somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আয-যোহরা (গল্প)

০৬ ই জুন, ২০১৭ রাত ১০:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কুয়া থেকে পানি তুলে সে হেঁটে আসছিল। অগ্রগামী সৈনিকের হাতের ঝান্ডার মত উড়ছিল তার চুল। পেছন দিকে সরু হয়ে শেষ হয়েছিল একটি মাত্র বিন্দুতে। যেন পর্তুগীজ জলদস্যুদের ত্রিকোণাকার কালো পতাকা সাহস আর বিদ্রোহ যেখানে কেঁপে কেঁপে দোল খায়।
কাঁখে মশক নিয়ে সে দুলে দুলে পশ্চিম দিক থেকেই যতই এগিয়ে আসছিল, সকালের প্রথম সূর্যালোক ততই চুম্বনে চুম্বনে রাঙিয়ে তুলছিল তার উজ্জ্বল শরীর।
দৃঢ় পায়ে সে এসে পৌঁছল তাবুর সামনে।


স্নিগ্ধ কুয়াশায় মিহি পর্দা ভেদ করে হঠাৎ বেরিয়ে এল দুই যুবক। চোখে চোখ পড়তেই যুবতী কাঁপল একটু। থামলও বুঝি।
নিঃশ্বাসের সাথে পায়ের গতি বন্ধ হয়ে গেল তাদের। নবাগত শিশুর মত দুই চোখে বিস্ময়। নিষ্পলক চোখে আবার চোখ রাখে যুবতী। তাদের কন্ঠতালু শুকিয়ে যায়। লাফ দিয়ে ওঠে হৃৎপিন্ড। রক্তের ঝলক এসে মুখমন্ডলে ঝাপটা মারে। ক্ষণিকের সে দ্যূতি যুবতীর দৃষ্টি এড়ায়না। যদিও যে-দিকে সে চেয়েছিল সে-দিকে ক্রমেই লাল থেকে হলুদ হয়ে উঠছিল সকালের সূর্য।
বিশাল মরুভূমির শূন্য বুকে কয়েকটি মাত্র পরিবারের একটি কবিলা। ছড়ানো ছিটানো কিছু খেজুর গাছ আর একটি কূয়া। দূর-দুরান্তের তৃষ্ণার্ত পথিক পানির লোভে সেখানেই ছুটে আসে থেকে। ঠান্ডা পানির আজলায় আর গাছের ছায়ায় প্রাণটা জুড়িয়ে নেয়।
সারা রাত পথ চলে ক্লান্ত দুই মুসাফিরও থেমেছে এখানে। আরবের চিরায়ত আতিথেয়তা তাদের দিয়েছে আশ্রয়। উটের পায়ে বেড়ি পরিয়ে তারা এই মাত্র পোশাক খুলেছে। ক্লান্ত-শুকনো চামড়ার উপর এখন ঠান্ডা পানির শীতল পরশ বুলিয়ে নিতে যাচ্ছে কুয়ার খোঁজে। কিন্তু রূক্ষ¥ মরুভূমির নিরাবেগ প্রান্তরে এ কিসের আলো? বেহেশতের দরজা কি খুলে দেয়া হয়েছে?
