স্থানঃ ঢাকা, বাংলাদেশ
“সুপ্রিয় দর্শকবৃন্দ, এই মুহূর্তে আমাদের মাঝে অবস্থান করছেন উপমহাদেশের বিশিষ্ট পদার্থবিদ প্রফেসর ইউসুফ শিকদার। আপনারা জানেন যে প্রফেসর ইউসুফ সম্প্রতি বিশ্ব বিজ্ঞান পরিষদ আয়োজিত ‘আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সম্মেলন’ এ ভারতীয় উপমহাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে যোগদান করেন। আমরা এখন তার সাথে এ বিষয়ে কিছু কথা বলব........”
টিভির পর্দা থেকে চোখ না সরিয়েই মিসেস ইউসুফ সখিনাকে ডাকলেন। “সখিনা.... এক কাপ চা দিয়ে যা তো”!
উপস্থাপিকা বলছে, “স্যার, কেমন আছেন?”
প্রফেসর ইউসুফ শিকদার ভরাট কণ্ঠে জবাব দিলেন, “ভাল আছি”।
“স্যার, দুদিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত এই আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সম্মেলনে আপনি ছিলেন আমাদের অঞ্চলের একমাত্র প্রতিনিধি। কেমন কাটল দিনগুলো?”
মুহূর্তে প্রফেসরের হাসি খুশি চেহারা ম্লান হয়ে গেল। গম্ভীর কণ্ঠে বললেন, “বিশ্ব বিজ্ঞান পরিষদ হচ্ছে একটা বোকার স্বর্গ। আর তাদের সম্মেলনে যতসব থার্ড ক্লাস মাথা মোটা উজবুকগুলো এসে মিলেছে । দিনগুলো মোটেও ভাল কাটেনি”।
কিন্তু উপস্থাপিকার কণ্ঠে উৎসাহের অভাব নেই, “স্যার, বিজ্ঞান সম্মেলনে আপনার উত্থাপন করা থিওরির তীব্র বিরোধিতা করেছে বিজ্ঞান পরিষদের সদস্যরা। বিশিষ্ট জনেরা বলছেন বিজ্ঞান সম্মেলনে আপনার বক্তব্য এই উপমহাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। এ সম্পর্কে আপনার মতামত কি?”
“আমার আসলে বলার কিছু নেই। শুধু বলব, আমার থিওরি ছিল খুব সাধারণ। কিন্তু এই সাধারন যুক্তি বোঝার মত মানসিকতা তাদের মাঝে আর অবশিষ্ট নেই। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আর মহাকাশ নিয়ে গবেষণা করতে করতে তারা এক একটা রোবটে পরিনত হয়েছে। চিন্তা শক্তি, বিবেক বুদ্ধি সব লোপ পেয়েছে”।
“স্যার, আপনি কি আপনার সেই থিওরিটুকু আমাদের সাথে শেয়ার করবেন?”
“হ্যা, সাধারন মানুষের সামনে এই থিওরিটুকু উপস্থাপনের জন্যই আমি এই সাক্ষাৎকারে রাজি হয়েছি”।
“বলুন স্যার”।
প্রফেসর ইউসুফ শিকদার বড় করে একটা দম নিয়ে শুরু করলেন, “প্রতিটি মানুষের মাঝে জিনগতভাবে কিছু ক্ষমতা বিদ্যমান। কিন্তু অনুশীলনের মাধ্যমে সেটা অর্জন করে নিতে হয়। একটা উদাহরন দিলে বিষয়টা পরিস্কার হবে।
মানব শিশুর হাঁটতে শেখার কথা ভাবুন। একটি সুস্থ স্বাভাবিক মানব শিশুর মাঝে হাঁটার ক্ষমতা আছে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে সে নিজ থেকে হাঁটার চেষ্টা করে, প্রথম দিকে পারেনা, হোঁচট খায়, ব্যাথা পায়, ভারসাম্য রাখতে সমস্যা হয় কিন্তু একটা সময় কিন্তু সে হাঁটতে শিখে ফেলে। আর একটা উদাহারন হতে পারে সাঁতার কাটা। প্রত্যেকটি স্বাভাবিক মানুষের মাঝে সাঁতার কাটার সহজাত ক্ষমতা বিদ্যমান। কিন্তু যে কখনো পানিতে নামেনি সে যদি হঠাৎ কোন নৌ দুর্ঘটনায় পরে যায়, তাহলে কি সে সাঁতার কেটে জীবন বাঁচাতে পারবে? অবশ্যই নয়। তাকে নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে সাঁতার কাটার ক্ষমতা আয়ত্তে আনতে হবে। সাইকেল চালানোর কথাই ধরুন। প্রতিটি স্বাভাবিক মানুষের মাঝে সাইকেল চালানোর সহজাত প্রবৃত্তি আছে। কিন্তু পর্যাপ্ত অনুশীলন ছাড়া সাইকেল চালানোর ক্ষমতা অর্জন করা সম্ভব নয়। একই ভাবে আমরা আরও অসংখ্য উদাহারন টানতে পারি। যেমনঃ ঘোড়ায় চড়া, জিমনাস্টিক, যেকোনো ক্রীড়ায় দক্ষতা অর্জন, পিস্তল চালনা ইত্যাদি। পর্যাপ্ত অনুশীলনের মাধ্যমে একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ অসংখ্য ক্ষমতা অর্জন করে নিতে পারে।
আমার গবেষণার মূল লক্ষ্য ছিল এমন কিছু ক্ষমতা খুঁজে বের করা যা মানুষের মাঝে জিনগত ভাবে আছে কিন্তু অনুশীলনের অভাবে অর্জন করে নেয়া সম্ভব হচ্ছেনা! দীর্ঘদিন এই বিষয়ের উপর কাজ করতে করতে একটা সময় আমি খুব অদ্ভুত একটা তত্ত্ব আবিস্কার করতে সমর্থ হই। মানুষের ডিএনএর মাঝে টাইমলাইন ও স্পেস ভেদ করে যাওয়ার বৈশিষ্ট্য রয়েছে! অর্থাৎ সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে অতীত অথবা ভবিষ্যৎ ভ্রমন করা সম্ভব, কিন্তু অনুশীলনের অভাবে সেই ক্ষমতা অর্জন করা সম্ভব হচ্ছেনা। এটাই হচ্ছে আমার থিওরি”।
উপস্থাপিকার পরবর্তী প্রশ্ন প্রস্তুত ছিল। “স্যার, আপনার থিওরি নিয়ে অনেকেই সমালোচনা করছেন। ল্যাটিন আমেরিকান বিজ্ঞানী ফিল কলিংস ব্যাঙ্গ করে বলেছেন, মানুষের পক্ষে হেঁটে হেঁটে চাঁদে যাওয়া সম্ভব কিন্তু অনুশীলনের অভাবে তা পারছে না”।
প্রফেসর ইউসুফ শিকদারকে কিছুটা বিচলিত মনে হল। “আমি জানি আমার কথা শুনে তার মত অনেকেই হয়ত হাসছেন, ব্যাঙ্গ বিদ্রূপ করছেন। তাদের কাছে আমি বিষয়টি বিশদ ব্যাখ্যা করেছি কিন্তু তারা যুক্তি মানতে নারাজ”।
সখিনা এসে চা দিয়ে গেল। মিসেস ইউসুফ চায়ে চুমুক দিলেন।
উপস্থাপিকা বলছে “স্যার, আমাদের উদ্দেশ্যে কি আপনি যুক্তিগুলো একটু ব্যাখ্যা করবেন?”
“অবশ্যই। এবং সে জন্যই আজ আমি মিডিয়ার সামনে উপস্থিত হয়েছি। আমি বিশ্বাস করি মানুষের পক্ষে যে ক্ষমতা অর্জন সম্ভব, সৃষ্টিকর্তা তা অনুশীলন করার সুযোগ রেখেই তাকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছে। এখন প্রশ্ন করতে পারেন মানুষের পক্ষে অতীত কিংবা ভবিষ্যৎ ভ্রমনের অনুশীলন করা সম্ভব কিনা। আমি বলব অবশ্যই সম্ভব। অন্যান্য ক্ষমতা অর্জনের অনুশীলনের সাথে এর পার্থক্য হচ্ছে- একটা নির্দিষ্ট যায়গায় অবস্থান করেই অন্যান্য ক্ষমতাগুলো অর্জনের জন্য অনুশীলন করা সম্ভব হয়। যেমন সাইকেল চালনা, সাঁতার শেখা এগুলোর জন্য নির্দিষ্ট যায়গা ছেড়ে কোথাও যেতে হয়না। কিন্তু সময়ের সাথে স্পেস খুব ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। অর্থাৎ একটি ছাড়া অপরটির ব্যবহার সম্ভব নয়। সময় ভেদ করে যেতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই স্পেস পরিবর্তন করতে হবে। ঘাবড়াবেন না। একটা উদাহারনের মাধ্যমে আমি বিষয়টা বুঝিয়ে দিচ্ছি।
এখন আমাদের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ায়। এটি জিএমটি+৬ টাইম জোনের মাঝে পরেছে। স্থানীয় সময় অনুযায়ী বাজে সন্ধ্যা ৭টা। ল্যাটিন অ্যামেরিকান বেশ কিছু দেশ জিএমটি-১০ বা জিএমটি-৯ টাইম জোনের আন্ডারে পরেছে। অর্থাৎ আমাদের থেকে প্রায় ১৫-১৬ ঘণ্টা পেছনে তাদের অবস্থান। স্থানীয় সময় অনুযায়ী কোথাও বাজে রাত ২টা কোথাও বাজে রাত ১টা। এখন আপনি যদি প্লেনে চেপে ১৫ ঘণ্টার আগেই সেখানে পৌছাতে পারেন, তাহলে সেখানকার স্থানীয় সময় অনুযায়ী আপনি আরও একবার সন্ধ্যা ৭টার সময়টা ফিরে পাচ্ছেন। অর্থাৎ দুটি যায়গায় একই সময়ে আপনি অবস্থান করার সুযোগ পেলেন। কিন্তু একই যায়গায় অবস্থানের মাধ্যমে সেটা সম্ভব নয়।
এই অনুশীলন যথেষ্ট নয়। দীর্ঘসময় ব্যাপী একটা নির্দিষ্ট সময়ে ভিন্ন ভিন্ন যায়গায় অবস্থানের দ্বারা মানুষ অতীত ও ভবিষ্যৎ ভ্রমনের ক্ষমতা অর্জন করে নিতে সক্ষম হবে”।
“স্যার, এই থিওরি কি প্রমান করে দেখানো সম্ভব?”
