অন্যান্য মহল্লার মতো আমাদের মহল্লায়ও একটা চায়ের দোকান ছিল, যেখানটায় কাজহীন আর বাতিল মানুষগুলো দিনের বেশির ভাগটা কুরে কুরে খেয়ে ফেলত। মতি, যে এই চা দোকানটি চালাতো এবং বলা ভালো ঐ কাজহীন ও বাতিল মানুষগুলোর আগেরদিনের জাবরকাটা আবর্জনাগুলো জমিয়ে রাখতো ধৈর্যশীল কানে, মাঝে সাঝে সেও তাল দিত। দুটো বুড়ো কেটলী, প্রাচীন কালিতে নিজেদের বলিরেখা ঢেকে মতিকে সার্ভিস দিত, তাদের নি:সৃত বাস্পের প্রলেপ আড্ডারতদের করোটির চাতালে জমে উঠত এবং পরবর্তিতে তা পানির বিন্দু হয়ে ঘিলুতে ঝরে পড়লে তারা উদ্দিপ্ত হয়ে উঠত।
তো আমরা, যারা মহল্লার পেট-পাছা পেঁচিয়ে থাকা সর্পিল রাস্তার ফনার কাছে, মতি মিয়ার চায়ের দোকানের সামনের বেন্চটা দখল করে থাকতাম "সুভাষিনী উচ্চবালিকা বিদ্যালয় এবং কলেজ" শুরু এবং শেষের সময়টাতে, তাদের রোজকার সুড়ুৎ সুড়ুৎ করে চা খাওয়ার মাঝে হটাৎ একটা উৎসহীন প্রশ্ন ঢুকে পড়ে। শিকদার হার্ডওয়্যার এর মালিকের ছেলে বিপুল নাকি ফনিভুষন মাস্টারের ছেলে রনি নাকি পাশের মহল্লার মাসুদ নাকি রেদোয়ানের চাচাতো ভাই জাহাংগির নগর পড়ুয়া রশিদ অথবা মতির নিয়মিত অনিয়মিত কোন কাস্টমারের চায়ের কাপ আর ঠোঁট ছলকে প্রশ্নটা আমাদের মাঝে পড়ে গিয়েছিল সেটা খুঁজে পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে বা উৎসের চাইতে ডালপালা ছড়ানোর সম্ভাবনা বেশি থাকায় সেটা চাপা পড়ে যায়, যখন মাসুদ বলে ওঠে ,
"কিরে তগো মহল্লায় কেডা বলে আইবো?"
"কেডা?"
"সেইডা তো ব্যাটা তরা জানবি, তগো মহল্লার খবর আমার কাছে জিগাস ক্যা?"
"ক্যান, আমাগো মহল্লার ব্যাবাক ছুড়ি-পুড়ির খবর তুমার কাসে থাহে, তো ক্যাডা আইবো কইতে পারবা না?"
"ঐ মিয়া মতি, তুমি জানো নাহি কিসু? মহল্লার ব্যাবাকটি আইসা তো তুমার এইহানে গুলতানি মারে.."
মতি মিয়া চায়ের কাপে পাতি ঢালতে ঢালতে মাথা নাড়িয়ে জানায় সে কিছু জানে না তবে সেও শুনেছে মহল্লায় কেউ একজন আসবে। মতিঝিলের ফুটপাতের কাপড় বিক্রেতা নয়ন দোকানে ঝোলানো দড়িতে বাঁধা লাইটারে সিগারেট ধরানোর ফাঁকে বলে,
"এম্পি-উম্পি আইবোনি? আইলে আমরারে একটা খবর দিও। ছদরুদ্দিনের মার্কেটের সামনে কাপড় পট্টি নিয়া ইকটু তদ্বির করতাম!"
"ধুর ব্যাটা, এম্পি-উম্পি আয়া বাল ফালাইবো এইহানে? কতো মিনিস্টার-উনিস্টার আইলো!"
