লেখকদের কাতারে আমাকে ফেলা যাবে কিনা জানিনা। গত কয়েককদিন আগে আমাকে কে জানি বলল, আপনি মিয়া ব্লগারদের কাতারেই পড়েন না। ব্লগার পরিচয় নিয়ে কখনো খুব বেশি ভাবিনাই কিন্তু ব্লগারদের কাতারটা কি এটা নিয়ে বিশেষ চিন্তায় পড়ে গেলাম। ব্লগার হতে হলে নিয়মিত পোস্ট দিতে হয় যা আমার মধ্যে আগে ছিল কিন্তু এখন নাই। নিয়মিত ব্লগ লেখার ব্যাপারে সব থেকে বড় প্রতিবন্ধকতা হল আমার ল্যাপটপ যা দিয়ে অভ্র চলেনা। আগে ফ্রী ছিলাম এখন ব্যাংকে চাকুরী করি। মানুষের টাকা পয়সার হিসাব করি। এবার আসা যাক বই বের করার ব্যাপারটা আসলো কোথেকে। ৩১ তম বিসিএস(ভাইভা দিয়েছিলাম আর কি) ধরা খেয়ে তখন ৩৩ তম বিসিএস (রিটেন) দিব কিনা সেই চিন্তায় চিন্তিত। বাংলাদেশ ব্যাংক -এর এডি নামক একটা পোস্ট আছে সেটার জন্য ভাইভা দিতে হবে তবে খুব সুবিধা করতে পারছিনা। ব্যাংকিং ডিপ্লোমা দিব। এমবিএ সেমিস্টার ফাইনাল। বিশিষ্ট লেখক বন্ধু মারুফ রেহমান এসে বলে জিকো ভাই একটা হরর গল্প লিখে দেন। এসব ক্ষেত্রে যতখানি আগ্রহ দেখানো উচিত এবং সবসময় দেখাই এবারের আগ্রহের মাত্রা তার থেকে কম। মারুফ ভাই ঈদের একটা নাটকের স্ক্রিপ্ট রাইটার নাটকের নাম হাউজ-হাসবেন্ড সেখানে নোবেলের ছেলের নাম আমার নামে (জিকো)।সেই নাটকের জিকোকে দেখার পর থেকে আমার মেজাজ খারাপ। এমনিতে বর্ণ বৈষম্য আমার মধ্যে নাই তবে এবার মানতে পারলাম না। নোবেল ফরসা কিন্তু জিকো কালো! শুধু যে নোবেল ফরুসা তা না, নাটকে নোবেলের বউও ফরসা, তার শালীও ফরসা এমনকি কাজের বুয়াও ফরসা। তো এরকম অবস্থায় মারুফ রেহমানের কথা শোনা যায়না। আমি বললাম, ঐ মিয়া আপনি আমার সাথে ফাইজলামী করেন? মারুফ ভাই বললেন, বস চলেন কোক খাই। কোকের কথায় মন দ্রবীভূত হল। মারুফ ভাই বললেন, নতুন এক প্রকাশনা এসেছে, আহসান হাবীব কিছু গল্প যাচাই-বাচাই করবেন, আপনি গল্প দেন, হরর লাগবে। দিলাম একটা গল্প, হরর হইছে কিনা জানিনা তয় পড়ার পর আমার অল্প-স্বল্প ভয় লেগেছে। গল্প গেল সার্জিল খানের কাছে। এবার সার্জিল এসে বলে জিকো ভাই গোয়েন্দা গল্প দেন, দিলাম। সার্জিল বলে, মুক্তিযুদ্ধের গল্প দেন, তাও দিলাম। এরপর সার্জিল এসে বলে ভাই একটা দুঃসংবাদ। দুঃসংবাদ আমি আগেই বুঝে ফেলি, বললাম, গল্প ছাপানো যাবেনা তাই তো? ঠিক আছে বাদ। সার্জিল বলে, ভাই তা না, আমার