ব্লগিং করুন, নিজের চেতনা ও বিশ্বাসকে প্রকাশ ও পরীক্ষা করার জন্য। আমাদের কিছু বিশ্বাস শক্তি যোগায়, অধিকাংশই শক্তিকে রোধ করে! কিছু সংস্কার অস্তিত্বের কথা বলে, অধিকাংশই কুপমুণ্ডুক করে তোলে। কিছু ধারণা পথনির্দেশ হয়ে কাজ করে, অধিকাংশই বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। কিছু বিষয়ে আমাদের জ্ঞান পর্যাপ্ত, অধিকাংশ বিষয়েই আমরা জানি না। এই সবকিছুর সমাধান করে দেয় আত্মপ্রকাশে। আত্মপ্রকাশ না করলে আত্মমূল্যায়ন হয় না। বিভিন্ন বয়সের বৈচিত্রময় রুচির বাঙালিকে নিয়ে গড়ে ওঠেছে বাংলা ব্লগ। আত্মপ্রকাশের সুপরিসর মাধ্যম!
সামহোয়াইন ব্লগে যারা নিয়মিত লিখে এবং ব্লগিং কৌশল নিয়ে আলোচনা করে বাংলা ব্লগকে সমৃদ্ধ করেছেন, তাদের কিছু লেখা আমার প্রিয় তালিকায় রেখেছিলাম। বিশেষ সামুতে নিবন্ধন করা, ব্লগ পোস্ট দেওয়া, লেখা এবং মন্তব্য দেওয়া এসব বিষয় নিয়ে সংকলন করা হয়েছে লেখাটি।
(১) যেভাবে শুরু করতে পারেন:
সামুতে অনেক পাঠক আছেন যারা ব্লগার হবার ইচ্ছা পোষণ করছেন। আবার কেউ ব্লগার হয়েই আছেন, কিন্তু এখনও ‘ওয়াচে’ বা পর্যবেক্ষণে আছেন। কেউ ওয়াচ পিরিয়ডও অতিক্রম করেছেন, অথচ এখনও লেখায় মজা পাচ্ছেন না। শিক্ষাজীবনের পুরোনো অভ্যাসের কারণে অন্যের লেখা পড়ারও আগ্রহ নেই। তাদের জন্য ‘অবশ্য পাঠ্য’ হলো ব্লগার আরজুপনি’র জুন মাসের টিউটোরিয়ালটি। না পড়লে পুরাতনেরাও মিস্ করতে পারেন কিছু। নিজের ব্লগ আইডি’র সঠিক ব্যবহার করে কীভাবে আপনার ব্লগার সত্ত্বার বিকাশ করতে পারেন সেটিও একই পোস্টে বাতলে দিয়েছেন অভিজ্ঞ এই ব্লগার।
ব্লগ কী, ব্লগ দিয়ে কী হয়, সামুতে ব্লগ লেখতে কী কী টুলস ব্যবহৃত হয়, কীভাবে বাংলা লিখা যায়, কীভাবে সামু’র নিজস্ব সার্চ ইন্জিন ব্যবহার করা যায়, নতুন ব্লগারের জন্য ব্লগ লেখার আইডিয়া, ছবি বা লিংক যোগ করা, বিজয়ে লেখা কনটেন্ট কীভাবে প্রকাশযোগ্য করা যায়, ট্যাগ বা কি-ওয়ার্ডস এর ব্যবহার কী, প্রোফাইল নিক পাসওয়ার্ড তৈরি বা পরিবর্তন, অনাকাঙ্ক্ষিত মন্তব্যকারীকে ব্লক করা ইত্যাদি প্রাথমিক নির্দেশনা ব্লগ কর্তৃপক্ষ আগেই লিখে রেখেছেন। নতুন পুরাতন সকলেই উপকৃত হতে পারেন। সামুতে লিখার বিধিবিধানগুলোও জেনে রাখলে ক্ষতি নেই। তাতে ব্লগ বা ব্লগারদের প্রতি সামু’র মানসিকতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। অবশ্য প্রয়োগের চেয়ে আইনের বাহুল্য আমাদের দেশে বেশি!
