কথা বানানো বা কথা লাগানো (এখানে কথা কোন মেয়ের নাম নয়) আমাদের স্বভাব। এই স্বভাব থেকে আমার মুক্ত নই। যদি কোন দেওয়ালে লেখা থাকে " এখানে প্রসাব করিবেন না, করিলে জরিমানা দিতে হবে" এই কথাটা বলার সময় যদি কমাটাকে পরিবর্তন করে দেওয়া যায় তাহলে দাঁড়ায়- " এখানে প্রসাব করিবেন, না করিলে জরিমানা দিতে হবে"।
বাস্তব জীবনে এরকম মানবিক ত্রুটির কারনে আমরা নানা সময় সমস্যায় পতিত হই। মনে করেন হয়ত আপনি কাউকে বললেন, "নাপাক অবস্থায় নামাজ পড়া ঠিক না।" এখন মনে করেন কেউ আপনার পুরা কথাটা নিলনা। আরেকজনকে বলল ঐ যে শুনসেন তিনি কি বলসেন? নামাজ পড়া নাকি ঠিক না। আমি নিজের কানে শুনসি। নিজের কানে শুনস তো ভাল কথা পুরা কথাটা বলনা কেন? রবীন্দ্রনাথ তো বলেছেন, মানুষের উপর বিশ্বাস হারানো পাপ। কিন্তু পরের কথাটা কে বলবে? তিনি আরো বলেছেন, কিন্তু বাঙ্গালিকে বিশ্বাস করা ভয়ঙ্কর। কাজেই পুরা কথাটা হবে, মানুষের উপর বিশ্বাস হারানো পাপ কিন্তু বাঙ্গালিকে বিশ্বাস করা ভয়ঙ্কর।
এই কারনে বাস্তব জীবন থেকে পাওয়া জ্ঞান অনুযায়ী কখনো দ্বিতীয় মাধ্যম থেকে আসা কথা বিশ্বাস করতে হয়না। ফ্যান্টাসী জিনিশটা আমরা এতই পছন্দ করি যে কথা ঘুরে যায়। রাগের মাথায় মানুশ অনেক কিছুই বলে যেটাকে সব সময় ধরতে হয়না। পরিবেশ পরিস্থিতি সব সময় এক থাকেনা। আপনি কাউকে কিছু বললে সেই কথার ডালপালা ছড়াবেই। কথাটা যাকেই বলুন না কেন। আপনি যদি বটগাছকে গিয়ে বলেন বটগাছও কথাটার মধ্যে রঙ মাখাবে।
আমাদের একটা বড় সমস্যা হল আমরা বিনয়কে দূর্বলতা আর বেয়াদবীকে ব্যাক্তিত্ব মনে করি। এইটার সব থেকে বড় প্রমান আমি। ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টের কর্মচারী ছিলেন মাসুদ ভাই। তার সাথে নম্র ভদ্র আচরন করার কারনে আমি তার সামনে গেলেই তিনি নিজেকে ভাইস চ্যান্সেলর মনে করতেন। একবার এক বড় ভাই তাকে ধমক দেওয়াতে তার কাজ অনেক অনায়াসে হয়ে গিয়েছিল। এই ব্যাপারটা মনে হয় সব জায়গাতেই প্রযোজ্য। লোকাল বাসে ৬ টাকা ভাড়ায় কন্টাকটারকে ১০০ টাকা দিলাম। কিছুক্ষন ঘুরে এসে বলে আমি নাকি তাকে ৫০ টাকা দিয়েছি। আমি বললাম থাপ্পড় দিমু গুলস্তান গিয়া পড়বি। তখন তার মনে পড়ল না ১০০ টাকাই দিয়েছিলাম। মানুষ ভাল ব্যাবহারের কদর করতে শিখবে কবে এক জানে!
এই লেখাগুলা লেখার একটা কারন আছে। রাজনীতি আমার আগ্রহের বিষয় নয়। তবে কবে জানি দেখলাম কোন পলিটিশিয়ানদের মন্তব্য, " বিশ্ব অর্থনীতির মন্দার ছোয়া নাকি বাংলাদেশে লাগেনি"। এ ব্যাপারে তিনি ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের কি তথ্য দেখালেন। এ ব্যাপারে সরকারের কৃতিত্ব জাহির করলেন। সরকারের সফল কার্যক্রমের কারনেই নাকি এরকম হয়েছে। পলিটিক্স ব্যাপারটা কি তখন একটু জানলাম। যে কোন অবস্থায় নিজের ফায়দা বুঝে নেওয়া। আসল ব্যাপার হল, বিশ্বে যে অর্থনীতির মন্দা বা রিসেশন চলছিল, ঐ রিপোর্টে বাংলাদেশকে গননাতেই ধরা হয়নি।
তবে পলিটিশিয়ানদের ভুল ধরতে হয়না। তারা যা বলবে তাই ঠিক। তারা পিপড়া দেখায় যদি বলে সেটা হাতী তাহলে আমাদের মেনে নিতে হবে সেটা হাতী। এ কারনেই কথা আছে, হস্তিনী প্রেগনেন্ট হলে হাতী পিপড়াকে সন্দেহ করে।কারন ঐযে এ কান ও কান করে কথা ছড়াচ্ছে হস্তিনী আর পিপড়ার মধ্যে অবৈধ সম্পর্ক। কারো মুখ দিয়ে কোন কথা শুনলে সাথে সাথে সেটা বিশ্বাস না করাই ভাল।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১:০৭