আমার বন্ধু মোঃ ইকবাল হোসেন যাকে আমরা বন্ধুরা ডাকার সময় "ইক" শব্দটা বাদ দিয়ে ডাকি। রসায়ন বিজ্ঞানে "ইক" মানে বড় "আস" মানে ছোট তবে এখানে এরকম কোন ব্যাপার নেই। সে ক্রিকেটের সবসময় অন্তঃপ্রাণ। আমার টিকেট প্রাপ্তির খবর পাওয়ার সাথে সাথেই সে আমার সাথে যোগাযোগ করে কোনভাবে তার একটা ব্যবস্থা করা যায় কিনা। আমার দুলাভাই মারফত আমি সবগুলো খেলার টিকেট পেলেও আমার বন্ধুদের জন্য তেমন সেই সুবিধা গ্রহন করা যায়নি। কোনোরকমে চট্টগ্রামের বাংলাদেশ বনাম হল্যান্ড খেলায় তাকে একটা ব্যবস্থা করে দিতে পেরেছিলাম। আজ যখন বাংলাদেশ বনাম দ আফ্রিকার খেলা ছিল তার আগের দিন মানে গতকাল সে প্রথমে আমাকে জানাল যে সে আন্তর্জাতিক গ্যালারীর টিকেট পেয়েছে। মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি পাওয়ার খুশিতে সে গদগদ। এর পর বৃষ্টির পর বজ্রপাতের দরকার ছিল। কে জানি তাকে ফোন করে একটা হসপিটালিটি বক্সের টিকিট দিল। সে খুশিতে এবার ঘদঘদ। আজকের এই দুর্দিনের গ্যালারী মঞ্চ ইকবালকে নিয়ে লেখা শুরু করার কারন সবশেষে বোঝা যাবে।
কালকে রাতে বাসার বাইরে ছিলাম কারন আজকে একটা পরীক্ষা ছিল। যার বাসায় ছিলাম সেখানে পরীক্ষার প্রস্তুতি চলছিল। বাসা মিরপুর সেন পাড়া। সকালে উঠে স্টেডিয়ামে যেতে তাই খুব বেগ পেতে হবেনা। সেনপাড়া থেকে মিরপুর-১০ খুব কাছে। সকালে উঠে মিরপুর-১০ ব্রিজ পার হচ্ছি আর দেখছি হাজার হাজার মানুষ স্টেডিয়ামের দিকে ধাবমান। দ আফ্রিকাকে হারাতে পারলে কোয়ার্টার ফাইনাল। স্বপ্নে বুলিয়ান সবাই। এই প্রথমবারের মত আমি তেমন ভরসা পাচ্ছিনা কিন্তু তারপরেও আশা যদি কিছু একটা হয়ে যায়। স্টেডিয়ামে গিয়েই বন্ধু ইকবাল হোসেনের সাথে দেখা। তার দুই গালে বাংলাদেশের পতাকা আঁকা। তবে শুধু সে না। মাঠে আসা অনেক দর্শকদেরি সেই সাজ। হাজার হাজার ছেলে মেয়ে জার্সি পরে এসেছে। স্টেডিয়ামে ঢুকলাম। সেখানে আমার পাশে যিনি বসেছেন তিনিও দেখি চেনা লোক। তার নামও ইকবাল। ইকিবাল সাহেব এলজি এর বড় কর্মকর্তা। এত ইকবালের মাঝে আশা করি তামিম ইকবাল তার ঝলক দেখাবে।
