somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিবর্তনতত্ত্ব ও বিশ্বাসের প্রশ্নে তার অবস্থান

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৭ দুপুর ২:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিবর্তন বিজ্ঞানের একটি আলোচনা। বলা হয়, প্রাণীসমূহের বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন ঘটে। প্রজন্ম পরম্পরায় ঘটে জীনের রূপান্তর। ভিন্ন গোষ্ঠীর সাথে জীনের আদান-প্রদানের মাধ্যমেও ঘটে বৈশিষ্ট্যে পরিবর্তন। ফলে একটি বিশেষ প্রজাতি এক প্রজন্মে যেসকল জীনসম্ভার বহন করে, তার দূরের কোন পরবর্তী প্রজন্মে জীনসম্ভার ঠিক একই থাকে না। বহু প্রজন্ম সাপেক্ষে এই পার্থক্য চলতে থাকলে ঘটে প্রাণীর বিবর্তন।

বিভিন্ন প্রজাতি আছে, যাদের জীবদ্দশা আমাদের তুলনায় অত্যাল্প। তাদের বহু প্রজন্ম পরম্পরা দেখার ও তাদের বিবর্তন পর্যবেক্ষণ করার সৌভাগ্য মানুষের হয়েছে। অর্থাৎ, কমপক্ষে কিছু প্রাণীর ক্ষেত্রে তত্ত্বটি পর্যবেক্ষণলব্ধ সত্য, যেমন ব্যাকটেরিয়া।

এ সংক্রান্ত একটি পরীক্ষা গত শতকের ৮০এর দশকে ডায়ান ডড করেন একপ্রকারের মাছির উপর। পরীক্ষায় একই প্রজাতির মাছিকে দুইটি আলাদা প্রকোষ্ঠে রাখা হয়। একটি প্রকোষ্ঠে দেয়া হয় স্টার্চজাতীয় খাবার, অন্যটিতে মাল্টোজ-জাতীয় খাবার। কেবল আট প্রজন্ম পরে দুই প্রকোষ্ঠের মাছির মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। সেই পার্থক্য ছিল এতটাই, যে ভিন্ন প্রকোষ্ঠের দুটি মাছি পরস্পর মিলিত হতে ব্যর্থ হয়। এমন কি তারা তাদের মূল প্রজাতির মাছির সাথেও মিলিত হতে ব্যর্থ হয়। একে বলে স্পেশিয়েশন বা বলতে পারি প্রজাতিকরণ। অর্থাৎ প্রকোষ্ঠ দুইটির মাছিগুলো দুইটি ভিন্ন ও নতুন প্রজাতিতে পরিণত হয়েছে। তাদের বৈশিষ্ট্যে এত বেশি পার্থক্য তৈরি হয়েছে যে তাদের মধ্যে আর জীন বিনিময় সম্ভব নয়।

প্রজাতিকরণ বিবর্তনের একটি ফল। এভাবেই বিভিন্ন প্রজাতি সৃষ্টি হয়েছে বলে বিবর্তন ব্যাখ্যা করে। কিভাবে বিভিন্ন প্রাণীর সৃষ্টি ও এবং কেন কিছু কিছু প্রাণী জীনগতভাবে খুব কাছাকাছি হওয়া সত্ত্বেও এক প্রজাতি নয়, বিবর্তন তার মোক্ষম একটি বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা।

তবে এটি স্থির কোন তত্ত্ব নয়। এটি ধর্মতত্ত্বের সাথে তুলনীয়ও নয়। কেননা, ধর্ম বিশ্বাসের বিষয়, বিজ্ঞান ব্যবহারের। বিবর্তনগত ব্যাখ্যার ব্যবাহারিক উপযোগিতা অসামান্য বিধায় আমরা একে ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রাকৃতিক ঘটনা ব্যাখ্যা করি। তবে তত্ত্বটি নিয়ত পরিমার্জন হয় নব নব ঘটনা, ফসিল ইত্যাদিকে জানা ব্যাখ্যার সাথে সমায়িত করার জন্য।

পাশ্চাত্যেই প্রাণীর উদ্ভব নিয়ে বিবর্তনের সাথে কিছু খ্রিস্টীয় ধর্মসংগঠনের বিরোধ আছে। বিশেষত পাঠ্যপুস্তকে এর অন্তর্ভুক্তি নিয়ে। তবে খ্রিস্টীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ কয়েকটি ধর্মসংগঠন এর সাথে ধর্মতত্ত্বের কোন বিরোধ নেই বলে মনে করে। যেমন, রোমান ক্যাথলিক চার্চ, অ্যাঙ্গলিকান চার্চ, প্রোট্যাস্ট্যান্টদের মধ্যে লুথেরান চার্চ। অপরদিকে প্রাচ্যে বিবর্তন নিয়ে খুব উচ্চবাচ্য শোনা যায় নি। ইসলাম ধর্মের কিছু আলোচক বিবর্তনকে ভুল মনে করেন, আবার কিছু আলোচক এর সাথে কোর'আনের সামাঞ্জস্য দেখাবার চেষ্টা করেছেন।