(২) ওয়াচ থেকে ওঠে আসার অব্যর্থ কৌশল:
লেখক হতে গেলে পাঠক হতে হয়। ব্লগার হতে গেলে হতে হয় ব্লগ-পাঠক। একটি দৃষ্টান্ত না দিলে বিষয়টি বুঝানো যাবে না। ওয়াচে থেকেও কীভাবে ওঠে আসা যায়, তার একটি নমুনা দিচ্ছি একজন বন্ধু ব্লগারের লেখনী দিয়ে। একটি চমৎকার কেইস স্টোরি হাজির করেছেন সহব্লগার মামুন রশিদ । এখানে বিস্তারিত না বলাই ভালো।
নতুন ব্লগার হিসেবে কীভাবে প্রথম পৃষ্ঠায় প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করবেন, এবিষয়ে ফিউশন ফাইভের কিছু মজার পরামর্শ আছে , যা পালন করা উচিত হবে না।
(৩) সামু ব্লগের বিভিন্ন টুলসগুলোর ব্যবহার:
অনেক অভিজ্ঞ ব্লগার আছেন, যারা ভালো লিখতে পারেন সহজাতভাবেই। কিন্তু সামু ব্লগের বিভিন্ন টুলসগুলোর ব্যবহার রপ্ত করতে পারেন নি। কীভাবে লেখা ড্রাফট আকারে সেইভ করা যায়, কীভাবে ছবি যুক্ত করতে হয়, কীভাবে ইমো’র ব্যবহার করতে হয় ইত্যাদি – এমন কি কীভাবে একটি একাউন্ট খুলতে হয় সেটিও সঠিকভাবে জানেন না। কোন লেখায় অন্যের মন্তব্য না চাইলেও কীভাবে তা বন্ধ করা যায়, সেটি জানা যাবে ব্লগার আরজুপনি’র এই লেখায়।
(৪) ব্লগে কীভাবে ছবি দেবেন:
ছবি আপলোড করতে পারেন না এরকম ব্লগারের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। পদ্ধতি জানার পরও ছবি যুক্ত করতে অনেকে সমস্যায় পড়েছেন। ছবি সংযুক্ত করার একটি নতুন পদ্ধতি তোলে ধরেছেন ব্লগ-নেতা অন্যমনস্ক শরৎ। এবার বুঝুন, তিনি অন্যমনস্ক না হলে আরও কত কিছু শেখাতে পারতেন!
(৫) স্টিকি পোস্ট লিখতে চান?*
ভালো কথা... আই লাইক দ্য স্পিরিট! তাহলে দেখতে হবে সামু কোন্ ধরণের লেখা সাধারণত স্টিকি করে। এজন্য নিয়মিত পাঠক হতে হবে। আবার ভাগ্য ভালো হলে পেয়ে যেতে পারেন কোন উত্তম পাঠকের সংকলন। এরকম একটি পোস্ট দিয়েছেন ব্লগার নিশাত তাসনিম । ২০১৩ সালের স্টিকি পোস্ট একটি সংকলন দেখুন: অবশ্য পাঠ্য! তন্ময় ফেরদৌসের দেওয়া ২০১২ সালের স্টিকি পোস্টের সংকলন ।
পোস্ট স্টিকি করা বা কোন ‘লেখা নিয়ে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করার বিষয়টি’ অনেকাংশেই নির্ভর করে ব্লগ কর্তৃপক্ষের মন-মেজাজ এবং তাদের সম্পাদকীয় নীতিমালার ওপর। কিন্তু বাস্তবতা হলো, দেশের অধিকাংশ ব্লগেই ‘পোস্ট দৃষ্টি আকর্ষণে নেবার জন্য’ কোন সু্স্পষ্ট/লিখিত নীতিমালা বা স্ট্যান্ডার্ড নেই। তারা অনেকাংশেই বিশেষ দিন, বিশেষ ব্যক্তি এবং বিশেষ ঘটনাবলীর ওপর ভিত্তি করে লেখায় অনুমোদন দেন। এক্ষেত্রে হয় তারা ব্লগার বা পোস্টদাতা কর্তৃক প্রভাবিত হন, নয়তো নিজেদের খেয়াল-খুশি বা মুখ-চেনা লেখক দ্বারা পরিচালিত হন। এরকম পরিস্থিতিতে কীভাবে ‘স্টিকি পোস্ট’ লেখা যায়, সে সম্পর্কে কিছু ‘মনগড়া’ আলোচনা করছি।পাঠক এখানে সম্পূর্ণ দ্বিধাহীনভাবে অংশ নিয়ে নিজেদের অভিমত দিতে পারেন।
