“কাজটা তুমি মোটেও ভাল করনি আসিফ”।
“যা করেছি ঠিকই করেছি”।
“কিন্তু ওরা খুব খারাপ! যে কোনও সময় খারাপ কিছু একটা করে বসতে পারে!”
“তাই বলে ওরা আমার স্ত্রীকে রাস্তা ঘাটে উত্যক্ত করবে আর আমি চুপচাপ দেখব?”
রিমি অধৈর্য কণ্ঠে বলল, “লোকটাকে চড় মারা কি ঠিক হয়েছে? আজ ও একলা ছিল বলে কিছু করার সাহস পায়নি। কিন্তু কাল যখন দল বল নিয়ে আসবে, তখন? তখন কি করবে তুমি?”
আসিফ হাসল, “আরে তুমি কিচ্ছু ভেবনা। কিছুই হবে না। ওরা এমনিতে ভীরু। যারা প্রতিবাদ করার সাহস পায় না, তাদের উপর চড়াও হয়ে বসে”।
“কিন্তু আমার খুব ভয় করছে, আসিফ!”
আসিফ কাছে টানল রিমিকে। মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। “তুমি ভয় পেওনা, রিমি। আমি যতক্ষণ আছি ততক্ষন তোমার কোনও ভয় নেই। ওরা তোমার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আমি কথা দিচ্ছি”।
রিমি মাথা রাখল আসিফের বুকে। “এই এলাকায় আর থাকব না, চল অন্য কোথাও চলে যাই! এলাকাটা কেমন যেন নির্জন! আশে পাশে বাড়িঘর কম।”
আসিফ অভয় দেয়ার ভঙ্গিতে হাসল। “ঠিক আছে, আগে রাতটা তো পেরোতে দাও! কাল সকালে নতুন বাসা খুঁজতে বের হব”।
হঠাৎ কলিং বেলের আওয়াজ হল। রিমি ভয় পেয়ে গেল, “এত রাতে কে এলো আসিফ?”
“বুঝতে পারছি না!”
“যদি ওরা হয়?”
“আরে না! ওদের এত সাহস হবে নাকি রাত বিরাতে মানুষের বাড়িতে হামলা করবে? তুমি বস, আমি দেখছি”।
“না প্লিজ! তুমি যেওনা!” রিমি আসিফের হাত ধরে রাখল। “দরজা খোলার দরকার নেই”।
আসিফ হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল, “আরে দেখি না। তুমি এঘরেই থাক। ভয় পেওনা, আমার মনে হচ্ছে অন্য কেউ!”
আসিফ স্পাই হোলে চোখ লাগিয়ে দেখল কয়েকজন যুবক দাড়িয়ে আছে। রিমির আশংকাই সত্যি। ওই সন্ত্রাসী ছেলে গুলোই! আসিফ বলল, “কি ব্যাপার? কে আপনারা?”
বাইরে থেকে আওয়াজ এল, “ভাই, আমরা এলাকার ছেলে, দরজাটা খোলেন একটু”।
“এত রাতে কি দরকার?”
“বিকালের ঘটনার জন্য মাফ চাইতে আসছি, ভাইজান। খুলেন একটু”।
আসিফ সিটকিনি খুলল। দরজা মেলতেই গুলির আওয়াজ হল। আসিফ দেখল তার পেট থেকে গল গল করে রক্ত বেরিয়ে আসছে! নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না সে! ওদের একজনের হাতে পিস্তল, ওরা গুলি করল! দুইহাত দিয়ে পেট চেপে ধরল, হাঁটু ভেঙে পরে গেল মেঝেতে। রিমি ভেতরের রুম থেকে “আসিফ” “আসিফ” বলে দৌড়ে এল। তারপর আসিফ গুলি খেয়ে মেঝেতে পরে আছে দেখে চিৎকার করে উঠল, “নাআআআ! আসিফ, তোমাকে এতবার করে বললাম দরজা খুলো না! তুমি কেন কথা শুনলে না?”
সন্ত্রাসীগুলোর একজন রিমির হাত ধরে ফেলল। রিমি অনুনয় করে বলল, “ভাইজান, আমাকে ছেড়ে দেন। আমার স্বামীকে হাসপাতাল নেয়া লাগবে! এভাবে রক্ত বের হতে থাকলে ও বাঁচবে না!”
সন্ত্রাসীগুলো খ্যাঁক খ্যাঁক করে বিশ্রী ভঙ্গিতে হাসল। একজন বলল, “তোর জামাইয়ের সাহস কত! আমাগো গায়ে হাত দেয়! হের লেইগাই তো পেটে গুলি করছি, কষ্ট পাইয়া আস্তে আস্তে মরব আর আমরা তোরে লইয়া ফুর্তি করুম!”
অন্য একজন বলল, “ওই ওরে বিছানায় লইয়া চল। কাম কাজ শুরু কইরা দেই!”
