হা ভাই, এই বিজয় দিবসে, দ্যাশ ব্যাপী মুক্তি পেয়েছে, নায়ক+প্রযোজক জনাব আবদুল জলিল ওরফে অনন্তর নতুন ছবি ‘হৃদয় ভাঙ্গা ঢেউ’!!
খোজ দ্য সার্চ এর পর এই সিনেমা নিয়ে জনমনে অনেক প্রত্যাশা ছিল। প্রত্যাশা ছিল এটাও দম ফাটানো হাসির হবে, নায়ক অনন্তের মুখ দিয়ে ‘ইপ ইউ ওয়ান্না ডেসট্রয় মাই কান্ট্রি, আই ডেসট্রয় ইউ’ টাইপ ডায়লগ শোনা যাবে। অন্তত অদ্ভুত উচ্চারনে ছবিটার নাম ‘রিদয় বাঙ্গা ডেউ’ শুনতে পাব আশা করেছিলাম। কিন্তু আফসোস। কে বা কারা নায়ক অনন্তের মুখের ভাষা কাইড়া লইসে। অন্য কেউ ডাব করে দিয়েছে। যার কারনে বিনোদনে যথেষ্ট ঘাটতি লক্ষ্য করা গেছে।
তারপরেও বিনোদন কম ছিল না। অনন্ত সাহেব আর কিছু না পারুক, অন্তত চলচ্চিত্রে এমন একটা ধারার সূচনা করেছেন যেখানে সিরিয়াস দৃশ্য বা ডায়লগে হল ভর্তি দর্শক হাসিতে ফেটে পরে।
চলুন এবার কাহিনীর ‘গভীরে’ যাওয়া যাক।
আলমগীর খুবই খতরনাক ভিলেন। আকাশ দেখার টেলিস্কোপ দিয়ে উনি জমি খুঁজে বেড়ান। জমি কেনা বা দখল করা উনার নেশা টাইপ।যাইহোক, উনার চরিত্রও আবার খারাপ। অকাম কুকামের ফসল হিসেবে নায়ক অনন্ত জন্ম নেয়। জন্মের পর পরই অনন্তের মা কে গলা টিপে মেরে ফেলে আলমগীর। বাচ্চাটাকে জঙ্গলে ফেলে দেয়া হয়। কিন্তু ঘটনাক্রমে আলমগীরের স্ত্রী দিতি জঙ্গল থেকেই উদ্ধার করে বাসায় নিয়ে আসে বাচ্চাটাকে। আলমগীর এটা সহ্য করতে পারে না। একপর্যায়ে দিতি আর আলমগীরের মধ্য চ্যালেঞ্জ পাল্টা চ্যালেঞ্জ অনুষ্ঠিত হয়। দিতি পোলাটারে মানুষের মত মানুষ করতে বদ্ধপরিকর। কিন্তু নিজের স্বার্থে আলমগীর পোলাটাকে নষ্ট করতে প্রতিশ্রুতি বদ্ধ।
হঠাত করে সময়টা ২৬ বছর পরে চলে গেল। এত দিনে নায়ক কোলের বাচ্চা থেকে বুইড়া ঢাড্ডু হয়ে গেলেও দিতি আর আলমগীর আগের মতই নরমাল বুড়া হিসেবে বজায় আছেন। আলমগীর যথারীতি টেলিস্কোপ দিয়ে জমি খুজে বেড়ায় আর জমির মালিককে বস্তায় ভরে সমুদ্রে ছুড়ে ফেলে দেয়। এমনই এক ছুড়ে দেয়া বস্তা উদ্ধার করতে গিয়ে ধরা খেয়ে গেলেন নায়ক অনন্ত। আলমগীর অনন্তকে বলে, হয় তুই আমার হয়ে কাজ করবি, নইলে তোর স্নেহময়ী আম্মাকে গুলি করে মেরে ফেলা হবে। মাতৃ ভক্তির অনন্য নিদর্শন হিসেবে অনন্ত আলমগীরের দলে যোগ দেয়।
ওদিকে দিতি যখন জানতে পারে অনন্ত চারিদিকে অপকর্ম করে বেরাচ্ছে, তখন বাড়ির বারান্দায় থাকা টবের গাছের ডাল ভেঙ্গে নায়ক অনন্তরে অ্যায়সা পিটান দিলেন যে নায়কের কোমল পিঠে চাবুকের আঘাতে মত দাগের সৃষ্টি হয়ে গেলো।
একদিন আলমগীর নিজের হাতে খুন করে সেই খুনের দায় নিতে অনন্তকে বাধ্য করে। অনন্তকে জেলে পুরে দেয়া হয়।
নায়কের জেলের পোষাকের নাম্বারটাও জটিল। ৭৮৬। আমার অবশ্য মনে হয় ৪২০ হলে পারফেক্ট হত।
