মফস্সল শহরে একটা সাদামাটা স্কুলের নাইন থেকে ঢাকা ইউনিভার্সিটির সেকেন্ড ইয়ার পর্যন্ত সম্পর্কে জহির ভাই মাঝে মাঝে গর্ব করে বলে, "আমি তার হাত এত বছরে কতবার ধরছি তা আমি গুণে বলে দিতে পারব..."
মাঝে মাঝে জহির ভাইকে ভীষণ বোকা মনে হয়, এত বছরে তো অন্তত রুমডেট পর্যন্ত চলে যাওয়ার কথা। আবার মাঝে মাঝে ভীষণ হিংসে হয়, এমন পবিত্র সম্পর্ক কয়েটাই বা আছে?
জহির ভাই আমার রুমমেট। আমি ফার্স্ট ইয়ার আর উনি সেকেন্ড ইয়ার। আমার মনে হয় উনার স্ক্রু কিছুটা ঢীলা। দুনিয়ার যত লেইম সমস্যা উনার। কার্জন হলে প্রেম করতে গিয়ে ব্যাগের চেইন নষ্ট হয় উনার, তারপর প্রেমিক প্রমিকা দুইজনে মিলে ব্যাগের চেইন ঠিক করেন। আহা, আমার কাছে এসে সেকি গল্প!
ছয় মাসে আমি কখনও তাকে পড়তে দেখিনি। প্রেমিকার সাথে ফোনে কথা বলে রাত কাটান, তাও না। সারা রাত ল্যাপটপে ইংরেজি সিরিয়াল দেখেন, সকালে ক্লাস শেষে প্রেমিকা নিয়ে ঘুরেন আর সন্ধ্যায় রুমে এসে আমাকে উনার সিরিয়াল আর প্রেমের গল্প বলেন।
এবার আসি জহির ভাইয়ের প্রেমিকার। জুঁই আপু। আমার ডিপার্টমেন্টের একবছর সিনিয়র। তাকে বাঙালি বিউটি বলা যায়, হিজাব পরে, তার চোখের কাজল দেয়াটা আমার অনেক পছন্দের। তার চোখের দিকে তাকালেই বুঝা যায় তিনি জহির ভাইকে কতটা ভালোবাসেন। জুঁই আপু জহির ভাই আর তার ফিউচার নিয়ে বেশ চিন্তত। যে চিন্তা আমার আম্মা আমার জন্য করে তা তিনি জহির ভাইয়ের জন্য করেন। এজন্য জহির ভাইয়ের সিজিপিএ তিনি বেশ দুশ্চিন্তায়। আমাকে প্রায়ই ফোন দিয়ে জহির ভাইয়ের পড়ালেখা নিয়ে জিজ্ঞাসা করেন। আর সবসময় আমাকে ডাহা মিথ্যা কথা বলতে হয়।
গত সেমিস্টারে রেজাল্ট দিল জহির ভাইয়ের। সিজিপিএ বরাবর থ্রি। উনি যে পড়াশোনা করেছেন, এতে এই থ্রিটাই অনেক বেশি! সন্ধ্যায় আমাকে অবাক করে দিয়ে জহির ভাই পড়া শুরু করে দিলেন! ছোট থাকতে যেভাবে "আমমমআমমম" করে পড়তাম সেভাবে। বেচারা পড়ার অতি উত্সাহে নিঃশ্বাস নিতে পারছে না। আমি বিস্ময়ের সাথে জিজ্ঞাসা করলাম,
-ভাই হঠাত্?
তিনি মুখটা একটু গোমড়া করে বললেন,
- সে তো বলেছে ফোর না পেলে দেখা করবে না.. সামনের সেমিস্টারে ফোর পেতে হবে..
আমার তখন মনে হচ্ছিল, কেন যে ক্লাস নাইনে থাকতে একটা প্রেম করলাম না! জুঁই আপুর মতো কাউকে না কাউকে হয়তো পেয়েই যেতাম...
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০১৬ বিকাল ৪:৩৩