somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আরবি পরীক্ষায় সাফল্য। ( মনে হয় মজার পোস্ট)

২১ শে জুন, ২০১০ রাত ১০:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




চেনা বড় ভাইয়ের ঘটনা

এক বড় ভাইয়ের কাছ থেকে শোনা এই ঘটনা ১৯৮৩ সালের। তখন সম্ভবত গবর্নমেন্ট হাই স্কুল এ প্রথম ইসলামিয়াত এর পাশাপাশি আরবি আলাদা ১০০ নম্বরের সাবজেক্ট (ক্লাস সিক্স থেক এইট) এর সূচনা। পরবর্তিতে আমাদেরকেও এর যন্ত্রনা কম পোহাতে হয়নি। ওয়াজি উল্লাহ নামক একজন স্যার ছিলেন (স্যার ১৯৯২ সালে মারা যান)। তিনি হাফ ইয়ার্লি পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন এর পর খাতা দিতে লাগলেন। সবাইকে খাতা দেওয়ার পর ফার্স্ট বয় থেকে শুরু করে ক্রমান্বয়ে সবাই নম্বর পেল। কিছুক্ষন পর অবিশ্বাস্য একটা ঘটনা আবিষ্কার করা হল। অনেকটা এইবারের ওয়ার্ল্ডকাপে কেনিয়া চ্যাম্পিয়ান হলে যে অবস্থা সেরকম।রোল ৪৫ যার সে পেয়েছে ৯৮। কিভাবে এই ঘটনা ঘটল কে জানে। পরেরবারও এই অবস্থা। ঐ ছেলে আরবি তে পেল ৯৮। ভাইয়ারা যখন ক্লাস সিক্স-এ পর এটা তখনকার ঘটনা।

ক্লাস সেভেন এ উঠে সবাই তখন ওই ছেলেকে জেরা করল। কিরে কাহিনি কি? সবগুলাতে টাইনা টুইনা পাস আরবিতে ৯৮। নিদারুন গুপ্ত ঘটনা জানা গেল। এই ছেলে যেগুলা পারে সেগুলাই ২ বার করে লেখে। আরবি কবিতাটাও দুইবার করে লেখে। সবাই তখন আলাদ্দিন এর প্রদীপ পেয়ে গেছে। পরের আরবি পরীক্ষায় এই ঘটনা সবার দাড়া ঘটানো হবে। পরের আরবি পরীক্ষায় সবাই এই কাজ করল। ওয়াজিউল্লাহ স্যার বাসায় গিয়ে খাতা এর নম্বর দেওয়ার সময় দেখেন সবাই ৮০ এর উপর পেয়ে বসে আছে। খেয়ালি স্বভাবের স্যার তাতে খুব বিচলিত হল না। তারপর স্যার নাকি তার মেয়েকে ডেকে বলল আমার সব ছাত্ররা ভাল করেছে।

পরের দিন খাতা দেওয়া হল। সবাই তো ভাল করেছে ভাল কথা। বাঙ্গালির একটা স্বভাব হল সব কিছুতে বাড়াবাড়ি করা। এইখানেও কমতি নাই। দুইজন যে পেয়েছে ১০০ এর উপরে। একজন ১১৯। আরেকজন ১১০। সবাই তো আর চুরিবিদ্যার যোগ্য না। ঐ দুইজনের তো অবস্থা খারাপ। কারন এই নম্বর স্যার হয়ত খেয়াল করেনায় কিন্তু সবাই জানলে তো তুলকালাম কান্ড ঘইটা যাবে। দুইজন স্যার এর কাছে গেল। স্যার তাদের এই অসামান্য প্রতিভা কিছুই বুঝলনা। দমাদম মাইর শুরু হইল। সরকারী স্কুল এর আরবি স্যারদের মাইর ভয়াবহ। বেশি লোভ এর ফল ওই দু’জন ভোগ করল। বাকি সবাই কিন্তু ৮০ এর উপর নম্বর।

আমার আরবি সাফল্য (১৯৯৭)

