somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নতুন গল্প লিখিয়েদের জন্য-গল্প নিয়ে গল্পামি-শেষান্তে

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত পর্বে গল্প নিয়ে সামান্য আলোকপাত করেছিলাম আজ তার শেষ আলোচনা। যারা নিত্যান্তই সাধারণ গল্প লিখতে আগ্রহী বা সদ্য গল্প লিখতে চাইছেন কিন্তু পারছেন না তাদের জন্য আজ শেষ পর্বে কিছু আলোচনা করলাম।
♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠
নতুন গল্প লিখিয়েদের জন্য-গল্প নিয়ে গল্পামি-১ম পর্ব
♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠
১ম পর্বের পর-

অনুগল্প কিভাবে লিখবঃ
গল্পের মুল বিষয়টা গল্পের মাঝে রেখে, গল্পের সংলাপ, বর্ণনা যতখানি সম্ভব কম প্রসারিত করে প্রকাশ করাটাই অনুগল্পের কাজ। অনুগল্পে সাধারণত গল্পের মুল ভাবের একটা ইঙ্গিত দেয়া থাকে। খুব কম চরিত্র দিয়ে গল্পটি গাঁথতে হয়। অনুগল্পের ভাব সবসময় সবার মাথায় ঢুকে না তবুও একটু চেষ্টা করলে সেটা বুঝা সম্ভব। আমি একাট ধারনা দিলাম: সম্পর্ক নামক বিষয়টি দিয়ে অনুগল্প লেখা খুব সহজ সে জন্য সম্পর্ক বিষয়টা নিয়ে ৫ মিনিট ভাবুন তারপর কল্পনায় সাজিয়ে তুলুন দুটি চরিত্র, নারী-পুরুষ, দুজনার দাম্পত্য জীবনের সামান্য ভুল বোঝাবুঝি শেষে দুজনার আলাদা হয়ে যাওয়া। ব্যাস এটুকু দিয়েই অনুগল্পটি লেখা সম্ভব।

নিচে তেমনি একটি অনুগল্প দেয়া হলো:

।। ।। অনুগল্প: প্রেমালিঙ্গম ।। ।।

আঁচল উঠিয়ে নিল কান্তা! দীর্ঘ সময় পাড়ি দেয়া প্রেমরূপ আজ অদৃশ্য হবে।

-এবেলা তবে পথ ছাড়ি; নিবাস তুমি বাটিতে যাও
চোখ দু’খানা তারা করে দিয়ে রইল দাড়ায়ে নিবাস; মনঘরে তখনও পাকানো ঢেউ; কেন তবে মিছি মিছি ভালোবাসা! কেন তবে কাছে আসা। অন্ধের মতো পাথরকে বন্ধু ভাবতে যদিও দোষের কিছু নেই তবুও কি আর পাথরকে গলায় বাধা যায়?

গল্পটার শুরু নাইবা হলো জানা; কেননা এ কাহিনীর নেই যতি চিহ্নের ঠিক-ঠিকানা।
নিবাস; বনগাঁয়ে যার বাস। দিন কেটে হেলায়-ফেলায়, রাতটা কাটে ভাবনার বাসে চড়ে; প্রহর শেষে একটু থামে সেই ভাবনারা। একটু ঘুমোয়, একটু জিরোয়; সকাল হতেই আবার তার যাত্রা শুরু।
কাটছিল দিন এভাবেই।

