somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাতচারণ

১৯ শে জুন, ২০১০ ভোর ৪:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




দুপুর নিয়ে আমার প্রবল উন্মাদনা আছে। উন্মাদনা, অর্থাৎ সাধারণ্যের সমাজ ও প্রথানিয়ন্ত্রিত আচরণের বাইরে আচরণ। আমি এমন করি, জেনেশুনেই বুক-পকেটে উন্মাদনাসমূহ লালন করি বিবিধ বিষয়ে। জাগতিক তাড়না দিয়ে যেগুলো ইস্যু আমার হিস্যা নিয়ে নেয়- অর্থ, চাকরি, খাওন-দাওন এগুলো আমাকে উন্মাদ করে না। আমি হিসেবি ও খেয়াল করে দেখি এটিএম বুথের ভেতরে ছক ছক নম্বরের জোরে আমার প্রাপ্য খটাখট আমার করতলে চলে আসে। পাতলা হয়ে থাকা ওয়ালেটের ভেতরে শৌখিন রোলার স্কেটিং করে নোটগুলো জমা পড়ে।


অথচ আমি দুপুরের আলোতে উন্মাদ হই। জ্ঞান হবার পর থেকে আমি এই উন্মাদনাকে সহজাতভাবেই পেলেপুষে বড়ো করেছি। কখনো বেখাপ্পা লাগেনি নিজের কাছে, মনে হয়নি ভদ্রসমাজে এমন আচরণের কথা ভাবাও অভব্যতা। দুপুর অর্থাৎ দ্বিপ্রহর; সেই সময়টুকু পাহাড়ের চূড়ায় পত্‌পত্‌ করে উড়তে থাকা নিশানের মতোই কিছুক্ষণ স্থির হয়ে থাকে। তারপরে হঠাতই গড়িয়ে পড়ে হারিয়ে যায়। হারানোর আগে আগে, স্পষ্ট দেখি দুপুরের ঝিম ধরা আলোর ভেতর থেকে একটা মুচকি হাসি আমার দিকে ফ্যালফ্যালিয়ে তাকাচ্ছে। তাকে পুরোপুরি পড়ে নেয়ার আগেই বিকেল চলে আসে। বিকেলের প্রতি আমার কোন মমত্ব নেই। বিকেলে মরা বিড়াল আবিষ্কার হয়।


আরেক দ্বিপ্রহরও আমাকে উন্মত্ত করে, সে নিকষ, সে তিমির, সে শুনশান। আর আমি সেই অনুভবের স্বরূপ চিনতে পারি নীরবতার মাঝেও, নিঃসন্দেহে বুঝি যে এটা অস্বাভাবিক। এমন স্তব্ধসময়ের প্রতি আমার উন্মাদনা মানায় না। এখন দরকার ধ্যানজ স্থিরতার, পানির উপরিতলের নিস্তরঙ্গতার। মনকে শান্ত করো, ইন্দ্রিয়গুলোর মুখ বুঁজে দাও। মোমের প্রলেপ দিয়ে দাও চোখে, তুলো দিয়ে মুছে দাও ত্বকের প্রদাহ। তারপরে নিঝুম ঘুম! কিন্তু আমি বড়ো বেখেয়ালি হয়ে পড়ি এ'সময়ে। বুঝতে পারি আমার ভেতরের ভাঙন রাত দ্বিপ্রহরকে ছুরির ধারে কাটছে। দেয়ালের ছবি আর মুখগুলো ধীরে ধীরে ধুয়ে বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। তাদের বিবর্ণতায় আমারও কেমন মরাটে লাগে। বিভ্রম হয়, মনে হতে থাকে এখন বেলা দুপুর। তীব্র ঝমঝমে রোদে পুড়ে যাচ্ছে রঙ। মরা পাতা খটখটে পাঁপড়ের মতো হয়ে উঠছে।


দেয়ালও একটা সময়ে ঘুমিয়ে পড়ে। যেভাবে দুপুর আমাকে ছেড়ে গিয়েছিলো, যেভাবে বিকেল এসে আমাকে তীব্র ঠাট্টাভরা অবহেলা করে চলে গিয়েছিলো, যেভাবে সন্ধ্যা খুব সন্দেহজনক হয়ে উঠেছিলো আর আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার সবকিছু ছিনতাই করে চলে গিয়েছিলো, পুলিশবেশী রাত অনেক দেরি করে এসেছিলো- ঠিক সেভাবেই রাত দ্বিপ্রহর আমাকে ফেলে চলে যায়। রাত বাড়তে থাকে তন্বী-কিশোরীর বেণীর মতোন। তার ভঙ্গিমা আমার কাছে অপরিচিত লাগে, দূর্বোধ্য লাগে। আমি আবারও চেষ্টা করি চোখ-কান বুঁজে সমাধির ভেতরে ডুবে যেতে। কিন্তু পারি না। সাঁড়াশির মতো দুটো কঙ্কাল হাত আমার হা-কোটরের ভেতরে আঙুলের হাড় ঢুকিয়ে সেটা খুলে রাখে। চোখবিহীন চোখে আমি চরাচরে রাতের লীলা দেখি। নিশিক্লান্ত অনেক অনেক মরদেহ মাটি ফুঁড়ে উঠে আসে, খেলা করে। তাদের ক্লান্তি কমে না। তারা শ্রান্তিতে টুকরো টুকরো হয়ে একসময় আবার নিজেদের শয়ানে শিশির হয়ে যায়।


হে আমার দেয়ালের মুখ, হে বিবিধ উন্মাদনা, আমাকে ঘুমুতে দাও!



***
- অনীক আন্দালিব
১৬.৪.১০


১৩টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×