ক. জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে বিশেষ দিন: এখানে খেয়াল রাখতে হবে দেশের চলমান আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে কোন্ দিকটি বেশি প্রাসঙ্গিক। অহেতুক তথ্যের পুনরাবৃত্তি কেউ পছন্দ করে না।
খ. বিশেষ ব্যক্তির জন্ম/মৃত্যু দিবস: কোন খ্যাতিমান ব্যক্তির মৃত্যু হলে, তখন মৃত্যু দিবসটিই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মৃত ব্যক্তিকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো হাস্যকর। তাদের জন্য শ্রদ্ধাঞ্জলি/ট্রিবিউট জানানোটাই বেশি প্রাসঙ্গিক। রবীন্দ্র জয়ন্তি বা নজরুল জয়ন্তি বিশেষ নেতাদের জন্ম দিবস পালন কেবলই ব্যতিক্রম।
গ. চলমান ঘটনাবলী নিয়ে বিশ্লেষণী লেখা: চলমান ঘটনাবলী নিয়ে বিশ্লেষণ করতে হলে যথেষ্ট পূর্বজ্ঞান থাকা চাই। খবরের কাগজ থেকে কপি-পেইস্ট করলে, সেই পোস্ট কিন্তু স্টিকি হবে না!
ঘ. চলমান রাজনৈতিক/সামাজিক পরিস্থিতি নিয়ে ব্যাঙ্গাত্মক/রসাত্মক বস্তুনিষ্ট লেখা: রাজনৈতিক বিষয়ে লেখতে গেলে সাবধান! পর্যাপ্ত তথ্য, যুক্তি এবং ঐতিহাসিক ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে না পারলে ‘জীবনের মতো’ দাগি ব্লগারে রূপান্তরিত হতে হবে।
ঙ) ব্লগে গুরুত্বপ্রাপ্ত প্রকাশিত লেখাকে বিবেচনায় আনা: সংশ্লিষ্ট ব্লগে কোন্ ধরণের লেখাকে এপর্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, বা বেশি পড়া হয়েছে তা পর্যবেক্ষণ করলে অনেক কিছু বুঝতে পারা যায়।
(৬) ভার্চুয়াল সমাজে নিজের নামে আস্থা অর্জন করার উপায়:
দেখুন, শুনুন, বুঝুন, পড়ুন – যত বেশি তত। বলুন কম, লিখুন আরও কম। এরকম কিছু নীতিকথা আমাদের মধ্যে্ প্রচলিত আছে – মানতে না পারলেও একদম ফেলে দেওয়া যায় না। লেখার ক্ষেত্রে যত সংযমী থাকা যায়, লেখার মান বৃদ্ধিতে ততই মঙ্গলজনক। বাস্তব জীবনে অনেক-কথা-বলার মানুষ দেখেছি, যাদের লেখায় তেমন বাচালতা বা অবান্তর বক্তব্যের প্রতিছাপ পাওয়া যায় নি। অর্থাৎ লেখার ক্ষেত্রে তারা নিজেদেরকে একটি নিয়ন্ত্রীত প্রক্রিয়ায় পরিচালনা দিতে পেরেছেন। পোস্ট কিংবা মন্তব্য যা-ই লেখা হোক, সেটি সুচিন্তিত হওয়া