মুখ এবং দাঁত নিয়ে শিশুরা কিছু বদভ্যাস তৈরি করে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
আঙ্গুল চোষা, টুথপেষ্ট গিলে ফেলা, ফিডার মুখে নিয়ে ঘুমাতে যাওয়া, লিপ সাকিং, জিহ্ববা দিয়ে দাঁতে চাপ দেয়া, নখ কাটা, দাঁত দিয়ে পিন বা চুল বাধার ক্লিপ খোলা, মুখ দিয়ে শ্বাস নেয়া।
আঙ্গুল চোষা
এটি শিশুদের খুব সাধারণ একটা বদ অভ্যাস। সাধারণত ৩ মাস থেকে ২ বছর বয়স পর্যন- এটি স্থায়ী হয়ে থাকে। তবে এর পর এটি চলতে থাকলে তা শিশুর দাঁতের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এর ফলে শিশুর দাঁত আঁকা বাকা হয়ে উঠতে পারে। শিশুর উপরের পাটির দাঁতগুলো সামনের দিকে বেঁকে যায় আর নিচের পাটির দাঁতগুলো আরও ভেতরের দিকে ঢুকে যেতে পারে। যখন দুধ দাঁত ও স্থায়ী দাঁত একই সাথে মুখে অবস্থান করে সে সময় এই অভ্যাস চলতে থাকলে সমস্যা আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে। শিশুর এই অভ্যাসের ফলে পরবর্তীতে কথা বলতেও বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে।
শিশুর এই অভ্যাস দূর করার জন্য তার বাবা মায়ের ভুমিকা অত্যন- গুরুত্বপূর্ণ। তাদের উচিত প্রথম থেকেই শিশুকে এ ব্যাপারে বোঝানো। তাদের চেষ্টা সত্ত্বেও যদি শিশু এই আঙ্গুল চোষা বন্ধ না করে তবে অবশ্যই একজন ডেন্টাল সার্জনের পরামর্শ নিতে হবে। শিশুদের এই ধরনের অভ্যাসগুলো দূর করার জন্য ডেন্টিস্ট্রিতে বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা আছে। চিকিৎসক এসব চিকিৎসা থেকে শিশুর জন্য উপযোগী চিকিৎসাটি বেছে নেবেন।
টুথপেস্ট গিলে ফেলা
শিশুর সুস্থ সবল দাতের জন্য দিনে দুইবার নিয়মিতভাবে দাঁত ব্রাশ করানো উচিত। মাঝে মাঝে শিশুরা দাঁত ব্রাশ করার সময় প্রয়োজনের অতিরিক্ত টুথপেস্ট নেয় অথবা দাঁত ব্রাশ করার সময় কখনো টুথপেস্ট গিলে ফেলে । এতে শিশুর ফ্লুরোসিস নামে একটি সমস্যা হতে পারে যার কারণে দাঁতে সাদা বা বাদামী দাগ দেখা দিতে পারে এবং দাঁত ভঙ্গুর হয়ে যেতে পারে। এ সমস্যা প্রতিরোধে শিশুকে দাঁত ব্রাশের সঠিক নিয়ম, ব্রাশে টুথপেস্ট নেয়া এবং কুলকুচি করার সঠিক নিয়ম শেখাতে হবে। বিশেষ করে বাবা মা দাঁত ব্রাশ করার সময় শিশুকে সাথে রাখতে পারেন যেন সে খুব সহজে সঠিক পদ্ধতিতে দাঁত ব্রাশ করার নিয়মগুলো আয়ত্ত্ব করতে পারে।
ফিডার মুথে নিয়ে ঘুমাতে যাওয়া:
ঘুমের সময় চিনিযুক্ত দুধ বা জুস ভর্তি ফিডার মুখে নিয়ে ঘুমাতে যাবার ফলে শিশুর দাঁতে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। মিষ্টি জাতীয় খাবারের ফলে শিশুর দাঁতে ক্ষয়রোগ দেখা দেয়। এছাড়া ফিডার মুখে রাখার কারণে শিশুর দাঁত সামনের দিকে বেঁকে যেতে পারে। এই ক্ষতি প্রতিরোধের জন্য শিশুর ফিডারে দুধ বা জুসের সাথে পানির পরিমাণ বাড়াতে হবে এবং ধীরে ধীরে শিশুর এই অভ্যাস দূর করার চেষ্টা করতে হবে।
লিপ সাকিং
এই সমস্যাটি সাধারণত স্কুলগামী শিশুদের ক্ষেত্রে দেখা যায়। এই অভ্যাসর কারণেও দাঁত আঁকা বাঁকা হতে পারে। সেক্ষেত্রে একজন অভিজ্ঞ ডেন্টাল সার্জনের পরামর্শ মতে শিশুর অভ্যাস পরিবর্তনের চেস্টা করতে হবে। শিশুর যাতে এই অভ্যাস গড়ে না উঠে সে বিষয়ে পিতা মাতাকে সর্তক থাকতে হবে।