“সম্ভব। আমি দীর্ঘদিনের রিসার্চ থেকে বের করেছি দিনের অর্ধভাগ অর্থাৎ ১২ ঘণ্টা ধরে একটা নির্দিষ্ট রুটে ভ্রমন করলে টাইম লাইন ক্রস করা সম্ভব হবে। কিন্তু সেজন্য প্রচুর আর্থিক সাহায্য ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রয়োজন। যার কোনটাই আমি পাবনা”।
“আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?”
প্রফেসর ইউসুফ হাসলেন, “আমি বাকিটা জীবন চেষ্টা করে যাব এই থিওরি প্রমান করার। কখনো সফল হতে পারব না কিনা জানিনা। কিন্তু বেঁচে থাকতে হাল ছারব না”।
শঙ্কিত চোখে টিভি পর্দায় স্বামীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলেন মিসেস ইউসুফ শিকদার। স্বামীর গলার এই সুর তার অনেক দিনের চেনা। সমাধানে পৌঁছানোর আগে তাকে থামানো সম্ভব নয়।
****
৩রা নভেম্বর, ২০১৩
স্থানঃ চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ
জামিল সাহেব দিনের মধ্যে যে কাজটি সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দিয়ে করেন তা হচ্ছে পেপার পড়া। রিটায়ার করার পর থেকেই সকাল বেলা চায়ের কাপে চুমুকের ফাকে ঘণ্টা খানেক লাগিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পত্রিকার প্রত্যেকটা লাইন পড়া তার নিত্যদিনের রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজ পত্রিকা খুলেই তার চোখ ছানাবড়া হয়ে উঠল। প্রথম পাতাতেই বড় করে একটা নিউজ ছেপেছে। পড়তে পড়তে জামিল হায়দার চায়ের কাপে চুমুক দেয়ার কথা ভুলে গেলেন।
“বিখ্যাত মানুষের অদ্ভুত খেয়াল”
আগামীকাল বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় চলচিত্র অভিনেতা সাজিদ খান এর ৩০ তম জন্মদিন। সাজিদ খান নামটি এই উপমহাদেশে নতুন কিছু নয়। তার জন্ম ঢাকায়। ছোটবেলায় পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। অসাধারন অভিনয় প্রতিভার জোরে নিজেকে হলিউডের চলচ্চিত্রে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। অস্কার, গোল্ডেন গ্লোবের মত বড় বড় পুরস্কার সব আদায় করে নিয়েছেন খুব কম বয়সেই।
এবছর জন্মদিন পালন উপলক্ষে তার মাথায় এক অদ্ভুত খেয়াল চেপেছে। তিনি একই দিনে ১২ টি ভিন্ন যায়গায় ১২বার ১২টি কেক কেটে নিজের জন্মদিন পালন করতে চান। আর সেই ১২ বার জন্মদিন পালনের ব্যাপারটিও অদ্ভুত। স্থানীয় সময় অনুযায়ী প্রতিবার ঠিক রাত ১২ টার সময় কেক কেটে তিনি নিজের জন্মদিন পালন করবেন। তিনি যদি সফল হন তবে এটা হতে পারে একটা বিশ্বরেকর্ড। গিনেজ বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস ইতিমধ্যে তার ডাকে সাড়া দিয়ে তাকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে এসেছে। এছাড়াও অনেক কোম্পানি তাকে স্পন্সর করতে চেয়েছে। ইতিমধ্যে এক্সন মোবিল সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। স্যাটেলাইট টিভি প্রোভাইডার ডিরেক্ট টিভির কিনে নিয়েছে সমস্ত প্রোগ্রাম লাইভ দেখানোর সত্ত্ব। গ্রিনিচ মান মন্দিরের টাইমজোন অনুযায়ী সাজিদ খান একটি রুট বেছে নিয়েছেন। এই রুট ধরে চলার পথে ১২ বার তিনি থামবেন এবং জন্মদিন পালন করবেন।
চার্টার্ড প্লেন ভাড়া করা হয়েছে। এজন্য বেছে নেওয়া হয়েছে বিশ্বের অন্যতম বড় এয়ারক্র্যাফট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রিএকশন ইঞ্জিন’স এর তৈরি আধুনিক বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতি সম্পন্ন এয়ারক্র্যাফট স্কাইলন স্পেস প্লেন। এই প্লেনের গতির সাথে রকেটের গতির তুলনা চলে। প্লেনটি ৩০০ যাত্রী নিয়ে মাত্র ৪ ঘণ্টায় ইউরোপ থেকে অস্ট্রলিয়া পাড়ি জমাতে পারে। প্লেনটির চিফ ডিজাইনার অ্যালান বন্ড-এর ভাষ্যমতে প্লেনটি একটি স্ট্যান্ডার্ড রানওয়ে থেকে টেক অফ করলে ঘণ্টায় প্রায় ১৯০০০ মাইল স্পীড তুলতে সক্ষম। চলার রুটে প্রয়োজনে প্লেন বদল করতে হতে পারে তাই বিকল্প প্লেনের ব্যাবস্থা করা হচ্ছে। তবে বিকল্প প্লেনের ব্যবস্থা থাকলেও বিকল্প পাইলটের ব্যাবস্থা নেই। প্রধান পাইলট হিসেবে আছেন জন ল্যাম্পারড। তিনি এমিরেটস এয়ারলাইন কোম্পানির একজন দক্ষ ও দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ পাইলট। তার সহযোগী হিসেবে আছেন নায়ক সাজিদ খান নিজেই। উল্লেখ্য যে নায়ক সাজিদ খান চলচিত্রে অভিনয়ের আগে একজন বেসরকারি পাইলট ছিলেন। সাজিদ খান, তার স্ত্রী সুচিত্রা, পাইলট জোন এবং দুজন এয়ার হোস্টেস সহ মোট ৫ জন আরোহী নিয়ে প্লেনটি আকাশে উঠবে। একদিনের জন্য এই প্লেন ভাড়া করতে কি পরিমান অর্থ খরচ করতে হচ্ছে সাজিদ খানকে, এই প্রসঙ্গে সঠিক তথ্য জানা যায়নি, তবে সেটা কোটির ওপরে সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। গোপন সুত্রে প্রকাশ, অ্যামাউন্টটি নয় অংকের! সম্ভাব্য অবস্থানের জন্য দেশগুলোর সরকার এবং তাদের বিমানবন্দর কতৃপক্ষের সাথে ইতিমধ্যে যোগাযোগ করা হয়েছে। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করার জন্য প্রায় ১০ মিলিয়ন ডলার খরচ হবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। আগামীকাল ঢাকার হযরত শাহজালাল রহঃ আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে সাজিদ খান শুরু করবেন এই পথ চলা। সে যাত্রা শেষ হবে যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে গিয়ে। সম্ভাব্য যে টাইমজোন ও দেশগুলোতে তারা থামবেন জন্মদিন পালনের জন্য তা নিচে উল্লেখ করা হলঃ
১. বাংলাদেশ সময়ঃ রাত ১২টা।
স্থানীয় সময়ঃ রাত ১২টা
আন্তর্জাতিক সময়ঃ +০৬.০০
সম্ভাব্য অবস্থানঃ বাংলাদেশ
বিকল্প অবস্থানঃ নেই
২. বাংলাদেশ সময়ঃ রাত ১টা
স্থানীয় সময়ঃ রাত ১২টা
আন্তর্জাতিক সময়ঃ +০৫.০০
সম্ভাব্য অবস্থানঃ মালদ্বীপ
বিকল্প অবস্থানঃ উজবেকিস্তান, পাকিস্তান
৩. বাংলাদেশ সময়ঃ রাত ২টা
স্থানীয় সময়ঃ রাত ১২টা
আন্তর্জাতিক সময়ঃ +০৪.০০
সম্ভাব্য অবস্থানঃ ওমান
বিকল্প অবস্থানঃ আজারবাইজান, আর্মেনিয়া, আরব আমিরাত