তিনজনে মিলে মিলিকে টানতে টানতে বেডরুমের দিকে নিয়ে গেল। রিমি বলছে, “আপনাদের পায়ে পরি ভাই, আমার স্বামীর হয়ে আপনাদের কাছে মাফ চাই! প্লিজ আমাকে ছেড়ে দেন....”
সন্ত্রাসীগুলো তার কথা কানে তুলছে না। রিমি প্রাণপণে বলল, “আসিফ! তুমি না কথা দিয়েছিলে আমাকে রক্ষা করবে? এখন গুলি খেয়ে পরে আছ কেন? আসিফ! আসিফ...............
আসিফ কিছু একটা বলার চেষ্টা করল। কিন্তু তার গলা দিয়ে ঘোঁত ঘোঁত জাতীয় আওয়াজ ছাড়া অন্য কিছু বেরোচ্ছে না। চোখের সামনে পৃথিবীটা অন্ধকার হয়ে আসছে। সে মনে মনে শুধু একবার বলল, “এমনতো হওয়ার কথা ছিলনা! শেষটা তো এমন হওয়ার কথা নয়! এটা কখনো শেষ হতে পারেনা। আমার স্বপ্নগুলো যে অসম্পূর্ণ রয়ে গেল...........”
***
ধীরে ধীরে জেগে উঠল রাহা। সরাসরি আলোতে চোখ খুলতে একটু কষ্ট হল। কয়েকবার চোখ পিট পিট করতেই আলোটা সয়ে এল। ঘুম ভাঙ্গার পরও কিছুক্ষন শুয়ে থাকল সে। তারপর উঠে পড়ল। আরও একটা অলস দিনের শুরু।
বিনোদন যন্ত্রটা চালু করে দিতেই ঘরের মাঝে একটি হলগ্রাফিক মূর্তি ভেসে উঠল, তার কণ্ঠ থেকে বেরিয়ে এল অপার্থিব এক সুর। রাহা মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনতে থাকল। এই সুর তার মনঃসংযোগে সাহায্য করে। কিছুদিন যাবত মনটা অস্থির হয়ে আছে। ব্যাক্তিগত একটা গবেষণার মাঝপথে কিছু সমস্যায় পরে গেছে সে। কিছুতেই সমাধান খুজে পাচ্ছে না!
হঠাৎ খেয়াল হল যোগাযোগ মডিউলটা সিগন্যাল দিচ্ছে। নিশ্চয়ই ত্রানা! এত সকালে সে ছাড়া আর কেউ তাকে বিরক্ত করবে না। “কি ব্যাপার ত্রানা?”
“ওহ রাহা! তুমি কি করছ বলত? কতক্ষন যাবত তোমার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করছি জান?”
“কি ব্যাপার?”
“ভুলে গেছ? আজ ফ্যান্টাসিড্রিমারস গ্রুপের মিটিং আছে না?”
“মনে ছিলনা। কখন যেন?”
“এখনই। তুমি যত দ্রুত সম্ভব চলে আস”।
রাহা যোগাযোগ মডিউলটা বন্ধ করে দিল। ত্রানার এই সব ছেলেমানুষি রাহাকে বিরক্ত করে। কিন্তু ত্রানা কষ্ট পাবে ভেবে কিছু বলিনা সে। এই ফ্যান্টাসিড্রিমারস গ্রুপের কাজ হল নির্দিষ্ট সময় পর পর মিটিংএ বসা আর কে কি স্বপ্ন দেখেছে সেটা বর্ণনা করা। তারপর একটা ভোটাভোটি হবে, যার স্বপ্ন সবচেয়ে বেশি ভোট পাবে তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে। এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বিজয়ী হয়েছে ত্রানাই। গ্রুপের সবার কাছে ত্রানা খুব প্রিয় মুখ, তাই সবাই তাকেই ভোট দেয়। অথচ যত সব উদ্ভট স্বপ্ন দেখাই তার কাজ! ভাল স্বপ্নই বা দেখে কে? স্পেকট্রনদের জীবনে স্বপ্ন বলে কিছু নেই। আছে শুধু অলীক কল্পনা, যার বাস্তবে কোনও অস্তিত্ব নেই!