শিকদার হার্ডওয়্যার এর মালিকের ছেলে বিপুল খিঁচিয়ে উঠলে আমাদের মহল্লায় কোন এমপি বা মিনিস্টার আসার সম্ভাবনা মিইয়ে যায়, ফলে সম্ভাব্য আগন্তুকের চেহারাটা গড়ে উঠতে না উঠতেই মতি মিয়ার বুড়ো কেটলির ফোঁপানিতে হালকা হয়ে উড়ে যায় হাজী মোকাররাম আলি সড়কের কোল ঘেঁসে, "সুভাষিনী উচ্চবালিকা বিদ্যালয় এবং কলেজ" এর বগলের তলা দিয়ে, সিটি কর্পোরেশনের উল্টানো ডাস্টবিনের জানালা গলে মহল্লার লেজের দিকে। আমাদের চোখগুলো সেই না গড়ে ওঠা চেহারার সাথে আটকে থাকে এবং "সুভাষিনী উচ্চবালিকা বিদ্যালয় এবং কলেজ" এর লোহার গেটতক কোন রকম ঝুলে থেকে বালিকা বা তরুনিদের ঘ্রান পেয়ে সেখানেই ঝরে পড়ে। ফলে মতি মিয়ার দোকানে সম্ভাব্য আগন্তুকের তালাশে কতজন গরম চা খেয়ে ঠোঁট জিভ পুড়িয়ে মতি মিয়াকে গালাগাল করে চলে যায় বা যাওয়ার সময় ক'জন চায়ের দাম দিতে ভুলে যায়, তা আমাদের জানা হয়ে ওঠে না।
তো এরপর, সম্ভাব্য আগন্তুকের খবরটি ঘোলা হতে থাকে, মতি মিয়ার দোকানে "সুভাষিনী উচ্চবালিকা বিদ্যালয় এবং কলেজ" এর খুটিনাটিই আমাদের কাছে মুখ্য হয়ে ওঠে। শুধু মাঝে মাঝে মতি মিয়ার বুড়ো কেটলি ফুসে উঠে দুধ-চিনি-আদা-লং এর মিলিত অনুনয়ে সম্ভাব্য আগন্তুকের খবরটি বলক দিয়ে উঠতে চায় কাস্টমারদের অকেজো ঠোঁটে। কেউ একজন বলে,
"রাস্তা ঘাট ক্যামুন ছাপ-ছুতারা করসে দেখস? কেন না কে আইব! হালায় দেখি কী মজনু মিয়ার আড়তের সামনা থিকা মরা কুত্তাটা দুঘন্টার মইধ্যে সিটি কর্পরেশনের গাড়ি আইসা নিয়া গেছে গা!!"
"কয়দিন ধইরাই হুনতাছি আইবো আইবো, আহে না তো হালা!"
"কমিশনারের ভাইস্তারে জিগাইছিলাম, সেও তো কিছু কইবার পারে না!"
এর মাঝে মহল্লার বড় ভাইয়েরা হোন্ডা হাকিয়ে মতি মিয়ার দোকানে সিগারেট নিতে দাঁড়ালে কথাবার্তায় ছেদ পড়ে, কেউ কেউ প্রলম্বিত সালাম দেয়, সালামের রেশ ফুরিয়ে যাবার আগেই তারা বলে'
"কিবে মইত্যা, র্যাব-উব আইব নাকি? আইলে খবর দিছ।"
তারা সিগারেটের দাম না দিয়ে চলে গেলে মতির চেহারায় ফাটলের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, বুড়ো কেটলির ছুঁড়ে দেওয়া ধোঁয়া সেই ফাটলে জেঁকে বসে ঘাম হয়ে গড়িয়ে পড়লে মতি মিয়া খিস্তি কেটে ওঠে,
"ঐ মিয়ারা, কুন বাইনচুতে আইব না আইব সবতে আমারে জিগাও ক্যান? মনা পাগলারে জিগাওগা। হালারে দ্যাখলাম মসজিদের সামনে চিক্কর পাড়তাছে সব জানি সব জানি কইয়া। ওরে ধরো গিয়া!"
মনা পাগলা গায়ে গু মেখে মহল্লার তিনটা মসজিদের কোন একটার সামনে কারো আগমনী বার্তা ঘোষনা করছে, বিষয়টা আমাদের কাছে স্বস্তিকর ঠেকে না, ফলে আমরা "সুভাষিনী উচ্চবালিকা বিদ্যালয় এবং কলেজ" ভেংগে বালিকারা বা তরুনীরা কলকলিয়ে প্রবাহিত না হওয়া পর্যন্ত সম্ভাব্য আগন্তুকের তালাসে মাথা ঘামাবো কিনা ভেবে ইতস্ততের মধ্যে পড়ে যায়। ফনিভুষন মাস্টারের ছেলে রনি তার পাছা বেয়ে ছলকে নামতে চাওয়া জিন্সের কান চেপে ধরে বলে;
"আইচ্ছা আমাগো মহল্লায় কুনো নাটক-সিনেমার লোক আইব নাতো শুটিং-ফুটিং করনের লইগা? ঐযে একবার ফারুকীর ভাই বেরাদাররা আইছিল না, আজিজুল মিয়ার বাড়িতে শুটিং করছিল। আজিজুল মিয়ার ভাইগনা নাকি ফারুকীর ভাই বেরাদার গুরুপের মাল। চল অরে যায়া ধরি....."
