১৯৯৩/৯৪ (সঠিক সালটা ভুলে গেছি) সালের ঘটনা। বাকের ভাইয়ের ফাসির রাত। লোকজন রাস্তায় নেমে গেছে। বাকের ভাইয়ের ফাসি হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে। হুমায়ুনের (হুমায়ুন আহমেদ) চামড়া তুলে নিব আমরা। তা বাকের ভাইয়ের ফাসির সাথে হুমায়ুন আহমেদের সম্পর্ক কি? বাকের ভাই নামক চরিত্রের সৃষ্টি হুমায়ুন আহমেদের হাত ধরে। রাস্তা-ঘাটের গুন্ডা-পান্ডা কিন্তু দারুন হৃদয়বান লোক বাকের ভাই। দারুন ভালবাসে মুনাকে। যে কোন বিপদে তিনি এগিয়ে আসেন। তার সাথে ঝামেলা রেবেকা কুত্তাওয়ালীর। অসীম ক্ষমতা যার। সুরুজ মিয়া নামক একজন দারোয়ানকে খুন করে কিন্তু ফাসিয়ে দেওয়া হয় বাকের ভাই আর মজনুকে। মিথ্যা স্বাক্ষ্য দেয় বদি। এটা ছিল নাটকের কাহিনী। পরে বাস্তবে বদির (আব্দুল কাদের) গাড়িতে ঢিল ছোড়া হয়। রেবেকা ভুমিকায় অভিনয়কারীর বাসার জানলা ভেঙ্গে ফেলা হয়। নীপিড়িত জনতা জেগে উঠেছে। বাকের ভাইয়ের প্রতি অবিচার মেনে নেওয়া যাবেনা। হাওয়ামে উড়তা যায়ে গান্টা তখন সবাই গায়। ঐটা বাকের ভাইয়ের হিট গান। হুমায়ুনের চামড়া তুলে নিব আমরা। হুমায়ুন আহমেদ তখন মহা বিপদে। এত চমৎকার একটা নাটক এল তার হাত ধরে তাকে ফোন করে বলা হয়- বাকের ভাইয়ের কিছু হলে আমরা আপনাকে ছাড়বনা। হুমায়ুন আহমেদ নাটকে যথেষ্ট ব্যালেন্স করার চেষ্টা করেছেন। উপন্যাসে কুত্তাওয়ালীর কিছু হয়নি। তবে নাটকে তমালিকা কর্মকার কুত্তাওয়ালীকে খুন করে। বাকের ভাইয়ের ঋন শোধ করে।
এত পুরান কথা বলার একটাই কারন। নির্দোষের প্রতি অবিচার মেনে নেওয়া যায়না। সেটা নাটক ছিল। কিন্তু তারপরেও মেনে নেয়নি কেউ। তখন খালি ধারনা করা হয়েছিল বাস্তবে এরকম অবিচারের সন্ধান পেলে জনগন ছাড়বেনা।
২০০১ সালে আমি অল্পের জন্য ভোটার হতে পারলাম না। আফসোস হল। তখন কোন কারনেই হোক সবাই আওয়ামীলীগের উপর বিরক্ত। যেটা হয় আর কি। যে কোন সরকারের শেষ আমলে তার উপর জনগন বিরক্ত হয়ে যায়। এক নেতার ছেলে দোকানদারকে পিস্তল ঠেকিয়ে খুন করে। মানিক নামে কোন এক বীরপুরুষ কেক কাটে তার শততম ধর্ষনের উপলক্ষে। মানুষ বিরক্ত। আনা হল বিএনপি জামাতকে। আমি ভোট দেইনি দিলে হয়ত বিএনপিকেই দিতাম (এটা তখনকার কথা বলছি)। তার কয়েকদিন পর একটা অদ্ভুত খবর পড়লাম। পেপারের হেডলাইন - বাবা আমার মেয়েটা ছোট, একজন একজন করে যাও। ভিতরের পাতা পড়লাম। এরকম যে কোন খবর হতে পারে তাও জানা ছিলনা। জামাই-বউ যেহেতু হিন্দু ধরে নেওয়া হয়েছে তারা নৌকায় ভোট দিয়েছে। এটাই তাদের দোষ। আর কিছুই না। এই কারনে ১১ জন গিয়েছে তাদের ক্লাস এইটে পড়া মেয়ে যার নাম রানী তাকে গনধর্ষন করার জন্য। বাবা-মায়ের কোন উপায়েই নাই কিভাবে তাদের মেয়েকে বাঁচাবে। তিনি ধর্ষকদের "বাবা" বলে সম্বোধন করলেন এবং কতটা অসহায় হলে এই কথা বলে একজন একজন করে যাও। এই একটা খবরেই মনস্থির করলাম। যা কিছুই হোক। ধানের শীষ বলে আর কিছু থাকবেনা