চৌধুরি সাহেব এর মন মেজাজ ইদানিং বেশ খারাপ। তার ব্যাবসার মন্দা অবস্থা। তার যে পরিমান সহায় সম্পত্তি তাতে তার ব্যাবসা নিয়ে এত চিন্তার কিছু থাকা উচিত না তারপরেও তার মন খারাপ। তার মানে বোঝা যাচ্ছে তার মন খারাপের কারন সহায় সম্পত্তি না। তাহলে কিসের জন্য তার মন খারাপ? ব্যাপারটা প্রথম তিনি শুনলেন যখন তার স্ত্রী বাংলা সিনেমা দেখছিলেন। এমনিতে তার স্ত্রী হিন্দি সিরিয়ালের পোকা। কিন্তু বাসার কাজের লোকদের আলাদা টিভি কিনে দেওয়ার পরেও তার স্ত্রী মাঝে মাঝে প্রিয় কাজের মহিলাকে নিয়ে বেডরুমের টিভিতে বাঙ্গলা সিনেমা দেখেন। এরকম একবার তিনি শুনতে পেলেন টিভিতে কে জানি বলছে চৌধুরি বংশের নামে কলঙ্ক। ব্যাপারটা তার খুব খারাপ লাগল। মনে কষ্ট পেলেন তিনি। এরপর তার অফিসের এমপ্লয়ীদের মাধ্যমে জানতে পারলেন বাংলা সিনেমায় তার বংশ নিয়ে নাকি অনেক ঝামেলা হয়। মাঝে মাঝেই তার বংশের নামে কলঙ্ক আসে। কিরকম কলঙ্ক? গরীব ঘরের ছেলেপেলে চৌধুরী বংশের মেয়েদের দিকে হাত বাড়ালেই মেয়েরা পটে যায়।বেরাট আফসুস এর ব্যাপার।
কয়েকদিন পর চৌধুরি সাহেব টিভির চ্যানেল চেঞ্জ করতে করতে হটাৎ এক চ্যানেল এ আসলেন। নায়ক ওমর সানি খুব উঁচু আওয়াজে বলছে, চৌধুরিইইই!! তুই আমার বাআআআবাকে মেএএএএএএরেছিস!! আজ তোর একদিন কি আমার একদিন!! চৌধুরি সাহেব বেশ অবাক হলেন। চৌধুরি বংশের এরুপ অবস্থা!! এত অধপতন! পরেরদিন অফিসে অনেক ব্যাস্ততার মধ্যে কাটল। টাকা পয়সার লেনদেন হল অনেক। টাকা পয়সার আগমনে চৌধুরি সাহেবের মন কিঞ্চিত ভাল। বাসায় ফিরলেন তিনি। নিজের বউয়ের সাথে গল্প গুজব করবেন। বউকে ভালবাসা সরুপ বলতে যাবেন যে তার সামনের জন্মদিনে বউ কি উপহার চায়। ঠিক তখনি টিভিতে আবার ডায়লগ। চৌধুরি সাহেব!! টাকা দিয়ে ভালবাসা কিনা যায় না। চৌধুরি সাহেব থেমে গেলেন।
এর মধ্যে একদিন খবর আসল চোধুরি সাহেবের ছেলে স্কুল এর পরীক্ষায় অঙ্কে পেয়েছে ১০০ তে ২৮। চৌধুরি সাহেব তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন। নিজেই বাংলা সিনেমার ডায়লগ দিলেন। চৌধুরি বংশের নামে কলঙ্ক! যখন ছেলে মারতে যাবেন তখন আবার টিভিতে ডায়লগ দেখাল।“ বাবা তুমি তোমার গর্ভের সন্তানের গায়ে হাত তুলতে পারলে!!” কাহাতক আর সহ্য হয়।
পরেরদিন চোধুরি সাহেব আবার অফিসে গেলেন। লিফটে করে ১২ তালা উঠলেন। উঠার সময় তার আবার মনে পড়ল। চৌধুরি সাহেব। আপনারটা উপর তলার ভালবাসা। আমাদেরটা নিচের তলার। চৌধুরি সাহেব অফিসে গিয়ে পিএ কে খবর দিলেন। বললেন আমাদের এমপ্লয়ীদের মধ্যে বাংলা সিনেমা কারা কারা দেখেন তাদের সবাইকে খবর দাও। দারোয়ান পিয়ন সবাই আসল। তিনি তাদের কাছে জানতে চাইলেন কখনও কোন সিনেমায় আজ পর্যন্ত কোন নায়কের নাম চৌধুরি ছিল কিনা?? কেউ মনে করতে পারল না। তিনি জানতে চাইলেন বাংলা সিনেমার কোন নায়কের নাম কখনও চৌধুরি ছিল কিনা? জবাব আসল সোহেল চৌধুরি। কিন্তু সে বেঁচে নেই। চৌধুরি সাহেব জানতে চাইলেন একটা সিনেমা বানাতে কত লাগে? সবাই বলল সাকিব খানকে নিলে ২ কোটি।
