somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বন্ধুরা।

৩১ শে জুলাই, ২০১০ রাত ৯:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সবাইকে বন্ধু দিবসের শুভেচ্ছা।

বন্ধুত্ত্বের যে কয়টা সংজ্ঞা আছে তার মধ্যে সব থেকে ভাল সংজ্ঞা মনে হয় এইটা,

"Your friend is the man who knows all about you, and still likes you."
- Elbert Hubbard

বন্ধুত্তের সব থেকে গুরুত্বপূর্ন ব্যাপার কিন্তু এটাই। একজন বন্ধু যে কোন অবস্থায় আপনাকে আপন করে নেওয়ার ক্ষমতা রাখে। আমার সেরকম কিছু বন্ধুদের নিয়ে লিখি।


বন্ধু আসিফ রেজওয়ান এর বাসায় ফোন করলে মাঝে মাঝেই কিছুটা বেগ পোহাতে হয়। যেহেতু আমরা তাকে আসিফ নামে চিনি তাই স্বাভাবিক ভাবেই ফোন করে বলব “আসিফ আছে কিনা”। কিন্তু সমস্যা হল তার আবার আরো একটা নাম আছে। সেটা হল সজীব। যেই নামে আমরা কখনই তাকে ডাকিনাই। তাই বাসায় ফোন করে যদি বলা হয় আসিফ আছে কিনা আসিফ এর আব্বা আম্মা ছাড়া অন্য কেউ ধরলেই ব্যাপারটা এমন হয়ে যায় যে “আসিফ” কখনই কোনো মানুষের নাম হইতে পারেনা। এরপর আরেকটা মজার ব্যাপার হল তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট বলে তার নাম আবার বাবু। আঙ্কেল আন্টি তাকে বাবু নামে ডাকে। বাবু, সজীব, আসিফ তিনটা নাম মনে রাখাটা খুবই কঠিন।

বর্তমানে আইবিএ তে এমবিএ করা আসিফ এর এই ৩ টা নাম আসলে কোন নাম ই না। যে নামে সে সব থেকে বেশি বিখ্যাত সেটা হল চটি। তাবত দুনিয়ার সবাই তাকে এই নামে চিনে। এরকম ভয়াবহ আপত্তিকর নামটা তার সাথে কিভাবে আসল সেটা একটা কাহিনি বৈকি। যেহেতু গভ ল্যাব স্কুল নীলক্ষেত এর পাশেই কাজেই চটি এর সহজলভ্যতার প্রসংগ এখানে না তুলি। কথা হচ্ছে সে জন্য আসিফ এর নাম চটি হবে কেন? কারন ঐ যে!! গভ ল্যাব স্কুল এ তার রোল ছিল ৪। স্বাভাবিক ভাবেই ধরা হয় যে ভাল ছাত্র সে হবে ভদ্র। কিন্তু এই একখানা ১০ ইঞ্ছি বাই ১০ ইঞ্ছি বই পাইলেই তার নাওয়া খাওয়া বলে আর কিছু থাকত-না। চটি চটি চটি করতে করতে তার নাম ই হয়ে গেল চটি। স্কুল পার হয়ে নটরডেম কলেজ গেল। সেখানেও তার নাম চটি। ঢাবি ফলিত পরিসংখ্যাণ বিভাগ এও তার নাম চটি। ঢাবি তে পড়ার সময় অনেকেই তাকে দেখে বলে, ও!! তুই সেই চটি। সেই বিখ্যাত চটি!! চটি শব্দের অন্য ভাল অর্থ আছে। চটি শব্দের অর্থ পাতলা। তাই অন্য বন্ধুর এক মা যখন জিজ্ঞেস করেছিলেন ওকে চটি বলে ডাকা হয় কেন? জবাব দেওয়া হয়েছিল হ্যাংলা পাতলা তো, তাই। এমনিতে চটি এর বাসায় কবে জানি কে ফোন দিয়ে ডাইরেক্ট বলেছিল, “চটি আছে?”। চটিদের স্মার্ট কাজের ছেলে ফোন ধরে বলে, “নিলক্ষেত জান”। আসিফ এর চটি নামটা আমাদের এক বন্ধু নিশু’র দেওয়া।

