ততক্ষণে আমাদের পাশে এসে বসেছে আকেমী ইয়ামদা। পুতুলের মত দেখতে। তারও ভাংড়া পছন্দ নয়। তাকে চেপে ধরলো মিরেলা: তোমাদের সাহিত্যের খবর বলো, ্আকেমী। কি লেখো তুমি?
আমি লিখি কবিতা, হাইকু, আর ছোট ছোট গল্প।
হাইক কি? বিস্মিত প্রশ্ন মিরেলার।
জাপানী কবিতা, ছোট এবং ধারালো।
কি রকম?
তোমরা থাকে বলো ধ্বনিসেরকমই একটা দোলাকে আমরা বলি –“অন”। সাধারণত ১৭টি অন নিয়ে একটা হাইকু গঠিত হয়। এর বৈশিষ্ট হচ্ছে “বিরু” এবং কিরজী তে। রুবাই যেমন চার লাইনের মধ্যে প্রথম দু-লাইনে এক যুক্তি; তৃতীয় লাইনে উল্টোযুক্তি আর চতুর্থ লাইনে সমাধানের চমকহাইকুও সেরকম। ট্রেডিশনাল হাইকু ৫-৭-৫টি “অন” নিয়ে ৩ লাইনে রচিত বা পঠিত হয়। এছাড়াও আছে ১১ অনের হাইকু- যার বাঁক হচ্ছে ৩-৫-৩এ।
এর বিশিষ্টতা কি ?
প্রকৃতি ও প্রেমকে একত্র করণে। প্রকৃতির উপমাকে বলে “কিগো” যা আসলে “সাইজিকির” একটা ফর্ম।
বাহ। দারুণ তোআমি কবিতার এই ধারা সম্পর্কে জানতাই না। দেবজীকে ধন্যবাদ।
আমাকে নয় কেনআমি ফোঁড়ন কাটি দুই সুন্দরীকে।
তোমাকেও ধন্যবাদ। একই সঙ্গে হাগ করে দুই নারী।
ভেতর থেকে ছুটে আসে রণরঙ্গিনী জুর্গা। এবার তাহলে আমার একটা চুমু নিশ্চয়ই পাওনা হয়েছেইয়াং ম্যান।
আমি কপালে চোখ তুলে বলিকেন?
ইয়াংদের হাগ মানেই তো বড়োদে কিস।
ড. জ্যানেটও এসে যোগ দেন বান্দায়তাহলে বুড়োদের কি রইলো।
দুমূর্খ জুর্গা অকপটে বলে ওঠেকেন, বিছানা?
সহাস্যে আমরা আকেমীর দিকে ফিরি। এবার শোগও তো একটা হাইকু, ম্যাডাম?
ড. জ্যানেট এগিয়ে এসে বলেন:
ফু-রু-ই-কে ইয়া
কা-ওয়া-জু তো-বি-কো-মু
মি-জু-নো-ও-তো।
অর্থাৎ- এই সাপের গানের অর্থ বুঝিয়ে দিন, ড্যানেট। জুর্গার চ্যালেঞ্চ সহাস্যে গ্রহণ করেন ড. জ্যানেট: দিচ্ছি। রোসো, বৎসেরোসো। জাপানী অন্তলীর্ন লজ্জার দেশ। দেখ আকেমীকেসূর্যের মত লাল হয়ে উঠেছে। ওদের কবিতাও অধস্কুট। এর মানে হচ্ছে-
পুরনো দিঘী
ব্যাঙেরা লাফিয়ে নামছে
পানিতে জলতরঙ্গ।
এটা তো বসোর বিখ্যাত হাইকুতাই না আকেমী।
নিশ্চয়ইআমাদের গ্রেট পোয়েট। ইনিই তো পুরুনো হক্কুমে জনপ্রিয় করেছেন আধুনিক জাপানে। যদিও হাইকু নামটা মাসাওকা শিখির দেয়া।
ড. জানেট বৌদ্ধ ধর্ম, জাপানী ও শ্রীলংকান কালচার নিয়ে গবেষণা করেন। মিজোরামের মানবগোষ্ঠী যে জাপানী গোত্রেরতাই প্রমান করতে সচেষ্ট তিনি। বেগ কিছু ভাষা জানেন। বললেন, পরেকটা শুনুন
হা-ৎসু-শি-গু-রে
সা-রু মো কো-মি-নো ও
হো-শি-জে না-রি।
প্রথম শীতের ¯œান
মনে হয় বাঁদরও পেতে চায়
গরম কোটের ছোঁয়া.....্
আমরা মুগ্ধ হয়ে শুনছি ড. জ্যানেটের চমৎকার কাব্য বিবরণ:
ফু-জি নো কা জে ইয়া
ও উ জি নি নো-ছে-টে
এ-ডো মি-ইয়া জে।
অর্থাৎ
ফুজির বাতাস এমনই
রেখেছি আমার ফ্যানে
দেবীর আশীর্বাদে।
জর্গা বলে উঠলো: ছি: ছি:- এ দেখি, ডা. ওলেনেরের চেয়েও জঘন্য সঙ্গমের ভাষা।
আমরা পরস্পরের মুখ চাওয়া-চায়ী করলাম। গতকালের চড় থাপ্পড়ের সমাপ্তি তাহলে এই? ও-মাই-গড!