উপমহাদেশের ফিল্ডিং আর সাউথ আফ্রিকান্দের ফিল্ডিং-এর মধ্যে যে আকাশ পাতাল পার্থক্য তার কারন আছে। সাউথ আফ্রিকানরা ছোট বেলায় সব খেলাই খেলে। তারা এথলিট হয়, তারা রাগবি খেলে, তারপর একটা পর্যায়ে এসে ক্রিকেটার হয়। ক্লুজনার ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত রাগবি দলে ঢোকার চেস্টা করেছিলেন। এতে যা হয় তাদের শরীরে ভারসাম্য থাকে। যখন তখন লাফ দিয়ে বল থামিয়ে দেয়। ফিল্ডিং দিয়েও যে খেলা জেতা যায় এটা কিন্তু তাদেরই আবিষ্কার। ১৯৯২ সালে তারা দেখিয়েছিল প্রথম। ইনজামাম উল হকের রান আউট এখনও অনেকের চোখে ভাসে। আমাদের ফিল্ডিং তাদের মানের না হলেও জানতাম খুব খারাপ না। শুভ , নাইমরা ভাল ফিল্ডার। তবে কালকে রাজ্জাক একাই মনে হয় ফিল্ডিং দিয়ে ২০ রান দিয়ে দিল। তার পায়ের তল দিয়ে বল চলে গেল সীমানায়। যেখানে একটু ডান দিকে ঝাপ দিলেই ক্যাচ হয় সেখানে চার হয়ে গেল। ক্রিকেট বড় দৈর্ঘের খেলা হলেও ব্যবধান কিন্তু হয় এইসব ছোটখাট কারনেই। একটা ক্যাচ মানে একজন ব্যাটসম্যানকে থামিয়ে দেওয়া। ক্যাচ মিস খেলার অংশ হতে পারে কিন্তু এপ্লিকেশনের অভাবটা অন্য জিনিস। খেলা জিতার জন্য আকাঙ্খা লাগে, শরীরের ভাষা লাগে, বিপক্ষ দলকে ভয় পাইয়ে দেওয়া লাগে এবং লাগে হৃদয়।
আমরা কোন কিছু হলেই আশরাফুলকে গালি দেই। আমি নিজেও দেই। সম্ভবত সেখানে কোনো কৌতুক কাজ করে। কালকে মাঠে গিয়ে একটা ব্যাপার বুঝলাম। আশরাফুলের এভারেজ ২৩ হতে পারে কিন্তু সে যেটা পারবে সেটা অন্যরা পারবেনা। আশরাফুলের সিন্সিয়ারিটির অভাব কিন্তু ভাল বোলিঙ্গের বিরুদ্ধে কিভাবে ব্যাট করতে হয় সেটা সে ১০ ম্যাচের মধ্যে ১ ম্যাচে দেখাতে পারবে। অন্যরা মনে হয়না তা পারবে। বাংলাদেশের অনেকের এভারেজ ৩০ এর উপরে তবে সাকিব তামিম ছাড়া বাকিদের এরকম অবস্থার একটা কারন হতে পারে অনেক বেশি আমরা জিম্বাবুয়ের সাথে খেলি। কালকে একটা জিনিস বুঝলাম জিম্বাবুয়ের সাথে এত বেশি বেশি খেলায় আসলে কোন লাভ নেই। আমি যেই অঙ্কের সুত্র গুলা ভাল ভাবে পারি সেগুলার উপর ভিত্তি করে প্রশ্ন করা হলে আমি ভাল করবই। কিন্তু আমার দরকার কঠিন কঠিন অঙ্ক শিখা। টেক্সট বইয়ের অঙ্ক শিখে ক্লাসে ভাল করা যেতে পারে ম্যাথ অলিম্পিয়াডে না। সে জন্য দরকার নিবিড় অনুশীলন। বাংলাদেশ জিম্বাব্যের সাথে খেলতে খেলতে কঠিন বোলিং কিভাবে খেলতে হয় এটাই ভুলে গেছে। তামিম ইকবাল বলেন, আমি বল দেখি বোলার দেখিনা। এই কথাটা তিনি যখন বলেছিলেন তখন তিনি ভাল ফর্মে ছিলেন তাই অনেকে মেনে নিয়েছিল। আমার মনে হয় কথাটাতে কিছু ফাঁক আছে। বল দেখার পাশাপাশি বোলার দেখাও জরুরি। প্রত্যেকটা বোলারের নিজস্ব স্পেশালিটি আছে। জিম্বাবুয়ের পানিয়াঙ্গারা যেই বল করবে ডেইল স্টেইন নিশ্চয়ই সেই বল করবেনা। তাহলে বোলার দেখিনা বল দেখি এই কথাটা খুব জোরালো কিছু হলনা। হা এটা আলাদা জিনিস কোন বোলারকে ভয় পাওয়ার দরকার নেই। কিন্তু শ্রদ্ধা করার দরকার আছে। ভাল বলকে শ্রদ্ধা করার দরকার আছে।
