somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দি প্যালেস্টাইন (পার্ট-৪)

১২ ই আগস্ট, ২০১৩ ভোর ৪:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মধ্য প্রাচ্যে ও বিশ্বে পশ্চিমা আধিপত্য বিস্তারের প্রয়োজনে একটি দায়মুক্ত সন্ত্রাসী বাহিনী গঠনঃ


প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দলে দলে ইহুদিরা অনুপ্রবেশ করে ফিলিস্তিনে যা ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। ১৯৪৮ সালের ১৫ মে ব্রিটেন ইহুদিদের হাতে ফিলিস্তিন ছেড়ে দিয়ে আরব ভূমি ত্যাগ করে এবং পশ্চিমা পরাশক্তি হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আবির্ভাব ঘটে।

আমেরিকার ইহুদীরা এ সময়ই আমেরিকার সবচেয়ে শক্তিশালী লবি AIPAC( American Israel Public Affairs Committee, 1953) গড়ে তোলার প্রক্রিয়া শুরু করে।




অবশেষে এই জাতীয় রাষ্ট্র গঠনের দায়িত্ব দেয়া হয় জাতিসংঘকে। জাতিসংঘ ১৯৪৮ সালে ঐতিহাসিক “দুই জাতি সমাধান” প্রস্তাব করে। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল পুরো ফিলিস্তিন দখল করে নেয়ার জন্য আগ্রাসন শুরু করে আর আমেরিকা সহ পশ্চিমা প্রায় সবগুলো শক্তিই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে ইহুদিদের সহায়তা দিতে থাকে।


ভৌগোলিক অবস্থান ও বৈশিষ্ট্যের সাথে, যুগ যুগ ধরে ধর্মীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্র বিন্দু হয়ে উঠার কারণে প্যালেস্টাইনে আধিপত্য বিস্তারের প্রয়োজনকে সর্বাধিক প্রাধান্য দেয় আমেরিকা।সেই সাথে মধ্যপ্রাচ্যের তেল সহ বিপুল পরিমানের খনিজ সম্পদ করায়ত্ত করার দুরভিসন্ধি বাস্তবায়নে ঐ অঞ্চলে প্রাধান্য বিস্তার করা জরুরি হয়ে ওঠে।

খৃষ্টান সম্প্রদায় প্যালেস্টাইন কে ঘিরে ক্রুসেড যুদ্ধে মুসলমানদের হাতে তাদের শোচনীয়পতন কখনই মেন নিতে পারেনি। যুগে যুগে তারা নানান কৌশলে মসলমানদের বিরুদ্ধে স্বরযন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।

আর এ সকল মিশনকে সফল ভাবে বাস্তবায়ন করতেই মূলত ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা।

দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর প্যালেস্টাইন ইস্যুতে বৃটেনের স্থলে অমেরিকার ভুমিকা নেয়ার প্রধান কারণ, নবগঠিত ইসরাইলকে একটি রাষ্ট্রিয় কাঠামোতে দার করানোর জন্য যে বিপুল পরিমানে অর্থ সাহায্যের প্রয়োজন ছিল বিশ্ব যুদ্ধের বিপুল ব্যায় সামাল দিতে গিয়ে অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল হয়ে যাওয়া বৃটেন সে ব্যায় বহন করতে প্রস্তুত ছিলো না পক্ষান্তরে আমেরিকার জায়নিস্টরা ছিলো বিত্ত বৈভবে পরিপূর্ণ।