আমার মনে। যাই হোকনা কেন। এরপরে অনেক জল গড়িয়েছে। তারেক জিয়া, গিয়াস উদ্দীন আল মামুন কিন্তু কোন কিছুই আমার আর শোনার দরকার নাই। মাঝে মাঝে আমি খুব ছোট জিনিসেই অনেক বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। ২০০৩ সালে শচীনের পাকিস্তানের সাথে বিশ্বকাপে ৭৩ বলে ৯৭ রান করার পরেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এই লোকের কোন সমালোচনা আর করব না। সম্প্রতি খবরের কাগজে পড়লাম ঐ ১১ জন ধর্ষকের যাবজ্জীবন হয়েছে (এত কম শাস্তি হওয়া ঠিক হয়নি)। আর মেয়েটাকে কে জানি দত্তক নিয়েছে।
২০০৮ সালের নির্বাচন এল। নৌকায় ভোট যাবে মনস্থির করা। কোন এক কারনে ভোটটাই দেওয়া হলনা। কারন যেই শহরে আমি ভোটার সেই শহরে আমি নেই। নাগরিকের কর্তব্য পালন করতে না পারলেও তেমন সমস্যা হলনা। কারন আমার এক ভোট যেখানে যেত সেই প্রার্থী প্রায় ইনিংস ব্যবধানে জিতল। যাই হোক এখন আসি মুল কথায়। আবার বাকের ভাইয়ের প্রসংগে আসি। কারন কথা হবে লিমনকে নিয়ে। একজন অপরাধী অপরাধ করার আগে তাকে চিনা যায়না। একটা লোক ভাল না খারাপ তা চট করে ধরা কঠিন। কিন্তু একটা লোকের চোখের চাহনী অনেক কিছু বলে দেয়। আমি জানিনা আমি ঠিক না বেঠিক কিন্তু কারও কি আজ পর্যন্ত লিমনকে দেখে মনে হয়েছে সে অপরাধী হতে পারে? আইনের একটা কথা আছে। সত্যিকারির অপরাধীকে ছাড়া যেতে পারে কিন্তু কোনভাবেই নির্দোষ যেন সাজা না পায়। কারন অপরাধী ছাড়া পেয়ে আবার অপরাধ করবে তখন সুযোগ থাকবে তাকে ধরার। কিন্তু নিরপরাধ সাজা পেলে সমাজ ব্যবস্থাই ভেঙ্গে পড়বে। যা কিছু তাই হতে পারে। আমি যে আমার মৌলিক চাহিদার পেছনে ছুটব কিন্তু সে জন্য যদি আমার প্রাণটাই চলে যায় তাহলে যাব কই? লিমনের একটা পা চলে গেল। একটা পা চলে যাওয়া মানে কি সেটা কি কেউ বুঝতেসে? তাকে নাকি নকল পা লাগিয়ে দেওয়া হবে। তা কে কার খোঁজ রাখে তাতো জানা আছে। নকল পায়ে যে ইনফেকশন হবে তখন লিমনের খরচ কে দিবে? আর পা হারানো লিমন আবার জেলহাজতে কেন? পুরা ব্যাপারটা যে কে তা জানিনা। কিন্তু নির্দোষ কেউ সাজা পাবে কেন?
বাকের ভাই তো ছিলেন নাটকের আসাদুজ্জামান নুর। তিনি নিজেই এখন ক্ষমতাসীন দলে। নাটকে বাকের ভাইয়ের ফাসি দেখে যদি জনগন রাস্তায় নামতে পারে তাহলে বাস্তবের লিমনের জন্য জনগন গেল কই?
যাই হোক যে কেউ বলে বসতে পারে আমি এইসব কথা বলার কে? ভাই আমি কেউ না। আমরাই কেউ না। আমাদের বাবা-মা (আওয়ামী-বিনপি) সব খারাপ। বাচ্চারে বাপ মারলে মায়ের কাছে যাবে। মা মারলে বাপের কাছে- কারন তার মনে হয় যাওয়ার জায়গা নাই। এখন পর্যন্ত তো ভোট দেইনাই। কিন্তু এরপর যখন দিব নৌকায় দিতে গেলে তো চিন্তা করা লাগবে এক পাও নাই। আর ধানের শীষ দিতে গেলেও তেমনি কিছু একটা নাই।
যাই হোক কেউ আমার কথা সিরিয়াসলি নিয়েননা। অনেক কষ্ট করে লেখাটা পড়সেন সেই জন্য ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০১১ রাত ৯:১০