বাংলাদেশের খেলোয়াররা প্রতিভাবান এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু টেম্পারমেন্ট ছাড়া ট্যালেন্ট কোন কাজে আসেনা আসলে। কালকে স্টেডিয়ামে বসে সাউথ আফ্রিকার ব্যাটিং যে দেখলাম। তারা ২৮৪ করেছে। এই ২৮৪ রানের মধ্যে প্রথম ৩৫ ওভার পর্যন্ত তারা একটা বাজে শটও খেলেনি। ক্যালিস এসে ছয় মারার আগ পর্যন্ত একটা লফটেড শটও ছিলনা। কোনরকম তারাহুরা ছাড়াই ওভার প্রতি ছয় রান নিচ্ছে। বলটাকে ব্যাটের মাঝখানে লাগাচ্ছে। গ্যাপে চলে যাচ্ছে। বাংলাদেশের ফিল্ডাররাও মিস ফিল্ডিং দিচ্ছে। জ্যাক ক্যালিস ব্যাট করতে আসলেন। আমরা সাকিব আল হাসানকে বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার বলি। আইসিসি এর লিস্ট ও তাই বলে। কালকে ক্যালিসের ব্যাটিং দেখে বুঝলাম সর্ব কালের সেরা অলরাউন্ডার কাকে বলে। একটা বলও তার ব্যাটের মাঝখান ছাড়া অন্য কোথাও যায়না। এমননা যে শাফিউল তাকে খারাপ বল করেছে। কিন্তু ক্রিকেটের ব্যাসিক সে অক্ষরে অক্ষরে পালন করে চলেছে। কোন অস্থিরতা নাই। আছে খালি একাগ্রতা। কিভাবে বলগুলাকে ব্যাটের মাঝখানে আনা যায়। কোন ক্রস ব্যাটের শট নেই। দরকারটা কি? ব্যাসিক ঠিক রাখতে হবে ৯০%। এরপর সেট হয়ে গেলে ইম্প্রোভাইজ। আমাদের আশরাফুলেরও ব্যাসিক খারাপ না। কিন্তু মাঝে মাঝেই সে নেমেই প্রথম বলে স্কুপ শট শুরু করে ক্যান কে জানে!!
আবারো অঙ্কের উদাহরনে চলে যাই। আমি একবার ক্লাসে অঙ্কে ভাল করলাম। এরপর সবাই আমাকে বলা শুরু করল আরে তুমি তো অঙ্কে ভাল, আরে তুমি তো অঙ্কে ভাল। পরের পরীক্ষার সময় আমি অঙ্ক করা ছেড়ে দিলাম। মানে নিয়ম জানি কিন্তু প্র্যাক্টিস করার প্রয়োজন অনুভব করলাম না। কারন আমি তো অঙ্কে ভাল। তারপর ৫০ এ পেলাম ২৩। আশরাফুল যখন শুরুতে শ্রীলঙ্কার সাথে সেঞ্চুরী করে আসল তখন তার সাথেও অনেকটা এরকমই হয়েছে। এমন একটা ভাব যে আশরাফুল নামলেই সেঞ্চুরী। কিন্তু অন্যদল তো আর বসে থাকবেনা। আমি অঙ্ক প্র্যাক্টিস না করলে এমননা যে অন্যরাও করবেনা। কুং ফু পান্ডা সিনেমার একটা ডায়লগ আমার খুব পছন্দ। তুমি ১০,০০০ স্কিল জানলে সেটা তেমন ভয়ঙ্কর কিছুনা। ভয়ঙ্কর সেটাই যখন