বাসায় প্রবেশ করতেই কেমন যেনো লাগছে। সারা বাসায় কেউ নেই। হাতের ব্যাগটা সোফায় রেখে পাশের সোফায় বসে জুতো জোড়া খুললাম।কিছুক্ষণ বসেই রইলাম চুপচাপ। কেনো যেনো কিছুই ভালো লাগছে না।ডাইনিং টেবিলে রাখা আছে খাবার,কিন্তু খেতে যে মন চাইছে না।
রাত ১২টা পার হয়েছে সেই কখন, নিজের রুমের দিকে এগুলাম। আমার রুমের দরজা লাগানো , আজবতো! আমিতো কখনো দরজা লক তো দূর,ঘুমানোর সময় ছাড়া দরজা কখনোই লাগাইনা।
যাই হোক, দরজা খুলে তো আরো অবাক, বাতি অফ করা। নাহ, নতুন কাজের মানুষটার একেবারেই কান্ডজ্ঞান নেই।বাতির সুইচ টিপতেই চমকে উঠলাম।
একি!!!!!! সারা রুম যে বাচ্চাদের জন্মদিনের অনুষ্ঠানের মত করে সাজানো ! আশ্চর্য, আজ হয়েছে কি আমার ,কেমন যেনো সব লাগছে। দোলনচাঁপার গন্ধে রুম সুবাসিত।
"শুভ জন্মদিন"
আমি চমকে উঠে তাকালাম রুমে লাগোয়া বারান্দার দিকে, আর বললাম ,"কে ? কে ওখানে"?
"আমি", বলেই বারান্দা হতে রুমে ঢুকলো আমার ভালোবাসার মানুষটি। পরনে সাদা সালোয়ার-কামিজ আর হালকা নীলাভ ওড়না।হাতে গাঢ় নীল কাঁচের চুঁড়ির শব্দ হচ্ছে।বাতাসে চুলগুলো উড়ছে।আমার দিকে তাকিয়ে স্বভাবসুলভ হালকা করে হাসি দিলো। যে হাসির জন্য কিনা আমি জীবন পর্যন্ত দিতে পারি।
আবারো বললো- শুভ জন্মদিন
আমি - তুমি কখন এলে? তাও এত রাতে
সে - অনেকক্ষণ, আজ যে তোমার জন্মদিন, কিভাবে আমি তোমাকে ছাড়া এতদূরে থাকি?
আমি - আমি কি এখনো বাচ্চা?
বলে হেসে দিলাম।
সে - তুমিতো আমার বাবুসোনা।(এসে গাল টিপে ধরলো)
আমি - ধ্যাৎ, কিযে বলনা?
বলেই আবারো হেসে দিলাম।
রুমের মাঝের টেবিলে ছোট্ট এক কেক, সেদিকে টেনে নিয়ে হাতে নাইফ দিয়ে বললো," আমি জন্মদিনের কেক এ মোমবাতি পছন্দ করিনা জানোইতো, তাই শুধু কেক রা্খলাম, আমি জন্মদিনের গান গাইবো আর তুমি কেক কাটবে"।
এর কথামত সব করলাম, কেক কেটে একে খাওয়ালাম, সে আমাকে খাইয়ে দিল।দু'জন বারান্দায় বসলাম, শুরু হলো পুরনো দিনের স্মৃতিরোমন্থন। কিন্তু সব সেই বলে গেল, আমি শুধু তার পানেই চেয়ে আছি। প্রচন্ড বাতাস বইছে,মনে হয় ভালো বৃষ্টি হবে।বাতাসে তার চুল এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে, আমি হাত দিয়ে ঠিক করে দিচ্ছি।
সে - কেনো তুমি মনমরা হয়ে থাকো সবসময়?
আমি - কেনো তুমি এতদূরে থাকো?
সে - আমি না হয় দূরে থাকি, তাই বলে তুমি এমন করে থাকবে?
আমি - আমার তোমাকে ছাড়া কে আছে বলো?
সে - আমি তো আছি, এই যে আজ তোমার কাছে ছুটে এলাম।
আমি - তুমি কি জানো আমি কতটা তোমাকে ভালোবাসি?
সে - না জানলে কি আজ আমার ভালোবাসার মানুষের জন্মদিনে ছুটে আসি?
আমি - আমার কাছেই থাকো, প্লিজ আমার কাছেই থাকো।
বলেই তাকে জড়িয়ে ধরলাম। আমার দু'চোখ অশ্রুতে ভরে উঠলো
সে - আমি সবসময়ই তোমার কাছে আছি, শুধু একবার নাহয় ডেকে দেখো্।
আমি - কেনো আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলে?
সে - আমি কি যেতে চেয়েছি বলো? আমি কি করতে পারি? নিয়তি যে ছিল।
আমি - আর যেওনা, আমাকে ছেড়ে কোথাও যেওনা।
আবার জড়িয়ে ধরলাম।দু'চোখের পানি থামছেনা আমার
সে - না, এ হয়না, আমাকে যেতেই হবে।আমি নিয়তি খন্ডন যে করতে পারিনা।
আমি তার হাত দু'টো ধরে কান্নামাখা কন্ঠে বললাম, "প্লিজ, আরেকটু থাকো, আর কিছুক্ষণ। আর কিছু চাই না।"
সে - থাকলাম তো অনেকক্ষণ, আবারো আসবো।
বলে আমাকে জড়িয়ে কান্নামাখা কন্ঠে বললো ,"তুমি ভালো থাকবে, বলো, কথা দাও যে কখনো তুমি কষ্টে থাকবেনা, আমার জন্যও না"
আমি - আমি কিচ্ছু জানিনা, প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেওনা।
সে - আমি আসবো, আবারো আসবো..........তোমার জন্যই আসবো, তোমার কাছেই আসবো...........
আমি - তুমি যেওনা, আমাকে ছেড়ে যেওনা.............
আমি চিৎকার করে উঠলাম। আমার ভালবাসা আমার কাছ থেকে চলে যাচ্ছে, বাতাসে তার চুল এলোমেলো, মুখে স্মিত হাসি আর চোখে জল।
হঠাৎ ঘুম থেকে জেগে উঠলাম। ভোরের আযান শোনা যাচ্ছে, সাথে বৃষ্টির শব্দ। বারান্দায় দাঁড়ালাম। ঠান্ডা বাতাস বইছে।আজ কত তারিখ? ২১শে অক্টোবর কি? মোবাইলে তারিখটা দেখলাম, হ্যাঁ, ২১শে অক্টোবর, আমার জন্মদিন।
এক বুকভরা ব্যথা আর চোখের জল নিয়ে আমার ভালবাসার মানুষটির কথা ভাবতে থাকলাম। যে কিনা আমাকে ছেড়ে বহুদূরে চলে গেছে, যেখান থেকে কখনো কেউ ফিরে আসেনা। ল্যাপটপ অন করে ছেড়ে দিলাম একটি গান।
"যেখানেই সীমান্ত তোমার, সেখানে বসন্ত আমার
ভালবাসা হৃদয়ে নিয়ে, আমি বারেবার আসি ফিরে,
ডাকি তোমায় কাছে............................"