চৌধুরি সাহেব বাংলা সিনেমার একজন ডাইরেক্টর কে নিয়ে আনলেন। নাম কাজী লায়াত। তিনি লায়াতকে বললেন, যা কিছুই হোক সিনেমার নায়কের নাম হতে হবে চৌধুরি। শুধু তাই নায়কের মুল নাম হওয়া লাগবে চৌধুরি। কাজী লায়াত বিপাকে পড়লেন। স্যার শাকিব খান এর সাথে তো চৌধুরি নাই!! চৌধুরি সাহেব বললেন, তাহলে হবেনা। তাকে বল সে ভিলেন হবে কিনা। কাজী লায়াতের মাথায় হাত। এসব কি বলেন স্যার!! শাকিব খান ভিলেন!! চৌধুরি সাহেব বললেন, আর কোন উপায় নাই, কারন নায়িকা হিসেবেও তাকে নেওয়া যাবেনা। নায়িকার নামের সাথেও চৌধুরি লাগবে। সবাইকে বলে দাও এ সিনেমা বানাতে আমি ৫ কোটি টাকা খরচ করব। কিন্তু সব ভাল চরিত্রে থাকবে খালি চৌধুরিরা। আর শাকিব খান কে বল তাকে এক কোটি টাকা দেওয়া হবে। সে ভিলেন হতে পারবে কিনা। কাজী লায়াত আবার মাথায় হাত। বলল উরিব্বাস। এরপর একটা ঝামেলা হল। চৌধুরি নামের নায়িকা পাওয়া যাচ্ছেনা। দুই একজন নায়িকা তাদের নাম এফিডেফিট করতে চাইল কিন্তু চৌধুরি সাহেব রাজি হলেননা। ঠিক হল বলিউড থেকে মহিমা চৌধুরি কে আনা হবে। নামের সাথে চৌধুরি আছে। এখন নায়ক?? নায়ক তো চৌধুরি পাওয়া কঠিন। এরপর কাজী লায়াত আবার এসে বললেন স্যার কোন সিনেমার কপি করব? চোধুরি সাহেব বললেন কপি মানে? স্যার বলিউড মারে হলিউড। আমরা মারি বলিউড। চৌধুরি সাহেব চিন্তায় পড়ে গেলেন। তিনি তার বাসায় এসে বউকে জিজ্ঞেস করলেন। বউ বললেন রবোট। এমন সময় কাজী লায়াত ফোন করে জানালেন স্যার নায়ক পাওয়া গেছে, নায়কের নামের সাথে চৌধুরি। চৌধুরি সাহেব বললেন, আমার বউয়ের ইচ্ছা রবোট সিনেমাটা। কাজি লায়াত খুশি। আরে বাহ। স্যার আমিও তো সেইরকম চিন্তা করসিলাম। স্যার নায়কও পেয়ে গেসি। নাম চৌধুরি। পুরা নাম জাফর উল্লাহ শারাফাত চৌধুরি। স্যার বিশ্বাস করবেন না উনি ডায়লগ চমতকার দেন। চোধুরি সাহেব বেশ খুশি হলেন। যাক নায়ক পাওয়া গেসে। সিনেমার বাজেট আরও বাড়ল। কারন জাফর উল্লাহ শারাফাতের প্লে-ব্যাক সিঙ্গিং এর জন্য অনেক কষ্ট হইসে। আবার ভিলেন শাকিব খান এর লিপেও নাকি গান থাকবে। সেটা ইভা রহমানকে দিয়ে গাওয়ানো হবে। সব নায়করা ভিলেন এর চরিত্রে অভিনয় করল আর সব চৌধুরিরা ভাল চরিত্রে। সিনেমা সম্পন্ন হল। চৌধুরি সাহেব ট্রেলার দেখলেন। নায়কের নাম চোধুরি। নায়িকা চৌধুরানি। জাফর উল্লাহ শারাফাত নায়ক। মহিমা চৌধুরি নায়িকা। ট্রেলারের কয়েকটা সিন।
#
মহিমা চৌধুরিঃ আমার সকল ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে তোমার জন্য ভালবাসা।
জাফর উল্লাহ শারাফাত চৌধুরিঃ আমি তো বলব আমার সকল লোমে লোমে তোমার জন্য ভালবাসা।
#
জাফর উল্লাহ শারাফাত চৌধুরিঃ আজ আমার সব আশা আকাঙ্খা কামনা যাতনা বাসনা সবই কিন্তু চৌধুরানি তোমাকে ঘিরে।
মহিমা চৌধুরিঃ যা দুষ্ট।
#
জাফর উল্লাহ শারাফাত চৌধুরিঃ শাকিব খান। টাকা দিয়ে ভালবাসা কিনা যায় না।
শাকিব খানঃ চৌধুরি। বামুন হয়ে চাঁদের দিকে হাত বাড়িও না।
#
ট্রেলারে যে দুই-একটা গান ছিল,
কর্দমাক্ত আকাশের ভালবাসায়
মেঘমুক্ত মাঠে কাছে আসায়
তোমাকে চাই শুধু তোমাকে চাই
শাকিব খান এর জন্য একটা অশ্লীল গান ছিল
চোখেতে খুশবু, চুলেতে সেন্ট
মন আজ আমার, তোমার হাফপ্যান্ট
তবে চোধুরি সাহেবের এসবের বাইরে একটা জিনিশই ভাল লেগেছিল। যখন মহিমা চৌধুরি বলে, “ চৌউউউউধুরি সাহেএএএএএব। আই লাভ ইউ!!” চোধুরি সাহেব এর তখন মনে হল সিনেমা বানানো সার্থক হয়েছে। তার বড় ভাল লাগল।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০১১ রাত ২:৩২