ফ্যান্টাসিড্রিমারস গ্রুপের মিটিংটা বসে উপশহরের নতুন তৈরি মিডিয়া সেন্টারে। ৬০-৭০ জন স্পেকট্রন এই গ্রুপের সদস্য। রাহা মিটিং এ পৌছে দেখে সবাই চলে এসেছে। সবাই হই হই করে উঠল রাহাকে দেখে। সব সময় দেরিতে মিটিং এ পৌঁছানো তার অভ্যাসে পরিনত হয়েছে।
ত্রানা বলল, “ব্যাস সবাই এসে গেছে এবার গ্রুপের কার্যক্রম শুরু করা যাক”।
প্রথমে একটা লটারি করা হল। সেখান থেকে ১০ জনের নাম সিলেক্ট করা হল আজ তাদের স্বপ্ন বর্ণনা করার জন্য। রাহা প্রমাদ গুনতে থাকল, আজ লটারিতে তার নামও উঠেছে।
একে একে সবাই স্বপ্নের কথা বলতে থাকল। প্রথমে মিরচি বলল সে ত্রিমাত্রিক জগত জারগনের আট পা ওয়ালা একটা প্রানিতে পরিনত হয়েছিল, সেখানে সে যুদ্ধে অংশগ্রহন করে এবং বীরের মত লরাই করে মারা যায়। মিরচির পর রিরি, ক্লদ, কিশা একে একে তাদের বিদঘুটে সব স্বপ্নের কথা বলতে লাগল। ত্রানার পালা আসার পর ত্রানা বলল সে একটা তেলাপোকার রুপে জন্ম নিয়েছিল, তেলাপোকাটার শত্রু ছিল হাতি। হাতির সাথে যুদ্ধ করে সে হাতিকে প্রায় নাজেহাল করে ফেলে কিন্তু একটু ভুলের কারনে হাতির পায়ের নিচে চাপা পরে সে মারা যায়। রাহার পালা এল সবার শেষে কিন্তু রাহা স্বপ্নের কথা বলতে চাইল না। শুধু বলল, "আমার স্বপ্নটা যাচ্ছে তাই হয়েছে, মোটেও বলার মত কিছু হয়নি"। কেউ আর রাহাকে জোরাজোরি করল না। সবাই জানে এটাই তার স্বভাব।
এবার ভোটাভোটির পালা। সবাই যার যার যোগাযোগ ডিভাইস নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়ল। যোগাযোগ ডিভাইসের মাধ্যমে সবার দেওয়া ভোটগুলো ভোটিং মেশিনে কাউন্ট হতে থাকল। তারপর চূড়ান্ত ফলাফলে দেখা গেল ত্রানাই সব চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছে। ত্রানাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হতেই সবাই আর একবার চিৎকার করে উঠল। তারপর পরস্পরের কাছ থেকে আজকের মত বিদায় নিয়ে সবাই একে একে সবাই চলে যেতে থাকল। বসে থাকল শুধু রাহা আর ত্রানা।
ত্রানা রাহার দিকে তাকিয়ে বলল, “তোমার কি হয়েছে রাহা? আজ তোমাকে একটু অন্য রকম লাগছে!”
“না না আমি ঠিকই আছি”।
“নাহ! কিছু একটা সমস্যা হয়েছে মনে হচ্ছে! তুমি আজ তোমার স্বপ্নের কথাও তো বললে না!”
“আসলে স্বপ্নটা অসম্পূর্ণ ছিল তাই বলতে ইচ্ছে হলনা”।
“অসম্পূর্ণ বলতে কি বুঝাচ্ছ?”
“আমি বলতে চাইছি, স্বপ্নটা যেভাবে শেষ হওয়া দরকার ছিল, সেভাবে হয়নি। আসলে স্বপ্নটা ঠিক শেষও হয়নি”।
“তুমি বলতে চাইছ স্বপ্নে যে চরিত্রে তুমি নিজেকে দেখেছ, তার মৃত্যুর আগেই তোমার স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে? কিন্তু সেটা তো অসম্ভব। আমাদের প্রতিটি স্বপ্নের শর্ত হল নিজেকে যে চরিত্রে দেখব তার মৃত্যুর মাধ্যমে স্বপ্নটা শেষ হয়ে যাবে”।
“আমি তা বলতে চাইছি না। স্বপ্নে আমার চরিত্রের মৃত্যু হয়েছে ঠিকই, কিন্তু যেভাবে মৃত্যু হয়েছে সেটা ঠিক হয়নি। তাই বলছি স্বপ্নটা অসম্পূর্ণ”।
“মাঝে মাঝে তোমার কথা আমি বুঝতে পারিনা রাহা। তোমার মত অত বুদ্ধিতো আমার নেই”!
রাহা হাসল।
“তুমি এখন কি করতে চাইছ?”
"আমি ভাবছি, আমাদের এই যে স্বপ্ন দেখা! এটাকে কি নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব? মানে আমি বলতে চাইছি একই স্বপ্ন কি দুবার দেখা যায় না? হুবুহু একই স্বপ্ন?"
“না রাহা, এটা সম্ভব না। তুমি জান আমাদের স্বপ্ন দেখাটা একটা সিমুলেশন প্রসেস। এখানে আমাদের নিয়ন্ত্রন বলতে কিছু নেই"।
“কিন্তু আমরা চেষ্টা করলেই এমন কোনও প্রযুক্তি বের করতে পারি যার সাহায্যে স্বপ্নটা নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব। অথবা একই স্বপ্ন দুবার দেখা সম্ভব”।
“তুমি যদি এটা নিয়ন্ত্রনের জন্য কিছু কর সেটা হবে বিজ্ঞান কাউন্সিলের দেওয়া আইনের অবমাননা”।
“কিন্তু আমার জন্য এই স্বপ্নটা দেখা জরুরী!”
