বিগত পর্বগুলোতে আমরা একটা মোটামুটি ধারণা পেয়েছি যে কীভাবে আমাদের শরীরে স্থুলতা বাসা বাধে আর তার ফলে শরীরের অংগ প্রত্যাংগে এর ক্ষতিকর প্রভাব ছড়ায়ে পড়ে। লিংক নিচে।
একথা নির্দিধায় বলা যায় যে বেশি পরিমান ফ্যাট আর কার্বোহাইড্রেট খাবার আমাদের স্থুলতার জন্য দায়ী। কাজেই এদের গ্রহনের পরিমান কমালেই আমরা ডায়েট ডিপেন্ডেন্ট ওবেসিটি থেকে সহজেই মুক্তি পেতে পারি।
আবার যারা একেবারেই মোটা তাদের জন্যো বাড়তি কিছু সহযোগিতা দরকার।
কাজেই ওবেসিটির ম্যানেজমেন্টটা হতে হবে দুই ধরণের-
১। প্রিভেনটিভ।
২। কিউরেটিভ।
প্রথমে আমরা বোঝার সুবিধার্থে কিউরেটিভ মিজার নিয়া আলোচনা করব।
আমারা জানি যে বডি ম্যাস ইনডেক্সে ৩০ এর উপর মান থাকলে তাদের আমরা ওবেস বলি। আর এক্ষেত্রে তাদের কমন যে উপসর্গ থাকবে তা হলো ওজন বেশি, কোমরের মাপ বেশি, রক্তে গ্লুকোজ আর কোলেস্টেরলের পরিমানও বেশি থাকবে। এই উপসর্গ গুলো প্যাথোলোজিক হতে পারে বা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হতে পারে।
১। কাজেই প্রথম যে কাজ আমাদের মনে হতে পারে সেটা হলো কম কম ফ্যাট আর শর্করা জাতীয় খাবার খাওয়া, এটা একটু কঠিন কিন্তু প্রচন্ড ইচ্ছা শক্তি এটাকে পূরণ করতে পারে। আমরা যদি একটা ডায়েট চার্ট করি যাতে
লো-ফ্যাট লো কার্বোহাইড্রেট বা লো-ফ্যাট লো কার্বোহাইড্রেট এন্ড হাই প্রোটিন ডায়েট থাকবে, তবে বেশ ভালো ফল পাওয়া সম্ভব। তবে লো-ফ্যাট লো কার্বোহাইড্রেট ডায়েট অনেক সময় মাসল ম্যাসকে নষ্ট করে দিতে পারে বা ইলেক্ট্রলাইট ইমব্যালেন্স করে বলে ফিজিশিয়ানের অধীনে ব্যাবহার করা উচিত। লো-ফ্যাট লো কার্বোহাইড্রেট এন্ড হাই প্রোটিন ডায়েটের জন্য একজন ডায়েটিশিয়ানের সাথে কথা বলাই ভালো।
কিছু মেডিকেশন আছে যাদের কাজ হলো আমাদের মস্তিষ্কের উপর কাজ করে ক্ষুধা লাগার প্রবণতাকে হ্রাস করে। ফেনফ্লুরামাইন এই ধরণের একটা ড্রাগ। এটা সেরোটোনিন নামের নিউরোট্রানসমিটার এর পরিমানকে বাড়ায়, যেটা আমাদের ভালো লাগা, ক্ষুধা ইত্যাদিকে নিয়ন্ত্রন করে, ফলে ক্ষুধার অনিভূতি হ্রাস পায়। তবে এটা হার্টের ভালবের ক্ষতি, পালমোনারী হাইপারটেনশন আর ফাইব্রোসিসের জন্য দায়ী বলে ব্যবহার তুলে নেয়া হয়েছে।
-সুবিট্রামিন, has appetite suppressant, serotonergic and thermogenic effects । এটাও ক্ষুধার অনিভূতি হ্রাস করে। তবে সাইড ইফেক্ট হলো slightly raised resting pulse and hypertension.