তুমি একটা স্কিল ১০,০০০ বার প্র্যাক্টিস করবা। শচীন টেন্ডুলকার ১২ বছর বয়স থেকে প্রতিদিন ১০ ঘন্টা নেট প্র্যাক্টিস করতেন। তিনি সবসময় শৃঙ্খল জীবনযাপন করতেন এবং এখনও করেন। যে কোন পেশায় ভাল করতে গেলে এটা লাগে। বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান মেহরাব হোসেন অপিও কম ট্যালেন্টেড ছিলনা। কিন্তু তার জীবনে শৃংখলা ছিলনা দেখেই কবেই হারিয়ে গেছে। আশরাফুল অন্য কোন দেশের খেলোয়ার হলে আমার ধারনা খুব সুন্দর ভাবেই তার ক্যারিয়ার দাঁড়িয়ে যেত। কারন শৃংখলাবদ্ধ একটা জীবন হয়ত কাটাতে হত। আরেকটা ব্যাপারও আছে। সে যদি অস্ট্রেলিয়া টিমের হত তাকে খেলতে হত তাহলে স্টিভ ওয়াহ মার্ক ওয়াহের ছায়ায়। পাকিস্তান টিমে হলে ইনজামাম ইউসুফের ছায়ায়। বাংলাদেশ টিমে তাকে ধরা হত একমাত্র ম্যাচ উইনার। ১৭-১৮ (তখনকার কথা) বছরের একটা ছেলে একটা দেশের একমাত্র ম্যাচ উইনারের চাপ কিভাবে সামলাবে!!
কালকের খেলায় আশরাফুল ছিলনা তারপরেও তার কথা বলছি কারন কালকে যখন সাউথ আফ্রিকান প্লেয়ারদের বাউন্স সামলাতে পারছিলনা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা তখন একটা জিনিস আমি চিন্তা করছিলাম। এরকম বাউন্স খেলার মত ব্যাটসম্যান আমাদের ছিল। এরকম বোলিঙ্গে পুল হুক করাতে পারদর্শী ছিল আফতাব, আশরাফুল, কাপালি। যেরকমই তাদের গড় হোক সবাইকে দিয়ে সব কিছু হয়না। কিন্তু তারা পারে এটা আমি জানি। কারন আমি দেখেছি। আশরাফুল হার্মিসনকে কিভাবে পুল হুক করে মেরেছিল দেখে হার্মিসন নিজেই বলেছিল এত মার জীবনে খাইনি।
বাংলাদেশের কোচ জেমী সিডন্স ১১ জনকে প্র্যাক্টিস করায় আর ৪ জনকে বসিয়ে রাখে এটাও বা কেমন পদ্ধতি কে জানে। মাহেলা জয়াবর্ধনে এত বড় একটা ব্যাটসম্যান তার শুরুটাও কিন্তু আশরাফুলের মতই ছিল। তখন শ্রীলঙ্কার কোচ জানি কে ছিল। ৯৬ এর পর তাদের কোচ পরিবর্তন হয়। ডেভ হোয়াটমোর চলে যান। মাহেলা জয়াবর্ধনে প্রথম দিকে ২, ৪, ৬ এরকম রান করার পর হটাৎ করে ইংল্যান্ডের সাথে ১১২ বলে ১২০ করে ফেলেন। অস্ট্রেলিয়ার মাঠে খেলা ছিল। ৩০১ টার্গেট চেজ করা তখন এত সহজ না। ১৯৯৮ সালের কথা। জয়সুরিয়া ৩৬ বলে ৫১ রান করে রিটায়ার্ড হার্ট। ঠিক তখন জয়াবর্ধনে ঐ ইনিংসটা খেলে। মজার ব্যাপার হছে এরপরে আবার সে ফ্লপ। অনেকটা আশরাফুলের মতই অবস্থা। ৯৯ বিশ্বকাপের পর ডেভ হোয়াটমোর আবার কোচ হলেন। তিনি জয়াবর্ধনেকে দলের সাথে