এই গল্পটা হয়তো আমরা অনেকেই জানি - দুজন নারী সন্তানের দাবী নিয়ে গেল রাজার কাছে। তাদের দু'জনেরই দাবী এটা আমার ছেলে। কেউই যখন সন্তানের দাবী ছাড়তেছেনা তখন রাজা বললেন ছেলেটাকে দু'ভাগ করে দুই নারীকে দিয়ে দিতে। একজন নারী তাতে রাজী হয়ে গেল, কিন্তু অন্যজন রাজী হলনা সে বরং তার নিজের দাবী ছেড়ে দিল। তখন রাজা প্রকৃত ঘটনা বুঝতে পারলেন। যে নারী দাবী ছেড়ে দিয়েছিল তাকে ছেলেটা দিয়ে দিল এবং অন্যজনকে শাস্তি দিল। কারন কোন প্রকৃত মা চাইবেনা তার সন্তানকে দু'টুকরা করা হোক বরং সন্তানের উপর থেকে তার দাবী ছেড়ে দিবে, কিন্তু যে প্রকৃত মা নয় সে চাইবে যদি আমি না পাই তাহলে তাকেও দিবোনা।
আমাদের প্রিয় হুমায়ূন আহমেদের বেলায়ও তাই হল। যারা সত্যিকার অর্থে ভালবাসে, মঙ্গল চায় তারা আসলেই ত্যাগ করতে জানে, আর জানে বলেই তারা নুহাস পল্লিতে তাদের বাবাকে সমাহিত করার বিষয়টি মেনে নিল। কারন স্বার্থ এমন এক জিনিস যেটা ত্যাগ করতে শিখায় না বরং উপরে বলা গল্পের ন্যয় আমি না পেলে তোকেও দিবোনা টাইপের নারীর মত।
প্রকৃতপক্ষে, ত্যাগেই ভালবাসার মহত্ব। যদিও এই ত্যাগটা সাময়িক, এই ত্যাগ দুরত্ব সৃষ্টি করেনা বরং আত্বাকে আরো আত্বার কাছাকাছি টানে। আর যারা আপাত দৃষ্টিতে স্বার্থ ও ভালবাসার যুদ্বে বিজয়ী তারা আসলে নিজের বিবেককে প্রশ্ন করতেও ভয় পায়, যদি অন্যকেউ জেনে পেলে আসল সত্যটা। যদিও আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় তারা কাছাকাছি কিন্তু আত্বার ব্যবধান হাজার মাইলের।
এখানে আরেকটা বিষয় আমাদের ভূলে গেলে চলবেনা তা হল সময়। সময় এমন একটা বিষয় যেটা আসলে সব কিছুর চুড়ান্ত মিমাংসা করে দেয়। এই সময়ের কাছে কারা জয়ী হয় আর কারা পরাজিত হয় তা এখনই বলা মুশকিল।
মানুষের ব্যক্তি জীবন নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে তাই বলে তার সৃষ্টিকর্মকে অবহেলা করা যায়না। রবীন্দ্রনাথ বলেন আর নজরুল বলেন কারো ব্যক্তিগত জীবন কিন্তু বিতর্কের উর্ধ্বে নয়। ব্যক্তিগত জীবন আর সৃষ্টিকর্ম এই দুটা যদি গুলিয়ে পেলি তাহলেই বড় সমস্যা।
যে চলে গেছে তার জন্য দোয়া করাই এখন আমাদের সবছেয়ে বড় কাজ। সময়ই সকল বিতর্কের জবাব দিয়ে দিবে। যে সৃষ্টিকর্ম তিনি আমাদের মাঝে রেখে গেছেন তাতে তিনি মরেও অমর। আমরা তাকে সবসময় অনুভব করবো তার সৃষ্টির মাঝে।