প্রকাশক চান আপনার নিজের একটা বই বের করতে। কি বলব বুঝলাম না। বললাম, আচ্ছা ঠিক আছে। এর মাঝে বাংলাদেশ ব্যাংকে ভাইভা দিলাম। ভাইভা দিতে গিয়ে আউলায় গেলাম। তারপর একদিন সার্জিলের ফোন, ফোন দিয়ে সে কাউকে ধরিয়ে দিল, যে কথা বলল সে ধমকের সুরে বলল, আপনার লেখা কই? আমি বললাম দিচ্ছি। অনেক ধরনের লিখা আছে, রম্য, ছোট গল্প, বাচ্চাদের লেখা, খলিল সিরিজ, সার্জিলের পছন্দ কিছু রম্য গুছায় দেন। বেকায়দা নামে একটা সিরিজ মাঝে মাঝে লিখি, শুধু সেটা দিয়ে বই করা যায়না, আর লিখা গুলা ছাপার মত গুছানো না। এমবিএ থিসিস নিয়ে ব্যস্ত, ল্যাপটপ খুলে থিসিস করি ডেস্কটপ খুলে গল্প ঠিক করি। ডেস্কটপ মাঝে মাঝে বন্ধ হয়ে বিপদে ফেলে। ইতিমধ্যে আমার বিয়ের দিনক্ষন ঠিক হয়ে গেছে সবাই মিলে শপিং করে আমি বলি এই ঝামেলায় আমি নাই আমার বউ করে মন খারাপ। এমবিএ থিসিস টিচার ,তিনি ঢাবির বিখ্যাত টিচার। তার নামের সাথে যেহেতু আমার নাম যাবে তাই অল্পতে তিনি কোনকিছুই ছাড়েন না না। তা সে এক বেকায়দা অবস্থা।
বেকায়দা বইটাতে কি আছে? আপনারা যারা আমার ব্লগ পড়েন, যারা ফেসবুকে আমার স্ট্যাটাসে মজা পান, এই বই তাদের জন্যই বের করা। বইটা আমি উৎসর্গ আপনাদের নামেই করেছি। বলে দিয়েছি আমার ফেসবুকের সকল বন্ধুদের নামে উৎসর্গ করা হলো। ব্লগের যে লিখাগুলা বইয়ে পাবেন সেগুলো চেষ্টা করেছি হুবুহু না রেখে কিছুটা উন্নত করতে। আমার ভাষাজ্ঞানে স্বল্পতা আছে এটা বুঝতে পেরেছেন প্রুফ রিডার। তিনি বলে দিয়েছেন আপনি এত লেখাপড়া করেছেন আপনার ভাষার এই অবস্থা কেন। আমি বুলেছি, ভাই আমি সবসময় উন্নত করার চেষ্টা করি এই জায়গায় পিছিয়ে পড়েছি, এই জায়গাটাও ঠিক হয়ে যাবে। যাই হোক, বইটির প্রিন্ট শেষ তবে বাইন্ডিং এর কাজ চলছে। আশা করা যাচ্ছে ৪ ফেব্রুয়ারী থেকে ১৬৪ নং স্টলে (দিনরাত্রি)পাওয়া যাবে। যদি বইমেলা যান, আপনার প্রিয় লেখকদের বই কেনার পর যদি মনে হয় এখনও ১০৫ টাকা খরচ করার মত অবস্থা আপনার আছে তাহলে এটা কিনা নিয়ে যাইয়েন। ভাল লাগলে লাগল, আর না লাগলে চেষ্টা অব্যাহত থাকবে ইনশাল্লাহ।
বইয়ের নামঃ বেকায়দা
লেখকঃ রাসয়াত রহমান জিকো
যে স্টলে পাওয়া যাবেঃ দিনরাত্রি (১৬৪ নং স্টল)
মূল্যঃ ১০৫/= (২৫% কমিশন দেওয়ার পর)
বইয়ের প্রচ্ছদটি করে দিয়েছেন আহসান হাবীব স্যার।