কান্তা।
নিধিরাম এর পোষ্য কন্যা। হোক সে পোষ্য। যেন প্রান। যেন প্রকৃতির দান। নিধিরাম কান্তা বলতে অজ্ঞান!
বয়সের নায়ে ভেসে ভেসে শেষে কুড়ি পেড়িয়ে তেইশে রাখলে পা। গা ছমছম করা দুপুরে একদিন ভোমর কানে কানে বলে গেল এইবার তবে মন মেশাও আর কারো মনের সাগরে। কান্তা অতশত ভাবে না; এটুকু বুঝে যায় সে, একদিন কারো হাত ধরতে হবে কারো ঘরে যেতে হবে, না হলে সে আর মেয়ে কেন?
একদিন বর্ষা পেড়িয়ে গেলে বাংলা একাডেমী থেকে ফেরার পথে নিবাসের সাথে দেখা। সে দেখাটা অবশ্যি একটা ছাতাকে কেন্দ্র করেই। হঠাৎ বৃষ্টিতে আধভেজা নিবাস দাড়িয়ে ছিল গেটের পাশেই ছাতার জন্য বাড়ি যেতে পারছে না। পকেটে টাকা নেই তাই কোন চক্রযানেই সে উঠতে পারছেনা। কান্তা’র সই নিশি এসে বললো কান্তা তোর নীল ছাতাটা দে,তো-
তারপর সেই ছাতা নিয়েই নিবাসের বাড়ি ফেরা।

ফেরত ছাতার কথা ধরে এভাবেই পরিচয় পর্ব। এরপর রমনা কালিমন্দিরের গেটের পাশে বসে ভালোবাসাবাসি শুরু। নিবাস কিংবা কান্তা দুটো প্রাণীই যেন এক ছাঁচে গড়া। বিশ্বাস ওদের সুউচ্চ শিখরে যেন গেছে পৌছে, শুধু নির্মল বিশুদ্ধ ভালোবাসা দুজনে দুজনায় গায়ে চাদরের মতো যেন লেপ্টে থাকে। কিন্তু ঈশ্বরের খেলা সে যে এক মস্ত বড় ঘোরপাক নদী।
নির্মল ভালোবাসাকে টিকিয়ে রাখতে তার কি ঠেকা পড়েছে? তাই কিভাবে সেটা মিশে যাবে সামাজিক যাতাকলে তারই একটা আয়োজন যেন চলে গোপনে গোপনে।

চাল-চুলোহীন নিবাস তার যে নেই আবাস। যে পথে পড়েনা ফুল সে পথেই তার বাস। কোনক্রমে স্নাতকোত্তর শেষ হলো কিন্তু কর্মখালী কোন প্রতিষ্ঠানে সে ঠায় পায়নি এখনও। প্রশ্ন চারপাশে, কেন তবে ভালোবাসলি? জানিস নে এ ভালোবাসার ভবিষ্যত যে অন্ধকার। ঘর ছেড়ে কি কান্তা তোর সাথে তবে গাছতলায় কাটাবে? এত কিছু ভেবে ভালোবাসলে তো আর কামহীন প্রেম হবেনা তাহলে তো হিসেব কষে শরীরবৃত্তেই ঘুড়ে শেষে থেমে যাবে ভালোবাসার কাঠি। তবুও এ ছন্নছাড়া জীবনে প্রেম চলে না। মস্ত বড় বোকা না হলে কি আর সোনার জীবন ধ্বংসের জন্য মাতে প্রেমালিঙ্গমে।

দিন যেন ফুরায় সময়কে কাল স্বাক্ষী করে। শেষ দেখায় কান্তা বললো নিবাস,
আগুনে একবার হাত দিয়ে ফেলেছো, পুরোপুরো পুড়ে যাওয়া না পর্যন্ত হাত সরিয়ে নিও না তাহলে সারাজীবন সেই যন্ত্রণায় জ্বলে যাবে তার’চে ভেবে নাও প্রেম মরে যাচ্ছে না সেটা জ্বলছে প্রদীপের মতো। তুমি যেন অন্ধ এক অনুভূতি শূণ্য মানুষ। আজ হতে সব কিছুতেই তোমার সহ্য ক্ষমতা বেড়ে যাক। মুখের ভাষা থাকার চেয়ে যদি না থাকতো তবে উন্মাদ হয়ে ঘুড়ে বেড়ানো যেত নিবিঘ্নে তাতে দহনটা সাতকাহনের জন্ম দিতো না। নিবাস সানাইয়ের প্রিয় সুর সোনার আগেই পা তুলে নিল।

এরপর কেটে গেল একযুগ………….