তবে, এটি একটি বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। যুগে যুগে প্রাকৃতিক ঘটনা বর্ণনায় মানুষ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা তৈরি ও সংশোধন করেছে। পরমাণুর মডেল আর সৌরজগতের ধারণা দুইটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। এ দুইটি নিয়েই মানুষ কালে কালে বিভিন্ন ব্যাখ্যা তৈরি করেছে। প্রতিটিই ঘটনার কিছু অংশকে ব্যাখ্যা করতে পারতো, যেমন পৃথিবীর চারদিকে সবকিছু ঘুরছে ধরে নিলে আমরা আকাশে যা দেখি তার একটি আপাত ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। কিন্তু প্রতিটি নতুন ব্যাখ্যাই পূর্বের ব্যাখ্যার চেয়ে বেশি শক্তিশালী ছিল, যেমন সূর্যের চারিদিকে সমস্ত গ্রহ ঘুরছে ধরলে বিভিন্ন গ্রহের আকাশে জটিল পথ অবলম্বন করে বিচরণ আর সূর্যের উদয়াস্ত উভয়ের ব্যাখ্যা করা যায়। তারপর আরো সংশোধন, যেমন বৃত্তাকার ঘূর্ণন, উপবৃত্তাকার ঘূর্ণন, গ্রহের উপগ্রহ, ইত্যাদি। পরমাণু মডেলের ক্ষেত্রেও একই কথা বলা যায়।

অর্থাৎ, বিজ্ঞানের তত্ত্বসমূহ নিত্য নয়, বিজ্ঞানের তা দাবী করার কথাও নয়। প্রাকৃতিক ঘটনা ব্যাখ্যায় তার কাজ মোক্ষম তত্ত্ব তৈরি করা। বিবর্তনতত্ত্বও নানা পরিমার্জনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ফলত, বিশ্বাসের প্ল্যাটফর্ম থেকে একে ভুল দাবী করলে একে একটি ভুল তুলনার মধ্যে ফেলা হবে। কেননা, বিজ্ঞানের নানা ব্যবহারে, ব্যাখ্যায় এটি অপরিহার্য। বিশ্বাসের প্রশ্নে পক্ষ নেয়া এর উদ্দেশ্য নয়।

বিশ্বাসের প্রশ্নে বিবর্তনকে ভুল বলে উড়িয়ে দেওয়ার তাই যেমন বিপদ আছে, তেমনি, একে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের প্রশ্নে ব্যবহারের বিপদও কম নয়। বিশ্বাসীদের অনেক আলোচকদের মাঝে এর সাথে নিজ ধর্মের সামাঞ্জস্য দেখানোর প্রচেষ্টা দেখা যায়। আর অবিশ্বাসীরা তো বহু আগে থেকে একে ব্যবহার করে আসছে ধর্মের ভিত্তিহীনতা প্রমাণের অস্ত্র হিসেবে। এখানে বিপদটা হল, এটি সহসাই ব্যাপক পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে কোন নতুন উদ্ভাবনের কারণে। যে সকল উদাহরণের উপর ভিত্তি করে বিবর্তনকে একটি বিশ্বাসের সাথে মেলানো হবে, ওই সকল উদাহরণের নতুন ব্যাখ্যা আসলে তাই বিপদটা ব্যাপক। তখন ঐ উদাহরণের সাথে বিশ্বাসকে যে মেলাচ্ছে, তাকে তার বক্তব্য পুনঃসংশোধন করতে হবে।

এটি একটি ব্যাখ্যাক্ষম অস্ত্র। তবে, একে ব্যবহার করে বিশ্বাস অবিশ্বাসের প্রশ্নের মীমাংসা এখনো আয়ত্তের বাইরে। ঘটনার ব্যাখ্যায় একে ব্যবহার করতে হবে। এর প্রতি অনুভূতিপ্রবণ হয়ে পড়া অথবা একে ভুল বলে উড়িয়ে দেয়া কোনটিই বিজ্ঞানসুলভ নয়।






সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৭ বিকাল ৩:০২
১৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×