লেখালেখির ক্ষেত্রে সৃজনশীলতা হল অপরিহার্য বিষয়। ভালো লেখার জন্য একজন নতুন লেখককে অবশ্যই সৃজনশীল হতে হবে। সৃজনশীলতা মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। এটাকে নতুন করে অর্জন করার কিছু নাই। তবে কিছু অভ্যাস মানুষকে তার সৃজনশীলতা ব্যবহারে অভ্যস্ত করে তোলে।
হে নবীন লেখক, আপনার জন্য ১০টি টিপস --
০১) একটা নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দিন শুরু করুন। আপনার লেখার স্থান পরিবর্তন করতে পারেন। কেবল টেবিলে বসে না লিখে বাইরে যান। প্রাকৃতিক পরিবেশে শিথিল ভঙ্গিতে লিখুন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পদ্মা নদীতে নৌকায় বসে প্রচুর কবিতা লিখেছেন। প্রাকৃতিক পরিবেশ আপনার লেখার ধরন বদলে দেবে।
০২) লেখা শুরু করার সময় আপনার অনুভূতি এবং স্বাভাবিক প্রবৃত্তিকে বিশ্বাস রাখুন। আপনার অনুভূতি এবং স্বাভাবিক প্রবৃত্তির ইশারা বোঝার চেষ্টা করুন এবং সে অনুযায়ী আপনার লেখাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যান। লেখার সময় আপনার যুক্তির চেয়ে আপনার অন্তর্জ্ঞান এবং কল্পনার উপর বেশি নির্ভর করুন।
০৩) লেখা শুরু করার পূর্বে ১০ মিনিট কবিতা পড়–ন। নতুন নতুন কবির কবিতা বা ছড়া সংগ্রহ করুন। শিশুতোষ ছড়া সবচেয়ে ভালো। কারণ তাদের প্রাকৃতিক ছন্দ ও গতি আছে Ñ যা আপনাকে সৃজনশীলতার সঙ্গে যুক্ত করবে। আপনার ভেতরের শিশু মনটাকে ব্যবহার করতে শিখুন।
০৪) লেখার সময় শিথিলায়ন মিউজিক ছেড়ে নিতে পারেন। মিউজিকের ছন্দ আপনার লেখার শব্দের ছন্দের মধ্যে প্রয়োগ করুন। প্রিয় কোন গান আপনার লেখার স্পৃহা বাড়িয়ে দেবে।
০৫) লেখার মাল-মসলা যোগাড়ের জন্য ভ্রমণ করুন। নতুন নতুন স্থানে যান, নতুন নতুন লোকের সঙ্গে মিশুন। হঠাৎ লেখা আটকে গেলে আপাতত ক্ষান্ত হোন। আপনার প্রিয় কোন রাস্তায় হেঁটে আসুন। এমনভাবে চারপাশ দেখুন যেন আপনি একজন পর্যটক। আগে দেখেননি এমন কিছু আবিষ্কার করার চেষ্টা করুন।
০৬) দিনপঞ্জী লিখুন এবং প্রতি দিন লিখুন। আপনার অনুভূতি এবং চিন্তাগুলিকে লিপিবদ্ধ করুন। পাশাপাশি আপনার চারপাশের মানুষের আচরণ এবং তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক লিখুন। এই চর্চা আপনার পর্যবেক্ষণের দক্ষতা বাড়াবে এবং যে কোন পরিস্থিতি লিখতে সহায়তা করবে। দিনপঞ্জী লেখার জন্য একটা আলাদা খাতা ব্যবহার করতে পারেন।
০৭) একটা স্বপ্ন পঞ্জী লিখুন। ওতে দিবা স্বপ্নের পাশাপাশি রাতের স্বপ্নগুলোও লিখবেন। রাতের স্বপ্ন লেখার জন্য একটা আলাদা খাতা বা ডায়েরি ব্যবহার করতে পারেন। এই স্বপ্নগুলো থেকে আপনার লেখার মাল মসলা পাবেন।
০৮) একটা ছোট নোটবুক রাখুন সাথে। যখনই কোন আইডিয়া আপনার মাথায় আসবে, সঙ্গে সঙ্গে লিখে ফেলুন। এই রকম আইডিয়া লিখে না রাখলে পরে ভুলে যেতে পারেন। নিজের স্মৃতিশক্তিকে বিশ্বাস করবেন না।
০৯) সমুদ্র, নদী, পাহাড় বা উদ্যানে ভ্রমণ করুন। আপনার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত প্যারাগ্রাফ লিখুন। প্রকৃতি রূপ-রস-গন্ধ বর্ণনা করুন। লেখার মধ্যে আপনার স্পর্শানুভূতি, স্বাদ,শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি ও ঘ্রাণশক্তি ব্যবহার করুন। সোজা কথায়, আপনার পঞ্চেন্দ্রিয় ব্যবহার করে লেখাকে সমৃদ্ধ করুন।
১০) লেখার সময় লেখার মান নিয়ে ভাববেন না। গড়গড় করে লিখে যান। পুরো লেখা শেষ হওয়ার পর সেটা কয়েক দিন, সপ্তাহ বা কয়েক মাস ফেলে রাখুন। তারপর আবার লেখাটি পড়–ন। এবার নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে লেখাটি সম্পাদনা করে নিখুঁত করুন। বার বার সম্পাদনা করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। দরকার বোধ করলে পুরো লেখাটি নতুন করে লিখতে পারেন।
শুভ হোক আপনার লেখালেখি।
প্রথম পর্ব ।
শাহজাহান শামীম
(চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক)
০১৯১২৫৭৭১৮৭ বা ০১৬৮২৩০৩৩১৯
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ২:০৬