নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খুব সাধারণ একজন মানুষ। বিনয়ে বলা সাধারণ নয়, সত্যিকারের সাধারণ। রূঢ় ভাষায় বললে \"গুড ফর নাথিং\"।

বিষাদ সময়

বিষাদ সময় › বিস্তারিত পোস্টঃ

নীলকন্ঠীর মর্মকথা

২১ শে জুন, ২০২৪ রাত ৮:০৭




রমা- উনি এতক্ষণে এলেন।
আসতেই খোঁচাটা খেয়ে মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল।
- কেন আমি এখানে অনাহুত নাকি?
রমা-তুমি এখানে কি সেটা যদি বুঝতে তবে দ্বি-প্রহর পার করে ঢুঁকতে না।
- আমি যে নিশাচর রে রমা।
রমা- নিশাচর থাকতে থাকতে নেশাখোর আবার হয়োনা।
-কথা দিতে পারছি না। তুই যে আজ আমায় খোঁচাচ্ছিস?
বেগতিক দেখে মিহির চিঁচিঁ করে উঠলো- দিদি আর কথা বাড়াসনে। দাদা যখন এইচে শুরু কর।
মিহির এর তাড়া খেয়ে রমা বলল --ধর দাদা, এবার ধর।
একটু অন্যমনস্ক থাকায় বললাম-কি ধরবো?
কথাটা শুনে অনেকক্ষণ হাসলো রমা। শিশুরা আবোল তাবোল কথা বলে ফেললে বড়রা যেমন করে হাসে, সে রকম। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বলল-
-কারও হাত তো ধরবে না। দ্বি-প্রহর পার করে তো আর ভৈরবীও ধরা যায় না। ধরো, না হয় ভীমপলশ্রী`ই ধরো।
- আমাদের মতো যাদের দ্বি-প্রহরে প্রভাত হয় তাদের জন্য্‌ ওটাই ভৈরবী। তা দে প‌্যাঁপোঁটা এগিয়ে দে।
রমা- তুমি ধরবে রাগ!!! তা তুমি কি এ এলাকার কাকগুলোকে একটু শান্তিতে থাকতে দিবে না!! ....তুমি হাড়িতে একটু ঠেকা দাও।
- তুই কিন্তু আবার আমায় খোঁচাচ্ছিস।
মিহির- বাদ দাও তো দাদা, ওর কথা বাদ দাও। আমি ডুগি তবলা এনে দিচ্চি তুমি একটু ঠেকা দাও।
- যা মিহির তাই কর। ওকে আজ ভুতে ধরেছে।
মিহির ডুগি তবলা দুটো আমার সামনে এনে আছড়ে ফেলল। এভাবে আছড়ে আছড়ে ওগুলোর হাল হাকিকত হয়েছে তোবড়ান পাতিলের মতো। হাতুড়িটা দিয়ে একটু ঠুক, ঠাক বাড়ি দিলাম, আরেকটার কড়া ধরে টানাটানি করলাম। ধা, ধিন, গে যাই বাজায় ওটা খালি ধেররর, ধেরর করে। ওকে টিউন করার চেষ্টা বাদ দিয়ে তবলায় গুঁজে রাখা পাউডারটা খুঁজলাম, আমার হাতে আর ওর গায়ে দিলে যদি অভিমান ভুলে ধা-টা বলে। কিন্তু গতকাল গুঁজে রাখা পাউডারের পুটলিটা বেমালুম গায়েব।
খেপানোর জন্যই রমাকে বললাম-কিরে রমা শেষ পর্যন্ত তবলার পাউডার চুরি করে গায়ে মাখলি নাকি।
আবার একটু হেঁসে নিয়ে বলল- যেই তবলা বাজাও তুমি, তাতে লাগে পাউডার!!!
-কিরে তুই বড় শিল্পী বলে আমাকে অবজ্ঞা করছিস?
রমা আহত চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল- দাদা তুমি একথা বলতে পারলে?
নিজের অপরাধ বুঝতে পেরে তাড়াতাড়ি কথার মোড় ঘুরালাম। সব কিছু যদি এত ধরিস তবে হয়। নে তাড়াতাড়ি ধর এই আমি শুরু করলাম-
তেরে কেটে ধা, তেরে কেটে ধা
ধা ধিন ধিন ধা। ধা ধিন .....ধর
রমা-যা যারে আপনে মন্দিরবা
পা - । গা – রে সা। রে নি সা -। মা- মা মা । পা –
ধিন ধা। না তিন তিন তা। তেটে ধিন ধিন ধা। ধা

মিহির- মাউলা-
উচ্চস্বরের আওয়াজে চমকে উঠেই বুঝলাম মিহির সোমের মধ্যে শব্দটা গুঁজে দিয়েছে।
রমা- গুরু হেলে গেল যে!!!
-টেনে দিচ্ছি

রমা- যা যারে আপনে মন্দিরবা
শুন পাবেগী শ্বসন নদিয়া
গা মা। পা নি র্সা র্গা। র্রে র্সা নি র্সা । নি ধা মা পা । গা
ধিন ধা। না তিন তিন তা। তেটে ধিন ধিন ধা। ধা ধিন ধিন ধা। ধা ধিন ধিন ধা। ধা ধিন

- রমা তুই কি কোন বাঁশী শুনতে পাস
রমা- আমি যে তার কাছেই সমর্পিত দাদা।

রমা- যা যারে আপনে মন্দিরবা --

- ৭১ এ তোকে আর নিখিল কে হায়েনাগুলো ধরে নিয়ে গেল। তোকে তো তাও অপারেশন চালিয়ে উদ্ধার করতে পারলাম, কিন্তু নিখিলটার আর কোন খোঁজ পেলাম না। জানিস আড়ালে আমরা তোদের রাধা-কৃঞ্চ বলে কত হাসহাসি করতাম।

রমা- তোমরা আমাকে না আনলেই মনে হয় ভাল করতে। শরীরে দাগ নিয়ে.....