চাই। সাইবার সমাজে নিজের নামে একটি ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করার নানা কৌশল নিয়ে একটি লেখা পাঠকদের চিন্তার খোরাক যোগাতে পারে। ইন্টানেটের লেখকেরা তাদের প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু কিছু স্বভাবগত ভুল করে থাকেন, যা আস্তে আস্তে কমে আসে। যারা অন্যের ভুল দেখে শিখতে পারেন, তাদের কথা আলাদা। কিন্তু যারা নিজের ভুলটিও বুঝতে পারেন না, তারা বিপদজনক ব্লগারে পরিণত হন। উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন – লেখাও যায় কমে। ব্লগারদের স্বাভাবিক নেতিবাচক দিকগুলো খেয়াল থাকলে আগে থেকেই সেগুলো থেকে নিজেকে দূরে রাখা যায়। ক্যাচাল বা ব্লগারের সাথে কোন রকমের বিতর্কে জড়িয়ে পড়লে শালীন ভাষায় বাদানুবাদ করা যায়, তাতে নিজের চিন্তা-চেতনা ও প্রকাশভঙ্গি প্রখর হয়। ক্যাচাল সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করবে সহব্লগার কাল্পনিক-ভালোবাসার সাম্প্রতিক পোস্টটি। বর্ষসেরা ক্যাচাল পোস্টগুলো দেখলেও ক্যাচাল সম্পর্কে সচেতনতা বাড়বে। পোস্টটি বাচাল মানবের। তবে আস্থা অর্জনকারী ব্লগার হতে চাইলে এসবের মধ্যে সমন্বয় করতে জানতে হবে। কীভাবে সেটা বলা মুশকিল! আপাতত লক্ষ্যটি মনে রাখাটাই জরুরি। একেক জনের একেক পদ্ধতি। আমার মতে, সবচেয়ে বড় পদ্ধতি হলো লেখায় ও মন্তব্যে ‘সততা, ব্যক্তিত্ব ও রুচিবোধ’ রক্ষা করে চলা।
(৭) অন্যের পোস্টে কীভাবে মন্তব্য দেবেন এবং কেন দেবেন:
পাবলিক ব্লগে মাত্র দু’টি কাজ: নিজের পোস্ট লেখা এবং মন্তব্য দেওয়া। দু’টিই মৌলিক এবং সৃজনশীল হতে পারে। দু’টি থেকেই ভালো লেখক বের হয়ে আসতে পারে। পোস্ট পড়া আর মন্তব্য দেবার মাধ্যমেই কেউ কেউ বিস্তার করেছেন সম্পর্কে সুবিশাল নেটওয়ার্ক। বোনাস হিসেবে পাওয়া যায় নিজের ভাব প্রকাশ করে লেখক হবার রোডম্যাপ। অন্যের পোস্টে গঠনমূলক ও সৃজনশীল মন্তব্য দেবার ১০টি উপায় নিয়ে একটি লেখা। অভিজ্ঞ ব্লগার মাত্রই মন্তব্য প্রদানে বিচক্ষণ। মন্তব্য নিয়ে অভিজ্ঞ ব্লগার অভিমত জানতে পারা আর ব্লগিং জানতে পারা প্রায় সমার্থক। মন্তব্য নিয়ে কমপক্ষে ২৮জন সহব্লগারের অভিমত প্রকাশ পেয়েছে একটি পোস্টে। একেক জনের একেক মতামত – সকলেই দিয়েছেন ভিন্ন একটি নির্দেশনা। ভার্চুয়াল পারসোনালিটি বিষয়টিও এখানে ঘনিষ্টভাবে জড়িত। কমপিউটারের স্ক্রিনে নিজের ব্যক্তিত্বের ভালো দিকটি প্রকাশ করা বাস্তব জীবনের চেয়ে অনেকটাই সহজ।
(৮) পাঠকের মনের কথা জানতে চান?
