আজ আমার মনটা খুব ভালো।
গতকাল আমার অনার্সের রেজাল্ট বের হয়েছে। অবশেষে প্রকৌশলী হলাম।রেজাল্ট বেশ ভালোই হয়েছে।আজ মনটা আসলেই বেশ ভালো।বাবা-মা নেই আমার। আমার বড়ভাইয়া (আমার চেয়ে ৬ বছর বড়,পৃথিবীতে আমার একমাত্র আপনজন) খুব খুশি।তাঁর খুশি দেখেই আমি অনেক খুশি হয়েছি।
কিছু গোলাপফুল কিনলাম, ভার্সিটি যাবো। ড্রাইভারকে বললাম সুন্দর একটি গান ছাড়তে। ফর্ম্যাল পোষাকে সবসময়ই আমার একটু কেমন যেন দমবন্ধ অনুভব হয়।কিন্তু কিছু করার নেই, আজ আমাকে এই পোষাকেই যেতে হবে। কালো শার্ট আর কালো প্যান্ট।
এসে পরলাম ভার্সিটিতে। চলে গেলাম সরাসরি ক্যান্টিনে।সেখানেই যে কেউ আজ আমার অপেক্ষায় আছে।
বাহ! তিনি তো বেশ আগেই চলে এসেছেন বোধহয়। বেশ ভালোই সেজেগুঁজে এসেছেন। বসেছেন জানালার পাশের সেই কোণার টেবিলে
যেখানে প্রথম আমি তাকে দেখেছিলাম।গাঁঢ় নীল শাড়ি, হাতে সবসময়ের মত কাঁচের চুঁড়ি।
সে - এত দেরি?
আমি - কই এত দেরি? উল্টো তাড়াতাড়ি আসলাম।
সে - এহ!! কখনো না।সবসবময় তোমার শুধু দেরি।সারাজীবনই আমার মনে হয় তোমার জন্য এমন অপেক্ষা করতে হবে।
আমি - উফ, খামবে তুমি? সবসময় খালি জ্যাঠামো।
সে - জ্বি জনাব, আমি আপনার চেয়ে ১ বছরের বড় তাই আমি জ্যাঠামো করবোই করবো।
আমি - আচ্ছা, আমার জ্যাঠী, এখনতো ঠান্ডা হোন।
সে - চা খাবো।
আমি - আমিও খাবো।
সে - তোমার মনে আছে ঠিক এখানে তুমি কি করেছিলে?
আমি - জ্বি, আপনার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। আপনি সামনের টেবিলে বসে ল্যাপটপে কাজ করছিলেন, আর আমি গুণে গুণে ৩৫ কাপ চা খেয়েছিলাম।
সে - হা হা হা, গাধা, এমন বোকা আমি কমই দেখেছি।
আমি (কিছুটা রেগে) - হ্যাঁ, তাতো দেখবেই।দুনিয়ার সব বাজে কিছুই আমি।
সে - উফফ, এই ছেলেটাকে নিয়ে আমি কি করি? শুধু অল্পতেই রেগে যায়। এই এই, তুমি কালো শার্ট পড়েছো!!! থ্যাংকউ।
আমি - এতক্ষণ পর চোখে দেখলে?
সে - হা হা হা, আগেই দেখেছি।
আমি - আপনি তো বলেছিলেন ,যেদিন আমি অনার্সের রেজাল্ট পাবো তারপর দিন যেন আপনার বাসায় যাই কালো শার্ট-প্যান্ট পড়ে।আর হাতে যেন থাকে লাল গোলাপ।
সে - তা আজ এখানে যে? আমার বাসায় না কেন?
আমি - কারণ, আমি তোমাকে এখানে খুঁজে পাবো,আমি তা জানতাম।
সে - আর কি জানো?
আমি - আর জানি আমি তোমাকে............
"মামা", হঠাৎ ডাক শুনে স্বম্বিৎ ফিরে পেলাম।
কেমন আছেন মামা- ক্যান্টিনের পরিচিত বেয়ারা।
ভালো- আমি
অনেকদিন পর মামা আপনেরে দেকলাম - বেয়ারা
কই অনেকদিন, ২ মাস হবে হয়ত। আমাকে এককাপ চা দাও।- আমি
টেবিলে রাখা ফুলগুলোর দিকে চাইলাম।আজ যদি সে থাকতো,মনে হয় উপরের কথোপকথনগুলোই হত।তাকে কথা দিয়েছিলাম,যেদিন আমি প্রকৌশলী হব তারপরদিন যেন তার জন্য লাল গোলাপ নিয়ে তার বাসায় যাই। আমার পড়নে যেন থাকে কালো শার্ট-প্যান্ট। আজ তার নির্দেশমত সবই করেছি, কিন্তু সেই নেই।সে তার কথা রাখেনি,সে আমার অপেক্ষায় থাকেনি। আজ আমিই তার অপেক্ষায় রয়েছি।জানি, সে আর কখনো ফিরে আসবেনা।
সন্ধ্যা হয়ে আসছে, বনানীর একটি দোতালা বাড়ির গেটে ফুলগুলো রেখে চলে আসছি। আজ খুব হাঁটতে ইচ্ছে হচ্ছে।হেঁটেই বাসায় যাবো।ঠান্ডা বাতাস বইছে,মনে হয় বৃষ্টি হবে। আমার বেদনা কি তাহলে প্রকৃতিকেও ছুঁয়েছে আজ ?
(ডায়রীতে এটা লিখেছিলাম ২০০৮ সালে। আজ কিছু লিখতে ইচ্ছে হল, তাই এটা লিখে দিলাম)