দীর্ঘ কালো ব্যান্ডের নিচে লালচে সাদা কপাল--শিশিরের শুভ্রতা যেখানে পরম নির্ভরতায় বাসা বেঁধেছে। সাদা-কালোর এই অসামান্য সৌহার্দ্র বুঝি বা মরুভূমিতেই সম্ভব। আল্পস্-এর মত ঋজু ও কঠিন মানুষগুলোর বুকের নিচেই থাকে প্রশস্ত হৃদয়; যুদ্ধবাজ ঈগলের চেয়ে তীক্ষ্ণ অনুভূতি শৃংখলিত হয় সরলতা ও বিশ্বাসের মোহনায়।
কয়েকটি চুল মাকড়সার মত অলস হাত পা বিছিয়ে শুয়ে আছে শুভ্র কপালের উপর। যেন পদ্মা-নীল-আমাজান-কঙ্গোর রূপালী ফিতা বয়ে চলছে দো-আঁশ মাটির পৃথিবীতে। মসৃন সেই তুষার খন্ডের নিচেই কালো দুটো ভুরু। বাজপাখীর ডানার মত ত্রিভঙ্গ ভাঁজে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে দুটো নীল-সরোবর। হে চোখ! রাজহাঁসের গলার মত স্ফুরিত হয়ে ধনুকের প্রান্ত দেশে এসে সুক্ষ¥ কোণে মিলে যাওয়া। দুধে পুষ্ট হবার লগ্নে গম-ক্ষেতের বুকে ছড়িয়ে পড়ে যে নীলচে রঙধনু, পেলব পাতার উপর সেই সোনালী নীল আভা। সকালের মৃদু আলোয় এখন তারই দু’কুলে বইছে কালো চুলের নদী।
দুই যুবক হতবাক হয়ে চেয়ে থাকে তার চোখে। সেই কাজল না-টানা নিরব দুটি হীরক খন্ড থেকে অবিরাম বিচ্ছুরিত বর্ণহীন আলোয় তারা কথা হারিয়ে ফেলেছে। সে আলোর ভাষায় প্রাণ আছে, বাণী আছে। কিন্তু কি সেই বাণী, যার স্পর্শে তাদের পাষাণ বুকে জাগছে আবেগের হিল্লোল?
হৃদয়াকৃতি মুখমন্ডলের মধ্যদেশে লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়িয়েছে ঈগলের ঠোঁটের মত নাসিকা। সরু তার শীর্র্ষের নিচেই গ্রীক মন্দিরের পরিত্যক্ত যুদ্ধাস্ত্রের মত লাস্যময়ী ঠোঁট। সরল অথচ খাঁজে খাঁজে লেপ্টে থাকা কামনার শিহরণ--যেন নওল উষা থামিয়ে দিয়েছে শাহেরজাদীর প্রণয়-কাহিনী।
গোলাপী গালের নিচে কালো তীল! এখন হয়ে উঠেছে ফ্যাকাশে ধূসর। পূর্ণিমার চাঁদ যেন পৃথিবীর ছায়ায় লুকিয়ে আছে গ্রহণের তিথিতে। চিবুকের সরু সীমানায় মাখনের কোমলতা। সুন্দরের হিমবাহযেন চিবুক বেয়ে চলেছে দক্ষিণের পাললিক উপত্যকায়।
ঋজু গ্রীবায় প্যাঁচানো কামিজের কলার। কান থেকে ঝুলছে চিকন দুল। ওড়নার আবছা আবরণ ভেদ করে জেগে উঠেছে যৌবন। হে যৌবন! যার নিচেই স্পন্দনে কম্পমান হৃদয়ের অলি গলি। দুই যুবকের দৃষ্টি আরো নীচে নামে। মানুষ যে রোমান ভাস্কর্যের চেয়ে লক্ষ-কোটি গুন সুন্দর--তারই স্বীকৃতিতে তাদের চোখ হয়ে ওঠে প্রদীপের মত উজ্জ্বল।
সলজ্জ সংকোচের বাঁধ ভেঙে সহসা সে হেসে ওঠে। নুপুরের রুমুঝুমু ভেসে যায় বাতাসে : আহলান ওয়া সাহলান। এ কবিলা আপনারই কবিলা। যোহরার ঘর আপনারই ঘর। খোশ আমদেদ। সাবাহ আল নূর। সুপ্রভাত!
দুই যুবকের শ্রবণেন্দ্রিয় বন্ধ হয়ে আসে সে আহবানে। আরব্য উপন্যাসের নায়ক মনে হয় নিজেদের। অনুভূতির গভীরে বেজে ওঠে জলতরঙ্গের সুর। ভ্রমরের গুঞ্জনে মোহিত হয় বাতাস। আর কিছু শুনবার নেই। আর কিছু দেখবার নেই। পরস্পরকে তারা প্রশ্ন করে একই সঙ্গে: এর অর্থ কি?
লক্ষ কণ্ঠের সম্মিলিত প্রতিধ্বনি আছড়ে পড়ে চেতনার বেলাভূমিতে--প্রেম! প্রেম!