স্কুল এ পড়া সব বন্ধুদেরই কোড নাম ছিল। এক বন্ধুর নাম হচ্ছে বিল্লি বা বিলাই। তেমন জটিল কোন ব্যাপার না। অত্যন্ত সুদর্শন বন্ধুর চোখ দুটি বিড়ালের মত। তাই তার নাম বিল্লি। আমি মোটামুটি শতভাগ নিশ্চিত অনেকেই তার সাজ্জাদ নামটা জানেনা। এর প্রমান ও আছে। কলেজ জীবনে আরেক বন্ধুর ভাইয়ের বিয়েতে যখন ভাবি এর সাথে সবাইকে পরিচয় করে দেওয়া হচ্ছিল সিরিয়াল টা ছিল, আসিফ, ইকবাল, জিকো, বিল্লি (গম্ভীর ভাবে), নিশু ব্লা ব্লা ব্লা।

আরেক ফ্রেন্ড পুলকের নাম হচ্ছে ট্যাওরা। ট্যাওরা এর চোখ দুটি মোটেও ট্যারা না, সে যথেষ্টই সুদর্শন। কিন্তু ভাল কিছুর সাথে আমরা কখনই আপোষমুলক ভাব দেখাই না। মজার ব্যাপার হচ্ছে, বন্ধুদের কোডনাম গুলার সাথে তাদের বউয়ের নাম গুলাও মজার মিল আছে। বিল্লি এর বউ তুলি। ট্যাওরা এর বউ ইরা।

বুয়েট এর সিভিল থেকে বের হওয়া বন্ধুরা সজীব, রনি এবং ফয়সাল। সজীব এর নাম চ্যাপা। আর রনি এর নাম রনি আপা। রনি আপা নামকরনের কারন রনি আপা খেলাধুলা কিছুই করতনা খালি লেখাপড়া করত। আর ফয়সাল এর নাম প্রফেসর। ছোটবেলা থেকেই সে দেখতে প্রফেসর এর মত। তার আচার আচরন, চাল-চলন হাবভাব সবই প্রফেসর এর মত। এবং সে বর্তমানে আসলেই একজন প্রফেসর। প্রাইভেট ভার্সিটি এর।

ডাকতার বন্ধুদের মধ্যে একজন এর নাম চোপড়া। তার ভাল নাম ফাহিম। কিন্তু লিখিল চোপড়া এর সাথে চেহারায় মিল তাই তার নাম চোপড়া। ফাহিম নামে অবশ্য আরেকজন ফ্রেন্ড আছে। তার নাম রক। রক এর ভক্ত থেকে রক। তবে সব থেকে উজ্জ্বল হল ইকবাল এর নাম। তাকে সরাসরি ডাকা হয় বাল। এই বাল শব্দের নানাভেদ আছে অবশ্য। বাল, বাওলা, বালডা আরো অনেক কিছু। আর এমনিতেও কেমিস্ট্রি থেকে জানি, “ইক” মানে বড় , “আস” মানে ছোট। তবে তাকে আরেকটা নামেও ডাকা হয়। খাওন। খালি খাই খাই আর খাই করার কারনে। তারা তিন ভাই। তিন ভাইয়ের নাম খাওন, ভরন আর পোষন।

সদ্য দাতের ডাক্তার হওয়া এবং সদ্য বিবাহিত বন্ধু তন্ময় এর নাম দুইটা সেগা আর ত্রিপল এইচ। ১৯৯৬ সালের দিকে সেগা টিভি গেম খুব বিখ্যাত ছিল। ঐ জিনিস হাতে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। সে একটা কিনেছিল এবং স্কুল গিয়ে তার কাজ ছিল ড্রইয়ং খাতায় সেগা আর টিভি এর ছবি আঁকা। রেসলার ট্রিপল এইচ এর ফ্যান দেখে পরে আবার তার নাম হয় ট্রিপল এইচ।

