হাসান শাহরিয়ার, রিসেন্টলি তার হায়ার ডিগ্রি রিসার্চ শেষ করে দেশে ফিরেছে,তরুন বিজ্ঞানী হিসাবে এখনই কিছু নাম কামিয়েছে, তার কিছু পেপার প্বথিবীর নামিদামী জার্নাল গুলাতে পাবলিশ হয়েছে। এই মুহুর্তে সে বসে আছে খান'স ল্যাব ফর এজিং অ্যান্ড রিলায়েড হেলথ সাইন্সেস এর থার্ড জেনারেশনের একটা কম্পুটার মনিটরের সামনে, এইটাতে একটা মাত্র প্রোগ্রাম ব্যবহার করা হয়, তা হলো অটো ডক এর উন্নত একটা সংস্করন। এই ল্যাবটা বানিয়েছে ডঃ খান, বয়স ৬০এর কোঠায়, মাঝারি উচ্চতার খান দানী ভুড়িওয়ালা এক লোক। প্রথম দেখায় উনাকে একজন উন্মাদ গোছের উদভ্রান্ত লোক বলেই ধারণা হবে। কয়েকটা সেকশন নিয়া ল্যাবটা বানানো, কেমিস্ট্রি এন্ড সিনথেসিস উয়িং, অ্যানিম্যাল হাউজ এন্ড সারজেরী, ডকিং স্যুট, মোলিকুলার বায়োলজি, অ্যানালাইসিস উয়িং আর লাইব্রেরী। প্রত্যেক উয়িংয়ে আবার একটা কিচেন এরিয়া আছে। শহরের কোলাহল ছাড়িয়ে একটা বিশাল খোলা জায়গায় ল্যাব কমপ্লেক্সটা দাড়িয়ে। হেক্সাগোনাল শেপে এক একটা উইং, আর প্রত্যেকটা উইং সিকিউরড করিডোর দিয়া সংযুক্ত। হাসান ড: খানের অধিনে এমএসের একটা ছোটো কাজ করে, তারপর পিএইসডির জন্য কেমব্রিজে চলে যায়। পিএইসডি শেষ করে দেশে ফিরতেই ড: খানের একটা মেইল পায়, যার ভাষাটা অনেকটা এরকম,
প্রিয়া হাসান
আশা করি ভালো আছ। তোমার কাজ আমি প্রথম থেকেই ফলো করছি। তোমার লাস্ট পেপারটা আমার হাতে। এখানে আমরা ছোটো খাটো কিছু কাজ করছি, তুমি কি আমাদেরকে কিছু দিন সময় দেবে?
ইতি
ড: শমসের খান
অনেকটা কৌতুহলের বসে হাসান এখানে আসে, আর অবাক হয়, একটা ছিমছাম ল্যাব কমপ্লেক্স, ওঠে ল্যাবের নিজস্ব কোয়ার্টার হাউজে । গত দুই সপ্তাহ ধরে হাসান প্রতিদিন সকাল ৮ টায় এসে মনিটরের সামনে বসে আর ওঠে রাত দশটায়। এই ল্যাবের অনেক মলিকিউলের মধ্যে এই একটা মলিকিউল নিয়া এত কাজ আগে আর হয়নি। এর একটা নাম দেয়া হয়েছে PAN224Q. মলিকিউলটার গঠন খুব বেশি জটিল কিছু না, তবে পোলারিটি একটু কম আছে। তবে এই মুহুরতে যে সমস্যা তা হলো এর রিসেপ্টর বাইনডিংয়ে স্ট্যাবল হচ্ছে না। বাইনডিং টাইম দেখাচ্ছে মাত্র ৬০ ন্যানো সেকেন্ড, তার পরই রিসেপটর প্রোটিন আর লিগ্যান্ডটা চলে যাচ্ছে স্ক্রিনের দুই মাথায়। বাইনডিং টাইমটা ১২০ ন্যানো সেকেন্ড হলেই আপাতত কাজ শেষ হবে। ঘন্টার পর ঘন্টা চলে যাচ্ছে, ডকিং সফটে আনেক ভাবেই ট্টাই করা হচ্ছে, সাইড চেনে হাইড্রক্সিল গ্রুপ, কার্বক্সিল গ্রুপ, লং , সর্ট কারবন চেইন যোগ করে দেখা হলো, বাইনডিং টাইমটা ৮০ উপরে উঠছে না। আজ একটা হেস্তনেস্ত করেই ছাড়া হবে, ভাবলো হাসান। রাত বাড়তে থাকে, এর মধ্যে দুই কাপ কফি শেষ, ডিনারটাও কুইক নুডুলস দিয়া সেরে আসে এক ফাকে। বিয়ে করেনি এখনো, কাজেই বাসায় যাওয়ার তাড়া নেই।