***
আতিথেয়তার সম্ভাব্য সকল আয়োজন সত্ত্বেও তাদের মন বিক্ষিপ্ত। মরুভূমির আড্ডা, সরস আনন্দময় ধূমপান ও ভোজ উৎসবে তারা নি®প্রাণ পুতুলের মত উপস্থিত হয়। প্রতিটি গল্পের নায়িকা ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয় একটি পরিচিত অবয়বে। প্রতিটি কাহিনীর মায়ামৃগ ছুটতে ছুটতে পৌঁছায় একটি মাত্র তাঁবুতে। প্রতিটি যাত্রা শেষে তারা হাজির হয় সেই একই কবিলার সামনে। আর সকালের সোনালী আলোয় মশক কাঁখে হেঁটে আসা এক মরু-সুন্দরী সহাস্যে বলে ওঠে : আহলান ওয়া সাহলান... স্বাগতম! স্বাগতম!
কবিলার পুরুষেরা বাইরে বেরোয়। তেজী ঘোড়া আর সবল উঠের পিছে সওয়ার হয়ে ছোটে সওদা কিংবা ব্যবসায়, নগরে কিংবা গভীর মরুভূমিতে। নারীরা যায় কুয়ার দিকে--মরদ লোকের দৃষ্টি বাঁচিয়ে শরীরের ক্লেদ মুছে নিতে। হৃদয়-কান্ত দুই যুবক শুধু ছটফট করে। তাদের বুকের তপ্ত বাতাস হয়ে ওঠে লু-হাওয়ার মাতম।
***
ছলনাময়ী নারী গান গায় খেজুর বাগানে। বাসনার ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। ঘুম ভেঙে যায় দুই যুবকের। তাঁবু ছেড়ে বাইরে আসে তারা। খোঁজে চারদিক। কিন্তু খরদহনে প্রজ্জ্বলিত মরুভূমির সান্ধ্য ছায়ায় কোথায় সে নারী? কোথায় লুকিয়ে আছে উদ্বেলিত সৌন্দর্যের উজ্জ্বল প্রতিমা--আয যোহরা?
অস্তরাগের হলদে আলোয় তারা খুঁজে পায় সেই তন্বীকে। স্নিপ্ধ অনুরাগের বিষন্নতা ছড়িয়ে সে বসে আছে কালো পাথরের উপর। গাইছে গান। থমকে গেছে মরুর বাতাস। হাঁটু গেড়ে বালুর উপর বসে পড়ে দুই যুবক।
গান থামে। কিন্তু ছড়িয়ে থাকে মোহিনী সুরের আবেশ। বুকের উপর আঁচল তুলে সে উঠে দাঁড়ায়। মাথার উপর টেনে দেয় কালো উড়নি। গ্রীবা বাঁকিয়ে দেখে দুই যুবককে। স্বাতী নক্ষত্র যেমন জানে, রাত্রি হলেই উঠতে হবে ঝিনুকদেও; সেও তেমনি জানত এদেরও আসতে হবে। আসতে হবে মক্ষিকার আহবানে।
সে হাসে। মরুভূমির বাতাস কাঁপিয়ে ছুটে যায় পুলকের ঢেউ। খেজুর পাতারা কেঁপে ওঠে শিহরণে।
দুই যুবা সামনে এসে দাঁড়ায়। তাদের ঠোঁট কাঁপে। মাথার চুল শক্ত হয়ে ওঠে। অলৌকিক ঘোড় সওয়ার ধাবিত হয় শিরা-উপশিরায়। তাদের একজন হাঁটু গেড়ে বসে তার সামনে। কম্পিত ঠোঁটে বলে: তুমি রাজী হয়ে যাও আমার প্রতি।
জোহরার চোখে কটাক্ষ। ধনুকের সরু প্রান্ত যেন ক্ষণিক সংকুচিত হয়ে ছুঁড়ে দেয় আলোর তীর। হাসিতে আলুলায়িত হয়ে ওঠে সে। তাকায় আরেক জনের দিকে। আর তুমি?