এক বন্ধুর নাম দম। আসলে তার নাম ছিল দমদম। না না আসলে তার নাম তুর্য। তার ফোলা ফোলা গাল দেখে তার নাম দেওয়া হয়েছিল দমদম। আরেক ফ্রেন্ড এর নাম মিথিলা-ভি। অভি নামের সেই ফ্রেন্ড এর আগে নাম ছিল সাদনা-ভি। এইরকম নামের কারন হল যখন তার যেই জিএফ থাকে তার নাম আগে দিয়ে নামকরন। নাম দেখেই যাতে বুঝা যায় বর্তমান জিএফ কে। দোলন নামে এক ফ্রেন্ড এর নাম বয়দা। তাকে ছোটবেলায় ভয় দেখানো হইত আর সে বলত, “আই বয় দেখাস ক্যান”?

ঢাবি পদার্থনিজ্ঞানে স্কুল জীবনের একজন বন্ধুই ছিল। অংশুমান জামান এর স্কুল এ নাম ছিল শম্পা রেজা। অংশুমান মৃদুভাষীনি। সব সময় সুন্দর করে কথা বলে। একেবারে শান্তি নিকেতনি ভাষা। আমরা যেখানে খাইসি, করসি, মরসি সেখানে সে খেয়েছি, করেছি, মরেছি, হেগেছি এইভাবে কথা বলত। তখন শম্পা রেজা নামে একজন নাটক করত তার ভাষাটাও এরকম ই ছিল।

একজনের অবশ্য নাম দেওয়া লাগেনায়। বাবা-মা এর রাখা নাম সে নিজেই চেঞ্জ করে ফেলসে। আদিল নামকের সেই বন্ধুকে এখন সবাই সুহ্রিদ (SHURID) ভাই নামে চিনে। ফেসবুকে তার নামে ফ্যান পেজ ও আছে। নামকরা ফটোগ্রাফার। আমরা অবশ্য তাকে সুদির ভাই বলে ডাকি। কি আর কমু!!সব পোলাপাইন বেয়াদপ।

তন্ময় নামে আরেক ফ্রেন্ড ছিল যার নাম আসলে খামছানি। এই নামটা ১৯৯২ সালে ইউসুফ আলী হাওয়ালাদার নামক একজন স্যার এর দেওয়া। কে জানি বিচার নিয়ে গিয়েছিল স্যার এ আমাকে খামছি দিসে!! ব্যাস আর যায় কই। স্যার বলে তুই খামচানি?

আমার মত বেশ স্বাস্থ্যবান এক বন্ধু ছিল যার নামক আরাফাত। ভার্জিনিয়া টেক এ এরোস্পেশ ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করা বন্ধুর নাম ‘চিকন আলী’। এইটাও এক স্যার এর দেওয়া নাম। চিকন আলী এর এক বন্ধু শুভ সেও সম্ভবত আমেরিকায় এখন। তার নাম ছিল “ঘেউ ঘেউ”।

শেষ করি খলিল সিরিজের খলিল কে দিয়ে। খলিল সিরিজ কাল্পনিক হলেও খলিল নামে আমার এক ফ্রেন্ড আছে অবশ্য। তার ডাক নাম ফয়সাল কিন্তু কেউ তাকে ফয়সাল ডাকেনা সবাই খলিল ডাকে এটা নিয়ে তার দুঃখের কোন শেষ নাই। কি আর করার। খলিল তো খলিল ই।

অনেকেরটাই বাদ পড়ে গেছে অবশ্য।

আমার নিজের নামের অপনাম জানতে হলে এখানে ক্লিক করুন।





৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×