৪. বাংলাদেশ সময়ঃ রাত ৩টা
স্থানীয় সময়ঃ রাত ১২টা
আন্তর্জাতিক সময়ঃ +০৩.০০
সম্ভাব্য অবস্থানঃ জর্ডান
বিকল্প অবস্থানঃ বেলারুশ, ইরিত্রিয়া, সৌদি আরব
৫. বাংলাদেশ সময়ঃ রাত ৪টা
স্থানীয় সময়ঃ রাত ১২টা
আন্তর্জাতিক সময়ঃ +০২.০০
সম্ভাব্য অবস্থানঃ মিশর
বিকল্প অবস্থানঃ দক্ষিণ আফ্রিকা, মোজাম্বিক, জিম্বাবুয়ে
৬. বাংলাদেশ সময়ঃ ভোর ৫টা
স্থানীয় সময়ঃ রাত ১২টা
আন্তর্জাতিক সময়ঃ +০১.০০
সম্ভাব্য অবস্থানঃ আলজেরিয়া
বিকল্প অবস্থানঃ নাইজেরিয়া, ক্যামেরুন, তিউনিশিয়া
৭. বাংলাদেশ সময়ঃ ভোর ৬টা
স্থানীয় সময়ঃ রাত ১২টা
আন্তর্জাতিক সময়ঃ +০০.০০
সম্ভাব্য অবস্থানঃ আইভরি কোস্ট
বিকল্প অবস্থানঃ ঘানা, আইসল্যান্ড
৮. বাংলাদেশ সময়ঃ সকাল ৭টা
স্থানীয় সময়ঃ রাত ১২টা
আন্তর্জাতিক সময়ঃ -০১.০০
সম্ভাব্য অবস্থানঃ কেপভার্দ
বিকল্প অবস্থানঃ নেই
৯. বাংলাদেশ সময়ঃ সকাল ১০টা
স্থানীয় সময়ঃ রাত ১২টা
আন্তর্জাতিক সময়ঃ -০৪.০০
সম্ভাব্য অবস্থানঃ বলিভিয়া
বিকল্প অবস্থানঃ চিলি, ত্রিনিদাদ এন্ড টোব্যাকো
১০. বাংলাদেশ সময়ঃ সকাল ১১টা
স্থানীয় সময়ঃ রাত ১২টা
আন্তর্জাতিক সময়ঃ -০৫.০০
সম্ভাব্য অবস্থানঃ পেরু
বিকল্প অবস্থানঃ কিউবা, জ্যামাইকা
১১. বাংলাদেশ সময়ঃ দুপুর ১২টা
স্থানীয় সময়ঃ রাত ১২টা
আন্তর্জাতিক সময়ঃ -০৬.০০
সম্ভাব্য অবস্থানঃ কোস্টারিকা
বিকল্প অবস্থানঃ এল সালভাদর, মেক্সিকো
১২. বাংলাদেশ সময়ঃ বিকেল ৪টা
স্থানীয় সময়ঃ রাত ১২টা
আন্তর্জাতিক সময়ঃ -১০.০০
সম্ভাব্য অবস্থানঃ হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ
বিকল্প অবস্থানঃ নেই
লক্ষ করলে দেখবেন বিভিন্ন টাইমজোন পাড়ি দেয়ার ফাকে সাজিদ খান সুকৌশলে ইউরোপিয়ান দেশ গুলোকে এড়িয়ে গেছেন। অনেকে বলছেন ইউরোপে সাজিদ খানের জনপ্রিয়তা না থাকা এর প্রধান কারন। আবার অনেকেই বলছেন ইউরোপ হয়ে যাওয়াটা খুব বেশি ব্যায়বহুল হতে পারে তাই খরচ কমাতে এই ব্যাবস্থা। তবে সাজিদ খান বলেছেন, “যেভাবে সুবিধা হয়, কম ভ্রমনে লক্ষে পৌঁছানো যায় সেভাবেই প্লান করা হয়েছে। ইউরোপ- আফ্রিকা কোন সমস্যা নয়”। এদিকে এমন ইচ্ছা হওয়ার কারন জিজ্ঞেস করলে সাজিদ খান বলেন, “তেমন কোন কারন নেই। আমার স্বভাবটাই এমন একটু পাগলাটে। বিয়ের পর এই প্রথম জন্মদিন আমার। চেয়েছিলাম এবার এমন কিছু করতে যেন পৃথিবীবাসী অনেক দিন তা মনে রাখতে পারে”। “কিন্তু ১২ বারই কেন? কম বেশি নয় কেন?” এমন প্রশ্নের জবাবে সাজিদ খান বলেন, “আমি জন্মভূমি বাংলাদেশ থেকে শুরু করে বর্তমান আবাস স্থল হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে গিয়ে এই ভ্রমন শেষ করতে চাই। হিসেব করে দেখেছি এর মধ্যে ১২বার জন্মদিন পালন সম্ভব, তাই ১২ বার ঠিক করেছি। এছাড়া বিশেষ কোন কারন নেই”।
এদিকে সমালোচকরা বলছেন অদ্ভুত খেয়ালের বসে এত টাকা খরচ না করে সাজিদ খান এই টাকা দিয়ে খুব সহজেই ভাগ্যবঞ্চিত অসহায় দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারতেন। সেটাও পৃথিবীবাসী অনেকদিন মনে রাখার মত একটা কাজ হত।
***
তারিখঃ ৪ঠা নভেম্বর, ২০১৩
স্থানঃ কলকাতা, ভারত
মোবাইল থেকে ফেসবুকে চ্যাট করছিল দীপা। হঠাৎ মৌরির ফোন আসায় বিরক্ত হল। কল রিসিভ করে বলল, “কি ব্যাপার?”
“কি করছিস?”
“সুজয়ের সাথে চ্যাট করছিলাম। তুই কল দিয়ে তো দিলি ভেজাল করে”। বিরক্তি প্রকাশ পেল দীপার কণ্ঠে।
“আরে রাখ তোর সুজয়”। ওপাশ থেকে মৌরির গলায় উত্তেজনা টের পাওয়া গেল। “ভুলে গেছিস আজ যে সাজিদ খানের জন্মদিন”।
“ওহ মাই গড!!” চেঁচিয়ে উঠল দীপা।
“আমি জানতাম তুই ভুলে যাবি। এক্ষুনি টিভি অন কর। কেক কাটা হয়ে গেছে!”
দীপা দৌড়ে গেল ড্রয়িং রুমে। দেখল ছোটভাই অমিত আগে থেকেই টিভি ছেড়ে বসে আছে। সে রাগে ভ্রু কুচকাল, “কিরে তুই একা একাই দেখছিস আমাকে ডাকিস নি কেন?”
অমিত কিছু বলল না। সে টিভি দেখায় ব্যস্ত।
দীপা ধপ করে সোফায় বসে পরল। কেক কাটা পর্ব শেষ। এখন নায়ক সাজিদ খান তার স্ত্রী সুচিত্রাকে কেক খাওয়াচ্ছে। উপস্থাপক বলছে, “আমরা দেখতে পাচ্ছি এবার সাজিদ খান তার স্ত্রী সুচিত্রাকে কেক খাওয়াচ্ছে। আসেপাশের মানুষের বিপুল করতালি আপনার শুনতে পাচ্ছেন”।
দীপা মনে মনে বলল, “অমন সুদর্শন একটা মানুষ কীভাবে এমন বোয়াল মাছের মত মুখওয়ালা মেয়েকে বিয়ে করল?”
উপস্থাপক বললেন, “এবার আমরা সাজিদ খানের সাথে দুই একটা কথা বলল, স্যার, প্রথম জন্মদিন তো পালিত হয়ে গেল। আপনার অনুভুতি কি?”
উপস্থাপক মাইকটা সাজিদ খানের দিকে বাড়িয়ে ধরলেন। সাজিদ খানের ভরাট কণ্ঠস্বর শুনে দীপা শিউড়ে উঠল, “অনুভুতির কথা তো অল্প কথায় বলে শেষ করা যাবেনা। কিন্তু আপনারা জানেন আমাদের হাতে সময় খুব কম। মাত্র ১ ঘন্টার মধ্যে মালদ্বীপ পৌঁছুতে হবে। সংক্ষেপে শুধু এত টুকুই বলব, আমি খুব এক্সাইটেড। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। ইনশাল্লাহ, আপনাদের শুভকামনা পাশে থাকলে আমি এই কাজে সফল হতে পারব। ধন্যবাদ”।
উপস্থাপক এবার মাইক ধরলেন সুচিত্রার দিকে, “আপনার অনুভুতি কি সুচিত্রা?”
“আমি খুব খুব খুব এক্সাইটেড। নেক্সট জার্নি মালদ্বীপ। আমি আগে কখনো মালদ্বীপ যাইনি। আই হোপ উই উইল বি এবল টু মেইক ইট ইন ওয়ান আওয়ার”।
দীপা আনমনে গুজুর গুজুর করছে, “উহ! ইংরেজি মারছে! বেটি তোর কণ্ঠ হচ্ছে ফ্যাসফেসে, তোর তো কথা বলাই উচিত না!”
টিভিতে উপস্থাপক বলছেন, “এখানেই শেষ হল সাজিদ খানের প্রথম জন্মদিন পালন। এখন স্কাইলন প্লেনে চেপে মালদ্বীপ যাবেন সাজিদ খান এবং তার স্ত্রী। হাতে সময় আছে এক ঘন্টা অর্থাৎ আর ঠিক এক ঘন্টা বাদে মালদ্বীপের স্থানীয় সময় অনুযায়ী ১২টা বাজবে। এর আগেই সেখানে পৌঁছুতে হবে সাজিদ খানকে, এজন্য পাড়ি দিতে হবে ১৪৭৭.০১ মাইল পথ। কোথাও যাবেন না। আমাদের সাথেই থাকুন। ঠিক একঘন্টা পরে আপনাদের সাথে দেখা হবে মালদ্বীপের রাজধানী মালের হুলহুলে উপদ্বীপে অবস্থিত ইব্রাহিম নাসির ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে.........”