লেখার মান নিয়ে পাঠকের মনোভাব জানতে চান? মনের অভ্যন্তরের বিষয় হলেও এটি এখন জানা যায়। মাত্র দু’টি পদ্ধতি: ক) নির্বাচিত লেখায় পাঠকের মন্তব্য পড়ুন; খ) নির্বাচিত লেখকদের প্রিয় তালিকার পোস্টগুলোতে দৃষ্টি দিন। ভালো লেখকদের পোস্ট ‘পর্যবেক্ষণে’ রেখেও অনেক কিছু জানা যায়।
(৯) গল্প লেখার হাতে খড়ি: জীবন একটি কবিতা, এটি বুঝতে কারও কষ্ট হতে পারে। কিন্তু জীবন যে একটি গল্প, এতে কারও সন্দেহ থাকবে না। দৈনিক ঘটনার পরিশীলিত রূপ হলো একেকটি গল্প; আবার দৈনিক ঘটনার সংক্ষিপ্ত ও শৈল্পিক রূপ হতে পারে একেকটি কবিতা। যা ভাবেন, তাই সেভাবে লেখেন – তা হয়ে যাবে প্রবন্ধ। মনের সুখে লিখে যান, যা খুশি তা-ই, তা হবে একটি ব্লগ পোস্ট।
গল্প লেখার সখ থাকলে শুরু করুন ক-খ গ-ঘ থেকে। সকাল রয়ের সুন্দর দু’টি লেখা নতুন এবং পুরাতন সকলের জন্য টনিক : ‘গল্পামী’র প্রথম ও শেষ পর্ব।
বাংলা গল্পের পাঠকপ্রিয় ব্যবচ্ছেদ করে একটি মহাকাব্যিক লেখা দিয়েছেন এটিএম মোস্তফা কামাল: ছোটগল্পের ভিতর বাহির । সামুতে বহুদিন ‘দৃষ্টি আকর্ষণ’ কলামে থাকা এই লেখাটি মূলত ছোটগল্পের একটি সরল দিকনির্দেশনা। লেখাটি পড়ে এতোই মুগ্ধ হয়েছিলাম যে, সঞ্চালককেও ধন্যবাদ জানিয়েছিলাম।
তাছাড়াও লেখক-নাট্যকার লেখাজোকা শামীম কয়েকটি পোস্ট দিয়েছেন সৃজনশীল লেখা নিয়ে। যথা: নবীন লেখক পর্ব এক এবং দুই । তাছাড়া ‘ভালো লেখার তিনটি গোপন রহস্য ’ শিরোনামের লেখাটি পড়তে পারেন। তবে প্রয়োগ করবেন নিজ দায়িত্বে! সবচেয়ে কার্যকর পথ হলো প্রচুর পড়া।
(১০) কবিতা ও গল্প সংকলন:
নির্বাচিত কলামের কবিতা তো পড়বেনই, নতুন ব্লগারদের কবিতাও পড়ুন। তাহলে কবিতা বুঝার সাথে সাথে একজন সহব্লগারকে বুঝতে পারবেন - নবীন লেখকেরাও উৎসাহিত হবে। স্বপ্নবাজ অভি’র কাব্য সংকলনটি আমার খুবই প্রিয়। সহব্লগার মামুন রশিদের ব্লগালয়টিকে গল্পালয় বলা যায়। তিনি লেখেন গল্প, ভাবেনও গল্প এবং সংকলনও করেন গল্প। যারা গল্পের ভক্ত তারা মামুন রশিদের পোস্ট অনুসরণ করলে সবই পাবেন। অনেক গুণী কবি আছেন সামুতে যাদের কবিতা পড়ে দারুণ অনুভব হয়; প্রিয় কয়েক জন গল্পকার আছেন, যাদের ভক্ত আমি। এবছর একুশে বইমেলায় যে সংখ্যায় ব্লগারদের বই বের হয়েছে, তা রীতিমত রেকর্ড।
(১১) ব্লগ ও ব্লগারের পরিচয়:
সেই সাথে ছবি দেখে চিনে নিন সামু’র নিয়মিত এবং বিশিষ্ট ব্লগারদেরকে। এই মজার কাজটি করেছেন অপু তানভীর। ফিউশন ফাইভ নিয়ে আমারও কানফিউশন আছে। অনেক কথা শুনি তার/তাদের সম্পর্কে। ‘ফাইভ’ শব্দটি থাকার কারণে এই নিক দিয়ে ঠিক কতজন ব্লগিং করেন, আমি ঠিক জানি না। তবে এতটুকু জানি যে, বাংলা ব্লগকে এত দূর নিয়ে আসার এসব দীর্ঘসহিষ্ণু ব্লগারদের অনেক অবদান আছে। সহব্লগার যেড ফ্রম এ তার কিছু লেখা সংকলন করেছেন। ব্লগার হতে হলে অন্য ব্লগারকে জানতে হয়। ব্লগার আরজুপনি ফিফা সম্পর্কে একটি সুন্দর পোস্ট দিয়েছেন। তাছাড়া ‘আমি তুমি আমরা’র পোস্টে ব্লগের সর্বোচ্চ পোস্টদাতা ব্লগারদের সম্পর্কে জানা যায়। রেভোল্যুশন ব্ল্যাকের রম্য সংকলনে অনেক ব্লগারের খবর পাওয়া যায়।
কিছু পুরোনো কিন্তু দরকারি পোস্ট:
*ব্লগিং কি, কেন এবং কীভাবে - কানন শাহ
*১৬ বছরে ব্লগিং: বাংলাদেশ ও বিশ্ব প্রেক্ষাপট - এম মিজানুর রহমান সোহেল
*ব্লগ ও ব্লগিং-এই ইতিহাস - মেহেদি হাসান আকাশ
(১২) ভিডিওতে সামহোয়ারইন-এর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে নিন:
সামহোয়াইন ব্লগকে নিয়ে গাইডলাইন পড়বেন আর এর প্রতিষ্ঠাতা জনাবা জানাকে জানবেন না, তা তো হয় না। কিন্তু আমিও অন্য সকল ব্লগারের মতোই, বেশি কিছু জানি না। জনাবা জানা টিভিতে বেশ কয়েকটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। মাছরাঙা টিভিতে দেওয়া সাক্ষাৎকারটি আমি ‘নিজ চোখেই’ দেখেছি। এখানে শুধু সৈয়দা জানা সম্পর্কেই জানবেন না, তার এবং তার সামহোয়ারইন সম্পর্কেও অনেক কিছু জানবেন। তবে আমি বিস্মিত হলাম তার গানের কণ্ঠ শুনে। পৃথিবীতে মিলের মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। তবু বিয়ে সংক্রান্ত ব্যাপারে তার সাথে এই ব্লগারের অন্তত দু’টি বিষয়ে মিল আছে। এটিএন টিভির সাক্ষাৎকারটিতে দেখবেন কুষ্টিয়ার এক ব্লগার ভাই সরাসরি ব্লগনেত্রী জানাকে ধরেছেন তার একটি সমস্যা নিয়ে। এনটিভিতে সৈয়দা গুলশান ফেরদৌস জানা।
ব্লগ গাইড সংকলকের কথা:
ব্লগিং ইজ ফান! ব্লগিং সত্যিই অনেক মজার। কর্মব্যস্ততার মাঝেও একটুখানি উঁকি দিতে পারলে দৃষ্টির সামনে খুলে যায় অসীম জ্ঞানের জানালা। দেশের হালনাগাদ খবর থেকে শুরু করে রাজনৈতিক অবস্থা, প্রবাসের জীবন, গল্প কবিতা প্রবন্ধ। কী নেই ব্লগে?
লেখার প্রেরণা পেতে চান? তো ব্লগে আসুন! এবছর যে অনেক ব্লগারের লেখা প্রকাশিত হয়েছে, তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে আমি চিনি যারা মাত্র দু’বছর আগে থেকে লেখতে শুরু করেছিলেন। কেউ গীতিকার, কেউ সাইয়েন্স ফিকশনিস্ট অথবা ছোটগল্পকার। কী অসম্ভব ক্ষমতা ব্লগের! আমি মুগ্ধ হই!
