১লা আগস্ট ২০১৭, সকাল ১০:২০, বিমানের ক্যাপ্টেন ঘোষণা করলেন আমরা নিউইয়র্কের আকাশসীমায় প্রবেশ করেছি। ''নিউইয়র্কের আকাশে তখন ঝকঝকে রোদ।'' বিমানবালার কথা অনু্যায়ী সীটের পাশের জানালার পর্দা উঠাতেই, সূর্যমামার প্রখর তেজ হানা দিচ্ছিলো চোখে। বাংলাদেশের বাড়ি থেকে বেরোনোর পর থেকে প্রায় ২৪ ঘন্টারও বেশি সময় কেটে গেছে। দীর্ঘ সময় প্লেনের ঘুপচি মার্কা সীটে বসে আসাটা মোটেই সুখকর ছিল না। আটলান্টিক মহাসাগরের উপর দিয়ে উড়ে আসার সময় বুকের ভেতরটা বার বার ধুকধুক করছিলো। আমাদের পাইলট মহাশকেও প্লেনটিকে সামলাতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে।
মাটি থেকে ৩৮০০০ ফুট উপরে নিউইর্কের আকাশে ঘুরা ফেরা করছে আমাদের বিমান। শহরটি সম্পর্কে অতীতের সকর ধারণাই পালটে যাচ্ছিলো উপর থেকে দেখে। হাজার লক্ষ্য ঘর-বাড়ী, গাড়ী। সাথে সবুজ আরও সবুজ চিরো সবুজ গাছপালা একদম দূর দৃষ্টি পর্যন্ত। হঠাৎই হাডসন নদীর আবির্ভাব।
মনে মনে খুব ইচ্ছা ছিল বিমান থেকে স্ট্যাচু অফ লিবার্টির দেখা পাবো। কিন্তু সব আশা নিরাশা করে আমাদের বিমান বিমানবন্দরের অতি কাছাকাছি চলে আসলো। জন এফ কেনেডি বিমান বন্দর!! বলা হয়ে থাকে এটি পৃথিবীর ব্যস্ত এবং ব্যস্ততম বিমান বন্দর। কেন এত ব্যস্ত বলা হয় তার প্রমাণ পেলাম আজ। এমন কোন সেকেন্ড বাদ যায় নেই, প্রত্যেক ক্ষণেই কোনো না কোনো বিমান উঠা নামা করছে। রাতের নিউইয়র্কের আকাশে তারার তুলনায় বিমানের সংখ্যাটাই বেশি হবে।
বেশ কয়েকবার বিমানবন্দরের চারদিকে ঘুরার পর অবশেষে আমাদের নামার পালা আসলো। ঘন্টায় প্রায় ৪০০ কিলোমিটার বেগে, বেগ বললে ভুল হবে বরং প্রচণ্ড বেগে রানওয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো আমাদের বিমান। তখন রবীঠাকুরের " প্রচন্ড গর্জনে আসিলো একি দুর্দিনো ঘনঘটা" গানটির কথা মনে পড়ছিলো। তার আগেই অবশ্য সীট ব্যাল্ট বাঁধার ঘোষণা আসলো। (বিমানে আর কিছু নিরাপত্তা থাকুক আর না থাকুক সীট ব্যাল্ট বাঁধার উপর খুব বেশি জোড় দেওয়া হয়। সামান্য কিছু হলেই সীট ব্যাল্ট বাঁধার ঘোষণা আসতো।) তারপর দোতলা প্লেনটি রানওয়ের বুকে তীব্র বেগে আঘাত হানলো। আগেই বলেছি পৃথিবীর ব্যস্ততম বিমান বন্দর! তাই অবতণের পরও আরও ২০-২৫ মিনিট অপেক্ষার পর বেরিয়ে আসতে সক্ষম হলাম। প্রথম পা রাখলাম ''নিউ ইয়র্কের মাটিতে। তবে প্রথম পা রাখাটা মতেই সুখকর ছিল না। বিমানবন্দরেই ছোটোখাটো একটি দুর্ঘটনার শিকার হলাম। দুর্ঘটনা ছোট হলেও বেশ কদিন ভোগাল।
প্লেন থেকে নেমে সব থেকে মিস করছিলাম প্লেনের খাবার দাবার। নিজের ঘরের মতই আপ্যায়ন করে তারা। এখানকার কফির অনেক নাম ডাক শুনেছিলাম। তাই প্লেনে অনেক শখ করে বিমানবালার কাছ থেকে এক কাপ কফি চেয়ে নিলাম। কিন্তু যেই না মুখে দিয়েছি তখনই মনে হয়েছিলো বিষ খেয়ে ফেলেছি। ওই যে কবিতা আছে না ''আমি জেনে শুনে বিষ করেছি পান'' এই অবস্থা ছিল। আমাদের দেশের করলা, নিম পাতাও এত তেতো নয় যতটা এই কফি ছিলো।
বিমান বন্দর থেকে বেরিয়েই গাড়ি করে যাওয়া হচ্ছে গন্তব্যে। নিউইয়র্ক আসলে গাড়ীর শহর। গাড়ীই হচ্ছে এখানকার মানুষের প্রাণ। গাড়ী ছাড়া নিউইর্ক কল্পনা করলে আসলে কিছুই আর অবশিষ্ঠ থাকবে না। আসার আগেই কল্পনা করেছিলাম নামার পরই আকাশচুম্বী দালানকোঠার দেখা পাবো, তবে চারপাশে ছোটখাটো বিল্ডিংই দেখছিলাম। অবশেষে Whitestone Bridge থেকে সুদূরে নিউইয়র্কের প্রাণ ম্যানহাটন দেখা যাচ্ছিলো। সাথে সাথে বিশাল বিশাল দালান। মনে হচ্ছিলো মেঘগুলা দালানের চূড়ায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছে।
********** Whitestone Bridge******
এখানকার আবহাওয়াটাও উল্লেখ করার মতো। কেন জানি বাংলাদেশ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ঠেকছিল। আজকের দিনে প্রচণ্ড গরম বাইরে কিন্তু যখনি গাছের নিছে দাঁড়াবেন তখন শান্ত স্নিগ্ধ ঠান্ডা বাতাসে মনের সকল দুশ্চিন্তা চলে যেতে বাধ্য।
রাস্তারধারে আপেল গাছে কমলা গাছে প্রচুর সংখ্যক আপেল কমলা ঝুলে আছে কিন্তু কারোর সেগুলো পারার প্রতি কোনো মনোভাব নেই। আমাদের দেশের উদ্যম শিশুরা এগুলা হাতের কাছে পেলে ১ম দিনেই সাবাড় করে ফেলতো।
এখানকার রাস্তার কথা আরো উল্লেখ্য করার মতো। পিচ ঢালা পরিচ্ছন্ন রাস্তা। চকচক করছিলো সমস্ত পথ। একা থাকলে হয়তাও শোয়ে ঘুমিয়েই পড়তাম রাস্তায়।
রাস্তায় ইংরেজ মানুষের তুলনায় মানুষের মিশ্রভাষী মানুষই বেশি। ভাষা সম্পর্কিত সামান্য জ্ঞানে বুঝতে পারলাম বেশির ভাগই স্প্যানিশ, ফ্রেঞ্চ, মেক্সিকান আর বাঙালিতো আছেই। এত দূরে এসে বাংলা কথা শোনে সত্যিই অনেক ভালো লাগছিলো।।
বাকি কথা পরে হবে..................
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ৩:২৩