“সেক্ষেত্রে তোমাকে বিজ্ঞান কাউন্সিলের প্রযুক্তি বিষয়ক প্রধান মহামান্য লিম্বাসের সাথে দেখা করতে হবে, রাহা। তিনি হয়ত তোমাকে সাহায্য করতে পারবেন.....”
***
বিজ্ঞান কাউন্সিল ভবনের ভেতরে ঢুকলে কেন যেন একটা গা ছমছমে অনুভূতি জাগে। আগেও বেশ কয়েকবার এখানে এসেছে রাহা । মাঝে মাঝে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন কর্মশালার আয়োজন করা হয়। কোনও এক অদ্ভুত কারনে রাহা প্রায় প্রত্যেকবারই বিজ্ঞান কাউন্সিল থেকে আমন্ত্রন পায়। রাহা বিখ্যাত কেউ নই, আর দশজন সাধারন স্পেকট্রনদের মতই একজন।
রিসেপশন ডেক্সে এসে জিজ্ঞেস করল, “বিজ্ঞান কাউন্সিলে কারও সাথে দেখা করার উপায় কি?”
রিসেপশন থেকে একজন স্পেকট্রন রাহাকে একটা কিম্ভূতকিমাকার যন্ত্র দেখাল, “এই মেশিনে আপনার ব্যাক্তিগত পরিচয় সংখ্যা প্রবেশ করান। তারপর কার সাথে এবং কি জন্য দেখা করতে চান তা উল্লেখ করুন”।
রাহা মেশিনে নিজের ১৪ ডিজিটের একটা ব্যাক্তিগত পরিচয় সংখ্যা প্রবেশ করাল। মেশিন থেকে একটা যান্ত্রিক কণ্ঠস্বরে বলা হল, “স্বাগতম রাহা। বলুন আপনি কার সাথে দেখা করতে চান এবং কেন?”
রাহা বলল, “প্রযুক্তি বিষয়ক প্রধান মহামান্য লিম্বাস এর সাথে দেখা করতে চাই। আমি অসম্পূর্ণ স্বপ্ন দেখা সংক্রান্ত একটা সমস্যার সমাধান খুঁজছি”।
যান্ত্রিক কণ্ঠ বলল, “একটু অপেক্ষা করুন। আপনাকে জানানো হবে”।
রিসেপশনের স্পেকট্রন বলল, “তুমি বৃথা সময় নষ্ট করছ। মহামান্য লিম্বাস অপ্রয়োজনে কার সাথে দেখা করেন না”।
রাহা তার কথায় কান না দিয়ে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে থাকল। কিছুক্ষন পরই রিসেপশনের স্পেকট্রনকে অবাক করে দিয়ে মেশিনের যান্ত্রিক কণ্ঠস্বর বলে উঠল, “রাহা, আপনার সাথে দেখা করার জন্য মহামান্য লিম্বাস অপেক্ষা করছেন। আপনার ডানদিকের করিডরের দরজাটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলে দেওয়া হচ্ছে। আপনি করিডর ধরে সোজা এগোতে থাকুন, একজন স্পেকট্রন সেখানে দাড়িয়ে আছে। আপনাকে পথ দেখিয়ে সরাসরি মহামান্য লিম্বাসের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে। ধন্যবাদ”।
***
মহামান্য লিম্বাস যেখানে অপেক্ষা করছেন সেটা বিশাল একটা হলরুমের মত। নানান যন্ত্রপাতিতে ঠাঁসা। এই সব যন্ত্রের বেশিরভাগেরই নামও জানা নেই রাহার। মহামান্য লিম্বাসকে এই প্রথম সামনা সামনি দেখল রাহা। বিশাল বড় একটা কাউচের ওপর বসে আছেন। ওনার মাঝে এমন একটা কিছু আছে যার ফলে দেখলেই শ্রদ্ধা করতে ইচ্ছে করে।
“আমাকে সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ মহামান্য লিম্বাস”।
লিম্বাস রাহার দিকে কৌতুকপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন। ইশারায় বসতে বললেন, “কেমন আছ রাহা?”
“ভাল আছি, মহামান্য লিম্বাস”।
“তুমি নিশ্চয়ই জান যে আমি অপ্রয়োজনে কার সাথে দেখা করিনা”।
“জী... জানি”।
“তারপরও কোন আশায় দেখা করতে এসেছ? আমি তো দেখা নাও করতে পারতাম!”
রাহা একমুহূর্ত ইতস্তত করে বলল, “আমার মনে হচ্ছিল আপনি আমার সাথে দেখা করবেন। বিজ্ঞান কাউন্সিলের নানান কাজে আমাকে আমন্ত্রন জানান হয়। ব্যাক্তিগত গবেষণার সময় অপ্রত্যাশিতভাবে বিজ্ঞান কাউন্সিলের অনুমতি ও সাহায্য পেয়ে যাই, এসব থেকে আন্দাজ করেছি বিজ্ঞান কাউন্সিল সম্ভবত আমার গতিবিধির ওপর নজর রাখে!”