এখনো পতি দেবতাটির বুকে মাথা রেখে কান্তা চোখ ভরে জল ফেলে নিবাসের জন্য। আহ প্রেম!
এত যন্ত্রনা।
এতো সুখের মাঝেও কোথায় যেন কিসের কমতি।
কেথায় সে মুখ নিবাসের।
আর ওদিকে একযুগ ধরেই নিবাস যে কোথায় হারিয়েছে তা কেউ বলতে পারে না। হয়তো ফুলহীন পথে। নয়তো ভাষাহীন রথে এমনি কোথাও হয়তো আজ নিবাসের বাস হয়েছে?

_________________________________________

ছোট ও বড় গল্প লেখা:

ছোট গল্পে একাধিক চরিত্রে বেশ পাকাপোক্ত হয়। অধিকাংশ মানুষই ছোট গল্প পড়তে বেশ আনন্দ পায়। ছোট গল্প নিয়ে অনেক সজ্ঞা রয়েছে সেসব সংজ্ঞায় না গিয়ে সরল পন্থা নিয়ে কয়েকটি কথা বলি। গল্প লেখার আগে গল্পের প্লট বা থিম মাথায় সাজিয়ে নিতে পারলে ভালো, যাদের এ বিষয়টা মাথায় আসে না তারা কাগজ কলম নিয়ে গল্প লিখতে বসে যান তারপর লিখতে শুরু করুন, থেমে থেমে লিখুন প্রয়োজন পরলে পুরো লেখা শেষ করে লেখাটিকে পুনরায় সম্পাদনা করুন।

ছোট গল্প লেখার সময় কয়েকটি দিক খেয়াল রাখতে হয়:
# প্রতিটি চরিত্রকে অত্যাধিক প্রসারিত করার প্রয়োজন নেই। মুল চরিত্র নিয়ে এগিয়ে যাওয়া ভালো।
# প্রতিটি গল্প লেখার পরপরই প্রকাশ না করে লেখাটিকে জমিয়ে রাখতে হবে এবং কিছুদিন পর লেখাটি পাঠ করলে এর ভেতরের ভুল গুলো বেড়িয়ে আসবে।
# বড় গল্প লেখার সময় সব গুলো চরিত্রকে সমান ভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারলে ভালো হয়।
# বড় গল্পে মুল কাহিনীর চেয়ে বর্ণনা বেশি থাকে যে কারনে যিনি গল্পটি লিখবেন তার শব্দ বুননে দক্ষতা থাকা প্রয়োজন।
যাদের একেবারেই শব্দ বুননে দক্ষতা নেই বলে ভাবছেন তারা চেষ্টা করে দেখতে পারেন। পড়তে পারেন লিও টলষ্টয়ের গল্প সমগ্র বইটি। নতুন গল্প লেখকদের জন্য উত্তম। এই লেখকের প্রতিটি গল্পই বেশ গুছিয়ে আর পরিমিত ভাষায় লেখা। লেখার আগে নিচের কয়েকটা বিষয় মনে রাখলে একটি সহজ গল্প রচনা অতি সহজেই সম্ভব।

# গল্পে কখনও এক ঘেয়েমি রাখতে নেই তাতে করে পাঠক আগ্রহ হারায়।
# ছোট গল্পে অতিরিক্ত বর্ননা অনেক সময় গল্পের মুল কাহিনীকে ম্লান করে দেয়।
# প্রতিটি গল্পের নামকরণ যথার্থ হওয়া প্রয়োজন।
# আকর্ষনীয় নামকরণের সাথে সাথে গল্পের শুরুটা আকর্ষন রাখতে পারলে বেশ হয়।
# বড় গল্পে বর্ণনা প্রয়োগ করার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে একই বর্ণনা যেন দু’বার না হয়।
# বড় গল্প (সামাজিক) পর্যায়ে মুল কাহিনীর সাথে ছোট ছোট দৃশ্যপট যোগ করলে গল্পটা আকর্ষনীয় হয়।