এই সম্ভাবনাটা আমাদের বাস্তবের কাছাকাছি মনে হয়, আমাদের মনে হওয়া-হয়ি তে সম্ভাবনাটা একসময় শেকড় গেঁড়ে বসে এবং আমরা মহল্লার পেটের দিকে যেতে থাকি, যেখানটায় আজিজুল মিয়ার পুরোন দোতলা বাড়িটা ইউনাইটেড ডেভলমেন্ট লিমিটেডের নতুন দুটো আ্যাপার্টমেন্টের চিপায় ফোঁড়ার মতো বসে আছে। আজিজুল মিয়ার প্যাঁচানো সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠে আমরা অল্প অল্প হাপায়, ছাদের কোনায় খুপড়ি মতো একটা ঘরের সামনে টানা তারে একটা কমলা কালারের জাংগিয়া ঘুমাচ্ছে, তাই দেখে রেদোয়ানের চাচাতো ভাই জাহাংগির নগর পড়ুয়া রশিদ বলে;
"এই কালারের জাংগিয়াও মাইনষে পরে!"
কমলা রংয়ের জাংগিয়া চোখে পুরে আমরা আজিজুল মিয়ার ভাইগনার খুপড়ি ঘরের দরজায় থাবা দিই, লালচোখের পাড় ভেংগে জমে থাকা পিচুটি নিয়ে আজিজুল মিয়ার ভাইগনা দরজা খোলে, ত্যানার মতো হাফ প্যান্টের পকেটে বাঁ হাত ঢুকিয়ে কৌশলে বিচির পাচড়া চুলকাতে চুলকাতে আজিজুল মিয়ার ভাইগনা আমাদের দিকে তাকায়। আজিজুল মিয়ার ভাইগনার বাঁকাচোরা চেহারায় আমরা টক টক ঘুমের আস্তরে বিরক্তির খরখরে জমে ওঠা দেখি, দেখি আজিজুল মিয়ার খোলা ছাদের জুলাইয়ের চিড়বিড়ে রোদ কেমন ম্যান্দা মেরে পড়ে আছে খুপড়ির মতো ঘরটার দেয়ালে, যেখানটায় ঢাকায় ছবির পোস্টারে অগুনতি স্তনের ঢল।
"আইচ্ছা আজিজুল মিয়ার ভাইগনা, তুমি তো ফারুকীর ভাই বেরাদার গুরুপে আছো, কউতো আমাগো মহল্লায় কুনো শুটিং-ফুটিং হইবনি? ইস্টার-মিস্টার আইব কেউ?"
ঢাকায় ছবির পোস্টারে গেঁথে যেতে যেতে আমাদের মধ্যে বলছিল কেউ। আজিজুল মিয়ার ভাইগনা মাথা নাড়ে, হাই তুলে বলে, সে এখন ফারুকীর গ্রুপে নায়, এফডিসিতে এক্সট্রা সাপ্লাইয়ের কাজ করে এবং সে জানে না কেউ আসবে কি না এই মহল্লায়।
কমলা রংয়ের জাংগিয়ার সাথে ঢাকায় ছবির পোস্টারে অগুনতি স্তনের ঢল সামিল হলে আমাদের চোখ করকর করে ওঠে।
"হালায় আইবটা কে তাইলে!!"
এরপর আমরা হতাশায় নুয়ে পড়তে থাকি। কিন্তু ফনিভুষন মাস্টারের ছেলে রনি; আমাদের এই মানষিক পতন থেকে ঠেলে তুলতে চায় মনা পাগলার উছিলায়, সে বলে;
"আইচ্ছা, মতি মনা পাগলার কথা কইছিল না? অনেক সুমায় আগল-পাগলগো কতা কিন্ত ফইলা যায়!"