রাখলেন। ঢাকাতে এশিয়াকাপেও আমার মনে আছে আমি গ্যালারীতে। ফাইনালে পাকিস্তানের সাথে জয়াবর্ধনে ডাক (শূণ্য) মারল। তারপরেও তাকে দল থেকে বাদ দিলেননা হোয়াটমোর। খেলালেননা কিন্তু দলের সাথে সাথে রাখলেন। কারন হিসেবে তিনি দেখালেন, তাকে যদি দল থেকে বের করে দেই তাহলে সে আর ফিরতে পারবেনা। একটা এসেট নষ্ট হবে। একেকজনের ট্রিটমেন্ট একেরকম। খেয়াল করে দেখবেন আশরাফুলের অসাধারন সব ইনিংস কিন্তু হোয়াটমোরের আমলেই। তখন আশরাফুল ১০১ করে অস্ট্রেলিয়াকে হারায়, ৮৭ করে সাউথ আফ্রিকাকে হারায়। কোচের কাজ হল মনবল বাড়ানো। আর আমাদের এখনকার কোচ জেমী সিডন্স কি করেন?? সবার সামনে আশরাফুলের সমালোচনা করেন আর সেটা পেপারে আসে। আশরাফুল পাকিস্তানের সাথে ৪৫ বলে ৬৫ করল ২০-২০ বিশ্বকাপে তিনি বললেন ও পরের খেলায় ডাক মারবে। এটা তো একটা কোচের কথা হতে পারেনা। জো মরিনহো কে সবাই ভাল ম্যানেজার বলে কারন প্লেয়ারদের নিয়ে মিডিয়াতে সে কিছু বলেনা, চেলসি হারলে সে বলত দল খারাপ খেলেছে, ইন্টারমিলান হারলেও তাই বলত। কয়েকদিন আগে বার্সিলোনার কাছে রিয়াল ৫-০ গোলে হারল। সে কি আলাদা ভাবে মিডিয়াতে কোন প্লেয়ার সম্পর্কে বাজে কথা বলেছে? তাহলে? আশরাফুলকে অনেক সুযোগ দেওয়া হয়েছে। সত্যি কথা বলতে কি সুযোগটাই দেওয়া হয়েছে। মনের মত খেলতে দেওয়া হয়নি। আশরাফুলের স্কুপ শট খেলে এখন অনেক ব্যাটসম্যান রান করে। ২ বছর আগে ভেটরী যখন এটা খেলছিল তখন কমেন্ট্রিতে রমিজ রাজা বলেছিলেন, ট্রায়িং টু বি এন আশরাফুল।
রকিবুল হাসানকে ৬ নম্বরে কেন নামানো হত সেটা আমার বোধগম্য হতনা। পৃথিবীর আর কোন দেশে পাওয়ার প্লে এর সময় টেস্ট ব্যাটসম্যান নামায় না। টিম কম্বিনেশনে শুরুতেই ৫ জন বা হাতি ব্যাটসম্যান। শুধু শুধুই কি আর ডান হাতি অফ স্পিন নিয়ে আসছে স্মিথ। পারলে সে নিজেই এসে অফ স্পিন শুরু করে। বাংলাদেশ দলে হিটার নেই এটা একটা ভুল কথা। ২০-২০ ঘরোয়া টুর্নামেন্টে একটা খেলা এটিএন বাংলাতে দেখাত। তামিম ইকবালের দলকে হারতে হয়েছিল জিয়াউর রহমান নামের একটা ছেলের কাছে। ২০ ওভারে টার্গেট ১৬১ জিয়াউর রহমানের দল ১০ ওভারে ৫ উইকেটে ৫০। সেখান থেকে জিয়াউর রহমান ৪০ বলে ৭৫ করে জিতাল। সে কোথায়? তাকে কেন পরিচর্যা করা হছেনা!! বোঝাই যাচ্ছে হিটিং তার ন্যাচরাল ট্যালেন্ট। নাকি নাম জিয়াউর রহমান দেখে এই সরকার আমলে তাকে সুযোগ দেওয়াটা অনেকে ঠিক মনে করছেনা!!