:::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::

যারা গল্প লিখবেন বা নতুন যারা লিখছেন তাদের গল্প লেখায় নতুনত্ব বা গল্প লেখার ষ্টাইল জানা অবশ্যই জরুরী। ষ্টাইল জানা থাকলে খুব সহজেই পাঠকের দৃষ্টিতে আসা যায়। এখন পরিবর্তনের সময়, তাই গল্প লেখায় সনাতনী পদ্ধতি সহ আরো বেশ কিছু ষ্টাইল জানা থাকলে আপনার লেখা গল্পটি হয়ে উঠতে পারে আকর্ষনীয় একটি গল্প। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিভিন্ন ষ্টাইলে গল্প লেখা যায় আমি সেগুলো থেকে সংক্ষিপ্ত আকারে আলোচনা করবো। বিষয় ভিত্তিক গল্প লেখার ধরন বদলায়, সব বিষয়ে এক ষ্টাইল দিলে গল্প জগা-খিচুরী হয়ে যাবে।

গল্প লেখার ষ্টাইল বা সনাতন পদ্ধতি: গল্প লেখার খুব পরিচিত দুটো পদ্ধতি আছে তা হলো-

১। গল্পের চরিত্র নিজে অংকন করা।
২। নিজে গল্পের চরিত্রে অংকিত হওয়া।

গল্পের চরিত্র নিজে অংকন করা
অনেকেই বিষয়টি ধরতে পারছেন না হয়তো। আরো একটু সহজ করে বলি। কিছু গল্প আছে যে গুলো পড়লে মনে হয় লেখক গল্পের দৃশ্যপটে চরিত্র তৈরি করে দিয়েছেন যেমন:

আলো ফুটাবার আগেই সারা গাঁয়ের কাকগুলো আজ তীব্র স্বরে ডাকতে শুরু করে দিয়েছে।
কাকের স্বরেও একটা করুন সুরের আবেশ রয়েছে;যেন ঘটে গেছে অবাঞ্চিত কোন কিছু। ঘটনা থেকে দুর্ঘটনার আরম্ভ যেখানে; আজ সেখানে এই ভোরবেলাতেই আকাশটা গোমট ভাব ধরে আছে।
প্রভাত আলোর সাথে সাথেই অচিনপুরের গ্রামবাসী জেনে গেল রাতের শেষ প্রহরে নিপেন রায়ের কন্যা শ্রীলক্ষী ইহধাম ত্যাগ করেছে।
গাঁয়ের একটা শ্রীলক্ষী মরে গেছে তাতে যেমন দেশের এক কোনা ক্ষয়ে যায়নি, তেমনি শ্রী লক্ষীর জন্য এপাড়ার চক্রবর্তী বাড়ির কারোর মাথাব্যাথা বা হাহাকার জাগেনি বিন্দু মাত্র। প্রতিটা দিনের মতো তাদের সকালের শুরুটা হয়েছে বরাবরের মতই।
রোজ যেমন করে দাশ পাড়ার ছেলেরা ফুটবল নিয়ে মাঠে নেমে যায় আজ হয়তো ওরা নেমে যেত মাঠে কিন্তু নিপেন রায়ের বাড়ি থেকে ভেসে আসা কান্নার করুন সুরের কাছে ওদের ইচ্ছেটা থমকে গেছে। রঘুনাথের চায়ের চুলো আজ জ্বলেনি; ঝাঁপি খোলেনি দ্বীপশিখার বাবাও। বোবা মেয়েকে নিয়ে রোজ সকালে পুজো দিতে যেত অবিনাশ সেও আজ মাঝ পথে থ” মেরে গেছে; এ-সবই ব্যতিক্রমের মাঝে গড়াগড়ি খেলেও; শুধু বদলে যায়নি চক্রবর্তী বাড়ির দৃশ্যপট।