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে প্রশাসনের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পদেই বসে ছিল/আছে জুইশ কমিউনিটির সদস্যরা;
ন্যাশনাল সিকিউরিটি এডভাইজ, চীফ পলিসি ডিরেক্টর, পলিটিক্যাল, মিলিটারি এফেয়ার্স কর্মকর্তা, বাজেট ম্যানেজমেন্ট কর্মকর্তা, ফরেন সার্ভিস ডিরেক্টর, হোয়াইট হাউজের স্পিচ রাইটার সহ অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ এবং পলিসি নির্ধারণের পদগুলোতে এমনকি নাসা তেও রয়েছে জুইশ কমিউনিটির সদস্যরা।
বানিজ্যিক ও মিডিয়া প্রতিষ্ঠান গুলোর মধ্যে,
এক্সপোর্ট ইমপোর্ট, গোল্ডম্যান ইনভেস্টমেন্টস, ম্যানহাটান ব্যাংক সহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যাংক বিমা প্রতিষ্ঠান, মাইক্রোসফট, সনির আমেরিকান অফিস, সিটি গ্রুপ, আমেরিকার অন্যতম বড় মিডিয়া গ্রুপ টাইম-ওয়ার্নার, ওয়ার্নার ব্রাদার্স, আমেরিকা অনলাইন (AOL), CNN, HBO, CINEMAX, টাইম ম্যাগাজিন, লাইফ ম্যাগাজিন, ষ্পোর্টস ইলাসট্রেটেড ম্যাগাজিন, পিপল ম্যাগাজিন, ওয়াল্ট ডিজনি টেলিভিশন, টাচষ্টোন টেলিভিশন, বুয়েনা ভিসটা (Buena Vista) টেলিভিশন, ওয়াল্ট ডিজনি পিকচার্স, টাচষ্টোন পিকচার্স, হলিউড পিকচার্স, ক্যারাভান পিকচার্স, Miramax Films, ভিয়াকম গ্রুপ (Viacom), সিবিএস টেলিভিশন নেটওয়ার্কস, প্যারামাউন্ট পিকচার্স, এমটিভি ,ইউনিভার্সাল গ্রুপ, ফক্স নিউজ, নিউইয়র্ক টাইমস্ , ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, ওয়াশিংটন পোষ্ট,
এবিসি, ষ্পোর্টস চ্যানেল, ইএসপিএন, হিস্ট্রি চ্যানেলসহ আমেরিকার প্রভাবশালী অধিকাংশ মিডিয়া ইহুদিরা নিয়ন্ত্রণ করছে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে।

মার্কিন সরকার বিভিন্ন খাতে ইসরাইলকে বছরে ১ হাজার কোটি ডলার অফেরতযোগ্য সহায়তা দিয়ে থাকে।
আমেরিকার সংবাদ ও রাজনৈতিক মহল মনে করে বাস্তবে এ অর্থের পরিমাণ ঘোষিত সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি।
যদিও আমেরিকার আইন অনুযায়ী যেসব সরকার অর্থ ও অস্ত্র সহিংসতা বা আগ্রাসনের কাজে ব্যবহার করবে তাদেরকে সহায়তা দেয়া নিষিদ্ধ।


শুধু মাত্র ব্রিটেন আর আমেরিকাই নয় ইসরাইলকে সন্ত্রাসী বাহিনীতে পরিনত করার পেছনে প্রত্যক্ষ ভাবে সহযোগিতা করেছে ফ্রান্স, জার্মান, আর্জেন্টিনা, দক্ষিন আফ্রিকা এবং দুঃখ জনক হলেও সত্য তৎকালীন "শাহ"
শাসিত ইরান সরকার। ইরান মুসলিম দেশ হওয়ায় আমরা সে বিষয়ে জানবো পরবর্তী "মুসলিম বিশ্বের অনৈক্য ও নেতাদের ভুল সিদ্ধান্ত।" শীর্ষক পর্বে ।


১৯৪৯ সালে ফরাসি আণবিক শক্তি কমিশন ফ্রান্সের সাচলে'তে একটি নয়া পারমাণবিক গবেষণা স্থাপনায় ইসরাইলি বিজ্ঞানীদের যোগদানে আমন্ত্রণ জানান। পরবর্তীকালে দু'টি দেশে একটি যৌথ গবেষণা সংস্থা স্থাপন করা হয়। ফরাসি বিজ্ঞানী পেরিন ইসরাইলের কাছে পারমাণবিক উপাত্ত পাচার করেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের লস আলামোস ন্যাশনাল গবেষণাগারে একজন ইসরাইলি বিজ্ঞানী কাজ করতেন যার মাধ্যমে পারমাণবিক জ্ঞান পাচার করা হয়।