তুমি রাজী হয়ে যাও আমার প্রতি--তার কণ্ঠেও কেঁপে ওঠে একই আর্তনাদ।
জোহরা আবার হাসে। ঝর্ণার ঢেউ ভেঙে মরুর সায়রে।
দুই যুবক মিনতিতে আরো নতজানু হয়। অনুনয়ের কান্না আর্তি তোলে: তুমি রাজী হয়ে যাও... রাজী হয়ে যাও।
আবার সে হাসে। গান গেয়ে ওঠে বিকালের পাখি। জড় জগতে জাগে প্রাণের স্পন্দন। খেজুর পাতারা কেঁপে ওঠে পুনরায়। ঠান্ডা বাতাস পাঠায় ভূমধ্যসাগর।
আবার সে হাসে। লোহিত সাগর থেকে উঠে আসে নূনের গন্ধ। হেজাজী ফুলেরা বিকশিত করে সৌরভ। নযদের মৌমাছিরা মুখ তুলে চায়।
আবার সে হাসে!
দুই যুবক বিহবল হয়ে পড়ে। চিৎকার করে জানাতে চায় তাদের মিনতি। কিন্তু গলার গভীরে আড়ষ্ট হয়ে গেছে আল-জিহ্বা। কেবল হৃদয়ের আন্দোলনই কেবল গুমরে মরেদয়া কর, দয়া কর। তুমি রাজী হয়ে যাও।
হাসি থামে যোহরার। সূর্য ডুবে গেছে। দু’চোখ ঘুরিয়ে সে চায় পূব-আকাশের দিকে। লাফ দিয়ে উঠে আসে নক্ষত্র।
ঘুরে জোহরা তাকায় পশ্চিমে। রাঙা হয়ে ওঠে অস্ত আকাশ। দুই যুবক বিস্ময়ে পাথর হয়ে যায়।
কিন্তু আমি তো অন্য এক পুরুষের। বলল সে। যদি আমাকে পেতে চাও, অবশ্যি মুক্ত করতে হবে তার দাবীর কাছ থেকে।
কে? কে সেই পুরুষ? দুই যুবক যেন নিঃশ্বাস ফিরে পায়।
ওদিকে তাকাও। বলল সে, ঐ যে দূরে দেখছো এক উট এবং তার আরোহী। ওই।
আবার হেসে ওঠে সে। বীণার তারে টোকা লাগে যেন। অন্ধকার আকাশ ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে শত শত আলোর মৌমাছি। বিহবল দুই যুবক গুনতে চেষ্টা করে লাল-নীল হলুদ-সবুজ আলোর বিন্দুগুলো--যতক্ষণ না অন্ধকারে মিলিয়ে যায় সেই নারী, আর মরুভূমির অসীম শূন্যতা শুষে নেয় তার কণ্ঠের গান।
***
তারা অন্ধকারে বেরিয়ে আসে। হায়েনার মত জ্বলে ওঠে তাদের চোখ। চিতার মত নিঃশব্দে পেরিয়ে যায় খেজুর গাছের সারি। হলদে চাঁদের মরা আলো। ছড়ানো-ছিটানো তাঁবু আর জলাশয় ডিঙ্গিয়ে তারা এসে দাঁড়ায় খিমার প্রান্তরে। সামনে আর একটিমাত্র তাঁবু।
আগুন নিভে গেছে অনেক আগে। শীতার্ত পৃথিবী। মরুভূমি স্তব্ধ হয়ে আছে কিসের অপেক্ষায়। দুই যুবক আকাশের দিকে তাকায়। জোনাকীর মেলা বসেছে সেখানে। উত্তর আকাশে স্থির হয়ে আছে ধ্রুবতারা। সপ্তর্ষী ঝুলে পড়েছে পশ্চিমে। জেগে উঠেছে ক্যাসিওপিয়ার মস্তকভাগ। শনীর নীলচে আলোয় কী এক অশুভ ইঙ্গিত! তাঁবুর নিচে আবছাভাবে দেখা যাচ্ছে দুটি শরীর। প্রশান্তির ঘুম সেখানে। ধীর লয়ে ওঠা-নামা করছে বুক। শোনা যাচ্ছে গভীর নিঃশ্বাসের মৃদু সঙ্গীত।
বেড়ালের মত সাবধানে এগিয়ে যায় দুই যুবক। । বাঁ-হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে ছুরির অগ্রভাগ স্পর্শ করে। তারার ঠান্ডা আলোয় চকচক করে ছুরির ফলা। শরীর কেঁপে ওঠে তার মসৃন ধারে। চোখ তুলে তাকায় তারা পরস্পরের দিকে। অন্ধকার সেতুবন্ধনে বাঁধা পড়ে দুটি চোখের ইশারা। নি:শব্দে ঝপিয়ে পড়ে দুজনে।
