প্রবেশক
===================
আমি যখন আমার শ্বশুরকে লিখে পাঠাই যে আমার পক্ষে নিজেকে বাঁচিয়ে চলা অসম্ভব কারণ কায়রোর নারীদের কেউ কেউ এমনই সুন্দরী যে তাদের গলার উর্ধভাগে কড়া কফির মৃদু চুমুকও দৃষ্টি গোচর হয়--যখন তারা তাদের অহংকারী গ্রীবা পশ্চাতে হেলিয়ে তুচ্ছ মৎসভক্ষণকারী ভারতীয় পুরুষকে অবজ্ঞার ভাব করে প্রলুব্ধ করে। এ-রকম কয়েকটি বিপজ্জনক-সন্ধ্যা ক্যাফে নাগিব মাহফুজ কিংবা হেলনান-নাইলের কার্নিশে অতিক্রম করার পরপরই আমার চিঠির জবাব আসে এবং তা আমাকে পিরামিড দেখার চেয়েও হতভম্ব করে দেয়। আমার দিলরুবা সশরীর কায়রো হাজির হয় এবং আমার সকল বান্ধবীদের প্রিয়পাত্রীতে পরিণত হবার মধ্যেই আমাদের সামনে উপস্থিত হয় কুখ্যাত টুইন-টাওয়ার ধ্বংসের ঘটনা। সারা বিশ্ব থমকে দাাঁড়ালেও আমি তার ভালো দিকটিকেই বেছে নেই এবং সস্ত্রীক ভ্রমণ শুরু করি ভূমধ্যসাগরের চারপাশ--প্রায় নিখরচায়। শার্ম আল শেখের মত শহরের পাঁচ তারকা হোটেল আমাদের জন্য প্রায় বিনে পয়সায় দরোজা খুলে ধরে কারণ মেহমান না-থাকায় তাদের পানির কলে পর্যন্ত জং ধরতে শুরু করেছিল এবং রুমের রক্ষণাবেক্ষণ করার সুযোগ পর্যন্ত ছিল না। আমাদেরকে স্বাগত জানায় ইস্তাম্বুল, বৈরুত এবং সিদোনের ঐতিহাসিক প্রান্তর। কিন্তু সুযোগ যতই উদার হোক, সিনাইয়ের মহা-দুর্যোগময় রুক্ষ্ণ প্রান্তর পেরুতেই আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়ি এবং তাবার বর্ডার যখন আমাদেরই পাসপোর্টে লেখা নিষেধাজ্ঞা দেখিয়ে দেয় তখন আমাদের চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়ে। সেই অনাকাংখিত দু:সময়ে আমি ইব্রাহিম থেকে ইসা পর্যন্ত সকল নবীকে স্বীকার করেও মুহাম্মদের অনুসারী থাকারই সিদ্ধান্ত নেই আর আল-আকসাকে বুকের ভেতর বন্দী করি। আল-কুদ্সের জন্য খোমেনীর লড়াইয়ের পরিবর্তে আমি বেছে নেই পৃথিবীর কান্নাকে--যা বিশ্বাসীমাত্রেই অনুভব করে। প্রাচীনতম সেই নগরী--যা আল্লাহর প্রিয়তম নবী পরিভ্রমণ করেছেন অযুর পানি গড়িয়ে যাবার পূর্বেই----আমাকেও বুকে টেনে নেয় তার পাঁচ হাজার বছরের সুপ্রাচীন কোলে এবং আমি জেরু জাতীর প্রতি শ্রদ্ধাবনত প্রণতি জানাই:- সালোম। সালোম!! নবী সোলেমানের গড়া প্রাচীন শহর আমাকে সানন্দে স্বাগত জানাতেই আমি বোরাকের পদচিহ্ন অনুসরণ করে পৌঁছে যাই কিদরন উপত্যকায়--যা এখনো আমাদের শিল্প-সাহিত্যের স্বপ্নময় রঙধনুতে আঁকা হয় নি; বোনা হয়নি সেই ময়ূর-বর্ণিল মসলিন--যা মন ও মগজকে ধাধিঁয়ে দেয়--বুনন, ছন্দ ও গাঁথুনির বিজয়কে সুলতান সালাদীনের মতো অবধারিত করে।