হাসানের চোখে ঘুম চলে আসে, রেম স্লিপ নয়, অনেকটা ন্যাপ নেওয়ার মত। মাকে মনে পড়ে, দেখে তাদের ছোটো বাসার মাঝে এক একটা ছবির মত ঘটনা, মনে পড়ে শায়লার কথাও, আরও কত কি? জানে না কেন এমন হ্য়, একটা সুখানুভুতি আর ছোটো বেদনার মধ্যে দিয়ে সময়টা কাটে। এমন সময় হাসান টের পায় কে যেন তার নাম ধরে ডাকছে, হাসানে অবচেতন মন ডাকের উৎস খোজে চারিদিকে, এমন সময় দেখতে পায় একটা ইদুর তার টেবিলের সামনে, কেমন যেন পরিচিত পরিচিত, তার সাথে কথা বলছে, হাসান চমকে ওঠে, এটা কিভাবে সম্ভব, ইদুর তার সাথে কিভাবে কথা বলবে।
ইদুর তার পরিচয় দেয়া শুরু করে, আমার নাম মাপেট দ্যা কিং, ড: হাসান আমি আপনার এনিমেল হাউজের ইদুর কলোনির রাজা।
হাসান চিনে ফেলে, এটা একটা বড় সড় ব্রিডার মেইল র্যাট, বক্সে বন্দি থাকলেও কি হবে, ওখানেই ওর একটা বনেদি ভাব আছে, এধরনের ইদুর খুব সহজেই নজরে পড়ে।
হাসান কৌতুহল অনুভব করে, বলে, তা মাপেট, তুমি এখানে কেন।
মাপেট: ড: হাসান, আমরা আপনার সাহা্য্য চাই, আপনাকে সাহা্য্য করতে চাই।
হাসান: সেটা কিভাবে?
মাপেট: গত ছয় মাসে ড: খান আমাদের কলোনীর প্রায় ৬ শত ইদুরকে হত্যা করেছে, আমাদের বিবেচনায় এটা একটা গনহত্যা, কিন্তু আমাদের কিছু করার নেই, আমরা বন্দি, ছোট অসহায়। আমরা এর বিচার চাই।
হাসানে মনে পড়ে, ড: খান এই মলিকিউলটা খুজে পাওয়ার পরে, গত ছয় মাসে এর অনেক গুলা প্রিক্লিনিক্যাল ট্টায়াল দেন, প্রত্যেকটা ট্টায়ালেই খুব ভালো রেসাল্ট পাওয়া গেছে, কিছু পাবলিশ করা হয়েছে, আরও কিছু কাজ বাকি আছে। কেমিস্ট্রি এন্ড সিনথেসিস উয়িংয়ের জাফর বলেছিলো যে, ড: খান এই মলিকুলটা পান পাহাড়ের এক উপজাতি বদ্যের দেওয়া গাছ থেকে। ড: খান মাঝে মাঝেই এরকম উধাও হয়ে যান, আর ফেরেন উদ্ভট কিছু স্যাম্পল নিয়ে।
হাসান: আরে কি বলো তুমি, আমরা মানুষ, প্বথিবীর একমাত্র সৃষ্টিশীল প্রানী, আমাদের জন্যই সবকিছু। মানুষের জন্যই রোগের অষুধ লাগে। ল্যাবে ইদুর ব্যবহার করাই হয় সেফটির জন্য। মানুষের উপরতো আমরা অষুধ টেস্ট করতে পারিনা।
মাপেট: কিন্তু আমরাও প্রাণী, প্বথিবীতে আমাদেরও অধিকার আছে। আর আমাদেরও সৃষ্টিশীলতা আছে। আপনারা যা জানেন না এখনও, আমরা টাও জানি।
হাসান: সেটা কেমন, তোমরা কিভাবে করবে। আর তখই হাসান বিস্ময়ের সাথে খেয়াল করে যে, একটা নিন্ম শ্রেণীর ইদুর তার সাথে যোগা্যোগ করছে।
হাসানের মনের কথা জেনে, মাপেট বলে, আপনি ভাবছেন এখন, আমি কিভাবে আপনার সাথে যোগা্যোগ করছি।
হাসান: হা তাই।
মাপেট: তার আগে বলুনতো, কিভাবে আমরা সুনামি, ভুমিকম্পের মতো দুর্যোগে আগে আগে খবর পাই, কিভাবে আমরা মাটিতে আমাদের বাসা বানাই? কেন আমাদের রোগ বালাই কম হয়?
হাসান: কেন, তাতো জানি না। তবে আমার খুব কৌতুহল হচ্ছে, তুমি কিভাবে আমার সাথে যোগা্যোগ করছো।
মাপেট: এটা খুবই সোজা একটা ব্যাপার আমাদের জন্য, কিন্তু আপনার জন্য একটু কঠিন।
হাসান: সেটা কেমন?
