আজকে সিনেমাখোরদের আড্ডা টিএসসিতে। চারিদিকে দূর্যোধন দূর্যোধন রব। সিনেমাখোরদের আড্ডা বটে, কিন্তু দূর্যোধনকে দেখার উদ্দেশ্যেও কেউ কেউ আসবেন। দূর্যোধন পর্দার আড়ালের মানুষ। তাকে নাকি তার আম্মু (আমাদের আন্টি) ছাড়া আর কেউ দেখেন নাই। তিনি পর্দার আড়ালে, দরজার আড়ালে, দেয়ালের আড়ালে বসে ব্লগিঙ করেন। ইভেন তার ল্যাপটপের ওয়েবক্যামে পর্যন্ত একটা কালো টেপ লাগানো আছে। ভুলেও যেন কেউ তারে না দেখতে পারে সেইজন্য এই অবস্থা।
আড্ডাটা এড়াইতে পারলে হৈতো, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে কাউসার রুশো আর পুশকিনের জন্য। এরা এমনভাবে ধরসে যেন কচ্ছপের কামড়। কচ্ছপের কামড়ের চেয়ে হুমায়ূন আহমেদের কামড় বলা যাইতে পারে, সে নাকি কচ্ছপের চেয়েও শক্ত কামড় দিয়া ধরতে পারে। এই দুইজন 'আসবেন তো', 'ফোন নম্বার দেন' টাইপের কথা লিইখা ফেসবুক আর ব্লগ ভড়ায়া ফেলসে, কম্পিউটারের ভাইরাস সব পালাইসে ল্যাপটপ থেকে। অব্যর্থ এন্টিভাইরাস। তবে এত বেশী প্যানপ্যানানি সহ্য হচ্ছিল না, তাই 'আসবো' বলতেই হৈসিল। এখন উপায় নাই - সেই কথা রক্ষা করতে যাইতেই হবে।
কিন্তু গেলেই তো হবে না, কিছু ত্যাদোড় টাইপের পোলাপাইন্ও যাবে। এরা আবার শক্তিশালী লেন্সের ক্যামেরা নিয়া যাবে। কত কিলোমিটার থেকে ছবি তুলে ফেলে তার কোন নিশ্চয়তা নাই। যদিও শর্ত দেয়া হৈসে যে দূর্যোধন কেন কারই ফটু তোলা যাইবে না - কিন্তু তারা যে বদের বদ, মানবে কিনা সোন্দ। সুতরাঙ, আগেই ব্যবস্থা নেয়া দর্কার। এইডস হ্ওয়ার পরে হায় হুতাশ কৈরা লাভ নাই, প্রটেকশনই বেশী দরকার।
যেই ভাবা সেই কাজ, দূর্যোধন তার মুখ ঢাকার ব্যবস্থা করতে লাগলো - এইবার বুঝিবে ত্যাদড়ের দল - ক্যামেরা থাকিলেই শুধু হয় না, প্রতিপক্ষ্ও শক্তিশালী বটে।
প্রথমেই চিন্তা করলেন তার প্রোফাইল ছবির বেশ ধরেই যাবেন।
কিন্তু এতে সমস্যা কম নাই। এই ধুতি যে কোন জায়গায় হঠাত খুলে গেলে ইজ্জত নিয়ে টানাটানি। মুখ দেখা না গেলেও ফটোগ্রাফারের দল যে বস্ত্রহরনের ছবি তুলতে আপত্তি করবে না তা নি:সন্দেহ। সুতরাঙ বাদ।
তারপর পড়লেন এই মুখোশ। এর সাথে আবার হাত মোজা্ও আছে। সবুজ রঙ।
উহু, হবে না। এই মুখোশ পড়ে টিএসসিতে গেলে কীটপতংগ উড়ে আসতে পারে, সুতরাঙ এই সুযোগ দেয়া যাবে না, তাছাড়া বিড়ি খা্ওয়ার ব্যাপক সমস্যা আছে এই মুখোশে।
জোকারের মুখোশ পড়লে কেমন হয়?
সমস্যা ! এই মুখোশের মুখ আটা। দূর্যোধন বোবা, এই ধারনা দেয়া ঠিক হবে না।
বেছে বেছে এইবার এই মুখোশ পড়ল দূর্যোধন
এতে ঝুকি আরও বেশী। যে কোন সময় জুতা উড়ে আসার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না।
মাস্ক অব জোরোই ঠিক আছে। যদিও এইটার সাথে বিশাল একটা বোরকা আছে, কিন্তু সমস্যা নাই। কিন্তু মুখের আদ্দেকটা তো খোলাই আছে। বাদ !
পাশের বাসার ডাক্তারের মাস্কটা ধার কৈরা নিয়া আসলো এইবার।
টিএসসি আবার বারডেম-বঙ্গবন্ধু হাসাপাতালের সাথেই। সুতরাঙ অপারেশন থিয়েটারে ঢোকায়া দেয়ার সম্ভাবনা আছে, তাছাড়া রুগী মারিয়া ডাক্তার পালাইতেসে - এই ধারনায় জনতা ধৈরা ধোলাই দিতে পারে। সুতরাঙ এইটা্ও বাদ।
তারচে ভদ্র পোশাকে যা্ওয়াই বেটার। দূর্যোধন এইবার আকাশী শার্টের সাথে লাল টকটকে টাই বাধলেন - কেমন ডেস্টিনি ডেস্টিনি মনে হৈতেসে, সমস্যা নাই। তারপর একটা মোজায় তিনটা ছিদ্র করে মাথায় পড়ে ফেললেন।
ভালোই, কিন্তু মোজার গন্ধে পেট গুলায়া উঠতেসে - এইটা পৈড়া গেলে লোকজন কেউ ধারে কাছে ঘেষবে না। সুতরাঙ, এইটা্ও বাদ।
তারচে ওমরা কৈরা আসছি এমন ভাব নিলে কেমন হয়?
এইটা রিস্কি। দেশে যে হারে গুম বাড়তেসে, দেখা গেল এই মাস্ক দেইখাই দূর্যোধন গুম হয়া গেসে, তখন আবার ঝামেলা। দরকার নাই।
সুতরাঙ দূর্যোধন তার কালো জ্যাকেটখানা গায়ে চাপাইলেন, মাথায় দিলেন একটা ক্যাপ। তারপর একটা সোয়াইন ফ্লু মাস্ক দিয়া মুখ ঢাকলেন। কিন্তু হায়, কস্টিউম চেঞ্জ করতে করতে তো সন্ধ্যা হয়ে গেসে। এইসময় ক্যাপ মাথায় দিয়া গেলে লোকে দারাশিকোর মতো হাফ টাকলু মনে করতে পারে। তাহলে উপায়?
উপায় আর কি! যা আছে কপালে ভেবে দূর্যোধন বের হৈলেন বাসা থেকে। পড়নে তার কালো জাম্পার, তার কলার আবার উচু করে রাখা, মাথায় দিলেন একটা কালো শীতের টুপি। জাম্পারের কলার উচু করে নাক পর্যন্ত ঢাকলেন, টুপি নামিয়ে কপাল। বাকী থাকলো চোখ, চশমাটা একবার পড়েও খুলে রাখলেন। সোহরা্ওয়ার্দী উদ্যানের অন্ধকারে দাড়ালেই আর কোন সমস্যা হবে না। সুতরাঙ দূর্যোধন চললেন সিনেমাখোর আড্ডায় যোগ দিতে- কেমন ছিল তার সেই সাজ?
দেখুন