মহামান্য লিম্বাস হাসলেন। “তুমি বুদ্ধিমান, রাহা। বিজ্ঞান কাউন্সিল সকল স্পেক্ট্রনদের ওপর নজর রাখে, কিন্তু তোমার উপর একটু বিশেষ নজর রাখে। নবীনদের মধ্য থেকে যাদের মধ্যে সম্ভাবনা দেখা যায়, বিজ্ঞান কাউন্সিল থেকে মনিটর করা হয়। তুমি সেই সম্ভাবনাময় নবীনদের মধ্যে একজন। চতুর্থ গ্রেড পার করার আগেই তুমি সময় পরিভ্রমনের ৫ম সুত্রের সমস্যাগুলোর সমাধান করতে সমর্থ হয়েছিলে। আমি নিজেও ৫ম গ্রেডে গিয়ে যেটা করতে পেরেছিলাম। স্পেস সংকোচনের ওপর তোমার তৈরি থিওরিগুলো সম্পূর্ণ সঠিক ছিল যা এখন বিভিন্ন কাজে অনুসরন করা হয়। তোমার ব্যক্তিগত গবেষণাগুলোর ফলাফল বৃহত্তর প্রয়োজনে ব্যাবহার উপযোগী। আমরা আশা করছি খুব তারাতারি তোমাকে বিজ্ঞান কাউন্সিলে আমাদের মাঝে দেখতে পাব। আমরা তো আর সব সময় প্রধান হয়ে বসে থাকতে পারব না! একদিন তোমাদের আসতে হবে আমাদের স্থানে”।
“ধন্যবাদ মহামান্য লিম্বাস”।
“তুমি যেন কি একটা সমস্যা নিয়ে কথা বলতে এসেছ?”
“আমি একটা অসম্পূর্ণ স্বপ্ন দেখেছি... মানে আমার দৃষ্টিতে সেটা অসম্পূর্ণ”।
“কিন্তু সেটা তো সম্ভব নয়! তুমি যতটুকু দেখেছ ঠিক ততটুকুই হল সম্পূর্ণ স্বপ্ন”।
“কিন্তু স্বপ্নটা যেভাবে শেষ হয়েছে তা নিয়ে আমি সন্তুষ্ট নই”।
“দেখ... স্বপ্নটা একটা সিমুলেশন প্রসেস। একটা উদাহারন দিলেই বুঝবে.. তুমি দেখেছ ত্রিমাত্রিক জগতের প্রানিরা তাদের কল্পনা থেকে ছবি আঁকে, ভাস্কর্য বানায়। এগুলোকে তুমি দ্বিমাত্রিক অবয়ব হিসেবে ধরতে পার। এখানে যে ত্রিমাত্রিক প্রাণী যত বেশি দক্ষ, তার তৈরি দ্বিমাত্রিক জগতটি তত বেশি নিখুত হয়, তত বেশি সম্পূর্ণ রুপ পায়। ঠিক তেমনিভাবে ত্রিমাত্রিক জগতের সবকিছু আমাদের মত চতুর্মাত্রিক প্রাণীর কল্পনামাত্র। তবে তফাতটা হল, ত্রিমাত্রিক প্রাণীরা তাদের তৈরি দ্বিমাত্রিক জগতটি নিয়ন্ত্রণ করে কিন্তু আমরা আমাদের তৈরি ত্রিমাত্রিক জগতটি নিয়ন্ত্রন করতে পারিনা”।
“নিয়ন্ত্রন করতে পারিনা নাকি নিয়ন্ত্রন করিনা?”
মহামান্য লিম্বাস হাসলেন, “নিয়ন্ত্রন করিনা”।
“এমন কি হতে পারেনা যে ত্রিমাত্রিক প্রাণীদের জীবন যেমন আমাদের কল্পনায় গড়া, ঠিক তেমনি আমাদের মত চতুর্মাত্রিক প্রাণীদের জীবন আসলে কোনও ৫ম মাত্রার মহাজাগতিক প্রাণীর কল্পনার ফল?”
“হতে পারে! সেটা হয়ত আমাদের পক্ষে কখনই জানা সম্ভব হবে না! হয়ত আমাদের জীবনটাও তারাই নিয়ন্ত্রন করছে!”
“আমরা কেন ত্রিমাত্রিক জগতগুলো নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করছি না?”