কথা শেষ না করেই অন্তরায় চলে গেল। অতীতের কথাগুলো তোলায় নিজেকে খুব অপরাধী মনে হলো। ভেবেছিলাম দেবী হয়ে ওঠা রমার মনে দুঃখ, শোক, তাপ, গ্লানি কোন প্রভাব ফেলে না। এখন বুঝছি নির্বোধের মতো কাজ করে ফেলেছি। একেবারে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।
--- কোন রকমে বললাম- এটা আবার কোন ধরনের কথা!!! তোর মুখে এমন কথা শোভা পায় না। তোর কত সুনাম, খ্যাতি , যশ। সবাই তোকে দেবীর মতো সম্মান করে। মানুষের গায়ে দাগ লাগে, দেবীর গায়ে কোন কিছু স্পর্শ করতে পারে না। শুধু শুধু দিলি আমার মনটা খারাপ করে।

রমা-শুন হে সদারঙ্গ তুমকো চাহাত হ্যায়-
পা পা পা পা। মা পা গা মা। পা -নি নি । র্সা র্সা র্সা- ।
না তিন তিন তা। তেটে ধিন ধিন ধা। ধা ধিন ধিন ধা। ধা ধিন ধিন ধা ।

তবলা বাজাচ্ছি আর দেখছি, হারমোনিয়ামের উপরটায় চোখের ফোঁটা ফোঁটা জলে চিত্র আঁকছে।
বিষয়টাকে হাল্কা করার জন্য বললাম-কিরে তোর কোমল স্বরগুলো আজ কর্কশ হচ্ছে যে। বুঝেছি আমাদের খুঁকি রমা বুড়িয়ে যাচ্ছে।

রমা- আচ্ছা দাদা তুমি তো তোমার ধর্মের অনেক কিছু জান। তোমাদের ধর্মে কি এরকম করতে বলে?
- হঠাৎ মাথার ভিতরটা একদম ফাঁকা হয়ে গেল । সে দিন গুলোর কথা চিন্তা করে দাঁতে দাঁত চেপে বললাম ধর্ম মানুষের জন্য, পশুর কোন ধর্ম হয় না।

রমা- ক্যা তুম হামকো ছগন দিয়া
পা নি র্সা র্গা । র্রে র্রে র্সা -। নি র্সা নি ধা । পামা গা
না তিন তিন তা । তেটে ধিন ধিন ধা। ধা ধিন ধিন ধা । ধা ধিন ধিন ধা ।

কেবল তানের প্রস্তুতি নিচ্ছি। এ সময় হাত বাগ মানতে চায় না। পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটতে চায়। নিজেই নিজের হাতকে শাসাচ্ছি সাবধান হওয়ার জন্য । হঠাৎ হারমোনিয়াম, কন্ঠ সব ন্তদ্ধ। প্রচণ্ড কোন ঝড়ের আশঙ্কার রমার দিকে তাকালাম। মনে হচ্ছে পাথরের মূর্তি হয়ে গেছে। বুঝলাম ঈশান কোণে কালো মেঘ জমেছে। আগত ভয়ঙ্কর ঝড়ের অপেক্ষায় আমি আতঙ্ক নিয়ে বসে থাকলাম। এভাবে সেকেণ্ড, মিনিট কতটা পার হল জানিনা। আমার চোখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো রমা, চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে, শরীর সামান্য কাঁপছে, হঠাৎ আমার পায়ের কাছে লুটিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো
- দাদাগো আমি দেবত্বের ভার আর বহন করতে পারছি না, আমি মানুষ হতে চাই, রক্ত-মাংসের মানুষ , নিঃস্কলঙ্ক, দাগহীন ।

এ রকম কোন ঘটানার জন্য একদমই প্রস্তুত ছিলাম না। ওর এরকম চাওয়া থাকতে পারে স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি। স্তব্ধ, নির্বাক হয়ে গেলাম। নীলকন্ঠীদের সান্তনার কোন ভাষা হয়না। যে নীলকন্ঠী হয় সে`ই শুধু বোঝে বিষের জ্বালা । দেবত্বের যে এত যন্ত্রণা থাকে তাও জানা ছিলনা। অনেক কষ্টে নিজেকে শান্ত করে ওর মাথার ওপর একটা স্নেহের হাত রাখলাম শুধু।

পাদটীকা- গল্পটাতে একটু ভিন্ন মাত্রা যোগ করার জন্য শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ছোঁয়া দেয়ার ইচ্ছা ছিল। দু-যুগ আগের খাতা পত্র খুঁজতে গিয়ে কিছুই পেলাম না। শেষ পর্যন্ত নেটের সহযোগিতা নিলাম। আমি সঙ্গীত অজ্ঞ কাজেই ভূল ত্রুটি থাকাটা স্বাভাবিক।
যারা শাস্ত্রীয় সঙ্গীত পছ্ন্দ করেন তাঁরা নিচের লিন্ক এ গিয়ে কৌশিকী চক্রবর্তীর ভীমপলশ্রীর একটু স্বাদ নিতে পারেন।
Bhimpalasi by Kaushiki Chakraborty

ছবিঃ নেট থেকে

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.