somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সবুজের বুকে লাল, সেতো উড়বেই চিরকাল।

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১০ সকাল ১০:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খুব ছোটবেলায় বিজয় দিবস আসলে আমার মন মেজাজ সামান্য খারাপ হয়ে যেত। জাতির সব থেকে গৌরবময় একটা দিনে আমার মন খারাপের কারন ছিল দুটো। একটা হল দৌড় প্রতিযোগিতা। বেইলিরোড কলনীর মাঠে বিজয়দিবস উপলক্ষ্যে যে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হত তাতে আমি দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করতাম এবং ৮ জনের মধ্যে হয়ত পিছন দিক দিয়ে ফার্স্ট অথবা সেকেন্ড হতাম। এটার একটা কারন অবশ্য এরকম ছিল যে আমার গ্রোথ ভাল ছিল। যেহেতু উচ্চতা দিয়ে গ্রুপ নির্ধারন করা হয় যে কে কাদের সাথে দৌড়াবে তাই একটু বড়দের সাথে পাল্লা দিতে হত সবসময়। আরেকটা সহজ ব্যাখ্যা হল আমি দৌড়ে খুব পারদর্শী নই। ক্রিকেট এবং ফুটবল ভাল খেললেও দৌড়ানো ভিন্ন জিনিস। অন্যরকম স্কিল লাগে। বিজয় দিবসে সন্ধ্যা থেকে অনুষ্ঠান হত। সেখানে বাচ্চাদের জন্য ছড়া, কবিতা আবৃতির ব্যবস্থা থাকত। খুব সাহস করে একবার ছড়া আবৃতিতে নাম লেখালাম। স্টেজের সামনের দর্শকদের আগমনের হেতু ছিল মুলত ব্যান্ডের গান শোনা। তারপরেও যারা আগে চলে এসেছে তাদের ছড়া/ কবিতা শুনতে হত। আমার আগের ছেলেটা স্টেজে উঠে ৪ লাইন পড়ার পর কবিতা ভুলে গেল। কান্না শুরু করে দিল। দর্শক সারিতে শুরুতেই তার বাবা বসে আছে। তার বাবা গিয়ে বলল, তোমার পকেটে কবিতাটা লিখে দেওয়া আছে সেটা দেখে আবৃত্তি কর। ঐ ছেলের অবস্থা দেখে ততক্ষনে শীতকালেও আমি ঘামতে শুরু করলাম। কারন আমার পকেটে আমার কবিতা লেখা নাই এবং আমি সব ভুলে গেছি। কবিতার নাম কবির নাম সব কিছু “ফরগটেন” হয়ে গেছে। এরপর যখন আমার নাম ডাকা হল আমাকে পাওয়া গেলনা। কারন ততক্ষনে আমি পালিয়ে গেছি।

১৬ ডিসেম্বর আসলেই তাই এলাকায় আমি মোটামুটি মাথা নিচু করে থাকতাম। কারন ছবি আঁকার প্রতিযোগিতাতেও আমার কিছু হতনা। তবে একটা ব্যাপারে আমার উৎসাহের কোন সীমা ছিলনা। সেটা হল বাংলাদেশের একটা পতাকা কিনা। কাগজের পতাকা কাঠির উপরে। দাম ২ টাকা। ১৬ ডিসেম্বর আসলেই সব জায়গায় বাংলাদেশের পতাকা দেখে মনটা কেমন জানি পুলকিত হয়ে উঠত। তখনও ১৬ ডিসেম্বরের তাৎপর্য বোঝা হয়ে উঠেনি। ন্যায়ের কাছে যে অন্যায় পরাজিত হতে বাধ্য সেই মর্মবোধ তখনও হয়ে উঠেনি।

সত্যিকথা বলতে কি ১৬ ডিসেম্বর বা বিজয় দিবসের প্রকৃত অর্থ আমি বুঝতে পারি ১৯৯৭ সালের ১৩ এপ্রিল। একটা দেশের সবগুলা মানুষ কখন একসাথে আনন্দে মেতে উঠতে পারে সেটা আমার প্রথম দেখা। বাংলাদেশ যখন আইসিসি ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ান হয়, জাতি তখন আনন্দে উত্তাল। নতুন প্রজন্ম কখনই পুরা দেশকে এভাবে বরন করতে দেখেনি। সবাই পতাকা নিয়ে আনন্দ করছে। তখন আমি প্রথম বুঝলাম ১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর কি হতে পারে। বুঝতে পারলাম এই যে সবুজের বুকে লাল এই একখানা কাপড়কে আমরা কত ভালবাসতে পারি। এই সবুজের বুকে লাল এর জন্য আমরা কতটা ত্যাগী হতে পারি। কত অবলীলায় ৩০ লক্ষ লোক এর জন্য প্রাণ দিতে পারে।