ঘুমন্ত লোকটার নাক ঠেলে কেবল প্রলম্বিত দীর্ঘশ্বাস বেরোয়। কেঁপে কেঁপে ওঠে সবল পেশী ও পেষল শরীর। অতৃপ্ত ফুসফুস শোঁ-শোঁ শব্দে জানায় অন্তিম তৃঞ্চার বাসনা। ছলকে ওঠে হৃৎপিন্ডের ধারা। চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে শোনিত সৌরভ। অন্ধকার রাতকে আরো কালো করে জমে ওঠে থক্থকে লবণ-স্রোত।
রক্তের গন্ধে ওপাশ থেকে জেগে ওঠে আরেকটি দেহ। ছন্দিত অবয়ব। আলুথালু পোষাক। রাতের স্তব্ধতা ভেঙে ছড়িয়ে পড়ে তার খিলখিল হাসি। বীণার সবচেয়ে সরু তারে দেয়া অভিজ্ঞ টোকার মত ধীরে ধীরে, থেমে থেমে। যুবকদ্বয় উঠে দাঁড়ায়।
সে আগুন জ্বালে। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে নীল শিখা। হঠাৎ আলোর ঝলকানিতে বন্ধ হয়ে আসে চোখ। নিস্তরঙ্গ জলাশয়ে ছুঁড়ে মারা পাথর খন্ড থেকে ছড়িয়ে পড়া ডেউয়ের মত উথলে ওঠে হাসির শব্দ। চোখের সামনে থেকে হাত সরায় দুই যুবক।
পলকের মধ্যে উদ্ভাসিত হয় প্রতিক্ষার চূড়ান্ত রহস্য। নিপুন শিল্পীর হাতে গড়া জীবন্ত ভাস্কর্য। বজ্রের শক্তি আর বিদ্যুতের পুঞ্জিভূত সৌন্দর্যের সম্মিলিত কোমল মাটির মানবী : আয-যোহরা।
মুহুর্ত মাত্র। দুই যুবক ঝাপিয়ে পড়ে সিংহের মত। পায়ের ধাক্কায় উল্টে যায় মাটির প্রদীপ। পিচ্ছিল রক্তের উপর চট্ চট্ করে নগ্ন শরীর। অস্ফুট কামনার আওয়াজ ছড়িয়ে পড়ে দূরদিগন্তের অচীন-পাথারে।
***
উষসীর নরম আলো যখন ক্লান্ত দুই মুসাফিরকে টেনে নিয়ে যায় ঘুমের গভীওে, আর যোহরার শরীরে ছড়ায় তৃপ্তির অলৌকিক আনন্দ--তখন উন্মোচিত হয় রঙ্গমঞ্চের আরেক পর্দা।
দুই যুবককে হাজির করা হয় বিচারকের সামনে। ঘোর কেটে যাওয়ার পরই লজ্জায় অধঃবদন হয়ে রইলো তারা। যেহেতু তাদের বৃদ্ধি হয়নি অন্ধকার-মাতৃজঠরে, আর অক্ষম শৈশবে গ্রহণ করতে হয়নি পাক-নাপাক আবর্জনা--তাই তারা অহংকার করেছিল। তাদের দাবী ছিল: অপবিত্রতা ও কলুষতার গভীরে লালিত না-হওয়ায় তারা মুক্ত থাকবে সমস্ত লোভ ও পংকিলতা থেকে; লালসার বহ্নি যেহেতু তাদের হৃদয়কে করেনি উদ্বেল এবং কামনার আগুন মস্তিষ্কে ছড়ায়নি উদ্দামতা--তাই তারা স্বাধীন থাকবে সকল পংকিলতা থেকে। কখনোই তারা আবর্তিত হবে না ইন্দ্রিয়-দুর্বলতায় এবং ক্লান্তিও তাদের স্পর্শ করতে চিরকাল অক্ষম হবে। দম্ভের পরিমাপে তারা নেমে এসেছিল পৃথিবীতে; কিন্তু পরীক্ষার প্রথম রাতে একই সঙ্গে জঘন্য দুটি অপরাধ করে ভুলণ্ঠিত হয়েছে তাদের গৌরব।
কিয়ামত পর্যন্ত প্রলম্বিত পার্থিব শাস্তি, অথবা অনন্তকাল বিস্তৃত পারলৌকিক আযাব;--যে কোন একটাকে বেছে নাও। ঘোষণা করলেন বিচারক।