“তোমার এই প্রশ্নের জবাব অনেকভাবেই দেয়া যায়। আমি স্পেকট্রনদের কিছু ইতিহাস তোমার সামনে তুলে ধরছি, আশা করি তুমি তোমার জবাব পেয়ে যাবে”।
একমুহূর্ত থেমে থাকার পর আবার শুরু করলেন মহামান্য লিম্বাস, “আমরা স্পেকট্রনরা একটা সময় প্রযুক্তিগত উন্নয়নের চরম শিখরে পৌছে গেলাম। চতুর্মাত্রিক প্রানিতে পরিনত হলাম, সকল প্রকার রোগ ও জরার ঊর্ধ্বে নিজেদের প্রায় অমর প্রানিতে পরিনত করলাম, সময় ও স্থানভেদ করে যেকোনো জায়াগায় যাওয়াটা হয়ে উঠল নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়, সকল প্রকার দুঃখ, সুখ, ভালবাসা আর আবেগের বিলুপ্তি ঘটল, নিজেদের শারীরিক আকৃতি হয়ে উঠল ঐচ্ছিক বিষয়। এক কথায় বলা যায়, আমাদের কাছে নতুন বলে আর কিছুই ছিল না। নতুন করে দেখার, নতুন করে জানার মত আর কিছুই অবশিষ্ট ছিলনা। আমরা ভেবেছিলাম এই অবস্থায় পৌঁছানোর পর আমরা চরম আত্মতৃপ্তি পাব কিন্তু হল উল্টোটা। আমরা আবিষ্কার করলাম বেঁচে থাকার রসদ ফুরিয়ে গেছে আমাদের। যেকোনো প্রাণী বেঁচে থাকে আশায় কিন্তু আমাদের কোনও আশা নেই। তাই আমাদের মাঝে নেমে এল হতাশা, স্পেকট্রনরা একে একে নিজেদের ধংস করে দিতে লাগল।
এই অবস্থা চলতে থাকলে স্পেকট্রন নামের কোনও প্রাণীর আর অস্তিত্ব থাকত না! ঠিক তখনই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ স্পেকট্রন মহামান্য স্যুরা এগিয়ে এলেন। তার নেতৃত্ব আমাদের ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাল। তিনি আমাদের জীবনকে নিয়ন্ত্রনে নিয়ে এলেন। প্রত্যেক স্পেকট্রনকে একই শারীরিক আকৃতিতে সীমাবদ্ধ করে হল, নবীন স্পেকট্রনদের কাছে মহাজাগতিক বিষয়গুলো আস্তে আস্তে প্রকাশ করার জন্য কয়েকটি গ্রেড সৃষ্টি করা হল, সময় ও স্থান ভ্রমণ নিষিদ্ধ করে দেওয়া হল, প্রত্যেক স্পেকট্রনের ব্যাক্তিগত গবেষণার জন্য বিজ্ঞান কাউন্সিলের অনুমতি নেয়ার বিধান করা হল সব মিলিয়ে আরও প্রায় ১০০ নিয়ম আমাদের মেনে চলতে হয়। এসব নিয়ম ভাঙলে কঠিন শাস্তির বিধান আছে।
এবার আসি স্বপ্নের কথায়... স্পেকট্রনদের বেঁচে থাকাকে আনন্দময় করার জন্য যেসকল উপাদান সৃষ্টি করা হয়েছে তার মধ্যে স্বপ্ন দেখা একটি। এজন্য বেশ কিছু পরিকল্পিত ত্রিমাত্রিক জগতের সৃষ্টি করা হয়েছে, বিশেষ পদ্ধতিতে প্রত্যেক স্পেকট্রনকে শরীরে একটা নির্দিষ্ট মাত্রার শব্দতরঙ্গ প্রবেশ করানো হয়েছে যার ফলে তারা যখন স্বপ্ন দেখে তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি ত্রিমাত্রিক জগতে চলে যায়। সেখানে সে ওই জগতের একটা প্রাণীর রুপে ভূমিষ্ঠ হয়, স্বপ্নের সাথে এগিয়ে যায় তার জীবন, প্রাণীটির মৃত্যুর মাধ্যমে তার স্বপ্ন শেষ হয়। এই স্বপ্ন দেখাটা আনন্দের বিষয় কারন আমরা জানিনা স্বপ্নের শেষ হবে কোথায়! এখন তুমি বল, আমরা যদি স্বপ্নটাকে নিয়ন্ত্রন করা শুরু করি তাহলে কি আমাদের স্বপ্ন দেখাটা আনন্দময় হবে?”
“আপনার কথা ঠিক মহামান্য লিম্বাস। কিন্তু এই শেষ স্বপ্নটি আমাকে প্রতিমুহূর্তে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। স্বপ্নের শেষটা আমি মেনে নিতে পারছি না কিছুতেই”।
“স্বপ্নটা ব্যাখ্যা কর”।
“ত্রিমাত্রিক জগৎ পৃথিবীতে মানুষ রুপে জন্ম হয় আমার। জীবন চলছিল সুন্দরভাবে। ছোটখাট একটা চাকরি করছি। নতুন বিয়ে করেছি। স্ত্রীকে নিয়ে সুখের জীবন যাবন করছি। এ সময় স্থানীয় কিছু সন্ত্রাসীরা আমার স্ত্রির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ল। আমি প্রতবাদ করায় তারা আমাকে গুলি করে আমার স্ত্রীকে তুলে নিয়ে গেল”।
“এখানে সমস্যা কোথায়? এমনটা তো হতেই পারে, অসম্ভব কিছু নয়!”