সেই সকালে আরেক দৃশ্যের সুত্রপাত ঘটতে চলেছে তখন কাঙ্খিত চক্রবর্তী বাড়িতে।
পাশের গাঁয়ের খালেক পাঠান চক্রবর্তী বাড়ির আঙ্গিনার মাঝ বরাবর দাড়িয়ে চেচাচ্ছিল। হরিপদ’র তখনও খাওয়া হয়ে উঠেনি। অফিস যাবার তাড়াহুড়োতেই শ্যামল চক্রবর্তী গলায় টাই বাধছে, আর ওদিকে পরমা দেবী ঠাকুর ঘরে ঘন্টা বাজাতে শুরু করে দিয়েছে। চক্রবর্তী বাড়ির প্রতিদিনকার সকালটা এভাবেই শুরু হয় তার ব্যতিক্রম ঘটানো মুশকিল। এ-গাঁয়ে চক্রবর্তীদের কে সবাই যথেষ্ঠ সমীহ করে চলে। একেতে গাঁয়ে পুরোহিত বলতে একমাত্র ওরাই তার উপর ঠকুর দেবতার পায়ে পরম পূজনীয় হিসেবেই গাঁয়ের লোক ওদের মানে।
শ্যামল চক্রবর্তি বিয়ে করেননি তাতে কি ! কিপটেমিতে এ গাঁয়ের সেরা। হরিপদ’র বউ পরমাদেবী যাকে গায়ের লোক দেবী বলেই মনে করে; তার কিন্তু গ্রামের কায়স্থদের প্রতি ভারী রাগ। কোন কম্মিনকালে যে তিনি ঠকে ছিলেন এক কায়স্থের হাতে সেই,থেকেই শুরু।

-শ্রীহীন কাহন
……………………………………………………………………………………

এখানে লেখক গল্পের প্রয়োজনে চরিত্র সৃষ্টি করেছেন। গল্পটা পড়বার সময় মনে হয় কেউ যেন গল্পটা বলে যাচ্ছে আর আমরা কান পেতে শুনছি। এখানে লেখকের দৃশ্যপট রচনটাই গল্পের মুল দক্ষতা। এই পদ্ধতির গল্পে আপনি ইচ্ছে মতো চরিত্র ও দৃশ্যপট সৃষ্টি করতে পারবেন।
আরো সহজ করে বলি, ছোট বেলায় নিশ্চই মা বা দাদীর মুখে ভুত বা টুনোটুনির গল্প শুনেছেন। তখন আপনি ছিলেন শ্রোতা। এই পদ্ধতিটা ঠিক তেমনই আপনি গল্পটা বলার ভঙ্গিতে লিখবেন আর পাঠক তখন থাকবে শ্রোতা এখানে গল্পটাকে আপনি অংকিত করছেন।

নিজে গল্পের চরিত্রে অংকিত হওয়া-

এই পদ্ধতি নিয়ে খুব সহজ করে বলি। এই পদ্ধতির গল্পগুলো আত্মজীবনীর মতো লেখা। এখানে লেখক নিজেকে গল্পের ভেতরে নিয়ে যায়। সে নিজেই মুল চরিত্রে থাকে।আমরা যারা নতুন গল্প লিখতে শিখি তখন এই পদ্ধতিটা সহজ মনে হয়। এখানে গল্পের শুরু হয় নিজেকে দিয়ে গল্পে থাকে আমি, তুমি, সে, ওরা। আমি তেমনি একটা গল্প তুলে দিলাম-

