somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গেরিলা - আমাদের গর্বের অংশ।

২৩ শে এপ্রিল, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটি ভাল সিনেমা বানাতে কি লাগে? ফিনান্স লাগে? যোগ্যতা লাগে? মুন্সিয়ানা লাগে? ভালো গল্প লাগে? ভালো স্ক্রিপ্ট লাগে? ভালো অভিনেতা লাগে? ভালো ডিরেক্টর লাগে?

এগুলা লাগে। তবে এগুলার আগে একটা জিনিস খালি লাগে- ভাল সিনেমা বানানোর ইচ্ছা। গেরিলা সিনেমাটি দেখার পর আমার সেটাই মনে হল। যিনি এর ডিরেক্টর, তাঁর ইচ্ছা ছিল একটা ভাল সিনেমা বানানো। একাত্তর আমাদের কাছে অচেনা নয়। ৩ ঘন্টার ফ্রেমে একাত্তর তুলে ধরাও এত সহজ নয়। তবে যিনি ডিরেক্টর তিনি চেষ্টা করেছেন। কারন তিনি নিজেই কাহিনীর অংশ ছিলেন। সারাজীবন আনন্দে ঐশ্বর্যে বড় হয়ে সব কিছু অনুভব করা সম্ভব নয়। মেহেরজানের রুবাইয়াত ছিলেন সেখানেই অসফল। কোন কিছু বোঝার জন্য নিজেকে সেখানে নিয়ে যেতে হয়। রুবাইয়াতের এত যোগ্যতা ছিলনা। কিন্তু গেরিলার পরিচালকের সেই যোগ্যতা আছে। কাহিনীর উপলব্ধির যোগ্যতা। কাহিনী বিন্যাসের যোগ্যতা।





গেরিলা ছবির পটভুমি ১৯৭১। বিলকিস বানুর (জয়া মাসুদ) স্বামী হাসান (ফেরদৌস) একজন সাংবাদিক। ২৫ মার্চের রাতে তাকে দায়িত্ব পালন করতে বের হতে হয়। ঘুমন্ত নিরীহ জনতার উপর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর আক্রমনের বিভীষিকাময় রাতে হারিয়ে যান বিলকিস বানুর স্বামী হাসান। এরপর নিজের স্বামীর খোঁজেই হোক আর অথবা দেশের টানেই হোক বিলকিস বানু হয়ে যান একজন গেরিলা।
মুক্তিযুদ্ধ মানেই যে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করতে হবে ব্যাপারটা সেরকম না। গেরিলা বাহিনীর আক্রমনকে সাহায্য করাও মুক্তিযুদ্ধ। তবে বিলকিস বানু অস্ত্র হাতে নেন। তার কৌশলে আর্মি ক্যাম্পে বোমা ফাটে। তাকে সাহায্য করতে গিয়ে মারা যান শম্পা রেজা (মিসেস খান)। তারপর ২৯ শে আগস্ট সবাই ধরা পরে। আলতাফ মাহমুদ ধরা পরে। রুমি ধরা পরে (রুমির অংশটা সিনেমাতে নেই)। আজাদ ধরা পরে। পালিয়ে যান বিলকিস বানু। বিলকিস বানুকে পালাতে সাহায্য করার জন্য জীবন দিতে হয় এটিএম শামসুজ্জামানকে। ধর্ষিত হতে হয় তার স্ত্রীকে। কোনোভাবে পালান বিলকিস বানু। পালিয়েও রক্ষা নেই। পুরা দেশেই যে তখন হায়েনার থাবা। যেখানে যাকে পাচ্ছে মারা হচ্ছে। মেয়েদের তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধাদের উড়িয়ে দেওয়া ব্রিজের কারনেই বিলকিস বানুর বাড়ি যাওয়াটা কঠিন হয়ে যায়। কিন্তু সেখানে একজন তাকে সাহায্য করে। তার নাম সিরাজ। খোকন কমান্ডারের লোক। খোকন কমান্ডার বিলকিস বানুর আপন ভাই। আর কিছু আপাতত আর বলতে ইচ্ছে করছেনা। কারন কাহিনী পুরা বলে দিলে আর সিনেমাতে দেখবেন কি।

