান মানুষ "হোমো" গন (genus) এর অন্তর্ভুক্ত। হোমো গণের অন্তর্ভুক্ত ঐতিহাসিকভাবে বিখ্যাত কিছু মানুষের প্রজাতি হলো হোমো হ্যাবিলিস ( মানুষ্য প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে বয়স্ক) , হোমো ইরেক্টাস, হোমো এন্টেসেসর, হোমো এরগাষ্টার, হোমো হেইডেলবার্জেন্সিস, হোমো নিয়ান্ডারথ্যালেন্সিস, হোমো ফ্লোরেসিয়েন্সিস।
নিয়ানডার্থাল (Neanderthal) নামক মনুষ্য প্রজাতির বাচ্চার মাথার খুলি। ৬০০,০০০ - ৩৫০,০০০ বছর আগে ইউরোপ এবং এশিয়ার মধ্য ও পশ্চিম অঞ্চলে এরা বসবাস করতো। ৫০,০০০ বছর আগে এশিয়াতে এবং ৩০,০০০ বছর আগে ইউরোপে এই প্রজাতিটি বিলুপ্ত হয়ে যায়।
চলে আসুন আমেরিকার ইতিহাসে। উপরের ছবিটিতে ইউরোপিয়ানদের আমেরিকায় প্রথম জেমসটাউনে পদার্পনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। ইউরোপিয়ানদের উপনিবেশের শুরুটা সন্ধির মাধ্যমে শুরু হলেও পরবর্তীতে আমেরিকার আদিবাসীদের উপর অত্যাচার বাড়তেই থাকে। এবং তাদের জনসংখ্যা জ্যামিতিক হারে কমতে থাকে।
ধাঁধাঃ বলতে হবে ছবিটি কিসের। (যদিও অস্পষ্ট)
আর আমার অন্য আরেক বন্ধু।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ৩:৪৮