somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাঘের গর্জন শুনেছে বিশ্ব।

১৬ ই অক্টোবর, ২০১০ রাত ১২:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সকালে পরীক্ষা ছিল। ১১ টার দিকে। শুক্রবার পরীক্ষা কিন্তু পরীক্ষাটা রোববার হওয়ার কথা ছিল। ঢাবি পরীক্ষা পেছানোর জন্য উপযুক্ত জায়গা। ফিজিক্স এ থাকতে তো যা খুশি তাই বলেই পরীক্ষা পেছানো হত। তেমন শক্ত কোন কারন লাগতনা। নিউজিল্যান্ড এর সাথে বাংলাদেশ সিরিজ জয়ে আমরা আনন্দিত অতএব পরীক্ষা পেছাও জীবন বাঁচাও, তোমার আমার পরীক্ষা- পদ্মা মেঘনা যমুনা। এমবিএ করতে এসে দেখি সবই উলটা। পরীক্ষা আগায় গেসে। ফিন্যান্স আমার জন্য একদম নতুন। ফিজিক্স হল সময় সময়ের সাথে দূরত্বের সম্পর্ক যেখান থেকে বেগ হয়ে যায় ফিন্যান্স হল সময়ের সাথে টাকা পয়সার সম্পর্ক যেখান থেকে লাভ হয়ে যায়।

বাংলাদেশ এর নিউজিল্যান্ড এর সাথে সিরিজ জয়ে আমি খুবই আনন্দিত। আমি খুব লাকি একটা জেনারেশন এর ছেলে। বাংলাদেশ ক্রিকেট এর উঠে আসাটা একদম আমার চোখের সামনে। ১৯৯৪ এর আইসিস ট্রফির ব্যার্থতা ১৯৯৭ এর সফলতা সবই কিছুই অবলোকন করা। আজকের এই দিনে ১৯৯৭ সালের আইসিস ট্রফির দ্বিতীয় পর্বের আকরাম খান এর ৬৭ রানের ইনিংসটা খুব মনে পড়ে। ঐ একটা ইনিংস এর উপরেই যে আমাদের ক্রিকেটটা দাঁড়িয়ে। আইসিসি ট্রফির প্রথম ৬ টা খলায় সব গুলা জেতা ছিল। সাত নম্বর খেলায় আয়ারল্যান্ড এর সাথে বাংলাদেশ এর টার্গেট ৫০ ওভারে ১৩০ সেখান থেকে ২০ ওভার এ ৬৬। কিন্তু বৃষ্টি আর খেলা দিতে হল কই। পরের খেলায় ৫০ ওভারে ১৭১ টার্গেটে বাংলাদেশ ১৫ রানে ৪ উইকেট। আতাহার আলী, দূর্জয়, সানোয়ার আর বুলবুল আউট। বাংলাদেশের প্রতিটা মানুষ মুখ কালো করে রেডিও শুনছে। ড্রেসিংরুম এ বসে পেসার সাইফুল ইসলাম বলছে, আল্লাহ আমাদের এই গরীব দেশটার দিকে তাকাল না। খালেদ মাসুদ পাইলট আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল, "আল্লাহ আমার প্রিয় কাউকে তুলে নাও কিন্তু আমাদের দেশটাকে জিতিয়ে দাও।" আল্লাহ ফিরে তাকালেন। বাংলাদেশ এর ইতিহাসের সব থেকে সেরা ইন্নিংসটা খেললেন আকরাম খান। প্রথমে নান্নুর সাথে জুটি তারপর সম্ভবত সুজন। সবশেষে পাইলট। আকরাম খান ৯৬ বলে ৬৭ অপরাজিত। বাংলাদেশ সেমিফাইনালে।

পুরানো সব দিনের কথা মনে পরছিল আজ। প্রথম যেদিন বাংলাদেশ ওডিয়াই জিতল কেনিয়ার সাথে। রফিকের ৮৯ বলে ৭৭। তারপর বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারানো। ক্লাস নাইনে পড়ি তখন, পরেরদিন কেমিস্ট্রি পরীক্ষা। কিসের কি। বাংলদেশ জিতার সাথে আবার পরীক্ষা কি!!

জিওফ্রে বয়কট এর দৈনিক খাদ্যগ্রহনের মত একটা কাজ আছে। সেটা হল বাংলাদেশকে অপমান করা। কেন বাংলাদেশকে টেস্ট খেলতে দেওয়া হচ্ছে। তার মাও নাকি বাংলাদেশের একজন বোলার হতে পারত। বাংলাদেশ বিদেশের মাটিতে প্রথম যখন টেস্ট খেলতে যায় সেটা ছিল নিউজিল্যান্ডে। ম্যাকমিলানের তখন টেস্ট সেঞ্চুরি নাই। বাংলাদেশ এর সাথে মাঠে নামার আগেই সে বলল আমি সেঞ্চুরি করব। করেও ফেলল। সেটা নিয়ে মিডিয়াতে সে কি ঠাট্টা। বৃষ্টির জন্য দুইদিন নষ্ট হওয়ার পরেও বাংলাদেশ টেস্ট হারল। ২ দিন নষ্ট হওয়াতে ফলোঅন যে ১৫০ ব্যাবধান এ হয়ে গেল। আজ সব মনে পরছে। কি অপমানের দিনগুলাই না ছিল।

