ঈদ মানে আরাম আয়েশ, ঈদ মানে হাসি
খুব ভাল দুইটা লাইন হইল না আসলে। সেইরকম কবি সাহিত্যিকদের লাইন দিয়ে লেখা শুরু করতে চাইসিলাম কিন্তু মরা দুইটা লাইন দিয়ে শুরু হইল। ঈদ আসলেই আমার প্রথম বিড়ম্বনার কথা মনে পড়ে সেটা হল পায়জামার ফিতা। এখন অনেক ঢঙ্গের পায়জামা আছে আজ থেকে ১০ বছর আগে সেরকম ছিলনা। ঢোলা ঢালা একরকম পায়জামা সবাই পড়ত। আর সব সময় ঈদের দিন সকালে উঠার পর দেখা যাইত পায়জামার ফিতা নাই। বিরাট আফসুস। ব্যাপারটা যেভাবেই হোক কখনই আগেভাগে খেয়াল করা হইত না। পড়ে দেখা যাইত কোনরকমে একটা ফিতা যোগাড় করা হইসে। এখন সেফটিপিন নাই। এমন কি সেফটিপিন নামক কিছু যে থাকতে পারে সেটাই কেউ জানেনা। অনেক ঝামেলা করে পায়জামার ফিতা ভরা হইত।
এটা অনেক ছোটখাট বিড়ম্বনা। বড় বিড়ম্বনা ছিল বেশ ভয়াবহ। পাঞ্জাবি নামক পোষাকে আমার বেশ খুঁত খুঁত আছে। মেয়েরা তাদের ড্রেস নিয়ে যতটা সিরিয়াস আমার পাঞ্জাবী নিয়ে আমি সেরকম। সবসময় চেস্টা করি ডিফারেন্ট কিছু কিনার। আমার শরীরটাও এমন যে একমাত্র পাঞ্জাবী পোষাকটাতেই সব থেকে মানিয়ে যায়। যাই হোক ২০০২ কি ২০০৩ এর দিকের ঘটনা। ইন্টার মিডিয়েট পরীক্ষার সময় ঈদ। ততদিনে সম্ভবত ঢাকা শহরে অনেক মেয়ে ওড়না পড়া ছেড়ে দিসে তাই ফ্যাশন ডিজাইনাররা ওড়না সংস্কৃতি বাঁচায় রাখার জন্য ছেলেদের পাঞ্জাবির সাথে ওড়না বের করল। সেই ওড়নাওয়ালা কালা পাঞ্জাবী কিনলাম। ঈদের নিয়ম নামাজ পড়ার পর রুটিন হচ্ছে খালার বাসায় যাওয়া। এক রিকশাওয়ালা কে দেখে হাঁক দিলাম। ওড়না জিনিসটা যে কি ঝামেলার একটা জিনিস তখন বুঝলাম। এই জিনিস মেইনটেইন করে ক্যামনে কে জানে!! সোজা ওড়না গেল রিকশার চাকায় পেঁচায়। পৃথিবীর ইতিহাসে আমি সম্ভবত একমাত্র ছেলে যার ওড়না রিকশার চাকায় পেঁচাইসে। এই জিনিস যে মাইনশেরে কই ক্যামনে!!