জনাব অনন্ত বাংলার নায়ক। তাকে জেলে রাখবে কার সাধ্যি। বরং নায়ক উষ্ঠা খায়া জেলের দেয়ালে পড়লেও সেই দেয়াল ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়।
এমনইভাবে জেল পালানোর খায়েশ হওয়ায় নায়ক পালিয়ে গেলেন। বীর কারারক্ষীরা গুলি করতে করতে ম্যাগজিন শেষ করে ফেলল। কিন্তু সেগুলো নায়কের আশে পাশে পটকার মত ফুটতে লাগল।
সম্ভবত ২৬ বছর পর দেশটা নদীমাতৃক বাংলাদেশ থেকে সমুদ্র মাতৃক বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে। কথায় কথায় নায়ক নায়িকা পুলের পানিতে লাফ দেয়ার মতই সমুদ্রে লাফ দেন। আর যেন তেন সমুদ্র নয়,এগুলা অনেকটা ষ্টারগেটের মত। লাফ দিলেই মুহুর্তে তা অন্য কোথাও পৌছে দেয়। নায়ককে পৌছে দিল এক অজানা দ্বীপে।
আর এখানেই ঘটে বিজ্ঞানের ইতিহাসে এক অভাবনীয় ঘটনা। আমরা জানি, পাথরে পাথরে ঘর্ষনের ফলে আগুনের আবিষ্কার থেকেই বিজ্ঞানের জয়যাত্রা শুরু। আমরা নিজেরাও অনেকে চেষ্টা করেছি এভাবে আগুন জ্বালাতে। কিন্তু এক ঘষায় সামান্য ফুলকি ছাড়া কখনও বেশি কিছু দেখি নি। আমদের শ্রদ্ধেয় নায়ক সাহেব এক ঘষায় দাবানলের মত আগুন তৈরি করে ফেললেন! সত্যই জিনিয়াস। পরে জানা গেল এটা তার আম্মা দিতি শিখিয়েছেন। শিখিয়ে দিলে হেন কোনো কাজ নেই নায়ক পারেন না। হয়ত শিখিয়ে দিলে ফাইটার প্লেন বানিয়ে মূল ভু খন্ডে ফিরে যেতে পারতেন।যাইহোক মনের দুঃখে নায়কের গলার শোনা গেল যথারীতি ‘এক মুঠো রদ্দুর’ স্টাইলের বালামের একটা গান। হালায় এক মুঠো রদ্দুর ছাড়া জীবনে মনে হয় আর কোনো সুর বানাইতে পারবে না।
অবশেষে নায়কের দুঃখ দূরীকরনে সমুদ্র নামক স্টারগেট দিয়ে উপস্থিত হলেন সৌন্দর্যমন্ডিত নায়িকা বর্ষা।
বর্ষার ইতিহাসও দারুন। উনি বিভিন্ন ড্যান্স বারে বিচিত্র সব গানের তালে তালে নেচেকুদে বেরাতেন। এমনই একটা গান- ‘শুক্র শুক্র শুক্র বার, বন্ধ বন্ধ বন্ধ সবার...’
মনটা দুঃখে ভড়ে গেলো। নায়িকা আমার কথা মাথাতেই রাখেনি। প্রায় শুক্রবারেই আমাকে অফিস করতে হয়।
যাইহোক, বখাটেদের তাড়া খেয়ে নায়িকার বাবা অক্কা যান, আর বর্ষা যথারীতি সমুদ্রে ঝাপ দেন। সমুদ্রে ভেসে ভেসে নায়কের সেই অজানা দ্বীপে উপস্থিত হন তিনি।
বর্ষাকে সমুদ্র থেকে তুলে মোটামোটি পেট বরাবর চাপ দেন অনন্ত, আর নায়িকার মুখ দিয়ে কলের পানির মত পানি বের হতে থাকল। ব্যাস, বাচানোর প্রক্রিয়া শেষ।
এদিকে নায়ক দেখতে পেলেন নায়িকার গায়ে ভেজা পোষাক। কিন্তু ভেজা পোষাকেতো রাখা ঠিক নয়- এই অযুহাতে নায়িকার জামা খুলতে উদ্ধত হলেন।
এমন সময় ফ্ল্যাশ ব্যাকে দেখানো হল, একদিন নায়ক অনন্ত বখাটেদের হাত থেকে বাঁচিয়ে এক মেয়েকে পোষাক পরিয়ে দিয়েছিলেন।
অথচ সময়ের প্রভাবে আজ সে পোষাক খুলতে যাচ্ছে!