“কিন্তু আমি মেয়েটিকে আমার উপর ভরসা রাখতে বলেছিলাম, কথা দিয়েছিলাম যেকোনো বিপদ থেকে তাকে রক্ষা করব! আমাকে তো আমার কথা রাখতে হবে। ওরা আমাকে গুলি করে আমার স্ত্রীকে তুলে নিয়ে যাবে আর আমি গুলি খেয়ে পরে থাকব, এটা কেমন সমাধান হল?”
“তুমি যা বলছ সেটা অত্যন্ত হাস্যকর রাহা!” লিম্বাস হতাশ ভঙ্গিতে বললেন, “বাবা মায়ের আদরের সন্তান, বাবা মা সর্বস্ব ত্যাগ করে সেই সন্তানকে লালন পালন করছে কিন্তু সন্তান হঠাৎ অপঘাতে মারা পড়ল, এমন স্বপ্ন আমি অন্তত কয়েকশ বার দেখেছি। এটাকেও তুমি কি অসম্পূর্ণ বলবে?”
“কিন্তু আমি এমন স্বপ্ন দেখতে চাইনা মহামান্য লিম্বাস”।
“তাহলে স্বপ্ন দেখাই বন্ধ করতে হবে তোমাকে রাহা! আমরা কোনও অবস্থাতেই নিয়ম ভঙ্গ করে স্বপ্নকে নিয়ন্ত্রন করতে পারব না”।
“মহামান্য লিম্বাস! আমি শুধু একটিবার সেই স্বপ্নে ফেরত যেতে চাই”।
“এটা অত্যন্ত হাস্যকর চিন্তা, রাহা! তোমার মৃত্যুর মাধ্যমেই তোমার চরিত্রের জন্য সেই জগতটি বিলুপ্ত হয়েছে”।
“কিন্তু ঠিক যেখানে স্বপ্নটা শেষ হয়েছে সেখান থেকেই আবার স্বপ্নটা শুরু করা সম্ভব!”
“কিন্তু তোমাকে সেই জগতে ফেরত পাঠানোটা হবে ৩টি নিয়ম ভঙ্গ করা হবে রাহা! প্রথমতঃ স্বপ্ন দেখার প্রসেস নিয়ন্ত্রন করে তোমাকে একই স্বপ্ন দুবার দেখার সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে! দ্বিতীয়তঃ স্বপ্নে তোমার চরিত্রটি বিলুপ্ত হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেই মেয়ের চরিত্রকে স্বপ্ন দেখছে অন্য কোনও স্পেকট্রন, সন্ত্রাসীদের চরিত্রগুলোও অন্য স্পেকট্রনদের কল্পনা। তোমাকে ফেরত পাঠালে তাদের স্বপ্নেও হস্তক্ষেপ করা হবে! তৃতীয়তঃ তোমার মৃত্যুর পর স্বপ্নটা এগিয়ে গেছে অনেকদুর। যেখানে তোমার স্বপ্ন ফুরিয়েছিল সেখান থেকে শুরু করতে চাইলে এখন সময় পরিভ্রমণের মাধ্যমে তোমাকে আবার সেই অবস্থানে ফেরত পাঠাতে হবে।
“মহামান্য লিম্বাস! আপনি তো বললেন এই নিয়মের উদ্দেশ্য হল স্পেকট্রনদের বেঁচে থাকার আনন্দ প্রদান করা”। রাহার কণ্ঠে হতাশার সুর। “কিন্তু সেই স্বপ্নটা আর দেখতে না পারলে বেঁচে থাকাটা আমার কাছে অর্থহীন মনে হবে! হয়ত হতাশ হয়ে নিজের অস্তিত্ব ধ্বংস করে দিতেও পারি। তাহলে নিয়মের উদ্দেশ্য সফল হল কিভাবে?”
“কি বলছ তুমি রাহা?” অবিশ্বাসের সুরে বললেন লিম্বাস। “সামান্য একটা স্বপ্নের জন্য তুমি নিজেকে ধ্বংস করে দেবে? এত সম্ভাবনা তোমার মাঝে, শিঘ্রই বিজ্ঞান কাউন্সিলের সম্মানজনক পদমর্যাদা পেতে যাচ্ছ! এই সবকিছুর চেয়ে নিছক একটা স্বপ্নই তোমার কাছে মুখ্য হয়ে উঠল?”
“মহামান্য লিম্বাস, আপনি বললেন না সমস্ত আবেগ ভালবাসা আমাদের মধ্য থেকে বিলুপ্ত হয়েছে! কথাটা হয়ত পুরোপুরি ঠিক নয়” রাহা এমনভাবে কথা বলছে যেন অন্য কোনও জগতে চলে গেছে। “আমি স্বপ্নের সেই মেয়েটিকে ভালবেসে ফেলেছি। তার জন্য নিজের অস্তিত্ব বিসর্জন দিতেও আমি কার্পণ্য করব না। আমার মাঝে মাঝে মনে হয় ত্রিমাত্রিক প্রাণী হয়ে জন্মালে খুব একটা মন্দ হতনা! সত্যিকারের বেঁচে থাকার স্বাদ পাওয়া যেত”!