গ্যালারী মঞ্চ লিখতে বসেছি গ্যালারীর দুই একজনের কথা বলি। একজন ছিলেন আমার সামনে। বাংলাদেশের রান তখন ৩৫/৫। তিনি বললেন ভাই দুইটা খেলা দেখতে আসলাম দুইটা মিলিয়েও বাংলাদেশ ১০০ করতে পারলনা। আফসোস। খাওয়ার লাইন বিশাল থাকায় পানি কিনতে পারিনাই। দুলাভাইকে বললাম হসপিটাল বক্স থেকে এক বোতল পানি আর পেপসি দিয়ে যেতে। সেখানে সব ফ্রি। পাশের সাউথ গ্যালারীতেই আমি। খেলাম পেপসি। দেবদাস পার্বতীর জন্য মনের দুঃখে মদ ধরছিল আমি মনে দুঃখে পেপসি খামু। খাইয়াই যামু। হামপে ইয়ে কিতনে, কালা রঙ ঢালা, বাংলাদেশ টিমনে হামে, মার ডালা, আল্লাহ, মার ডালা।
তবে সাকিব আল হাসানকে ক্যাপ্টেন্সি থেকে সরানো উচিত না। ব্যাটিং খারাপ করলে ক্যাপ্টেন্সির কিছু করা থাকেনা। আয়ারল্যান্ড, হল্যান্ড, কানাডা, কেনিয়ার এইসব দলের প্লেয়াররাও বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি করে আর আমাদের এখন পর্যন্ত কেউ পারলা। মনের দুঃখে পেপসি খামু না তো করমু কি। কোলকাতা নাইট রাইডার্সে এখন যদি সাকিব কে বসায় রেখে ডয়েস্টেখকে খেলায় আবারো মনে দূঃখে পেপসি খাইতে হবে। আফসুস।
লেখা শেষ করার আগে আরেক ইকবালের গল্প। এর আগে ইকবাল হোসেন, ইকবাল সাহেব আর তামিম ইকবাল তিন ইকবালের কথা বলা হয়েছে। এখন যেই ইকবালের কথা বলব এর বয়স ছয় কি সাত। বাংলাদেশ ৫ উইকেট পড়ার পরে বের হলাম স্টেডিয়াম থেকে। সেন পাড়াতে যাব কারন আমার ব্যাগ সেখানে। ব্যাগ নিয়ে এমবিএ মিডটার্ম দিতে হবে। যেই বাসায় যাব সেখানের গেটে কয়েকটা পিচ্চি ক্রিকেট খেলছে। একজন বলল ঐ ইকবাইল্লা বল কর। ছয় বছরের পিচ্চি প্রানের শক্তিতে বল করে ১০ বছরের একজনকে বোল্ড করে দিল। বোল্ড করেই চিল্লানো শুরু করল। আমি আনমু বিশ্বকাপ। আজ থেকে ষাট বছর আগে ব্রাজিল বিশ্বকাপের ফাইনালে যখন উরুগুয়ের কাছে হেরে গেল তখন সমগ্র ব্রাজিলিয়ায়নদের সাথে পেলের বাবাও কাঁদছিল। তখন দশ বছরের পেলে তার বাবাকে বলে, “ বাবা কেঁদনা, আমি তোমাকে বিশ্বকাপ এনে দিব “। পেলে ব্রাজিলকে তিনটা বিশ্বকাপ দিয়েছে। চোখের পানি অবশ্য কালকে আমার পরেনি। কিন্তু হৃদয় ভাঙ্গার কষ্ট কিছুটা যেন দূর হল। কে জানে! ২০ বছর পর এই ইকবাইল্লাই বিশ্বকাপটা এনে দেয় কিনা। ৫৮ আর ৭৮ এরপরেও ক্রিকেটের জোয়ার তো আর কমে যায়নি।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০১১ সকাল ১০:১০