সৃজনশীলতায় জীবন কাটাতে চান? তো ব্লগই আপনার স্টুডিও, আপনার এটেলিয়র! হুমায়ুন আজাদ বলেছিলেন, অনেকেই শুধু জীবনধারণ করার জন্য আসে, বাকিরা আসে সৃষ্টি করতে। ফটোগ্রাফি, চারুকলা, গবেষণা, সাহিত্য সৃষ্টি, চিত্রনাট্য, কপি রাইটিং - সবকিছুর সৃষ্টি হচ্ছে ব্লগ থেকে।
সামু’র দেওয়া জন্মদিনের শুভেচ্ছা। স্বয়ংক্রিয় হলেও বিষয়টি ভালো লেগেছে!
অন্য একটি বাংলা ব্লগে আমার উপস্থিতি। উভয়ের কাছেই কৃতজ্ঞ!
ব্লগ থেকে অনেক পেয়েছি - দিয়েছি খুবই নগণ্য! প্রিয় তালিকার কয়েকটি পোস্ট শেয়ার করে ঋণ শোধের চেষ্টা করলাম মাত্র। ব্লগ থেকে সত্যিই অনেক পেয়েছি। অনেকের সংকলনে অনেকভাবে নিজেও এসেছি, অনেকের পোস্টের বিষয় হয়ে এসেছি - কাউকে নিয়ে লিখতে পারি নি। অথচ তাদের সম্পর্কে লেখার আছে অনেক। অধিকাংশ ব্লগারই অনেক ভালো লেখেন; অনেক দায়িত্ব তারা পালন করেন ব্লগ-সমাজের জন্য। মনের সাধ মিটিয়ে যখন ব্লগিং করতে পারতাম, তখন ছিলাম পাঠক। লেখার সময় যখন ছিলো অবারিত, তখন শুধুই আড্ডা দিয়েছি। এখন লেখতে অথবা ব্লগিং করতে এতো ভালো লাগে, এতো পড়তে চাই – অথচ পড়তেও পারি না, লিখতে তো আরও পারি না। সময় কমে যাচ্ছে ক্রমেই। বাংলায় ব্লগিং করাকে উৎসাহিত বা অনুপ্রাণিত করার জন্য একাধিক পোস্টের মধ্যে এটি একটি। বাংলায় ব্লগিং নামে একটি বিভাগও আছে সামুতে। এবার মনে করলাম এবিষয়ে অনেক ব্লগার ইতিমধ্যেই অনেক কিছু করেছেন, তাদের লেখাগুলোকে এক সাথে করে দিলে তা পাঠকের জন্য সুবিধার হবে। ব্যস, এতটুকুই চাওয়া। এটি পরিপূর্ণ গাইড হতে পারে না। তবে কারও জন্য প্রেরণা হতে পারে! ব্লগারদের অর্জিত গৌরব টিকে থাকুক এবং আরও বৃদ্ধি পাক। চলুন সবাই পঞ্চ আঙ্গুলে ছন্দ তুলে গেয়ে যাই স্বদেশ গড়ার গান।
---------------------------------------
*স্টিকি পোস্ট লেখার বিষয়টিতে আমার একটু এলার্জি আছে। সহজাত লেখকেরা সাধারণত এভাবে লেখেন না। এভাবে ভাবেনও না। এটি তাদের স্বভাব-বিরুদ্ধ। তারা নিজের মনে লিখে যান এবং সেটিই হলো প্রকৃত লেখক হবার চিরাচরিত পদ্ধতি। তারা একটি পোস্ট দিলেও তা ব্লগের সম্পদ। সামু’র সৃজনশীল লেখকদেরকে শ্রদ্ধা জানাই। তারা না থাকলে ব্লগ এতো সমৃদ্ধ হতো না!
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৫:২৭