তো এরপর আমাদের ভেতর মনা পাগলা তার গু মাখা শরীর নিয়ে আমাদের মধ্যে ঢুকে পড়ে এবং আমরা মহল্লার তিনটা মসজিদের দিকে রওয়ানা হই। প্রথম মসজিদটা আমাদের মহল্লার একদম মুখের কাছে হা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে যেন মহল্লার সব পাপ-তাপ গিলে খাবে। এটার সামনে আমরা মনা পাগলাকে পাই না, তবে মসজিদ লাগোয়া তেহারী বিক্রেতা রমজান জানায়, সকালের দিকে মনা পাগলা একবার এদিকটায় শোডাউন দিয়ে গেছে। দ্বিতীয় মসজিদটা নিয়ম মতো মহল্লার একদম তলপেটের নিচেই সিনা টান করে দাঁড়িয়ে থাকে। মসজিদের সামনে চিপা গলির পুরাটা দখল করে বান্দর খেলা চলছে এবং মহল্লার পোংটা পোলাপান বান্দরের পাছার রং নিয়ে বান্দরওয়ালাকে নানান বিব্রতকর প্রশ্ন করে;
"ঐ মিয়া, তুমার বান্দরের হোগা লাল হইল ক্যামনে? মিয়া তোমরা বান্দররেও ছাড়ো না...."
এখানেও আমরা কোনরুপ গুয়ের গন্ধ না পেয়ে নিশ্চিত হই মনা পাগলা তৃতীয় মসজিদটা যেখানে মহল্লার সব গন্যমান্য লোকেরা পাঁচ ওয়াক্ত অথবা নিদেন পক্ষে জুম্মাবারে নামাজ পড়তে আসে, সেখানেই আছে। তৃতীয় মসজিদের সামনে আমরা ঝলমলে দিনটাকে ক্রমশ মরে যেতে দেখি। মসজিদের উঁচু মিনারটা ছায়া হয়ে আমাদের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়লে আমরা দেখি, সিটি কর্পোরেশনের অগভির ড্রেনের ভেতর মনা পাগলা কোমর তক ডুবিয়ে বসে আছে। মনা পাগলার গায়ে বিভিন্ন বর্নের গু এর ছড়াছড়ি আমাদের নাক পর্যন্ত ধেয়ে আসলে আমরা মহল্লার সব মানুষের পেটের অবস্থা বুঝতে পারি। রেদোয়ানের চাচাতো ভাই জাহাংগিরনগর পড়ুয়া রশিদ ওয়াক শব্দে হাটু গেড়ে বসে আর শিকদার হার্ডওয়্যার এর মালিকের ছেলে বিপুল একটা সিগ্রেট ধরিয়ে মনা পাগলার দিকে ছুঁড়ে দিয়ে বলে;
"কী মনা মিয়া, তুমি নাকি কার আসনের কথা মহল্লায় ফাটাইতেছ? কেঠা আইব মিয়া?"
মন পাগলা সিগ্রেটে কষে টান দিয়ে বলে;
"উইযে হাজি ছাবরে দেখছ?"
আমরা মনা পাগলার উজিয়ে ধরা গু মাখানো হাতের গন্তব্যে তাকালে দেখি ছদুরুদ্দিন মার্কেটের মালিক হাজি ছদর এক হাতে সাদা লুংগির খুঁট ধরে অন্যহাত নাড়িয়ে কাকে কী যেন বলছে।
"ঐ ব্যাটায় তো আমার পুয়াতি কুত্তার উলান চুইষা বড় হইছে।"
কুকুরের দুধ পানের সাথে হাজি ছদরের বাড়-বাড়ন্তের সম্পর্ক নিয়ে আমরা চিন্তিত হই না ফলে শিকদার হার্ডওয়্যার এর মালিকের ছেলে বিপুল আবার বলে;
"মহল্লায় কে আইব মনা মিয়া? তুমি নাকি সবাইরে কইছ?"
নিরাপদ দুরত্তে মহল্লার কিছু মানুষ ভিড় করে, কেউ পান-দোক্তা চাবানোর ফাঁকে ঠোঁট বাঁকা করে কসরৎ করে হাসে। মনা পাগলা ড্রেনে আয়েশ করে আরেকটু সেঁধিয়ে বলে;
"আইব তো। আমারে কইছে। কয়দিন আগে খোয়াবে কইছে আমারে।"
এবার মসজিদের সামনে জমায়েত মহল্লার মানুষগুলোর ঠোঁট বাঁকানো হাসি মাঝপথে ঝুলে যায়, এমন কি কারো কারো পানের পিক ঠোঁট ছলকে সাদা পান্জাবিতেও পড়ে।
"আমারে কইছে, কয়দিন সবুর কররে মনা। আমি আইলে তর গতরের থন আসমানী জাফরানের বাস বারাইবো।"
উপস্থিত কেউ কেউ কন্ঠে সংশয় বা আশংকা পুরে মনা'কে গালিগালাজ করে। কেউ কেউ সম্ভাব্য আগন্তকের চেহারা ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে মসজিদের মিনারের চাইতেও উঁচু করে ফেলে।
"তারে যেদিন খোয়াবে দেহি সেইদিন মহল্লায় কুনো চুরি দারি হয় নাই। জয়তুন মাতারীর মাইয়া গলায় দড়ি দিয়াও মরতে পারে নায়। বুজছ কিছু তোমরা?"
