গতকাল সন্ধ্যায় বইমেলায় অপরবাস্তব ৪ প্রকাশ পেয়েছে। সারাদিন পহেলা ফাল্গুনের ঘোরাঘুরির পরে সন্ধ্যা অবধি থাকতে পারি নি। বিকেলে অন্যমনস্ক শরৎ জানালেন যে সংহতি'র স্টলে বই পাওয়া যাচ্ছে। ভীড় ঠেলে বইটা কিনেই বাড়ি ফিরে এসেছি।
ব্লগে লেখালেখির প্ল্যাটফর্ম থেকে একটা পূর্ণ কলেবরের বই প্রকাশ করা কোনো চাট্টিখানি কথা নয়। সারা বছরে যা আমরা ব্লগের পাতায় লিখি, তা বাংলাদেশের লোকসংখ্যার মতোই বিপুল। পাঠক জনপ্রিয় লেখা আর সাহিত্যমানের দিক থেকে মানোত্তীর্ণ লেখাও প্রচুর বলে আমি দাবি করি। মনে হয় অনেকেই তাতে সহমত হবেন। সেই লেখা থেকে বাছাইয়ের কাজ এবারে বড়োই অপেশাদারভাবে শুরু হলো!
প্রথমে অপ্সরার পোস্ট আসার পরে অনেক ব্লগারই লেখা নির্বাচন করেছিলেন। তার মধ্যেও বিষয় নির্বাচন নিয়ে যথেষ্ট বিভ্রান্তি ছিল। তারপরে হুট করেই সব চুপচাপ। আবার জানুয়ারির মাঝামাঝি এসে সবার টনক নড়লো যেনো। "ফেব্রুয়ারি তো এসে গেলো, অপরবাস্তব কি এবার বেরুবে না?"- এই অবস্থায় আবদুর রাজ্জাক শিপনের উদ্যোগে আবারও লেখা সংগ্রহের আয়াসসাধ্য কাজ শুরু হলো।
কোন কোন লেখাগুলো নির্বাচিত হচ্ছে বা কোনগুলো হচ্ছে না এটি জানাতে সম্পাদকমণ্ডলীর অনীহা, অনিচ্ছা খুবই দৃষ্টিকটু লেগেছে। জানি, সমালোচনা ও মনোমালিন্য এড়াতে হয়তো মাঝে মাঝে নীরবতা বাঞ্ছনীয়। কিন্তু লেখাগুলো ব্লগারদের, মনোনয়নের কাজটিও ব্লগাররা করেছেন। অন্তত কোন লেখাগুলো ছাপা হচ্ছে, মনোনয়ন পাচ্ছে সে বিষয়ে পোস্ট আসা উচিত ছিলো। তাড়াহুড়ো করে কাজ করার সময়ে ব্যস্ততার দোহাই বড়োই খোঁড়া অজুহাত।
অপরবাস্তবের প্রকাশনার সবচেয়ে বড়ো যে ব্যাপারটি খারাপ লেগেছে তা হলো মনোনয়নপ্রাপ্ত লেখার লেখকদের সাথে যোগাযোগ না করাটা। যাদের লেখা ছাপা হচ্ছে, তাদের কাছ থেকে কি লেখাগুলো ছাপানোর অনুমতি নেয়া হয়েছে? যে সব লেখা লেখকের নিজের মনোনয়নেই ছাপা হয়েছে (ধরে নিচ্ছি সেটার কপিরাইট লেখক মন্তব্যে মনোনয়ন দেয়ার মাধ্যমে দিয়ে দিয়েছেন), সেগুলো বাদে বাকি লেখাগুলো অনুমতি ছাড়া কীভাবে বইয়ে স্থান দেয়া হলো? লেখাগুলোর কপিরাইট নিয়ে অপরবাস্তব প্রকাশক/সম্পাদক মণ্ডলীর এই স্বেচ্ছাচার কেন? এমনিতেই ব্লগের লেখার কপিরাইট নিয়ে যথেষ্ট হাঙ্গামা হয়েছে আগে।
প্রতি বছর অপরবাস্তবের সাথে অনেক ব্লগারের শ্রম ও আন্তরিকতা মিশে থাকে। যারা লেখাগুলো পড়েন, বাছাই করেন, অলঙ্করণ ও সজ্জাবিন্যাস করেন, প্রুফ দেখেন, ছাপাখানায় খেটেখুটে সেগুলোকে বই আকারে নিয়ে আসেন, বই বিক্রির সময়টাতেও শ্রম দেন তাদের সবার জন্যে অশেষ কৃতজ্ঞতা। হয়তো এই কৃতজ্ঞতার ভারেই অপেশাদারি আচরণগুলো আমাদের চোখে পড়ে না, পড়লেও আমরা এড়িয়ে যাই। আফটার অল, ঘরের খেয়ে বোনের মোষ তাড়ানোর কাজটি খুব একটা সোজা নয়!
কিন্তু চার বছর পরে এসে আমার মনে হয় এখন একটি আত্ম-মূল্যায়নের দরকার। প্রকাশনার কাজটি ছেলে-খেলা নয়। এক ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকাশ পায় হাজার হাজার বই। এখন পুরো প্রক্রিয়াটি এই বছর যেভাবে সম্পন্ন হলো, তাতে আশংকা জাগছে যে পরের বছরের অপরবাস্তবে এই ঘটনাগুলো আবার (বা এর চেয়েও অপেশাদারি ঘটনা) ঘটবে কী না! অপরবাস্তবের নিজের প্রয়োজনেই বর্তমান ও ভবিষ্যত সম্পাদকদের উচিত আরো সচেতন হওয়া।
****
দ্র. অপরবাস্তবের সম্পাদকমণ্ডলীর কাছে বিনীত প্রশ্ন- আমার নামটি ব্লগের উপরে জ্বলজ্বল করে ঝুলে আছে, তারপরেও বইয়ের ভেতরে ও সূচিতে সেটার বানান এমন বিকটভাবে ভুল হলো কেন?
- অনীক আন্দালিব
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ বিকাল ৫:১৮