মোহনজী পরিচয় করিয়ে দিলেন চন্ডিগড়ের ডিস্ট্রিক্ট মেজিস্টেটের সাথে। বিনয়ী সুদর্শন, সাহিত্য প্রেমিক মানুষ। এসেছেন লক্ষ্মৌ থেকে। চেস্ত উর্দু শুনে মনটাই ভালো হয়ে গেল।
কথায় কথায় জানতে চাইলাম গুরুদয়ালজীর কাছে। আপনারাই কি ডিস্ট্রিকের প্রধান? মানে প্রশাসনিক হেড?
নিশ্চয়ই।
প্রধান ক্ষমতা কি বিচারিক?
হ্যাঁ, নিশ্চয়ই।
পুলিশ, সিভিল সার্ভিস কি আপনার অধীন?
হ্যাঁ-জি।
ডাক্তাররা?
তারাও।
অন্যান্য ক্যাডার?
তারাও।
কিন্তু আপনারা কি তাহলে প্রশাসকও।
হ্যাঁ, কিন্তু শাসকর্তা নই, শৃঙ্খলাকর্তা। ওয়ারেন হেস্টিংসের করা এই পদকে বাংলার ছোট লাট বলেছেন- “সব বিভাগই তিনি চালান- কিন্তু কোন কিছুরই বিষেজ্ঞ নন।”
কে এই ছোট লাট?
লেফটেন্যান্ট গর্ভনর জর্জ ক্যাম্পবেল। ১৮৭১ থেকে আনডিভাইডেও বেঙ্গলের নির্বাহী ছিলেন।
কেই এই পদ বানানো হয়েছিল?
ট্যাক্স কালেকশনের জন্য। নামই তো কালেক্টর।
কিন্তু আমাদের দেশে এবং বাংলা করা হয়েছে “প্রশাসক”।
কোনন অভিধান দেখে, স্যার বুলবুল? আপনি কি প্রশাসনে চাকরী করেন?
না, দয়ালজী।
তাহলে এতো ক্ষোভ কেন? বাংলাদেশের ডিসিরা বুঝি খুব অত্যাচারী?
না, টিক তাও না। তবে আমাদের গণতন্ত্রহীনতার যে দুটি হাততার মধ্যে একটি তারা।
অন্যটি নিশ্চয়ই মিলিটারী?
হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন।
এর কারণ কিন্তু “প্রশাসক” হওয়া নয়।
তাহলে? আমি অবাক হয়ে যাই।
আপনাদের বুদ্ধিমান ও বিবেকবান মানুষেরা রাজনীতি থেকে দূরে সরে গেছে তাই।
আমি আবারও দয়ালজীর কথায়। তাহলে, পাকিস্তানেও কি তাই হচ্ছে?
অবশ্যই। শুনুনঅধ্যাপক সাহেবরাজনীতিও সেবা কাজ। ভালোও দক্ষ মানুষেরা হাত গুটিয়ে বসে থাকলে তো মন্দ মানুষেরাই ছড়ি ঘুরাবে? তাই না? আমাদেরকে দেখুননেহেরুজী “পন্ডিত” ইন্দিরাজীঅসামান্য বুদ্ধিমতী, এপিজে আব্দুল কালাম- বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী। আর আপনারা তো বঙ্গবন্ধু হত্যা থেকেই শূন্য বুড়ি। প্রশাসন তো পচবেই।
দয়ালজী আমাদেরকে গলায় মালা পরিয়ে দিলেন। তর সুহাসিনী স্ত্রী দিলেন ক্রেস্ট। সরকারের অংশগ্রহণে পুলকিত হলাম সবাই। আমাদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখলেন ড. জ্যানেট। পরিশিলীত ও সুনির্বাচিত ভাষণে তিনি বললেন- বিশ্বশান্তির কথা। শিল্পই পারে মনের হিং¯্রতা ঘোচাতে। ধর্মের পরেই কবিতার স্থান।
তুমুল করতালীতে শেষ হলো সকালের অধিবেশন।
লাঞ্চের সময় মোহনজীকে ধরলামস্যার, সেক্টরগুলো একটু বোঝান তো, আমায়?