দীপা ব্যাস্ত হয়ে পড়ল ফেসবুকে সাজিদ খানকে নিয়ে স্ট্যাটাস দিতে।
***
৪ঠা নভেম্বর ২০১৩
স্থানঃ মানামা, বাহরাইন।
ঠাস করে টিভি সেটটা বন্ধ হয়ে গেল। লোড শেডিং হয়েছে সেটা বুঝতে দু সেকেন্ড সময় লাগল হাবীবের। এই মধ্যরাতে লোড শেডিং! মেজাজ সপ্তমে চড়ল তার। এখন উপায় কি? জলদি মোবাইলে এয়ারফোন কানেক্ট করে এফএম রেডিও অন করল সে। যাক বাঁচা গেল! রেডিওতেও সাজিদ খানের জন্মদিন পালনের বর্ণনা দিচ্ছে।
“...লিসেনারস, আমরা এখন আছি মিশরের নীলনদের তীরে। এখানেই ৫ম বারের মত কেক কেটে জন্মদিন পালন করতে চলেছেন সাজিদ খান। আপনার নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছেন এই ভেবে বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, ওমান, জর্ডানের মত কেন মিশরেও এয়ারপোর্টে জন্মদিন পালন করছেন না সাজিদ খান। কারনটি হচ্ছে জর্ডানের রাজধানী আম্মানের রানী আলিয়া বিমানবন্দর থেকে কায়রো ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের দূরত্ব মাত্র ৩০৮ মাইল। মাত্র ১৮ মিনিটে পৌঁছে গেছে স্কাইলন প্লেন। হাতে যথেষ্ট সময় থাকায় কায়রো থেকে একটি হেলিকপ্টারে চেপে স্ত্রী সুচিত্রাকে নিয়ে নীলনদের তীরে এসেছেন সাজিদ খান।
এইমাত্র স্থানীয় সময় অনুযায়ী রাত ১২টা বেজেছে, সাজিদ খান কেক কাটছেন। তাকে ঘিরে দাড়িয়ে আছেন অগনিত ভক্তরা। সমস্ত নদীর তীর আলোয় উদ্ভাসিত। মিশরের নীল নদ যেন আজ অন্যরকম এক মাত্রা পেল! সেই সাথে বোনা হল আরও একটা ইতিহাসের বীজ। আমরা দেখতে পাচ্ছি সাজিদ খান তার স্ত্রী সুচিত্রাকে কেক খাইয়ে দিচ্ছেন... চারিদিকে তুমুল করতালি... এবার সুচিত্রা সাজিদ খানকে কেক খাওয়াচ্ছেন... এবং এরই সাথে শেষ হল আরও একটি জন্মদিন পালন। এখন হেলিকপ্টারের করে সাজিদ খান ফিরে যাবেন কায়রো বিমানবন্দরে।
লিসেনারস, আপনারা জানেন জর্ডানে ল্যান্ড করার সময় স্কাইলন প্লেনটি রানওয়ে থেকে কিছুটা ছিটকে গিয়েছিল। ল্যান্ডিং পারফেক্ট না হওয়ায় বিমানে সামান্য ত্রুটি ধরা পরেছে। ইতিমধ্যে বিকল্প প্লেনের কথা চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে। সম্ভবত কেপভার্দ যাওয়ার পর প্লেনটি পরিবর্তন করা হবে। আপাতত পরবর্তী গন্তব্য নাইজেরিয়া। লিবিয়ার আকাশপথ ব্যবহার করতে লিবিয়ান সরকার আপত্তি করায় আলজেরিয়ার পরিবর্তে শেষ মুহূর্তে নাইজেরিয়া যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন সাজিদ খান। মিশর থেকে নাইজেরিয়া প্রায় ১৮৯৭.৫৩ মাইল দূর। প্রচণ্ড গতিতে এগোতে না পারলে একঘণ্টায় সেখানে পৌঁছুনে সম্ভব হবেনা। তাই বলা যায় সাজিদ খান এই প্রথম একটি সত্যিকারের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে চলেছেন”।
কান থেকে এয়ার ফোন খুলল হাবীব। “শিট!! টিভিতে দেখতে পারলে ভাল লাগত! লোডশেডিংয়ের জ্বালায় লাইফটাই হেল হয়ে গেল। সাজিদ খানকে না হোক, অন্তত তার রূপসী স্ত্রী সুচিত্রার মুখটা এক নজর দেখতে পারলেও শান্তি পেতাম”!
***
৪ঠা নভেম্বর ২০১৩
স্থানঃ নাইরোবি,কেনিয়া।
ভোরবেলা স্বামীকে বিছানায় না দেখে অবাক হলনা সাচিনি। ড্রয়িং রুম থেকে টিভির আওয়াজ আসছে। সে উঠে এল।“কি ব্যাপার স্টিভ? এই ভোর বেলা আবার টিভির সামনে এসে বসে আছো! এমনিতে সারারাত ঘুমাওনি! আজ আর অফিসে যাওয়া লাগবে না!”
ঘাড় ঘুরিয়ে স্ত্রীর দিকে তাকাল স্টিভ, মুখে হাসি। “এমন দিন তো বার বার আসবে না। আজ না হয় না গেলাম অফিসে”।
“অফিস থেকে ফোন করলে কি বলবে?”
“বানিয়ে বানিয়ে কিছু একটা বলে দেব। এখন এস আমরা সাজিদ খানের জন্মদিন পালন দেখি”।
সাচিনি স্বামীর পাশে বসতে বসতে বলল, “কি অবস্থা? এখন কোথায় আছে সাজিদ খান?”
“সেটাই তো বুঝতে পারছি না। যাওয়ার কথা ছিল আলজেরিয়া, পরে বলা হল যাবে নাইজেরিয়া, এখন আবার দেখি আলজেরিয়ায় ল্যান্ড করেছে! এই মাত্র কেক কেটে আবার টেক অফ করেছে”।
দুজনের দুজোড়া চোখ টিভির মনিটরে নিবদ্ধ হল।
“.... এই মাত্র সঠিক খবর আমাদের হাতে এসেছে। প্লেনটি মিশর থেকে টেক অফ করার পর প্লেনের ইতিমধ্যে ধরা পরা ত্রুটিটি বড় আকার ধারন করে। পাইলট জন সাজিদ খানকে জানান নাইজেরিয়া গিয়ে প্লেন পরিবর্তন করতে হবে। ত্রুটি পূর্ণ এই প্লেন নিয়ে আর টেক অফ করা সম্ভব হবেনা। নাইজেরিয়ায় কোন স্কাইলন প্লেন নেই। নিকটবর্তি ইউরোপিয়ান দেশ স্পেনেই শুধু ব্যাকআপ প্লেন রেডি ছিল। সেখান থেকে নাইজেরিয়া প্রায় ২৩০১ মাইল দূরবর্তী। এক ঘণ্টায় স্পেন থেকে নাইজেরিয়া পৌঁছুনো সম্ভব নাও হতে পারে তাই পূর্বের গন্তব্য আলজেরিয়ায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন সাজিদ খান। এদিকে প্রধান স্পন্সর কোম্পানি এক্সন মোবিলের বিশেষ অনুরোধে লিবিয়ান সরকার সাজিদ খানকে লিবিয়ার আকাশ ব্যবহারের অনুমতি দেয়। ১২টা বাজতে কেবল ২মিনিট বাকি থাকতে সাজিদ খান প্লেন নিয়ে আলজেরিয়ার আন্নাবা সিটির রাবাহ বিতাত এয়ারপোর্টে পৌঁছান। হাতে সময় কম থাকায় কেক কেটেই আবার পরবর্তী গন্তব্য আইভরি কোস্টের আবিদজান শহরের পোর্ট বুয়েত এয়ারপোর্ট এর দিকে রওনা হয়েছেন, আলজেরিয়া থেকে যার দূরত্ব প্রায় ১৫৭৩.৮৭ মাইল। যাত্রা পথে এই প্রথম সাজিদ খানকে একটা বড় ধরনের বিপত্তির মোকাবেলা করতে হয়েছে। তবে আরও একটি বিপত্তি ঘটতে পারে আবিদজান থেকে কেপভার্দ যাওয়ার সময়। কারন এই স্থানের কোন বিকল্প ঠিক করে রাখেন নি সাজিদ খান..........”
***
৪ঠা নভেম্বর, ২০১৩
স্থানঃ কিয়েভকা, কাজাকাস্তান
আহমেদ মাসউদ মসজিদ থেকে ফজরের নামাজ শেষে বাড়ি ফিরেই দেখেন দরজার সামনে পত্রিকা পরে আছে। আজ দেখি সকাল সকাল হকার পত্রিকা দিয়ে গেল। কোন কোন দিন তো ৮টা -৯টা বেজে যায় জমিদার মশাইয়ের।
পত্রিকা হাতে নিতেই মেজাজ গরম হয়ে গেল তার। প্রথম পাতা জুড়ে সাজিদ খানের জন্মদিন পালনের কাহিনি ছাড়া কিছু নেই। ইচ্ছে হচ্ছে পত্রিকাটা নর্দমায় ফেলে দিতে। কয়েকদিন যাবত এই ফালতু কর্মকাণ্ডের বর্ণনা ছাড়া পত্রিকাতে আর কিছু ছাপছেই না। যেখানে যাও শুধু সাজিদ খান সাজিদ খান!
আহমেদ মসউদের ছোটমেয়ে শবনম কখন যেন পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে। পেছন থেকে সে বলল, “আব্বা, আপনি কি আজ পেপারটা একটু পরে পড়বেন? খুব ইম্পরট্যান্ট খবর ছেপেছে তো, তাই!”