সিনেমাটা দেখে আমার প্রথমে যেটা মনে হয়েছে সবাই নিজেকে ঢেলে দেওয়ার চেষ্টা করছে। সবাই আপ্রান চেষ্টা করছে ভাল একটা সিনেমার অংশ হতে। সেই অংশ হওয়াতে সব থেকে বেশি যে সফল সে জয়া আহসান। বিলকিস বানুর ভুমিকায় যে অভিনয় করছে। অভিনয় ব্যাপারটা এত সহজ নয়। মুখ দিয়ে ডায়লগ বললেই অভিনয় হয়না। বডি ল্যাঙ্গুয়েজ একটা বিশাল ব্যাপার। জয়া আহসানের প্রতিটা এক্সপ্রেশন ছিল দেখার মত। আলতাফ মাহমুদের চরিত্রটিও খুব চমৎকার ভাবে করা হয়েছে। পাকিস্তানি ক্যাপ্টেন সরফরাজ যখন বলে, আলতাফ কৌন হ্যায়। আলতাফ মাহমুদের বলিষ্ঠ কন্ঠের উচ্চারন ছিল শিহরিত হওয়ার মত। দর্শকদের চোখে পানি আসার মত। এ টি এম শামসুজ্জামানের অভিনয় নিয়ে আলাদা ভাবে বলার কিছু নেই। অভিনয় হল তার কাছে পোষা পাখি। বিলকিস বানুকে পালাতে সাহায্য করার পর বাড়ি ফিরে মিলিটারির সামনে তার দাড়ানোর দৃশ্যটি গায়ে কাটা না দিয়ে পারবেনা। তবে সব থেকে ভাল অভিনয় কে করেছে সেটা বলি। সেটা হল পাকিস্তানি ক্যাপ্টেনের ভুমিকায় যিনি ছিলেন (শতাব্দী ওয়াদুদ)। অনায়াসে তাকে আপনি ঘৃনা করবেন। তার অভিনয় ছিল এতটাই নিঁখুত। অথচ সে কিন্তু দ্বৈত চরিত্রে। এটা বুঝতেও আমার বেশ সময় লাগল।




(গেরিলা ছবির ট্রেলার)

একাত্তর বলতে আমরা যে অন্যায়, অবিচার বুঝি সবই আছে এই সিনেমায়। নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষন, অপমান সব। রাজাকার আছে। গোলাম আজমের নাম আছে। এবং সেগুলার প্রেজেন্টেশন এতই চমৎকার যে মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না। গেরিলা আক্রমনগুলা হয়ত অত ভাল নাও লাগতে পারে। সেটা হয়েছে সীমাবদ্ধতার কারনে। হলিউড আমরা যে একশন দেখি তা চাইলেও আমাদের সিনেমাতে আনা সম্ভব না। তবে তারপরেও ডাইরেক্টর সফল। একটা মেয়ে পথে পথে ঘুরছে আশ্রয় খুঁজছে তার মেক-আপ যেমন হওয়া ছিল ঠিক তাই। সাধারন বাংলা সিনেমার ডায়লগ শুনলে মনে হয় যাত্রার ডায়লগ এখানে তেমন ব্যাপার নেই। কোন আদিখ্যেতাও নেই। জয়া আহসান আর ফেরদৌসের আধা-রোমান্টিক জায়গা গুলাও উপভোগ করার মত। জুনিওর আর্টিস্টদের অভিনয়ও বেশ ভাল। আর খুঁত খুজে পাওয়াটাও কঠিন। সেটগুলাতে চেষ্টা করা হয়েছে '৭১ এর মত করতে। ট্রেনে লেখা পূর্ব পাকিস্তান রেলওয়ে। সাইন বোর্ডে লেখা- দলে দলে রাজাকারে যোগদান করুন - গোলাম আজম। পোষাক-আশাক নির্বাচনেও যথেষ্ট মুন্সিয়ানার পরিচয় দেওয়া হয়েছে।

সিনেমা সম্পর্কে আমার অভিমত হল এই সিনেমা সবার দেখা উচিত। এটা কোন কর্তব্যের মধ্যে পরেনা কিন্তু আপনি নিশ্চয়ই একটা ভাল সিনেমা দেখতে পছন্দ করবেন। অনেক মানুষ আছে নিজেদের ওভার স্মার্ট দেখাতে গিয়ে ৭১ এ এলার্জি ভাব দেখায়। তবে সিনেমা বানানোর জন্য ৭১ এর থেকে আর ভালো প্লট যে হয়না সেটা এই সিনেমা দেখলেই বোঝা যায়। কারন ৭১ এর প্রত্যেক পরতে পরতে যে গর্বের কাহিনী লুকিয়ে আছে সেটা আর কোথাও নেই। সেই গর্বের কাহিনী হল মুক্তিযোদ্ধাদের কাহিনী। সেই গর্বের কাহিনী হল আমাদের গেরিলা আক্রমনের কাহিনী।

ছবিটা দেখে একটা আফসোস অবশ্য হতে পারে। একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা না হতে পারার আফসোস, একটি গেরিলা আক্রমনের অংশ না হতে পারার আফসোস।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০১১ রাত ৯:৫৭
৩৫টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×