জিহবা দিয়ে দাঁতে চাপ দেয়া
যেসব শিশুদের উপরের চোয়ালের দাঁতগুলো সামনের দিকে বাঁকানো থাকে বা ওপেন বাইট (দাঁতে দাঁত লাগানোর পরও মুখ খোলা থাকা) তারা সাধারণত জিহ্বা দিয়ে উপরের ও নিচের দাঁতগুলোকে চাপ দিতে থাকে। আবার যে বাচ্চাদের ওপেন বাইট নাই তাদের ক্ষেত্রেও এই অভ্যাসের কারণে ওপেন বাইট হতে পারে। অথবা যদি এর সাথে আঙ্গুল চোষার অভ্যাস থেকে থাকে তবে উপরের পাটির দাঁতগুলো সামনের দিকে বেঁকে যেতে পারে । এই সমস্যা প্রতিরোধে বাচ্চাকে ঢোক গেলার সময় জিহ্বা সঠিক জায়গায় ধরে রাখার অভ্যাস করাতে হবে। এছাড়া একজন অভিজ্ঞ ডেন্টাল সার্জনের সাথে কথা বলে মুখের বিভিন্ন ব্যায়াম করানো যেতে পারে।
নখ কাটা
শিশুদের ক্ষেত্রে এই বদ অভ্যাসটি খুব বেশি দেখা যায়। শিশু যখন চিন' মগ্ন থাকে তখন সাধারণত নখ কাটার অভ্যাস লক্ষ্য করা যায়। এই অভ্যাসের কারণে শিশু দাঁতে দাঁতে যে চাপ যে তা কোন কিছু চিবানোর সমান। এর ফলে শিশুর সামনের দাঁতগুলো ক্ষয় হতে পারে এবং শিরশির করতে পারে। সুতরাং, শিশুকে অবশ্যই এর কুফল সম্পর্কে বোঝাতে হবে।
দাঁত দিয়ে পিন বা চুল বাধার ক্লিপ খোলা
এই অভ্যাসটি সাধারণত টিন এইজ মেয়েদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়। তারা তাদের চুল বাধার জন্য ব্যবহৃত ক্লিপ সামনের দাঁত দিয়ে খুলে তারপর চুলে লাগায়। এতে করে দাঁতে ক্ষয় বা খাঁজের সৃষ্টি হতে পারে যা পরবর্তীতে দাঁতকে সংবেদনশীল করে তোলে। এই সমস্যা প্রতিরোধের জন্য টিন এইজ মেয়েদের এর কুফল সম্পর্কে বোঝাতে হবে এবং সচেতনতা তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে তাদের সচেতনতাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
মুখ দিয়ে শ্বাস নেয়া
শিশুর যদি শ্বাস নালীতে কোন সমস্যা না থাকা সত্ত্বেও নাক দিয়ে শ্বাস প্রশ্বাস না নিয়ে মুখ দিয়ে শ্বাস নেয় তখন এ অবস'াকে মাউথ ব্রিদিং বা মুখ দিয়ে শ্বাস নেয়া বলা হয়। সাধারণত সারাক্ষণ মুখ দিয়ে শ্বাস প্রশ্বাস নেয় এরকম শিশুদের সংখ্যা কম। তিনটি কারণে শিশুর মুখ দিয়ে শ্বাস নিতে পারে। ১. শ্বাসনালীর কোন স্থানে বাঁধা ২. অভ্যাসগত কারণ ৩. শারীরিক প্রতিবন্ধকতা। প্রথম কারণে শিশুর ইচ্ছা থাকা সত্ত্বের সে নাক দিয়ে শ্বাস নিতে পারে না। নিম্নলিখিত কারণে এটি হতে পারে; এলার্জির জন্য, নাকের হাড় যদি বাঁকা থাকে, নাকের গ্রনি'র বিভিন্ন ধরনের সমস্যার জন্য। দ্বিতীয় কারণে শিশুর শ্বাসনালীতে কোন সমস্যা না থাকা সত্ত্বেও সে মুখ দিয়ে নিশ্বাস নেয়। আর তৃতীয় কারণে ঠোঁট ও মুখের পেশীর অসামঞ্জস্যতার কারণে মুখ বন্ধ করার পরও কিছুটা ফাঁকা থেকে যায়।
মুখ দিয়ে শ্বাস নেয়ার ফলে মুখ শুকিয়ে যায় ফলে খুব তাড়াতাড়ি খাদ্যকণা জমে দাঁতে পাথর হতে পারে, মুখে দূর্গন্ধ এবং ক্ষয় রোগ হতে পারে। এসব সমস্যা সমাধানে একজন অভিজ্ঞ ডেন্টাল সার্জনের পরামর্শে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।