আহমেদ মাসউদ মনে মনে বললেন, “কি তোমার ইম্পরট্যান্ট খবর তা তো আমি জানিই! এই সাজিদ খানকে নিয়ে উঠতি বয়সি মেয়ে গুলো কি পেয়েছে কে জানে! বিবাহিত একটা পুরুষের প্রতি তাদের এত আকর্ষণ কেন?” কিন্তু মুখে হাসি ধরে রেখে বললেন, “ঠিক আছে, শবনম। আজ তুমি আগে পড়!”
পত্রিকা হাতে নিয়ে শবনম প্রায় দৌড়ে নিজের রুমে এসে দরজা আটকে দিল। বিছানায় আধশোয়া হয়ে পত্রিকা মেলল। পাতায় পাতায় শুধু কেক কাটা আর জন্মদিন পালনের ছবি। কেপভার্দ পর্যন্ত সব রাত জেগে দেখা হয়ে গেছে তার। লেটেস্ট খবর জানা নেই। কেপভার্দ থেকে বলিভিয়া যাওয়ার পথে কিছু সমস্যা হয়েছে জানা গেছে। তাই ৯ম জন্মদিন পালনের অনুষ্ঠান লাইভ দেখানো হয়নি। একটু খুঁজতেই খরবরটা খুজে পেল শবনম।
“বলিভিয়ার বদলে চিলিতে পালিত হল ৯ম জন্মদিন”
কেপভার্দ থেকে বলিভিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করার পূর্বেই সাজিদ খান জানতে পারেন বলিভিয়ান প্রেসিডেন্ট জোয়ান ইভো মোরালেস আইমা ঘোষণা দিয়েছেন তাকে বলিভিয়াতে ল্যান্ড করতে দেওয়া হবেনা। কেপভার্দ থেকে বলিভিয়া ৩৪৮৯.২৮ মাইল দূরে অবস্থিত। হাতে তিন ঘন্টা নিয়ে এই দূরত্ব অতিক্রম করা সম্ভব ছিল। সম্ভাব্য বিকল্প অবস্থান হতে পারত ত্রিনিদাদ এন্ড টোব্যাকো। কিন্তু সেখান থেকে পরবর্তী গন্তব্য পেরুর পথে যাত্রার সু ব্যাবস্থা নেই। তাই সবচেয়ে দীর্ঘযাত্রা পথ চিলিকে বেছে নেওয়া হয় পরবর্তী জন্মদিন পালনের জন্য। উল্লেখ্য যে কেপভার্দ থেকে চিলি প্রায় ৪৭০৯.৪৮ মাইল দূরে অবস্থিত। এদিকে কেপভার্দ এর আশেপাশের সামুদ্রিক অঞ্চলে নিন্ম চাপের কারনে প্রতিকুল পরিবেশ সৃষ্টি হয়। দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগর উত্তাল হয়ে ওঠে। তাই এয়ারপোর্ট অথোরিটি স্কাইলনকে টেক অফ করতে নিষেধ করে। প্রতিকুল আবহাওয়ায় এতটা পথ তিন ঘণ্টায় পাড়ি দেওয়া ছিল প্রায় অসম্ভব কাজ। কিন্তু পাইলট জন ল্যাম্পারড তার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সময় মত চিলিতে পৌঁছায়। পথে অবশ্য ব্রাজিলে থামতে হয়েছে রিফুয়েলিং এর জন্য। পরবর্তী গন্তব্য পেরু প্রায় ১৮৪৫.০৪ মাইল দূরে। এক ঘণ্টায় সেখানে পৌঁছুনো আরও একটা চ্যালেঞ্জ তাই বেশি দেরি না করে দ্রুত টেক অফ করেন পাইলট জন।
আর একটা খবরে শবনবের দৃষ্টি আটকে গেল।
“বলিভিয়ায় প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ”
বলিভিয়ান সরকার প্রাথমিক অবস্থায় সাজিদ খানের বলিভিয়াতে জন্মদিন পালনকে স্বাগত জানায়। কিন্তু শেষ মুহূর্তে দেশটির কংগ্রেস পার্টি প্রধান এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট জোয়ান ইভো মোরালেস আইমার আপত্তির কারনে সাজিদ খানকে দেওয়া বলিভিয়াতে ল্যান্ড করার অনুমতি ফিরিয়ে নেওয়া হয়। প্রেসিডেন্ট বলেছেন বলিভিয়া ইতিহাসের কোন কৌতুকপূর্ণ অধ্যায়ের অংশ হয়ে থাকতে চায়না। কিন্তু দেশটির যুব সম্প্রদায়ের জনসাধারণ এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে প্রেসিডেন্সিয়াল রেসিডেন্টের সামনে নানা রকমের ব্যানার ও পোস্টার নিয়ে বিক্ষোভ করে। এসময় পুলিশের জল কামান নিক্ষেপ ও লাঠি চার্জে বেশ কিছু বিক্ষোভকারি আহত হয়। ধারনা করা হচ্ছে এই সিদ্ধান্ত আসন্ন নির্বাচনে কংগ্রেস পার্টির গ্রহন যোগ্যতা কমিয়ে দেবে বহুলাংশে।
***
৪ঠা নভেম্বর, ২০১৩
বেকারস ফিল্ড, ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্য, ইউএসএ।
“ওহ কেভিন, তোমার জন্যই দেরি হয়ে গেল”। দরজা খুলতে খুলতে বলল সিমি।
“শুধু আমাকে দোষ দিয়ে লাভ নেই সিমি। তুমিই তো বললে আঙ্কেল ফিলিপ অনেক অসুস্থ, একবার দেখে না আসলে খারাপ দেখায় খুব। তাই তো যাওয়া হল”।
সিমি ততক্ষনে ভেতরে ঢুকে লাইট জ্বালাল, “কিন্তু আমি তো বলেছিলাম তোমার বাইকটা নেয়ার জন্য। তুমি বললে বাসে যাবে। রোজডেলের দিকে বাস সার্ভিসের বাজে অবস্থা সেটা তো জানতেই”।
“কিন্তু তুমি তো জানতে সাজিদ খান কোস্টারিকার বদলে সরাসরি ক্যালিফোর্নিয়ার আসছে ১১তম জন্মদিন পালনের উদ্দেশ্যে। আমরা তো বাড়িতে না ফিরে সরাসরি এয়ারপোর্টের দিকে চলে যেতে পারতাম”।
সিমি রিমোট টিপে টিভি অন করতে করতে বলল, “ছাই পারতাম! এখন সেখানে যে ভিড় হয়েছে তোমার ধারনা আছে কোন? আগে আগে যেতে পারলে হত। এখন আর একনজর দেখতে পাওয়া যায় কিনা সন্দেহ। তারচেয়ে টিভিতেই দেখি”।
টিভি অন হতেই রিপোর্টারের কথা শোনা গেল। “...... ক্যালিফোর্নিয়া বাসী ভাবতেও পারেনি সাজিদ খানের ১১তম জন্মদিনের সাক্ষী হয়ে থাকবে তারা। সাজিদ খানের যাওয়ার রুটে ক্যালিফোর্নিয়া আসার কোন প্লান ছিলনা। পেরু থেকে কোস্টারিকার উদ্দেশ্যে উড্ডয়নের পর জানা যায় কোস্টারিকায় যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছে। সাম্প্রতিক সময়ে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কোস্টারিকা ভ্রমন ও কোস্টারিকা সম্বন্ধীয় কিছু বৈদেশিক চুক্তির স্বাক্ষরের বিরুদ্ধে এই বিক্ষোভ। বিক্ষোভকারীদের দাবী মেনে রাজধানী স্যান জোসের দুটি এয়ারপোর্ট থেকেই যুক্তরাষ্ট্র গামী এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে আগত সকল ফ্লাইট স্থগিত করা হয়েছে। এই অবস্থায় কোস্টারিকায় ল্যান্ড করাটা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। এদিকে পেরু থেকে টেক অফ করার আগেই খবর পাওয়া যায় হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের কাছাকাছি সমুদ্রে নিন্ম চাপ থেকে প্রচণ্ড সামুদ্রিক ঝড়ের সৃষ্টি হয়েছে, হাওয়াইয়ের দিকে ধেয়ে আসছে সাইক্লোন। তাই সময়ের আগে থাকার জন্য সমগ্র মেক্সিকো পাড়ি দিয়ে সাজিদ খান ল্যান্ড করেছেন ক্যালিফোর্নিয়ায়। ৪২৮৯.৪৯ মাইল পথ পাড়ি দিতে সাজিদ খানের প্লেন মেক্সিকো সিটিতে একবার অল্প সময়ের জন্য নেমেছিল রিফুয়েলিং করতে। ক্যালিফোর্নিয়া কোস্টারিকার তুলনায় টাইম জোন অনুযায়ী দুই ঘণ্টা পিছিয়ে আছে, তাই এখান থেকে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে যাওয়ার জন্য হাতে এখনও দু ঘণ্টা সময় রয়েছে। দূরত্ব ২৪৭১.৩৭ মাইল। আমরা এখন চলে যাব বেকারস ফিল্ড এয়ারপোর্টের লাউঞ্জে। সেখানে আমাদের প্রতিনিধি হ্যারিস আছেন সাজিদ খানের সাথে”।
লাউঞ্জে রিপোর্টার হ্যারিস শুরু করলেন, “ভিউয়ারস, আমরা এখন আছি বেকারস ফিল্ড এয়ারপোর্টের লাউঞ্জে। আর কিছুক্ষন পর ক্যালিফোর্নিয়ার সময় অনুযায়ী বাজবে রাত ১২টা। সাথে সাথে কেক কেটে ১১তম বারের মত জন্মদিন পালন করবেন সাজিদ খান।
কিন্তু দর্শক, আপনারা দেখতে পাচ্ছেন লাউঞ্জ জুড়ে সবার মাঝেই একটা মনমরা ভাব। সাজিদ খান নিজেও এখন আর হাসছেন না। দীর্ঘ সময়ের জার্নির কারনে তিনি এবং পাইলট জন ল্যাম্পারড দুজনেই ক্লান্ত। তবে মন খারাপের কারন ক্লান্তি নয়। মন খারাপের কারন হচ্ছে দুটো। প্রথম কারনটি আপনারা ইতিমধ্যে জেনেছেন। সাজিদ খানের স্ত্রী সুচিত্রা পেরুতে পৌঁছানোর পর খুব বেশি অসুস্থ হয়ে পরেন। তাই তার পক্ষে আর ক্যালিফোর্নিয়া আসা সম্ভব হয়নি। তিনি পেরুর লিমা অঞ্চলের ন্যাশনাল হসপিটাল দেল সুরে ভর্তি আছেন। একটু সুস্থ হলে পরবর্তীতে অন্য প্লেনে চেপে তিনি হাওয়াইতে ফেরত আসবেন সাজিদ খানের সাথে যোগ দিতে। এবার আসি ২য় কারনটির প্রসঙ্গে। আপনারা জানেন ইতিমধ্যে হাওয়াই দ্বীপ পুঞ্জে সর্বোচ্চ বিপদ সংকেত জারি করা হয়েছে। সামুদ্রিক ঝড় উঠেছে নর্থ প্যাসিফিক সমুদ্রে। সাইক্লোন ধেয়ে আসছে ক্রমশ। ঝড় না থামা পর্যন্ত হাওয়াইকে নো ফ্লাই জোন হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে এবং সকল ফ্লাইট স্থগিত করা হয়েছে। তবে কি শেষে এসে সমস্ত পরিকল্পনা ভেস্তে যাবে? সময় পারবে এর জবাব দিতে......”