কোনবার জানি কাবলি সেট উপহার পাইলাম। খালা দিল। কাবলি সেট নাকি আমাকে ভাল মানাবে। ছোটবেলায় কাব্লি সেট পড়লে সবাই কাব্লিওয়ালা বলে খেপাইত তাই ঐ জিনিস তখন পড়া বাদ দিসিলাম। বড় হয়ে একবার পড়লাম। ঈদের দিন ভরন্ত বিকালে পেট এর অবস্থা কি থাকে সবাই জানে। প্রকৃতির নিত্য প্রয়োজনীয় ডাকে সারা দিতে গিয়ে সমস্যা হল। কাবুলি সেট এর পায়জামা এর ফিতা গেছে ভিতরে ঢুকে। এখন কি করি। বিরাট আবুইল্লা সমস্যা। হাত ধরে ধরে বুঝার চেস্টা করলাম ফিতাটা কই আসে। ঠিক সেই জায়গাটায় দাত দিয়ে কাটলাম। ফিতা বের করলাম। ব্যস বেধে নিয়ে আসলাম। এরপর থেকে সব সময় ঈদের দিন মানিব্যাগ এ সেফটি পিন রাখতাম।
পায়জামার সমস্যার পারমানেন্ট সমাধান অবশ্য হইসে। কারন গত দুই ঈদে ব্র্যান্ড এর পায়জামা কিনতেছি। চেইন, ইলাস্টিক পকেট ওয়ালা। বড়ই আরামদায়ক।
সালামী সংগ্রহ পোলামাইয়াদের নৈতিক দাবী। পৃথিবীতে এর থেকে হাইলি পেইড জব মনে হয় আর নাই। এত কম সময়ে এত কম পরিশ্রমে এত উপাজ্জন আর সম্ভব না। পরিশ্রম অবশ্য কম না। কারন মাথায় অনেক কিছু রাখতে হয়। কাকে সালাম করলে কতখানি সালামি পাওয়া যাবে। অনেকেই আছে কষ্ট করে সালাম করার পর দোয়া দিয়ে চলে যায়, ৩০ রোজার সিয়াম সাধনার পর দোয়া আর কতখানি ভাল লাগে। তারপর কোন দুলাভাইকে কোন স্পট এ ধরতে হবে সেটাও একটা হিসাব করার ব্যাপার। নাহ বেশ কষ্ট সাধ্য জব বলতেই হবে।
ছোটবেলায় কলনীতে থাকতাম দেখে চাইন্দরাত এর আবেদনটা অন্যরকম ছিল। সত্যি কিছু কিছু মজা আছে যেগুলা দলবদ্ধ না হয়ে একা করার মধ্যে নাই। সেরকম একটা উৎসব হলো চাইন্দরাইত। এখন সেটার আর তেমন আবেদন পাইনা। আর ফেসবুক আসার পর অনেক কিছুরই ধরন পালটায় গেছে। চাইন্দ রাত নিয়ে ভাল কোন গান নাই। অনেক সার্চ করে হিন্দি সিনেমার একটা গান পাইলাম, চান্দ সামনে হে ঈদ কা, তুঝপে হে মেরি নজর, নিঃসন্দেহে এটা চাইন্দ রাত এর গান না। মেয়ে পটানো অত্যন্ত ক্ষ্যাত একটা গান।
আমার এক বন্ধুর নাম সিয়াম। বর্তমানে কানাডায় পিএইচডিরত। তার নাম সিয়াম হওয়ার কারন রোজার মাসে তার জন্ম। আল্লাহর কাছে অশেষ শুকরিয়া আদায়ের ভিন্ন কারন ও আছে। বাবা মা ইসলাম অনুরাগী। কোরবানি ঈদ এর আগে জন্ম হলে নিশ্চিত নাম কোরবান হয়ে যেত। মানুষের নাম হিসেবে সিয়াম অনেক সুন্দর দেখায়।
গতকাল বাইরে ইফতারী করলাম। গুলশান বেলা ইটালিয়া নামক জায়গায়। ১ লিটার পানির দাম ৮০ টাকা। ৩ রকম পিজা, পাস্তা, স্প্যাগেত্তি খেয়ে আরং এ গিয়ে পাঞ্জাবী কিনা হল (এইরকম ইফতারি বছরে একটাই হয়, ৩০ টা না)। কিন্তু ঈদ খালি বেলা ইটালিয়া, আরং এ যাওয়া লোকদের জন্য না।এর বাইরেও আরো অনেক লোক আছে। ঈদ সবার জন্য। বছরের একটা দিন হলেও যেন পৃথিবী সবাই সুখে থাকে। জানি বাস্তবে সেটা সম্ভব নয়। আমার আব্বা দেশের বাড়ি গিয়েছেন ঈদ করতে। যাওয়ার আগে বুয়া আর তার ছেলে আক্কাস (ডানা ক্ষয়ে যাওয়া প্রজাপতির গল্পে এর কথা বলা আছে) এর জামা কাপড় কিনে দিয়ে গেছেন বখশিস এর টাকা রেখে গেছেন। আল্লাহ যদি আমাদের কিছু দিয়ে থাকেন তাতে তাদের হকের কথাও বলে গেছেন। ঈদ সবার। সবাই মিলে মিশে যেন ঈদ করতে পারেন এই কামনাই রইল। ঈদ মোবারাক। সবাই ভাল থাকবেন। সাধ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ আনন্দে ঈদ করতে পারেন এই দোয়া রইল।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে আগস্ট, ২০১১ দুপুর ১:৫৬