- গাজা সেবীদের মাঝে মাঝে ক্ষুধার অনিভূতি হ্য়, এই তথ্যের উপর ভিত্তি করে আর একটা ড্রাগ বানানি হইছে , রিমোনাবেন্ট। এটা হলো inhibitor of the cannabinoid-1 receptor, যা ক্ষুধার অনিভূতি হ্রাস করে। এইটা ইউরোপে চালু আছে কিন্তু আমেরিকা বা কানাডাতে অ্যাপ্রুভাল পায়নি।
২। এর পরের যে ব্যাপারটা নিয়ে আমরা চিন্তা করতে পারি, তা হলো এমন খাদ্য খাবার বাছা যেটা পেট ভরবে কিনতু শর্করার শোষণ কম হবে। এধরণের খাবারের মধ্যে আছে সব ধরণের আশ জাতীয় খাবার। আশ জাতীয় খাবারের মধ্যে শর্করার অনুগুলো একটা বিশেষ প্যাটার্ণে আবদ্ধ থাকে যা এর হজমে দীর্ঘ সময় লাগে, ফলে এটা তাড়াতাড়ি আমাদের শরীর থেকে বের হয়ে যেতে পারে।
আবার আমরা যদি এমন যদি কোনো কিছু পাই যা ফ্যাট শোষণকে কমাবে তা হলেও মন্দ হ্য় না। এজন্য একটা উপায় হলো লাইপোলাইটিক এনজাইমকে কাজ করতে দিবে না। এমন একটা ড্রাগ হলো ওরলিস্ট্যাট। এফডিএ এটাকে দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহারের জন্য অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু এরও দীর্ঘমেয়াদে ওজন কমানোর মাত্রা গড়ে ২.৯ কিলো। এটার কাজ হলো প্যানক্রিয়াটিক লাইপেজের কাজকে কমিয়ে দেয়া। এই ড্রাগটাও সাইড ইফেক্ট থেকে মুক্ত নয়। স্টিয়াটোরহিয়া ( এখানে স্টুলের সাথে বেশি পরিমান ফ্যাট যাবে, ব্লটিং (বেশি বেশি বায়ু বাতাস হওয়া) আর ফিক্যাল লিকেজ হতে পারে।
৩। অ্যান্টি-ডায়াবেটিক আর অ্যান্টি কোলেস্টেরল ড্রাগ গুলাও ওবেসিটির জন্য কিছু ভালো কাজ দেখাচ্ছে।এর উপর পরে আলোচনা করবো।
৪। খাবারের রেস্টিকশন আর মেডিকেশন ছাড়াও লাইফ স্টাইল চেন্জ করা ওবেসিটি ম্যানেজমেন্ট এর একটা ভালো উপায়। এই ব্যাপারে একটা জিনিস কনফার্ম করতে হবে যে, ব্যক্তি ওজন হ্রাসের ব্যাপারে রেডি, ডেডিকেটেড এবং এনথুশিয়াস্টিক। শারিরিক কাজকর্ম বাড়ানো এক্ষেত্রে অন্যতম শর্ত। এটা একদিনে এচিভ করা সম্ভব না, কাজেই শুরুতে ৩০ মিনিট হাটা, দৌড়ানো উচিত, এবং এটা বাড়াতে বাড়াতে ৮০ মিনিট নেয়া উচিত।
পরিমিত ঘুম এখানে একটা বড় ফ্যাক্টর। সাধারণতঃ দিনে ছয় -সাত ঘন্টার ঘুম আমাদের দরকার। রাত দশটার মাঝে ঘুমানো আর ভোর চারটার সময় উঠা একটা ভালো অভ্যাস। (মজার ব্যাপার হলো, আমরা যখন প্রথম অস্ট্রেলিয়ায় আসি, ভোরে নামাজের জন্য উঠলে দেখি আশে পাশের বাড়িতে লাইট জ্বলে, পরে জানি তারা (অসিরা) ঐ সময়ই ঘুম থেকে ওঠে, নাস্তা বানাবে, খাবে, হাটবে, অফিসের জন্য টিফিন বানাবে, রেডি হবে)। আশা করি তিন মাসের একটা শর্ট টাইম এটা ফলো করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
৫। সার্জেরী: ডায়েটারী মডিফিকেশন, মেডিকেশন আর লাইফস্টাইল ফেইল করলে আরও একটা উপায় হলো সার্জেরী। এর বিভিন্ন ধরণ আছে, যা শুধু মরবিড ওবেসিটির জন্যই চয়েস করা হয়।
ব্যারিয়েট্টিক সার্জেরী, লাইপোসাকশান, ইত্যাদি দরকার হতে পারে যা শুধুমাত্র একজন ট্রেইনড সার্জনই করতে পারবেন।
সহজ মেদ ভূড়ি নামা Click This Link
সহজ মেদভূড়িনামাঃ লিভার, ভালো রাখুন, ভালো থাকুন
Click This Link
সহজ মেদভুড়ি নামা: প্যানক্রিয়াস, আপনার গ্লুকোজ লেভেলকে নরমাল রাখে।
Click This Link
সহজ মেদভুড়ি নামা: কার্ডিয়াক রিমডেলিং এন্ড ফেইলর।
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৪:২০