***
৪ঠা নভেম্বর ২০১৩
স্থানঃ ঢাকা, বাংলাদেশ।
কাজের ছেলেটা প্রায় দৌড়ে এসে বলল, “আম্মাজান খবর শুনছেন নি?”
“কি খবর?”
“ভাইজানের প্লেন নাকি আকাশ থেকে হারায় গেছে!”
“বলিস কি?” বৃদ্ধা আতকে উঠলেন। “আমি তো শুনলাম যাওয়া বাতিল হয়ে গেছে সমুদ্রে ঝড়ের কারনে”।
“আমিও কিছু বুঝিনাই আম্মা। টিভিতে দেখাইতেছে, জলদি ছাড়েন টিভিটা”।
জলদি ছাড়েন বললেই তো ছাড়া যায়না। বৃদ্ধার শরিরে এখন আর আগের মত জোর নেই। সোফার উপর পরে থাকা রিমোটটা দেখিয়ে দিয়ে বললেন, “ঐযে রিমোট, ছাড় তুই”।
কাজের ছেলেটার তোর সইছে না। দু সেকেন্ড লাগল না টিভি অন হতে।
“...আমরা এখন অবস্থান করছি হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের হ্যানা সিটির হ্যানা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে। স্থানীয় সময় অনুযায়ী এখন বাজে রাত ১১টা ৫০ মিনিট। এই মুহূর্তে অগনিত মানুষ দাড়িয়ে আছে এয়ার পোর্টের আসে পাশে। সবার লক্ষ একটাই- একটি ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকা। অথচ কিচ্ছুক্ষন আগের কথা ভাবলে এখনও অনেকেই শিউরে উঠবেন। সর্বোচ্চ বিপদ সংকেতের ঘোষণা দেওয়ায় সমস্ত দ্বীপজুড়ে প্রচণ্ড আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু মিনিট দশেক আগে উত্তর মহাসাগরে সৃষ্টি হওয়া নিন্মচাপটি দিক পরিবর্তন করে আলাস্কার দিকে ঘুরে গেলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার অবকাশ পায়। এখানেই সর্বশেষবারের মত জন্মদিন পালন করার কথা ছিল নায়ক সাজিদ খানের। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাতে হচ্ছে যে এখন পর্যন্ত এয়ার পোর্ট অথোরিটি নায়ক সাজিদ খানের সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি। রাডারে প্লেনের কোন অস্তিত্ব ধরা পরছেনা। ধারনা করা হচ্ছে প্লেনটি যেন অতল গহ্বরে হারিয়ে গেছে। আমরা এখন ফিরে যাচ্ছি ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের বেকারসফিল্ড সিটির মিডোস এয়ারপোর্টে আমাদের প্রতিনিধির কাছে চলুন জেনে আসি আসলে কি ঘটেছিল সেখানে”।
রিপোর্টার হ্যারিসকে দেখা গেল টিভি পর্দায়, “ভিউয়ারস, আমি এখন দাড়িয়ে আছি বেকারসফিল্ড সিটির মিডোস এয়ারপোর্টের লাউঞ্জে। আমার সাথে আছেন স্কাইলন এয়ারক্র্যাফটের পাইলট জন ল্যাম্পারড। তিনি প্লেনটি নিয়ে বেকারসফিল্ডে পৌঁছানোর পর পরই আমরা হাওয়াইতে সম্ভাব্য সাইক্লোনের খবর জানতে পারি। তাই খুব দ্রুত ক্যালিফোর্নিয়ায় জন্মদিন পালন শেষে পাইলট জন, নায়ক সাজিদ খান, গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড প্রতিনিধি, স্যাটেলাইট টিভি প্রোভাইডার ডিরেক্ট টিভির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও প্রধান স্পন্সর এক্সন মোবাইল কোম্পানির প্রতিনিধির মাঝে একটা মিটিং হয়। আমরা এখন জনের মুখ থেকেই শুনব ঠিক কি বিষয়ে সেই মিটিং হয় এবং কি ঘটেছিল মিটিং এর পর।
পাইলট জন একটু কেশে গলা পরিস্কার করে নিলেন যেন ভাষণ দিতে প্রস্তুতি হচ্ছে! “আমরা মিটিংয়ে হাওয়াইয়ের বদলে বিকল্প স্থান নির্বাচনের চেষ্টা করছিলাম। সম্ভাব্য বিকল্প হতে পারত ফিজি দ্বীপপুঞ্জ। কিন্তু ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ফিজি প্রায় ৮৮৮০.৫৪ মাইল দূর। এতটা পথ অতিক্রমে অন্তত একবার রিফুয়েলিং প্রয়োজন হতে পারে। সেজন্য পথে কিরিবাতি দ্বীপ থেকে রিফুলেলিং করা যেত। কিন্তু সাইক্লোনের আওতার মাঝে কিরিবাতি দ্বীপপুঞ্জ ছিল। তাই এই চিন্তা বাতিল করা হয়। এরপর আমরা সিদ্ধান্ত নেই হাওয়াই পাশ কাঁটিয়ে গিয়ে জনস্টোন প্রবালদ্বীপ হয়ে মার্শাল আইল্যান্ডে ল্যান্ড করব। সেটাও প্রায় ৪৮০২.৭৯ মাইল পথ। ঘুরে যাওয়ার জন্য পেরোতে হবে ৬০০০ মাইলের মত। সেখান থেকে রিফুলেলিং শেষে পাপুয়া নিউ গিনিতে গিয়ে নামা যাবে। এ প্রক্রিয়ায় সুবিধা হল হাতে ৪-৫ ঘণ্টা সময় পাওয়া যাবে। তাই সেখানে গিয়ে সাজিদ খান খুব সহজেই শেষবারের মত জন্মদিন পালন করতে পারবেন। এ বিষয়ে পাপুয়া নিউগিনির সমুদ্র তীরবর্তী মাদাং রাজ্যের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা সানন্দে আমাদের মাদাং এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করার অনুমতি দেয়। কিন্তু সাজিদ খান শুরু থেকেই হাওয়াইতে যাওয়ার ব্যাপারে ছিল বদ্ধ পরিকর ছিল। বিকল্প অবস্থান নির্ণয়ের প্রস্তাব তিনি মেনে নিতে পারেন নি। হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জকে সম্ভাব্য ঝড়ের কারনে নো ফ্লাই জোন হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। হাওয়াই যাওয়ার পথে সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে পরে প্লেনটি বিধ্বস্ত হওয়ার সমুহ সম্ভাবনা ছিল। তাই নিয়ম না মেনে টেইক অফ করতে আমি রাজি হইনি। সাজিদ খানের এই অদ্ভুত খেয়ালের চেয়ে মানুষের জীবনের মূল্য অনেক বেশি। কিন্তু সাজিদ খান পাপুয়া নিউগিনি যেতে রাজি হন নি। তাই আমরা লাউঞ্জে বসে সামুদ্রিক ঝড় থামার প্রতিক্ষা করতে থাকি। ক্যালিফোর্নিয়া থেকে হাওয়াই টাইমজন অনুযায়ী দু ঘণ্টা পিছিয়ে আছে। দূরত্ব প্রায় ২৪৭১.৩৭ মাইল। হাতে একঘণ্টা সময় পেলেও রিস্ক নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল। কিন্তু একঘণ্টা কেটে যাওয়ার পরও ঝড় থামার লক্ষণ দেখা গেল না। এদিকে সাজিদ খান বললেন লাউঞ্জে বসে থাকতে তার ভাল লাগছেনা তিনি প্লেনে গিয়ে বসতে চান। আমরা ভাবলাম একদম শেষে এসে সমস্ত পরিকল্পনা ভেস্তে যাচ্ছে বলে হয়ত তার মনটা বিষণ্ণ হয়ে উঠেছে তাই কিছুক্ষন একা সময় কাটাতে চাইছেন। কিন্তু মিনিট পাঁচেক পর খবর পেলাম স্কাইলন প্লেনটি স্টার্ট নিয়েছে এবং রানওয়ে ধরে ছুটছে। আমরা যেতে যেতে প্লেনটি টেক অফ করল। কন্ট্রোল বক্স থেকে সাজিদ খানকে বার বার অনুরোধ করা হল ব্যাক করার জন্য কিন্তু তিনি শুনলেন না। সাজিদ খান প্রচণ্ড গতিতে লস এঞ্জেলস হয়ে উত্তর মহাসাগরের উপর দিয়ে প্লেন নিয়ে ছুটছিলেন। বেশ কিছুক্ষন এয়ারপোর্ট অথোরিটি প্লেনটি ট্র্যাক করতে পেরেছিল কিন্তু সামুদ্রিক ঝড়ের উৎসের মুখে পৌঁছুনর পর সব যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। তারপর থেকে প্লেনটির আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি”।