নায়ক চিন্তা করে দেখলেন হল ভর্তি মানুষের সামনে কিছু করা ঠিক হবে না। তাছাড়া মেয়েদের পোষাক খুলতে আম্মাজান দিতি ও না করে দিয়েছেন। নায়ক আবার মায়ের কথা ছাড়া আর কিছু বোঝে না। কাজেই সব ভেবে নায়িকার জামা খোলা থেকে বিরত থাকলেন।(আফসোসের শব্দ শোনা গেল হল জুড়ে)।
নায়িকা সুস্থ হয়েই প্রেমে পড়ে গেলো নায়কের। নায়িকার কাব্য প্রতিভা ব্যাপক। কথা কথায় কবিতা ঝারে। নায়ক ওদিকে বিজি পাতা দিয়ে বাশি বাজাতে। নায়িকাকে পাত্তা দেয় না। একপর্যায়ে নায়িকাও শিখে গেল পাতার বাশি বাজাতে। মনের দুঃখে বাশি বাজাতে বাজাতে যখন দুইজনেরই ঠোট ছিলে যাবার উপক্রম, তখনই দুজনের হুট করে প্রেম হয়ে গেল আর মোনোরম লোকেশনে নাচা কুদাও শুরু হয়ে গেলো।
নায়ক নানা দিক দিয়ে দক্ষ। সমুদ্র থেকে ফটা ফট মাছ ধরে ফেলেন। অথবা এমনও হতে পারে নায়ক একজন ইলেকট্রফাইং ব্যক্তিত্ব। উনার সংস্পর্শে আসামাত্র মাছ গুলো স্টান হয়ে যায়। নড়া চড়ার ক্ষমতা থাকে না।
এদিকে একদিন নায়িকা নামেছে সমুদ্রে। কোত্থেকে নারীলোভী এক হাঙ্গর মাছ এসে উপস্থিত। অতঃপর নায়িকার বাচাও বাচাও রব আর নায়ক এসে হাঙ্গর সালারে ঢিস্যা ডিসুম। অদ্ভুত এ হাঙ্গর মাছ। নায়কের গায়ে সে কামর বসাতে পারেনি। দিয়েছে আচর। হয়ত ডিজিটাল হাঙ্গর গুলোর হাত গজিয়েছে।
যাইহোক, কাহিনী চুইঙ্গামের মত বড় হচ্ছিল এমন সময় আলমগীর তার টেলিস্কোপ সহ দ্বীপে উপস্থিত। নায়িকাকে দেখে পছন্দ হওয়ায় তাকে তুলে নিয়ে চলে গেল। নায়ক পেছন পেছন ভেলা বানিয়ে সেই ভেলা দিয়ে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে দিল। ওই পারে এসে অবশ্য নায়ক অনেকটা র্যাম্বো কিসিমের হয়ে গেলো।দুনিয়ার কোনো গুলি বোমা, এমনকি তরবারিও তার কেশাগ্র স্পর্শ করতে পারল না। সব বাধা ডিঙ্গিয়ে নায়িকাকে উদ্ধার করে আবার যথারীতি সমুদ্রে ঝাপ। এরি মাঝে আলমগীরের সব কুকীর্তি ক্যামনে ক্যামনে জানি সবার কাছে উন্মোচিত হয়ে গেলো।পুলিশ এসে তাকে ধরে নিয়ে চলে গেলো।
সিনেমার চিত্র ধারন খোজ দ্য সার্চের চেয়ে শত গুনে ভালো হলেও একটা ব্যাপার খুবই দৃষ্টি কটু লেগেছে সেটা হল আলমগীরের জামাকাপড় গ্রাফিক্স দিয়ে বদলে ফেলা। মুজিব কোট পড়ায় সেন্সর বোর্ড আটকিয়ে দিয়েছিল সিনেমাটি। কিন্তু গ্রাফিক্সটা ভাল হলে সেটা ঢাকা দেয়া যেত।গ্রাফিক্সে বানানো আলমগীরের ড্রেস প্রায়ই মুখের উপরে বা আরেকজনের উপরে এসে যাচ্ছিল।
পুরা সিনেমায় একমাত্র দর্শনীয় হল নায়িকা বর্ষা। সত্যিকারেই অসম্ভব সুন্দরী মনে হয়েছে। হল থেকে বেরিয়ে যেদিকে তাকাই বর্ষার ছবি যেন ভেসে ওঠে। বাংলা সিনেমা স্টাইলে, প্রেম মনে হয় একেই বলে!!!