কেন, ম্যাপ আকঁবেন?
আমি তার পরিহাসে হেসে উঠলাম: স্যার আমি তো কার্টোগ্রাফার নই, ডেমোগ্রাফার বললেন বলতে পারেন। কিন্তু এমন সিস্টেমিকভাবে গড়া শহরকে না জেনে দেশে ফিরে যাওয়া তো অপরাধের শামিল।
আচ্ছা- তাহলে বুঝিয়ে বলি: শহরটিকে একটি স্কয়ার ধরুন। তারপর ভেতরে উত্তর দক্ষিণে পাঁচটি লাইন টেনে ভাগ করুন। এরপর পূর্ব পশ্চিমে টানুন আটটি লাইন।
মানে, ক্রস করে?
হ্যাঁ, এবার গুণে বলুন ভেতরে কটা বক্স হলো?
চুয়ান্নটা।
ঠিকএভাবেই সেক্টর ভাগ করা। তবে সবগুলো ভেতরের বক্স শহর নয়কিছু কিছু পাহাড়ী এলাকা বা চাষাবাদী জমি আছে। তার জন্য সাতটি স্কয়ার শহরের বাইরে পড়ে গেছে। রয়ে গেল কটা, ডাক্তার?
সাত চল্লিশটা।
ঠিক। ঐ সাতচল্লিশটা সেক্টর এখানে।
তাহলে নিউইয়র্কের মত ইস্ট-সাউথ করে নাম দিলেই তো হতো?
তা হতো। কিন্তু জানেন তো, নিউইয়র্কের এভিনিউ আর দিক নেয়া হয়েছে পুরানো জেরুসামে থেকে? পৃথিবীর আদি বাসিন্দারা কিন্তু বিজ্ঞানে আমাদের থেকে পিছিয়ে ছিলেন না, ডকটর।
আমি বিস্মিত হয়ে বলি: নাম্বার কিভাবে দেয়া হলো?
সানরাইজ মানে এক: এরপর পিরের সারির ডান দিকে দুইশেষ হয়েছে ছয়- এ। পরের সারির সংলগ্ন-ব্লক সাত তারপর বারোতে শেষ। এভাবেই লুডু বোর্ডের মত এগিয়ে গেছে নাম্বার। তবে বিচ্ছিন্ন ভাবে নাম্বার দেয়া হয়েছে দু-চাপটিরযেমন ছাব্বিশ বা আটাশ। শহর দক্ষিণ দিকে বেড়ে যাওয়া নম্বর সামান্য অনিয়ম হয়েছে কিন্তু ম্যাপ ডিজাইন ও শহরের পরিকল্পনা বদলায়নি।
আর রেল লাইন?
ওটা শহরের বেশ দক্ষিণে। পঞ্চকুলা পাড় হয়ে চন্ডিগড় ছুঁয়ে পাতিয়ালা চলে গেছে। উল্টো শাখা গিয়ে মিশেছে কালকায়।
তাহলে এক নম্বর সেক্টর হচ্ছে রাতের দেখা রক গার্ডেন মানে শুখনা লেকের উত্তর পাড়?
ঠিক ধরেছেন, বুলবুল।
আচ্ছাক্যাপটল কম প্লেক্সটা কি মোহনজী?
আমাদের হাইকোর্ট, সেক্রেটারিয়েট এবং সংসদকে এক এলাকায় গেঁথে নাম দেয়া হয়েছে ক্যাপিটল। বেশ কঠোর নিরাপত্তা ওখানে।
যাওয়া যাবে না?
আপনি বেশি আগ্রহী হলে চেষ্টা করে দেখবো। তবে নদীর উল্টোপাড় থেকেই বেশি সুন্দর ওগুলো দেখতে। স্থপতি তার সবটুকু মেধা ও সৌন্দর্য ঢেলে দিয়েছেন ওগুলোর পেছনে। এর চেয়ে ভালো লাগবে রোজ গার্ডেনে গেলে। এশিয়ার মধ্যে এটি সবচেয়ে বড় গোলাপ বাগান।
তাই নাকি? কোথায় এটি?