জমায়েত লোকগুলোর মধ্যে একটা ঢেউ এর জেগে ওঠা দেখি আমরা। এই ঢেউ তাদের মনা পাগলার গু মাখা শরীরের নিরাপদ দুরত্তের বৃত্তটাকে ছোট করে নিয়ে আসে। মনা ফের বলে;
"হেই যেইদিন খোয়াবে আহে, হেই দিন আসমানের চাঁন এই মহল্লা ছাইড়া অন্য কুনো মহল্লায় যায় নাইক্কা। আর ল্যাংড়া মইন সে রাইতে র্যাবের তিনডা গুল্লি হোগায় হান্দাইয়াও বাঁইচা আছে, সেইটা ভাইবা দেখছো?"
এইবার জমায়েত লোকগুলোর মধ্যে জেগে ওঠা ঢেঊ জোরদার হয়ে মহল্লার এদিক সেদিক ছড়িয়ে যায় এবং জমায়েতে একে একে আরো অনেকেই যোগ হয়। এই নতুন যোগ হওয়াদের মধ্যে আসর অক্তে নামজ পড়তে আসা মহল্লার মান্যগন্যরাও ছিল এবং হাজী ছদর এক হাতে সাদা লুংগির খুট ধরে তাদের সামনে থাকে। হাজী ছদরকে দেখে আমাদের মনা পাগলার পোয়াতী কুকুরের পুস্ঠ ওলানের কথা মনে হয়, যখন দেখি হাজী ছদর আগুন চোখে মনা পাগলার দিকে খিস্তি-খেউড় উগড়ে দেয়;
"হালায় বেজন্মা, মসজিদের সামনে দিগদারি চোদাইতেছ? গায়ে গু মাইখা মহল্লায় পোংটামু কইরা বেড়াইবা....খোয়াব থিকা মহল্লায় কুন চুতিয়া আমদানি করতাছ তুমি, নাটকির পোলা, এ্যা?!"
জমায়েত অন্যান্য'রা এতে সায় দিতে পারে না, কারন তারা এর মধ্যে খোয়াবের রাতে মহল্লায় চুরি-দারি না হওয়া, জয়তুন মাতারীর মেয়ের আত্মহত্যায় অপারগতা, মহল্লায় স্থায়ি চাঁদ, র্যাবের ক্রসফায়ারে বেঁচে যাওয়া ল্যাংড়া মইন ইত্যাদি জোড়াতালি লাগিয়ে একটা উপসংহারে পৌছানোর চেস্টা করে। ফলে হাজী ছদরের রোয়াব ফুসে উঠতে না উঠতেই মিইয়ে যায় এবং এতে আমাদেরও প্রচ্ছন্ন সায় থাকে। এহেন তর্কাতর্কি বা বাদানুবাদের মাঝে মনা পাগলা ড্রেনে নির্বিকার গলা তক ডুবে চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করতে থাকে। এদিকে আসরের অক্ত মাগরিবের দিকে ঢলে যাবে এই আশংকায় মহল্লার মান্যগন্যরা চেঁচিয়ে ওঠে এবং আল্লাহর ঘরের সামনে এই নাপাক, গু ঘাঁটা, অপদার্থ মনা পাগলকে অবান্ছিত করে। তবে তাদের এই ঘোষনা আমরা সমেত জমায়েতের অনেকেই মেনে না নিলে বড় ধরনের গ্যান্জামের সৃস্টি হয়। মনা পাগল মহল্লা চৌচির করে চেঁচিয়ে উঠে গায়ের বহু বর্ন গু সমেত লাফিয়ে উঠলে জমায়েত বিস্ফোরিত হয়ে ছিটকে পড়ে এবং আমরা টের পাই মহল্লার বুক-পেট-মাথা ছুঁয়ে আমাদের ঘ্রানের অতীত আসমানি জাফরানের গন্ধ মহল্লার তিন নম্বর মসজিদের উঁচু মিনার ছেড়ে উঠে যাচ্চে অনেক উপরে........
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১০ রাত ১২:০৭