লিম্বাস হাসলেন। “ঠিক আছে, আমি তোমাকে সেই স্বপ্নে ফেরত পাঠাচ্ছি। তুমি কি স্বপ্নটা নিয়ন্ত্রন করতে চাও? নাকি সিমুলেশন প্রসেস বহাল রাখবে?”
“না... আমি নিয়ন্ত্রন করতে চাই না। কারন আমি জানি ভালবাসার শক্তি অনেক বেশি। আমার ভালবাসাই আমাকে সাহস যোগাবে মেয়েটিকে উদ্ধার করার”।
“ঠিক আছে রাহা। তুমি আরাম করে বস। আমি তোমাকে সেই স্বপ্নে ফেরত নেয়ার ব্যাবস্থা করছি....”
রাহা নড়ে চরে আরাম করে বসল। মহামান্য লিম্বাস রাহাকে স্পর্শ করলেন। আস্তে আস্তে তার শরীরে একটা সুখের আবেশ ছড়িয়ে পড়ল.... সে তলিয়ে যাচ্ছি অন্ধকার গহ্বরে... গভীর ঘুমের দেশে.....
***
মুখ হা করে বড় একটা শ্বাস নিল আসিফ। শব্দ করে কাশল কয়েকবার। কোথায় আছে বুঝতে দু সেকেন্ড সময় লাগল। কতক্ষন সময় পেরিয়েছে?
পাশের রুম থেকে রিমির চাপা গলায় কান্নার আওয়াজ আসছে। আসিফের মাথায় রক্ত চড়ে গেল। সে উঠে দাঁড়াল। নিজের মনকে প্রবোধ দিল আসিফ, মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হবে। রাগের মাথায় কিছু করতে গেলে ওদের সাথে পারা যাবে না।
বেডরুমের পর্দার আড়ালে দাড়িয়ে দেখল, রিমি খাটের ওপর পরে আছে। একজন সন্ত্রাসী রিমির মুখ চেপে ধরেছে। অন্যজন তার শাড়ি ব্লাউজ টানা টানি করছে, রিমি প্রাণপণে চেষ্টা করছে বাধা দেয়ার। অন্যজন নিজের কাপড় চোপড় খুলছে, প্রস্তুতি নিচ্ছে কর্মযজ্ঞ শুরু করার। আসিফ দেখল এই ছেলেটাই গুলি করেছিল। তারমানে ওর পকেটেই পিস্তলটা আছে। আস্তে আস্তে এগিয়ে গেল আসিফ, খুলে রাখা প্যান্টের পকেটে হাত দিল। যা ভেবেছিল ঠিক তাই। পকেটেই আছে পিস্তলটা। সেফটি ক্যাচ অফ করে নিল।
সন্ত্রাসী তিন জন তখন রিমিকে নিয়ে ব্যাস্ত! আশে পাশে কি ঘটছে তা দেখার সময় নেই। আসিফ সামনের প্রায় দিগম্বর হয়ে দাড়িয়ে থাকা সন্ত্রাসীর পিঠে গুলি করল। গুলি লাগার সাথে সাথে ধপ করে পরে গেল দেহটা। অপর দুই জনের হুশ হল। ওরা দুজনেই নিরস্ত। রিমিকে ছেড়ে দিয়ে সরে গেল। রিমি অবিশ্বাসের চোখে আসিফকে দেখল, পেটে কাছে শার্টটা রক্তে মাখামাখি, সেই অবস্থায় আসিফ পিস্তল হাতে দাড়িয়ে আছে। তার দুচোখে খুনের নেশা।
একজন সন্ত্রাসী বলল, “ভাইজান। আমারে মাফ কইরা দেন, আমার কোনও দোষ নাই, হেরাই....” আর কিছু বলত হয়ত, কিন্তু বুকে লাগা গুলিটা তার জবান আটকে দিল। অপরজন দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করল। কিন্তু দরজার কাছে পৌঁছানোর পর একটা গুলি লেগে ছিটকে দু হাত দূরে গিয়ে পরল।
রিমি দৌরে এসে আসিফকে আঁকড়ে ধরল। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল, “আসিফ! আসিফ! আমি ভেবেছিলাম তুমি...তুমি...”
“আমাকে বোধহয় একটা দ্বিতীয় সুযোগ দেয়া হয়েছে, রিমি! হারিয়ে গিয়েছিলাম কোনও একটা অন্ধকার গহ্বরে। আবার ফিরে এসেছি....”
“তোমার কথার কিছুই বুঝতে পারছি না”।
“বুঝে কাজ নেই। এখানে আর একমুহূর্ত থাকা নিরাপদ নয়। চল এখান থেকে পালাই”।
“কোথায় যাবে?”
“জানিনা! তবে এখান থেকে অনেক দূরে চলে যাব। অনেক স্বপ্ন এখনও অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে, পুরন করতে হবে.......”
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মে, ২০১৩ বিকাল ৫:৪০