ষোলো নাম্বার সেক্টরে। প্রতিষ্ঠাতা কে জানেন? আমাদের রাষ্ট্রপতি ড. জাকির হুসাইন। তিরিশ একর ব্যাপী এই গার্ডেনে ১৬০০ প্রজাতির গোলার আছে আর পঞ্চাশ হাজার গোলাপ ঝাড়।
দারুন তো, মোহনজী।
দাঁড়ান-দাঁড়ান- প্রতি বছর এখানে অনুষ্ঠিত হয় গোলাপ উৎসব। ইরন-তুরান থেকে আসে ওমর খাইয়ামরা গোলাপী তরুণীসহ। এইতো গত মাসে শেষ হলো সেই উৎসব। ওখানে একটি অডিটোরিয়াম আছে- সেখানে প্রদর্শনী চলেছে পুরো এক সপ্তাহ ধরে। এসেছিলেন জয়া বচ্ছন এবং ঐশ্বরিয়া রায়?
কেন? তারাও কি গোলাপ-প্রেমিক? হতেও পারে। তবে ঐশ্বরিয়া একটি প্রবন্ধ পড়েছেন- তার হবু শক্তভৌত গোলাপ-প্রেম উল্লেখ করে- যা মিডিয়ার হাসির খোরাক হয়েছিল। কারণ, হরিবংশ বচ্চন এমনিতেই কবি হিসেবে খ্যাতিমান। তার গোলাপ প্রেম নিয়ে নতুন কী বলার থাকতে পারে?
আপনাদের প্রেস তো খুব সাংঘাতিক।
আমাদের রাষ্ট্রকে সোজাপথে চালাচ্ছে তিনটি শক্তি, বুলবুল। প্রেস, আদালত এবং শক্তিশালী নাগরিক সমাজ। বিনা কারণে স্বয়ং নরসীমা রাত চাইলেও একজন প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরী খেতে পারবেন না এদেশে। কারণ, ঐ তিন শক্তি। তিনটিই আওয়াজ তুলবে নির্যাতিতের পক্ষে। এই-ই মহাভারত।
আমি আমার বন্ধু হাসান ভাইয়ের কারণে প্রেমের এই শক্তি সম্পর্কে জানি। রাজনৈতিকভাবে বিজেপির ছায়া পেলেও আমাদের দেশের বিদ্রোহী-লেখিকা তাসলিমা শেষ পর্যন্ত কোলকাতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন এই প্রেসের সন্তনায়। তার পূর্বসুরী দাউদ হায়দারে ঘটনা; তাই। অন্নদাশংকরের মত বটবৃক্ষ ও তাকে শেষ পর্যন্ত আগলে রাখতে পারেন নি।
আপনি নিশ্চয়ই জানতে চাইতে পারেন বুলবুলতারপরও এদেশে কাবরী-মসজিদ ভাঙ্গার ঘটনা ঘটে কেন? আমার জবাব সহজ সব কিছুরই উত্থান ও পতন আছে। আমরা এখন পতন যুগে আছি, ডকটর। হয়তো আগামীতে আমাদের ঐ তিন শক্তির কোনো একটা ভেঙে পড়বে। তখনই আসবে বড় বিপর্যয়। টুকরো টুকরো হবে ওই উপমহাদেশ।
বৈকালিক অধিবেশন রেখে আমি কাজাখ বন্ধু মায়াকে নিয়ে শহরে দেখতে বেরোই। রিক্সায় উঠিযে দিতে দিতে মোহনজী মনে করিয়ে দেন- সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আছে; বন্ধুরা। যথাসময়ে ফিরবেন কিন্তু। রিক্সাওয়ালা ভালোই ঘোরালো আমাদের। দুটি পাচলিক বাস-স্ট্যান্ড থেকে শুরু করে পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটি দেখিয়ে সে যখন ক্যাপিটল কমপ্রেক্সের পাশে রিক্সা থামিয়ে বললো- হুজুর, ছবি তুলুন, যত খুশিতখন মনে হলো: সত্যিই এরা আতি থেয়াত জানে। মুসবরি পৌঁছে একশো টাকা বখশিশ দিলাম ড্রাইভারকে। সে মাথা নুইয়ে বলতে সি ইউ এগেইন, স্যার এন্ড ম্যাডাম।
আমি অন্তর থেকে বললাম: সি ইউ। (পাঁচ বছর পর আবার চন্ডিগড় যাই এইচ. আই. ভি/ এইচ আইভি সম্মেলনে “পেপার” উপস্থাপনা করতে। সেখানে আজি শাহাদাত খুঁজে বার করি- নরিন্দার সিং (বিগ হার্ট অব পাঞ্চাব) এর মাধ্যমে)। আল্লাহ বোধহয় এভাবেই ভালোবাসার পুনর্মিলন ঘটান।
মোহনজী অপেক্ষা করছিলেন বারান্দায়। আমরা যেতেই তাড়া লাগালেন: কাপড় পাল্টানো লাগবে? না, এভাবেই যাবেন?