বিজয় দিবস আসলেই আমি সব সময় চেস্টা করি একটা নতুন পতাকা কিনে সেটা আমার বারান্দায় টানিয়ে দিতে। আর নিত্য উপহার থকে সবুজের বুকে লালের একটা গেঞ্জী কিনতে। গতবার চেস্টা করলাম এই কাজটা আরও অনেককে দিয়ে করাতে। আর কিছু না হোক ১৬ ডিসেম্বর ফেসবুকের প্রোফাইল পিকটা সবুজ দিয়ে রাঙ্গাতে। হাজার হাজার লোক এটাতে সাড়া দিল। কয়েকজন ভুল বুঝল। বলল লোক দেখানো দেশপ্রেম না দেখাতে। আমার কথা হল, দেশপ্রেমই একমাত্র প্রেম যেটা লোক দেখানোর জন্য হলেও দেখানো দরকার। আমি বিশ্বাস করতে পছন্দ করি সবুজের বুকে লাল এই প্রকৃতি আমরা প্রতিটা বাংলাদেশি নিজেদের বুকে ধারন করি। আর মাঝে মাঝে নিজের হৃদয়টা দেখানোও জরুরি। যখন একজন এই কাজটা করে তখনই ব্যাপারটা অসাধারন হয়। যখন সবাই মিলে এই কাজটা করে তখন সেটা হয় অতি-অসাধারন। দেশকে ভালবাসার অংশই হচ্ছে নিজের পতাকাকে ভালবাসা আর যে কোন অবস্থায় এর অমর্যাদা থেকে বিরত থাকা। দেশকে ভালবাসার অধিকার সবার। ১৬ ডিসেম্বর নিজের পতাকাকে শোভিত করা মানে এক দিনের ভালবাসা না। এটা মানে হচ্ছে আমার হৃদয়ে আমি কি ধারন করি সেটা একদিনের জন্য দেখানো। মাঝে মাঝে যেহেতু হৃদয়টা দেখানোও জরুরি।






আমি বিশ্বাস করতে ভালবাসি বাংলাদেশ একদিন বিশ্বকাপ ক্রিকেট জিতবে। এমন একদিন আসবে বাংলাদেশের কেউ অভুক্ত থাকবেনা। যতদিন সামনে যাবে তত দিন আমরা একটা একটা অর্জনের দিকে এগিয়ে যাব। কিন্তু আমাদের সব থেকে বড় অর্জন হল ১৬ ডিসেম্বর। এই একটা দিন আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে আমরা সফল হবই। এই একটা দিন আমাদের মনে করিয়ে দেয় জাতি হিসেবে আমাদের কেন এক হতে হবে। কেন সবার সম্মিলিত চেস্টাতে আমরা সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাব। এই একটা দিন নতুন প্রজন্মের বাচ্চারা সবুজের বুকে লাল পতাকা দেখবে আর সে সম্পর্কে জানতে চাবে।

গতবার আমার কিছু ভাগ্নে ভাগ্নিদের সবুজের বুকে লাল গেঞ্জী নিত্য উপহার থেকে কিনে দিলাম। তাদের খুশি আর দেখে কে। কেন তারা ১৬ ডিসেম্বর এইটা পড়ল জানতে চাইল। তাদেরকে বললাম ১৬ ডিসেম্বরের কথা। আমাদের অর্জনের কথা আমাদের ত্যাগ মহিমার কথা। আর কোন ভাল উপলক্ষ্য কি পাওয়া যেত তাদের এটা বোঝানোর জন্য। ব্যাপারটা এখানে থেমে থাকেনি। আমার ভাগ্নে, ভাগ্নী যারা আমেরিকা থাকে তারা জানাল তাদেরো সবুজের বুকে লাল লাগবে। ব্যাস নিজে গিয়ে কিনে আনলাম। আমেরিকা যে যাবে তাকে দিয়ে পাঠালাম সবার জন্য। সুদূর আমেরিকায় থেকেও একটুকরা বাংলাদেশকে তারা বুকে ধারন করল। বলা বাহুল্য অনেক ভাগ্নে ভাগ্নি আছে আমেরিকান বর্ন। কিন্তু দেখতে ভালই লাগল বাংলাদেশের পতাকার প্রতি তাদের আগ্রহ দেখে।

জগন্নাথ হলের শামসুন্নাহার সাইডের দিকে কে জানি রাস্তাতে সবুজ-লাল পতাকাটা এঁকে রেখেছিল। অনেকদিন যাবত সেটা ছিল। মাঝে মাঝেই হাটার সময় আমি পাশ দিয়ে যেতাম। রাস্তা দিয়ে রিকশা যাবে মানুষ হেটে যাবে রাস্তা যে পতাকা আঁকার জায়গা না সেটা সম্ভবত সে বুঝতে পারেনি। আর সবুজের বুকে লালের স্থান মাটিতে না। এর স্থান হল আকাশে। আমরা সবসময় একে আকাশে উড়িয়ে রাখব। দেশের মাটিতে সে আকাশে উড়বে। এশিয়ান গেমসে সোনা জিতার মত কৃতিত্বের মাধ্যমে বিদেশের মাটিতেও তাকে আমরা আকাশে উড়াব।

কারন, সবুজের বুকে লাল, সেতো উড়বেই চিরকাল।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০১১ রাত ১২:১১
৩৩টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×