রিপোর্টার বললেন, “ভিউয়ারস, শুনলেন কি ঘটেছিল বেকারসফিল্ড এয়ারপোর্টে। এখন আমরা আপনাদের নিয়ে যাচ্ছি হাওয়াইতে”।
হাওয়াইয়ের রিপোর্টারের চোখে মুখে বিষণ্ণতা। হালকা গলায় বলছে, “ইতিমধ্যে বেজে গেছে রাত ১২টা। হ্যানা এয়ারপোর্টের অদুরে হ্যানা বিচ পার্কে বিশাল বড় এক কেক সাজিয়ে নিয়ে বসে আছেন ভক্তরা। সবাই উৎসুক চোখে তাদের প্রিয় অভিনেতার পথ চেয়ে বসে আছেন। এখানেই শেষবারের মত জন্মদিন পালন করার কথা ছিল সাজিদ খানের। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন ঝড়ের কবলে পরে প্লেনটি বিধ্বস্ত হয়েছে। প্লেন নিয়ে প্যাসিফিক ওশানের বুকে হারিয়ে গেছেন প্রিয়মুখ সাজিদ খান। আর কখনো রুপালী পর্দায় দেখা যাবেনা তাকে! সামান্য খেয়ালের বলি হয়ে চিরচিনের জন্য হারিয়ে গেছেন প্রিয় মানুষটি”।
কাজের ছেলেটি চেয়ে দেখল মিসেস ইউসুফ শিকদারের দুচোখ বেয়ে অশ্রু নামছে কিন্তু তিনি ঠোঁটে ধরে রেখেছেন অদ্ভুত এক হাসি। সে বুঝতে পারল না, সন্তানের বিপদের কথা শুনে মা হাসেন কীভাবে?
***
তারিখঃ অজানা
স্থানঃ অজানা
ধীরে ধীরে চোখ মেলল সাজিদ খান। কোথায় আছে বুঝতে দু সেকেন্ড সময় লাগল। ভাঙ্গাচোরা একটা প্লেনের ককপিটে তার অবস্থান। কি ঘটেছিল মনে করার চেষ্টা করল সে। যতদূর মনে আছে প্লেন নিয়ে হাওয়াইয়ের আকাশে পৌঁছানোর আগেই সামুদ্রিক ঝড়ের মুখে পরে সে প্লেনের নিয়ন্ত্রন হারায়। সামনে কিচ্ছু দেখা যাচ্ছিল না। হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকের সাথে চারপাশে এক উজ্জ্বল আলোয় বিচ্ছুরণ। ঠিক তার পর পরই এক গভীর অন্ধকারে ঢেকে গেল আকাশ। মনে যেন হচ্ছিল অনন্ত শূন্যের মাঝে কোথাও হারিয়ে গেছে সে। মস্তিষ্কে তীব্র ব্যাথার অনুভূতি। এভাবে কতটা সময় কেটে গেছে জানা নেই। একসময় আকাশ পরিষ্কার হয়ে আসে। তখন আকাশটাকে দেখাচ্ছিল রক্তিম আলোয় উদ্ভাসিত। এ অপার্থিব দৃশ্য। সেই দৃশ্যে চোখ রেখে জ্ঞান হারিয়ে ককপিটে লুটিয়ে পরে দীর্ঘ পথভ্রমনে ক্লান্ত সাজিদ খান। হয়ত সেই অবস্থাতেই ক্র্যাস ল্যান্ড করেছে প্লেনটা।
কতটা সময় এভাবে পরে আছে বোঝার উপায় নেই। এত ঝক্কির মাঝেও হাতঘড়িটা হাতে আটকে আছে! সাজিদ সময় দেখল, ভোর ৬টা বাজে! এতক্ষন হয়ে গেছে অথচ কেউ তাকে উদ্ধারের কাজে এগিয়ে আসেনি! যতদূর মনে হয় হাওয়াইয়ের কোন একটা দ্বীপে সে ক্র্যাশ ল্যান্ডিং করেছে! কোন মতে নিজেকে ককপিট থেকে বের করে আনল। প্লেনটার খুব বেশি ক্ষয় ক্ষতি হয়নি। মেরামত করে নেওয়া যাবে, সৌভাগ্য বলতে হবে যে প্রানে বেঁচে গেছে সে।
প্লেন থেকে বাইরে বেড়িয়ে এসে অবাক হয়ে গেল সাজিদ খান। এ কেমন জায়গা? তার প্লেনটি ক্র্যাশ ল্যান্ডিং করেছে একটা উচু নিচু পাহাড়ি অঞ্চলে। চারিদিকে ঘন জঙ্গল। এমন কোন প্লেস হাওয়াইতে আছে বলে তার জানা ছিলনা। এই কারনেই হয়ত মানুষ তার ল্যান্ডিং সম্পর্কে জানতে পারেনি। লোকালয় এখান থেকে কত দূরে কে জানে?
সাজিদ জঙ্গলের মাঝে পথ করে নিয়ে এগিয়ে গেল। কিছুদুর এগিয়ে আসতেই সে ধপ ধপ শব্দ শুনতে পেল। মনে হল ধাতু পেটানোর আওয়াজ। ঘন জঙ্গলের মাঝে আসে পাশে কোথায় যেন কেউ এক নাগাড়ে ধাতু পিটিয়ে চলেছে। আওয়াজটা সম্ভবত ডান দিক থেকে আসছে। শব্দের উৎস লক্ষ করে এগিয়ে গেল সাজিদ। পাহাড়ি উচু নিচু যায়গায় হাঁটতে বেশ কষ্ট হচ্ছে। কিছুদূর এগিয়ে আসার পর একটা ছোট্ট ডোমের মত যায়গা চোখে পড়ল। এর ভেতর থেকেই ধাতব আওয়াজ আসছে। কাছাকাছি এসে ডোমের গায়ে একটা ছোট্ট ফোঁকর নজরে এল। একজন মানুষ কষ্টে সৃষ্টে চাইলে ভেতরে ঢুকতে পারবে। বেশ কশরত করে ভেতরে ঢুকে পড়ল সাজিদ। ভিতরে ঢুকে একটা অদ্ভুত দর্শন যন্ত্র দেখতে পেল সে, এর ভেতর থেকেই শব্দ আসছে। আস্তে করে ডাকল, “কেউ কি আছেন?”
যন্ত্রের লোহা লক্করের মাঝ থেকে দাড়ি গোঁফে ঢাকা একটা মুখ উকি দিল। একমুহূর্ত তাকিয়ে থাকল সাজিদ। লোকটার সামনে চলে আসা বড় বড় চুলের আড়ালে চোখ দুটোর দিকে তাকিয়ে সাজিদের বুকের ভেতর ধক করে উঠল। সে অস্ফুট কণ্ঠে ডেকে উঠল, “বাবা”!
প্রফেসর ইউসুফ প্রায় ছুটে এসে ছেলেকে বুকে জড়িয়ে নিলেন। তাঁর কণ্ঠে দ্বিগুন উচ্ছ্বাস, “আমি জানতাম একদিন তুই আমাকে খুঁজতে খুঁজতে চলে আসবি। কিন্তু এত দ্রুত চলে আসবে এটা ভাবিনি”।
মিনিট দুয়েক লাগল বাপ ছেলের উচ্ছ্বাস কমতে। প্রফেসর ইউসুফ ছেলেকে ছেড়ে সরে দাঁড়ালেন। আবেগ জড়ানো কণ্ঠে বললেন, “কীভাবে সম্ভব করলি তুই এটা?”
“আমার জন্য বিষয়টা খুব কঠিন ছিলনা। আমি একজন বিখ্যাত অভিনেতা। ১২ বার জন্মদিন পালনের ইচ্ছা প্রকাশ করতেই সবাই উঠে পরে লাগল সাহায্য করার জন্য। নিজের টাকাও আছে প্রচুর। কিন্তু আমি ভাবছি তুমি কীভাবে এটা সম্ভব করেছিলে? তোমার সময়ে তো দ্রুতগতির প্লেন ছিলনা, তোমার টাকাও ছিলনা, কেউ তোমাকে সাহায্যও করেনি”।
প্রফেসর ইউসুফ হাসলেন, “সে অনেক ইতিহাস! আস্তে ধীরে বলব”।
সাজিদ প্রশ্ন করল, “আমরা এখন কোথায় আছি বাবা?”