২০০৩ বিশ্বকাপ এ বাংলাদেশ যখন কানাডার কাছে হারে আমার মনে আছে আমি একা একা কাঁদছিলাম। পরেরদিন কোরবানির ঈদ। সবার মন খারাপ। এক ক্রিকেট কিভাবে পুরা জাতিকে আচ্ছন্ন করতে পারে তাই দেখলাম।

২০০৫ এর জুন মাসের ২০ তারিখে প্রথম আলো পত্রিকার হেডলাইন ছিল, “ বাঘের গর্জন শুনেছে বিশ্ব”। আগের আগের দিন আমার খালাতো ভাইয়ের বিয়ে। ভাই বাসর রাতে ভাবিকে সময় না দিয়ে খালি আমাকে ফোন দেয়। কিরে কি হচ্ছে? হচ্ছেটা কি!! তেমন কিছুই হচ্ছেনা। আশরাফুল গিলেস্পি, ম্যাকগ্রাথ কে পিটাচ্ছে। বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়াকে হারাচ্ছে।

২০০৭ বিশ্বকাপ যখন হয় তখন আমার ফিজিক্স এ সেকেন্ড ইয়ার ফাইনাল চলে। কোর্স ভাইভার আগেরদিন বাংলাদেশ ইন্ডিয়া খেলা, প্র্যাকটিকাল এর আগের দিন বাংলাদেশ সাউথ আফ্রিকা। ভাগ্য যে মাঝে মাঝে কিভাবে মানুষের প্রতি এত নিষ্ঠূর হয়। তারপরেও বাংলাদেশের জয় না দেখে থাকি কিভাবে।




স্টেডিয়ামে যাইনা অনেকদিন। এক সময় তো রেগুলার যেতাম। পূর্ব গ্যালারী পশ্চিম গ্যালারী থেকে শুরু করে হসপিটালিটি বক্স সব জায়গায় বসে খেলা দেখেছি। স্টেডিয়াম হল সেই জায়গা যেখানে গালি দেওয়া জায়েজ। পৃথিবীর সব থেকে ভদ্র লোক যে করসি, খাইসি, মারসি না বলে করেছি, খেয়েছি, মেরেছি বলে সেও স্টেডিয়ামে গেলে দুই চারটা গালি দিয়ে আসবে। মিনি ওয়ার্ল্ডকাপ এ ইন্ডিয়া অস্ট্রেলিয়ার খেলা দেখছিলাম ১৯ নম্বর গেট দিয়ে ঢুকে। শচীন ক্যাস্প্রোয়েজ কে চারদিকে মারছে। গ্যালারী থেকে এক ভদ্রলোক বললেন , শালা ক্যাপ্রোসাইজ বল করতে পারেনা। কোন একটা খেলায় মনে আছে এক দর্শক কোন খেলোয়ারকে “তোর মায়রে বাপ” বলে গালি দিল। তাকে মনে করিয়ে দেওয়া হল বাংলা গালি কিভাবে বুঝবে। লোকটার ক্রিয়েটিভিটি অসাধারন মানের। সে গালি দেওয়া শুরু করল “তোর প্যারেন্টস”। স্টেডিয়াম এর সব থেকে ভয়াবহ জিনিশ হল খাবার কিনে খাওয়া। ১০ টাকার জিনিষ অনায়াসে ৫০ টাকা হয়ে যাবে।

আজ সন্ধ্যাবেলা খিদা লাগার পর খাওয়ার কিছু না পেয়ে পোলাউ, রোস্ট, ঝাল মাংস খেলাম। খাবার কিছু পাইনাই মানে চানাচুর খেতে চেয়েছিলাম। আর বসে বসে বাংলাদেশের ক্রিকেট এর বর্তমান সময়টা নিয়ে ভাবছিলাম। ফেসবুকে ক্রিকেটেইনমেন্ট নামে গ্রুপ আছে। সব দেশের লোকজন খালি ক্রিকেট নিয়ে কথা বলে। সেখানে এক পাকিস্তানি আর এক ভারতীয় সারাদিন মারমারি করে। আমি কালকে ওয়াল পোস্ট দিয়ে আসলাম নিউজিল্যান্ড কে হারানো নিয়ে। আমার ওয়াল পোস্ট এ আমার দেশটা নিয়েই এখন তারা মারামারি শুরু করে দিয়েছে। পাকিস্তানি বলে কনগ্রাচুলেশন ইস্ট পাকিস্তান। ভারতীয়টা জবাব দেয় ইস্ট-ওয়েস্ট ইন্ডিয়া। কৌতুকময় অবস্থা কিন্তু মনে মনে বললাম দাঁড়াও তোমাদেরকেও ছুটাইতেসি।

কারন রয়েল বেঙ্গল টাইগার যখন সত্যিকারের বাঘের মত আচরন করে তখন এইসব কিউই পাখিদের সাধ্য নাই তাকে বিরক্ত করার। আরো অনেক সত্যিকারের বাঘের মত আচরন করা বাকি আছে। সবে তো শুরু। অভিনন্দন বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। অভিনন্দন সাকিব আল হাসান। এক ভারতীয় বন্ধু ( এ সব সময় বাংলাদেশকে নিয়ে ভাল কথা বলে) জিজ্ঞেস করল কত টাকা হলে সাকিবকে কিনা যাবে। আমার সোজা সাপ্টা জবাব, তার দেহের ওজনের সমান সোনার যা মুল্য তার থেকেও সে অনেক দামী।

সত্যিকারের বাঘের মুল্য অনেক।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০১১ সকাল ৯:৪১
২০টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×