এই জিনিসটাতে যে আমি কত খারাপ তাহা আর বলিবার নয়। ভাষা শিখার জন্য কিছু পদ্ধতি আছে যেগুলা কোনোটাই যে আমাদের আরবিতে ছিল না। তার আগে একটা মজার ঘটনা বলি। ক্লাস ফাইভ এ যখন পড়ি তখন এক আরবি স্যার আমাকে ডেকে নিয়ে গেলেন (আমি সহ আরো ৩ জন) ক্লাস সেভেন এর ইসলামিয়াত খাতা রাইট দেওয়ার জন্য। স্যার এর ভাষ্যমতে রাইটগুলা তোরা দে উনি জায়গামত মার্কস বসিয়ে দিবেন। দিলাম রাইট। এরপর অবিশ্বাস্য ব্যাপার। স্যার বলেন নম্বর দিতে। আমিও দিলাম। ১০ এ কোনোটাতে ৫ কোনোটাতে ৭। স্যার দুই ঘা বেত ও লাগাইলেন কেন দুই একটাতে ৮ দিচ্ছিনা। কেউ বিশ্বাস করবেনা কিন্তু এটা ঘটেছিল। ১৯৯৫ সালে আমি ফাইভে পরতাম।

আরবি কবিতা মুখস্থ করতাম। ইন্না মাদ দুনিয়া ফানায়ুন , গাইড বইয়ে ছিল ইন্না মাদ দুনিয়া ফনোটঠন। তাও মুখস্থ এমন ই করসিলাম যে এখনও মনে আছে। ইন্না মাদ দুনিয়া ফানায়ুন, লাইসা লিদ্দুনিয়া ছুভহুতুন, ইন্না মাদ দুনিয়া কাবাইতিন, নাসাজাথু আন কাবাইতু। কিন্তু আরবি বানান তো আর পারতাম না। ব্যাকরন কিছুই জানতাম না। কানাডাতে পি এইচ ডি করছে আমার এক বন্ধু সিয়াম। সে আবার আরবি মানেই ৯৮। কিন্তু বাদ বাকি অনেকের অবস্থাই কেরোসিন। তবে আমাদের সবার মধ্যে একটা বদ্ধমুল ধারনা ছিল আরবি পরীক্ষায় নকল করা যায়েজ আছে। তবে নকল করার মত মানসিক দৃঢ়তা আমার কখনি ছিল না, সাহস ছিল না। ক্লাস সেভেন এ যেখানে বসলাম আমার সামনে বসল এক ফ্রেন্ড। সে এখন আমেরিকা তে। ডাক্তার হয়েছে। সে আরবি কবিতা সুন্দর মত ছোটো সাইজে বানিয়ে নিয়ে আসল। সেটা দেখে দেখে লিখল। নীতিবাক্য লিখল। যেহেতু গভ ল্যাব এর পোলাপাইন রা হেলপফুল হিসেবে পরিচিত এই মর্যাদা রক্ষায় সে আমাকে তার খাতা দেখাল। আমিও লিখলাম। খাতা দেওয়ার সময় বড়ই আচানক কারবার। যে নকল করসে তারটা সব ঠিক হওয়ার কথা সে পাইসে ৫২। আমি ওর খাতা দেখে লিখেছি আমি পাইসি ৭৯।

কেন জানি এইসব ঘটনা এখন আর আমাকে আলোড়িত করেনা। আমার বর্ননা শুনে আমার ফ্রেন্ড দের খুব খারাপ কিছু মনে করবেননা। জিআরই পরীক্ষা পুরাটা ভিডিও করা হয়। এইখানে নকলের চান্স নাই। এই টাতে সবার সাফল্য খুবই ভাল। নাইলে বাইরের দেশের লোভনীয় ভার্সিটি গুলাতে তো আর পিএইচডি করতে নেয় না। আর আরবি পরীক্ষায় তো নকল করা যায়েজ আছে। আল্লাহ পাকের কালাম মুখস্থ ভুল লেখার চেয়ে দেখে দেখে ঠিক লেখাটাই ভাল।


সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৫:৫০
৩৫টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×