ইসরাইলকে পস্নুটোনিয়াম বিযুক্তিকরণ প্রযুক্তিসহ ইএল-৩ টাইপের ১৮ মেগাওয়াট শক্তিসম্পন্ন একটি ফরাসি গবেষণা রিঅ্যাক্টর সরবরাহে দু'টি দেশের মধ্যে ১৯৫৭ সালের অক্টোবরে চুক্তি হয়। পরে এ রিঅ্যাক্টরের ক্ষমতা আনুষ্ঠানিকভাবে ২৪ মেগাওয়াটে উন্নীত করার ঘোষণা দেয়া হলেও প্রকৃতপক্ষে তার ক্ষমতা ছিল ১২৫-১৫০ মেগাওয়াট।

মিসরের বিরুদ্ধে সুয়েজখাল - সিনাই অপারেশনের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে ফ্রান্স ও ব্রিটেন, ইসরাইলকে সহযোগিতা করেছিল।
১৯৫৬ সালের ২৯ অক্টোবর সুয়েজ খাল অপারেশন শুরু হয়। ।
৪ নভেম্বরের মধ্যে ইসরাইল গোটা সিনাই উপদ্বীপ দখল করে নেয়।
৬ নভেম্বর সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র চাপের মুখে যুদ্ধবিরতি হয়। সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রী বুলগানিন ও প্রেসিডেন্ট ক্রুশ্চেভ হুমকি দেন যে, সিনাই থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করা না হলে ইসরাইলে পারমাণবিক হামলা চালানো হবে।

সন্ত্রাস বাদী ইসরাইল একটি গোপন অভিযানের মাধ্যমে 'ইয়েলো কেক' হিসাবে পরিচিত ইউরেনিয়াম অক্সাইড সংগ্রহ করেছিল। একটি জার্মান কোম্পানির সহায়তায় তারা ভূমধ্যসাগরে একটির পর একটি জাহাজ পরিবর্তনের মাধ্যমে ২শ' টন ইয়েলো কেক সংগ্রহ করে। ৫৬০ টন ওজনের তেলের ড্রামের গায়ে 'পস্নামবাট'(সীসা) শব্দটি ব্যাবহার করে জার্মান সরকার ইসরাইলের কাছে ইউরেনিয়াম পাচারে সরাসরি জড়িত ছিল। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন ও আরবদের বিরাগভাজন হওয়ার ভয়ে দেশটি এ কথা কখনো শিকার করেনি।

১৯৬০ সালে আর্জেন্টিনা ৮০ টন এবং দক্ষিণ আফ্রিকা থেকেও ৫০ টন ইউরেনিয়াম সংগ্রহ করে ছিল বলে জানা যায়।

১৯৬০ সালে ফ্রান্সের পরমাণু পরীক্ষার মাধ্যমে একটি নয়, দু'টি পারমাণবিক শক্তির জন্ম হয়েছিল। একটি ছিল ফ্রান্স নিজে এবং আরেকটি ইসরাইল। ফ্রান্সের পরমাণু পরীক্ষা সফল হওয়া মানেই ইসরাইলের পরমাণু পরীক্ষাও সফল। কারণ সবগুলো একই প্রযুক্তিতে তৈরী।

পশ্চিমা বিশ্ব তাদের মিশনে এখন পর্যন্তও শতভাগ সফল।তারা পুর পুরি দায় মুক্ত একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করতে সক্ষম হয়েছে যার কু কর্মের দায় ভার একক ভাবে কোন রাষ্ট্রই মেনে নিবে না এবং কেও তাকে থামাতেও আসবেনা।

চলবে....

দি প্যালেস্টাইন (পার্ট-১)
দি প্যালেস্টাইন (পার্ট-২)
দি প্যালেস্টাইন (পার্ট-৩)
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ৩:৪১
২০টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×