“কেন? নিজের জন্মভূমিতে”।
“মানে? তুমি বলছ আমরা এখন বাংলাদেশে আছি?” সাজিদের কণ্ঠে অবিশ্বাস। “কিন্তু আমি তো হাওয়াই দ্বীপে ল্যান্ড করেছিলাম!”
“সেটা বুঝিয়ে বলছি। তার আগে বল তুই কি বাংলাদেশ থেকে যাত্রা শুরু করেছিলি?”
“হ্যা”।
“১২ বার টাইমজোন ক্রস করে হাওয়াইতে এসে যাত্রা শেষ করেছিস?”
“হ্যা”
তুই কি করে বুঝলি আমিও এই রুটে যাত্রা করেছিলাম?
“অনুমান করেছিলাম। শেষ খবর পেয়েছিলাম তুমি চিটাগং থেকে একটা চার্টার্ড প্লেন নিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে গেছ। সেখান থেকে ধারনা হল তোমার যাত্রার শুরু হয়েছে বাংলাদেশে। তুমি যৌবনের একটা বড় সময় কাটিয়েছ হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে। ওখানেই পড়াশোনা করেছ, অনেক দিন যাবত গবেষণা করে নানা বিষয়ে। একটা বিজ্ঞান ফার্মে ভাল একটা চাকরিও করতে, কিন্তু মতের মিল না হওয়া চাকরি ছেড়ে জন্মভুমিতে ফিরে এসেছিলে। আমার বিশ্বাস ছিল তুমি যাত্রা শেষ করেছিলে সেখানে গিয়েই।”
“হুম, তুই আর আমি একই স্থান থেকে যাত্রা করে একই স্থানে গিয়ে থেমেছি। তাই বাই ডিফল্ট আমরা একই প্লেসে চলে এসেছি। থিওরি অনুযায়ী ১২ বার টাইমজোন পেরিয়ে একই সময়ে অবস্থান নিতে পারলে তুই যেখান থেকে শুরু করেছিস সেখানেই ফিরে আসবি। আর অতীতে যাত্রা করলে ১২ বার পুরা হলে তুমি চলে যাবে সুদুর অতীতে, কিন্তু ভবিষ্যতে যাত্রা করলে তুমি চলে যাবে সুদুর ভবিষ্যতে”।
“কিন্তু সুদুর অতীত বা ভবিষ্যতে চলে যাওয়ার কথা তো তোমার থিওরিতে ছিলনা বাবা!”
“এটাই আমার থিওরির ভুল ছিল। যদি ভুলটা আগে ধরতে পারতাম তাহলে আমি কখনোই থিওরিটা প্রমানের চেষ্টা করতাম না”।
“আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছি না বাবা!”
“আমরা অতীতে অবস্থান করছি, সাজিদ”। শান্ত কণ্ঠে বললেন প্রোফেসর।
“কতটা অতীত?”
“অনুমান কর”।
“১০০ বছর?”
“তোর ধারনার বাইরে। প্রায় ৩০০০ বছর”।
অবাক চোখে বাবার দিকে তাকিয়ে থাকল সাজিদ। বলার মত কোন শব্দ খুজে পেলনা।
“থিওরি অনুযায়ী অতীত থেকে ভবিষ্যৎ, আবার ভবিষ্যৎ থেকে অতীতে চলাচলের ক্ষমতা অর্জনের জন্য পর্যাপ্ত অনুশীলন প্রয়োজন। একবার টাইমলাইন ভেদ করে এলেই সেই ক্ষমতা চলে আসেনা। প্রয়োজন আরও অনুশীলন। কিন্তু আমরা অবস্থান করছি খ্রিস্টের জন্মের ১০০০ বছর পূর্বে, এখানে নেই কোন আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা, নেই প্লেন, নেই জ্বালানী- অনুশীলন করব কীভাবে?”
“বাবা, আমার প্লেনটা ক্র্যাশ ল্যান্ড করলেও মোটামুটি ঠিক আছে”। সাজিদের হতাশ চোখ জোড়াতে হঠাৎ আলোর ঝিলিক দেখা গেল। “একটু মেরামত করে নিলে আবার আকাশে উড়াতে পারব। এটা স্কাইলন প্লেন, নতুন আবিস্কার। ঘণ্টায় ১৯০০০ মাইল পর্যন্ত গতিবেগ তুলতে..........”
“ভুলে যাচ্ছ কেন? এটা প্রস্তর যুগ। এখানে প্লেনের জন্য ফুয়েল পাবে কই?”
“তাহলে আমরা কি আজীবন এখানে আটকে থাকব?” আতংকিত কণ্ঠে বলল সাজিদ।
“অবশ্যই নয়। তুই আমাকে চিনিস না? আমি কি থেমে যাওয়ার মানুষ? গত ২০ বছর ধরে এই যন্ত্রটা বানাচ্ছি। এটা চৌম্বক শক্তি ব্যাবহার করে প্রচণ্ড গতিতে ছুটে চলতে পারবে। এতদিন আমি একা ছিলাম বলে দেরি হয়েছে, এখন তুই চলে এসেছিস- আর বেশি সময় লাগবে না যন্ত্রটাকে রেডি করতে”।
সাজিদ বলল, “তুমি কি এই ২০ বছরে সব সময় এখানেই থেকেছ, বাবা? কোথাও যাওনি?”
“হ্যা, কত যায়গায় গিয়েছি! এদেশে এখনও খুব বেশি মানব বসতি শুরু হয়নি। আর্যদের আগমন শুরু হয়েছে কিছু কিছু করে। পূর্ব দিকে টানা ২০ দিন হাঁটলেই সিন্ধু সভ্যতার দেখা পাওয়া যায়। ওখানে গিয়ে থাকি বছরের বেশির ভাগ সময়। তোকে নিয়ে যাব, ওদের পরিকল্পিত নগর ব্যাবস্থা দেখলে বুঝবি আমরা ওদেরকে যতটা উন্নত ভাবি ওরা আসলে তারচেয়েও অনেক বেশি এগিয়ে ছিল! তবে বছরের এই সময়টা এলেই আবার ফিরে আসি জন্মভূমিতে। কেন আসি জানিনা, হয়ত সৃষ্টিকর্তা চেয়েছিলেন যেন তুই এসে আমাকে খুজে পাস”!
সাজিদ কি বলবে বুঝতে পারছে না।
“নষ্ট করার মত সময় একদমই নেই। কাজে লেগে যেতে হবে। আয় আগে কিছু খেয়ে নে, সুজলা সুফলা আমাদের দেশ। খাদ্যের কোন অভাব নেই। বন জুড়ে রসাল ফলের গাছ। আর ইচ্ছে হলেই তো বন্য জন্তু জানোয়ার শিকার করা যায়”।
কিছুক্ষন পর সাজিদ অচেনা ফলের গায়ে কামড় বসাতে গিয়ে লক্ষ করল প্রফেসর ইউসুফ একটা বহু পুরনো লগ বুকে গাছের ডাল দিয়ে বানানো কলম কালিতে ডুবিয়ে নিয়ে কিছু আকা আকি করছেন। সাজিদ ভাল ভাবে লক্ষ করতেই দেখল লগ বুকের ওপরে লেখা-
তারিখঃ ৪ঠা নভেম্বর, খ্রিস্টপূর্ব ১০১৩ অব্দ।
স্থানঃ জন্মভূমি, বাংলাদেশ।
(সমাপ্ত)
********************************************
রেফারেন্সঃ
গল্পে অসংখ্য তথ্য সন্নিবেশন করা হয়েছে। এইসকল তথ্যের ৯৯ ভাগই সত্য। স্থান ও টাইমজোন সংক্রান্ত বেশির ভাগ তথ্যই নেয়া হয়েছে উইকিপিডিয়া থেকে। দূরত্ব বিষয়ক তথ্যের জন্য distancefromto.net ওয়েবসাইটটির সাহায্য নিয়েছি। এছাড়া কোস্টারিকায় বিদ্রোহ, সামুদ্রিক ঝড়, সিন্ধু সভ্যতা, বলিভিয়ার ঘটনা, স্কাইলন স্পেস প্লেন, এক্সন মোবিল, ডিরেক্ট টিভি সহ টুক টাক বিভিন্ন তথ্যের জন্য তো গুগল মামা ছিলই। আর বিরাট একটা সাহায্য পেয়েছি গুগল ম্যাপস থেকে। আমার জানামতে এসকল তথ্যে কোন ভুল নেই। তারপরও কেউ যদি কোন ভুল খুজে পান তাহলে ধরিয়ে দিলে কৃতার্থ হব।
গল্প প্রসঙ্গেঃ
এই গল্পটি দুটি বিশেষ কারনে আমার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
প্রথম কারণটি হল এটি আমার ৫০তম গল্প
২য় কারণটি হল এটি সামু ব্লগে আমার ৫০ তম পোস্ট।
গল্পের ইনিশিয়াল আইডিয়াটা পেয়েছিলাম ছোটভাই ইশতিয়াক রেহমান এর কাছ থেকে।
গল্পের প্রুফ রিডিং এর জন্য ধন্যবাদ আমার বান্ধবী ব্লগার নৈঋতকে।
উৎসর্গঃ প্রিয় বড়াপু অপর্ণা মন্ময় । অপর্ণা আপুর প্রত্যেকটা লেখা পড়েই মুগ্ধ হই এবং কিছু না কিছু শিখি। আমার পোস্ট গুলোতে আপুর সুন্দর সাজেশন নিজেকে শুধরে নিতে সাহায্য করে। আপুর দীর্ঘায়ু কামনা করি।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১:০২