হারুত-মারুতের মনে হল, বস্তু-নিরপেক্ষ পবিত্রতার আসলে কোন মূল্য নেই, যতক্ষণ না তা নির্ভর করে কামনা-বাসনা থাকা না-থাকার উপর। ভাল আর মন্দের মাঝে কোন একটাকে বেছে নেয়ার সক্ষমতাই তো নৈতিকতার ভিত্তি! নতমুখে বললো তারা, আমরা বেছে নিলাম পৃথিবীর জীবন। যেন মানুষের সংযম দেখে আমরা শিখতে পারি।
আর সেই রমণীকেও পরিণত করা হল উজ্জ্বল তারকায়--যেন সকালে ও সন্ধ্যায় মানুষ তাকে প্রতিদিনই দেখতে পায়; আর স্মরণ করে যে--সমস্ত সদগুণই ধ্বংস হয়ে যায় আপনা-আপনি, যখন তাতে থাকে না বিনয় আর নম্রতা।*
--------------------------
*একটি আরব-উপকথার প্রেরণায়।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০১৭ রাত ১০:৫৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অদৃশ্য দোলনায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ৮:৩৮



ভোরের রোদ্র এসে ঘাসের শিশিরে মেঘের দেশে চলে যেতে বলে
শিশির মেঘের দেশে গিয়ে বৃষ্টি হয়ে ঘাসের মাঝে ফিরে আসে-
বৃষ্টি হাসে শিশিরের কথায়। তাহলে আমরা দু’জন কেন প্রিয়?
এক জুটিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লায় দেছে!

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১২:০৯



আল্লায় দেছে। কথাটার মানে হচ্ছে- আল্লাহ দিয়েছেন।
হ্যা আল্লাহ আমাদের সব দেন। এই দুনিয়ার মালিক আল্লাহ। আল্লাহ আমাদের দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন শুধু মাত্র তার ইবাদত করার জন্য। কিন্তু মানুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড. ইউনূসকে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪

ড. ইউনূসকে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান....

বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে চীনের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেছে। শনিবার (২৯ মার্চ) এক বিশেষ অনুষ্ঠানে ক্ষুদ্রঋণ ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড. ইউনুস: এক নতুন স্টেটসম্যানের উত্থান

লিখেছেন মুনতাসির রাসেল, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ড. মুহাম্মদ ইউনুস ধীরে ধীরে রাজনীতির এক নতুন স্তরে পদার্পণ করছেন—একজন স্টেটসম্যান হিসেবে। তার রাজনৈতিক যাত্রা হয়তো এখনও পূর্ণতা পায়নি, তবে গতিপথ অত্যন্ত সুস্পষ্ট। তার প্রতিটি পদক্ষেপ মেপে মেপে নেয়া,... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর কেমন হলো ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:৪৮


প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস এখনো চীন সফরে রয়েছেন। চীন সফর কে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে এক শ্রেনীর মানুষের মধ্যে ব্যাপক হাইপ দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন সাসেক্সফুল সফর আর কোনো দলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×