মাপেট: এই মুহুর্তে আমরা আপনার মস্তিষ্কের একটা বিশেষ ওয়েভকে ধরতে পারছি, এর নাম এপসাইলোন ওয়েভ, এই ওয়েভটা মস্তিষ্কের একটা বিশেষ অবস্থায় বের হয়, আপনি এখন তার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। আপনি এখন যেটা দেখছেন এটা আমাদের একটা বিশেষ প্রজেকশন। এই এপসাইলন ওয়েভ ব্যবহার করেই আমরা আপনার সাথে যোগা্যোগ করছি।
হাসান: এটার জন্য তাহলে তোমরা যন্ত্রপাতিও বানাচ্ছো তাহলে।
মাপেট: খিক খিক করে হাসে।
হাসান: হাসো কেনো।
মাপেট: আপনাদের বিজ্ঞান এখনও এটা দেখাতে পারেনি।
হাসান: ব্যাখ্যা করো।
মাপেট: খুবই সোজা, আমদের কলোনির সব ইদুর এই মুহুর্তে একটা বিশেষ অবস্থায় আছি, আমাদের সম্মিলিত ব্রেন ওয়েভ একক ভাবে আপনার
এপসাইলন ওয়েভের প্যারালাল হিসাবে আপনার সাথে যোগা্যোগ করতে পারছি।
হাসান: খুব ইন্টারেসটিং।
মাপেট: আমরা হয়তো খুব বেশি সময় পাবো না, আপনি কি আমাদের জরুরি কথটা শুনবেন?
হাসান: হ্যা, বলো।
মাপেট: আপনি ড: খানকে আমাদের হত্যা করা থেকে বিরত রাখবেন।
হাসান: সেটা কিভাবে?
মাপেট: আমরা আপনাকে এই মলিকিউলটার স্ট্যাবল ফরমুলা দেবো, তাতে ড: খানের কাজ হয়ে যাবে, আর আমাদের হত্যা করতে হবে না।
হাসান অবাক হয়, বলে, সেটা কি?
মাপেট: আপনাকে কথা দিতে হবে।
হাসান: আমি কথা দিতে পারছি না, তবে আমার চেষ্টার কোনো কমতি হবে না।
মাপেট: বুঝতে পারছি আপনার কথা, (কিছু সময় পরে) আমরা রাজী, এতেই হবে। আপনি আপনার মলিকিউলে একটা সুগার মোয়িটি যোগ করে দেখেন, আর একটা হাইড্রক্সিল গ্রুপ যোগ করে দেখতে পারেন।
হাসান: তুমি মনে কর, এতে হবে?
মাপেট: হা হবে। ড: হাসান আমারা আপনার উপর নির্ভর করছি, আমাদের কথা মনে রাখবেন। আপনার সাফল্য কামনা করি। বিদায়।
হাসান: মাপেট যেওনা, দাড়াও, আরও কিছু জানার ছিলো।
মাপেট: আপনার সিগন্যাল দুর্বল হতে শুরু করেছে, আর কথা বলা যাবে না, বিদায়, ভালো থাকুন ড: হাসান।
তখনই হাসানের আড়মোড় ভাংতে থাকে, চমকে ওঠে, কতক্ষন ঘুমিয়েছে কে জানে। তার পরই স্বপ্নের কথা মনে পড়ে। হুমড়ি খেয়ে পড়ে কী বোর্ডের উপর, মলিকুলটার সাথে একটা সুগার মোয়িটি আর একটা হাইড্রক্সিল গ্রুপ যোগ করে, রিসেপ্টর বাইনডিনং আবার চেক করে। সামনে মনিটরটা স্থির, ক্যালকুলেশন চলছে, হাসান অপেক্ষা করে, এক একটা সেকেন্ড যেনো এক একটা যুগ বলে মনে হয়। অবশেষে মনিটরের বা' পাশে ক্যালকুলেটেড ডাটা আর ডান পাশে প্রোটিন লিগ্যান্ডের থ্রি ডি স্ট্যাবল স্ট্রাকচার ভেসে ওঠে। হাসান আনন্দে চিৎকার করে ওঠে "শায়লা লা লা লা"। সব ডাটা সেভ করে ল্যাব থেকে বের হতে হতে হাসান দেখে, ভোর কেবল হতে শুরু করেছে, দু একটা পাখিও ডাকতে শুরু করেছে। হাসান হাটতে থাকে তার কোয়ার্টারের দিকে, ভোরের ঠান্ডা বাতাস তার গায়ে লাগে। আজকের দিনটা মনে হ্য় ভালোই যাবে।
নোট: এপসাইলন ওয়েভ:
High levels of Beta are associated with high levels of focus and concentration, Alpha is associated with inner mental "pondering," Theta with original, creative inspiration, problem solving, visualization and Delta with deep physical relaxation.
In meditation or in yoga, deepest Delta brain states actually continue deeper into these below-Delta brainwave states, which we are calling the Epsilon State (Epsilon, since it is the next Greek letter of the alphabet after Delta).
(এখনও ড্রাফট আছে, রেফটা কিভাবে দেয়, কিছু বানান আর ভাষাটাও আরেকটু ভালো করা দরকার, দেখি কি করা যায়)
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুলাই, ২০১২ রাত ৮:৩৫