আমরা শুধু ভালো একটা ওয়াশ রুম চাইলাম। মোহনজী আমাদের নিয়ে গেলেন অডিটোরিয়ামের চিলেকোঠায়।
ফ্রেশ হয়ে এসে বাসে উঠলাম। কলামন্দিরে পৌঁছলাম আধ ঘণ্টার মধ্যেই। স্কুলের মেয়েরা মাদার তেরেসার মত শাদা শাড়ী-নীল পাড় পড়ে মালা হাতে দাঁড়িয়ে আছে। প্রথমেই অট্টহাসিতে প্রাঙ্গন মাতিয়ে এগিয়ে গেলেন ড. ওলারেরে। এরপর ড. জ্যানেট, তারপর জুর্গা, আমি এবং অন্যান্য সবাই গলায় মালা আর মাথায় টুপি পরিয়ে দিলো। আমার ভাগ্যে পড়লো প্রায়- নেপালী এক গোলচে ক্যাপ। সবারই ফর্মাল ছবি তোলা হলো।
হলের সামনের সিটগুলো খালি ছিল অতিথিদের জন্য। আমরা গিয়ে বসতেই মঞ্চ অন্ধকার হয়ে এলো। প্রদীপ হাতে এগিয়ে এলো এক নিষ্পাপ মুখের তরুণী। বিখ্যাত কবি ও পাঞ্জাবী নাট্রকার আতাম জিৎ সিং প্রদীপ জ্বালিয়ে উদ্বোধন করলেন রাতের অনুষ্ঠান।
প্রথমে একদল শিশু নাচলো গুরু নানককে শ্রদ্ধা জানিয়ে। তারপর এলো বিখ্যাত নৃত্যশিল্পী......। ভরতনাট্যমের মুদ্রা, মৃদঙ্গ ও লীলা চাঞ্চলে। ড. জানেট দু-বার উঠে দু-হাত উঁচু করে বো-গাউন করলেন। শিল্পীও নাচের মধ্যে প্রণাম জানালো জ্যানেটকে। পুরো হলঘর করতালিতে মুখর হয়ে উঠলো।
রাত দশটার আমরা ডিনার করলাম ডিপার্টমেন্ট অফ পাবলিক বিলেশনসের সৌজন্যে। ভেড়ার গোশত ভারতে সাধারণত গন্ধহীন করে রান্না করতে পারে না। কিন্তু বাইশ নম্বং স্কেটরের পন্ডিগড় হোটেলের শেফ আমাদের বাধ্য করলো সে ধারণা বদলাতে। প্রায় টার্কিশ এয়ারের তৃপ্তি নিয়ে বেরিযে এলাম রাস্তায়।
মোহনজী আজো আমাদের নানা রাস্তায় শহরের ঝিলিমিলিও চাবচিক্য দেখিয়ে হোটেলে আনলেন। ড. ওলারের দরাজ আহবানের পরেও কেউ তার পনোৎসবে সাড়া দিলো না। এমনকি ড. জুর্গাও না।
তরুণরা সবাই ঢুকলো আমাদের রুমেমোহনজীর কবিতা শুনতে।
আড্ডা চললো রাত দেড়টা পর্যন্ত। তারপর সবাই বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল আপন আপন বিছানার টানে।
পরদিন আমরা চললাম সিমলায়হিমাচল একাডেমী অফ আর্ট, ল্যাঙ্গুয়েজ এন্ড কালচার এর সেমিনারে যোগ দিতে। আমাদের সাথে যোগ হলো পাঁচজন সাংবাদিক এবং চন্ডিগড় প্রশাসনের দুজন মেজিস্ট্রেট।
নাশতাও কফির পর বাস ছাড়লো সকাল সোয়া দশটায়।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১:০০