জ্যৈষ্ঠের এক নিরব সন্ধ্যায় কান্তনগরের মাটিতে পা রাখলাম। এখানকার ট্রেন আমায় দ্যুম্ করে নামিয়ে দিয়ে
চলে গেলো। এই শহর অচেনা নয়-তবুও বহু বছর বাদে পা পড়লো এই শহরে।
ষ্টেশনে নেমেই আমি একটু শূন্যতা অনুভব করলাম- কেউ আসেনি আমায় এগিয়ে নিতে। অনেকটা চুপচাপ চাদর গায়ে মেখেই এসে গেলাম।
এর আগে যখন ছোট্টটি ছিলাম তখন মার কোল থেকে নেমে এ ষ্টেশনে পা ফেলতেই চারপাশটা কেমন যেন গুমগুম করতো; ভীড় তখন এতো ছিলনা, যাত্রী নামার তাড়া ছিলনা কিন্তু ভীড় ছিলো আড্ডা দেবার মানুষের। আমি কিংবা আমার সঙ্গীরা তখন নতুন নতুন কলকব্জা দেখার নেশায় মত্ত থাকতাম। বেলা বেড়ে গেলে মামা আমায় কাধে করে নিয়ে বাড়ি ফিরতো।
সেইসব দিন গেছে কিন্তু রয়ে গেছে কান্তনগর রেলষ্টেশন।

রেল লাইন দেখলেই মনে পড়ে যায় তোমার কথা। তুমি হাত ধরে হাটতে চাইতে। যেন নদীর এপাড় আর ওপাড়ে দু’জন রয়েছি মাঝখানে সমান্তরাল। কত সকালকে ঝেড়ে ফেলে আমরা দুপুরকে চাইতাম; পড়ার তাড়া থাকতো বলে, কতদুপুর আমাদের পায়ের নিচে বিকেল হয়েছিল তার ইয়াত্বা নেই।
দুপাশের রেল লাইন ধরে আমরা সবাই বহুদুর চলে যেতাম। রোজ ভাবতাম পথের শেষপ্রান্তে যাবো; কোন দিন যাওয়া হয়ে উঠেনি! -আমরা মাঝ পথেইে থেমে গেছি ব্যাটারি হীন ঘড়ির মতো।
তখন তোমার বয়স দশেরঘর পাড় করেনি, আমি তের পার করেছি। সেই বয়সে একদিন তুমি বলেছিলে – পকেটে অনেক টাকা যেদিন হবে সেদিন রেল লাইন পথের শেষপ্রান্তে যাবো? -আমার সঙ্গে যাবে তুমি? সেদিন কিছু বলা হয়নি আমার; আমি তোমার মার্বেল চোখে তাকিয়ে ছিলাম সেখানে তোমার ইচ্ছেরা ছোটাছুটি করছিলো আমি তোমার ইচ্ছের আস্ফালন দেখতে পাচ্ছিলাম।

-অনিলা তুমি ভালো নেই

……………………………………………………………………………………
গল্পটা পড়লেই বুঝা যায় লেখক এখানে নিজের কথা বলছেন। এখানে নিজেকে গল্পের প্রয়োজনে অংকন করছেন। সেই গল্পের সাথে তিনি যাদের চরিত্র এনেছেন সেটাও নিজ মুখেই গল্পে প্রকাশ করছেন। এবার নিশ্চই খুব সহজেই আপনারা গল্প লেখার দুটো সনাতন পদ্ধতি বুঝতে পেরেছেন। গল্প লেখার আরো অনেক ষ্টাইল আছে। প্রত্যেক লেখকের মধ্যেই সুপ্ত কলা-কৌশল রয়েছে; সেটার প্রকাশ ঘটাতে পারলেই সাধারণ সব গল্প লেখা সম্ভব।

♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠ ♠
যারা এই পোষ্ট অনুসরন করবেন বা করছেন তাদের কোন জিজ্ঞাসা থাকলে অবশ্যই বলবেন। অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারেন আপনারা কেন আমার দেয়া পদ্ধতি অবলোকন করবেন? আমি কি কোন গল্পবিদ বা সাহিত্যবিদ? না এর কোনটাই আমি নই। আমি নিজেও সাধারণ গল্প পাঠক ও লেখক। যারা খুব সহজে গল্প লিখতে ও শিখতে আগ্রহী শুধুমাত্র তাদের জন্য আমার জমাকৃত সাধারণ জ্ঞান দিয়ে সহযোগীতা করছি।
১৬টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×