চেনা বড় ভাইয়ের ঘটনা
এক বড় ভাইয়ের কাছ থেকে শোনা এই ঘটনা ১৯৮৩ সালের। তখন সম্ভবত গবর্নমেন্ট হাই স্কুল এ প্রথম ইসলামিয়াত এর পাশাপাশি আরবি আলাদা ১০০ নম্বরের সাবজেক্ট (ক্লাস সিক্স থেক এইট) এর সূচনা। পরবর্তিতে আমাদেরকেও এর যন্ত্রনা কম পোহাতে হয়নি। ওয়াজি উল্লাহ নামক একজন স্যার ছিলেন (স্যার ১৯৯২ সালে মারা যান)। তিনি হাফ ইয়ার্লি পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন এর পর খাতা দিতে লাগলেন। সবাইকে খাতা দেওয়ার পর ফার্স্ট বয় থেকে শুরু করে ক্রমান্বয়ে সবাই নম্বর পেল। কিছুক্ষন পর অবিশ্বাস্য একটা ঘটনা আবিষ্কার করা হল। অনেকটা এইবারের ওয়ার্ল্ডকাপে কেনিয়া চ্যাম্পিয়ান হলে যে অবস্থা সেরকম।রোল ৪৫ যার সে পেয়েছে ৯৮। কিভাবে এই ঘটনা ঘটল কে জানে। পরেরবারও এই অবস্থা। ঐ ছেলে আরবি তে পেল ৯৮। ভাইয়ারা যখন ক্লাস সিক্স-এ পর এটা তখনকার ঘটনা।
ক্লাস সেভেন এ উঠে সবাই তখন ওই ছেলেকে জেরা করল। কিরে কাহিনি কি? সবগুলাতে টাইনা টুইনা পাস আরবিতে ৯৮। নিদারুন গুপ্ত ঘটনা জানা গেল। এই ছেলে যেগুলা পারে সেগুলাই ২ বার করে লেখে। আরবি কবিতাটাও দুইবার করে লেখে। সবাই তখন আলাদ্দিন এর প্রদীপ পেয়ে গেছে। পরের আরবি পরীক্ষায় এই ঘটনা সবার দাড়া ঘটানো হবে। পরের আরবি পরীক্ষায় সবাই এই কাজ করল। ওয়াজিউল্লাহ স্যার বাসায় গিয়ে খাতা এর নম্বর দেওয়ার সময় দেখেন সবাই ৮০ এর উপর পেয়ে বসে আছে। খেয়ালি স্বভাবের স্যার তাতে খুব বিচলিত হল না। তারপর স্যার নাকি তার মেয়েকে ডেকে বলল আমার সব ছাত্ররা ভাল করেছে।
পরের দিন খাতা দেওয়া হল। সবাই তো ভাল করেছে ভাল কথা। বাঙ্গালির একটা স্বভাব হল সব কিছুতে বাড়াবাড়ি করা। এইখানেও কমতি নাই। দুইজন যে পেয়েছে ১০০ এর উপরে। একজন ১১৯। আরেকজন ১১০। সবাই তো আর চুরিবিদ্যার যোগ্য না। ঐ দুইজনের তো অবস্থা খারাপ। কারন এই নম্বর স্যার হয়ত খেয়াল করেনায় কিন্তু সবাই জানলে তো তুলকালাম কান্ড ঘইটা যাবে। দুইজন স্যার এর কাছে গেল। স্যার তাদের এই অসামান্য প্রতিভা কিছুই বুঝলনা। দমাদম মাইর শুরু হইল। সরকারী স্কুল এর আরবি স্যারদের মাইর ভয়াবহ। বেশি লোভ এর ফল ওই দু’জন ভোগ করল। বাকি সবাই কিন্তু ৮০ এর উপর নম্বর।
আমার আরবি সাফল্য (১৯৯৭)
এই জিনিসটাতে যে আমি কত খারাপ তাহা আর বলিবার নয়। ভাষা শিখার জন্য কিছু পদ্ধতি আছে যেগুলা কোনোটাই যে আমাদের আরবিতে ছিল না। তার আগে একটা মজার ঘটনা বলি। ক্লাস ফাইভ এ যখন পড়ি তখন এক আরবি স্যার আমাকে ডেকে নিয়ে গেলেন (আমি সহ আরো ৩ জন) ক্লাস সেভেন এর ইসলামিয়াত খাতা রাইট দেওয়ার জন্য। স্যার এর ভাষ্যমতে রাইটগুলা তোরা দে উনি জায়গামত মার্কস বসিয়ে দিবেন। দিলাম রাইট। এরপর অবিশ্বাস্য ব্যাপার। স্যার বলেন নম্বর দিতে। আমিও দিলাম। ১০ এ কোনোটাতে ৫ কোনোটাতে ৭। স্যার দুই ঘা বেত ও লাগাইলেন কেন দুই একটাতে ৮ দিচ্ছিনা। কেউ বিশ্বাস করবেনা কিন্তু এটা ঘটেছিল। ১৯৯৫ সালে আমি ফাইভে পরতাম।
আরবি কবিতা মুখস্থ করতাম। ইন্না মাদ দুনিয়া ফানায়ুন , গাইড বইয়ে ছিল ইন্না মাদ দুনিয়া ফনোটঠন। তাও মুখস্থ এমন ই করসিলাম যে এখনও মনে আছে। ইন্না মাদ দুনিয়া ফানায়ুন, লাইসা লিদ্দুনিয়া ছুভহুতুন, ইন্না মাদ দুনিয়া কাবাইতিন, নাসাজাথু আন কাবাইতু। কিন্তু আরবি বানান তো আর পারতাম না। ব্যাকরন কিছুই জানতাম না। কানাডাতে পি এইচ ডি করছে আমার এক বন্ধু সিয়াম। সে আবার আরবি মানেই ৯৮। কিন্তু বাদ বাকি অনেকের অবস্থাই কেরোসিন। তবে আমাদের সবার মধ্যে একটা বদ্ধমুল ধারনা ছিল আরবি পরীক্ষায় নকল করা যায়েজ আছে। তবে নকল করার মত মানসিক দৃঢ়তা আমার কখনি ছিল না, সাহস ছিল না। ক্লাস সেভেন এ যেখানে বসলাম আমার সামনে বসল এক ফ্রেন্ড। সে এখন আমেরিকা তে। ডাক্তার হয়েছে। সে আরবি কবিতা সুন্দর মত ছোটো সাইজে বানিয়ে নিয়ে আসল। সেটা দেখে দেখে লিখল। নীতিবাক্য লিখল। যেহেতু গভ ল্যাব এর পোলাপাইন রা হেলপফুল হিসেবে পরিচিত এই মর্যাদা রক্ষায় সে আমাকে তার খাতা দেখাল। আমিও লিখলাম। খাতা দেওয়ার সময় বড়ই আচানক কারবার। যে নকল করসে তারটা সব ঠিক হওয়ার কথা সে পাইসে ৫২। আমি ওর খাতা দেখে লিখেছি আমি পাইসি ৭৯।
কেন জানি এইসব ঘটনা এখন আর আমাকে আলোড়িত করেনা। আমার বর্ননা শুনে আমার ফ্রেন্ড দের খুব খারাপ কিছু মনে করবেননা। জিআরই পরীক্ষা পুরাটা ভিডিও করা হয়। এইখানে নকলের চান্স নাই। এই টাতে সবার সাফল্য খুবই ভাল। নাইলে বাইরের দেশের লোভনীয় ভার্সিটি গুলাতে তো আর পিএইচডি করতে নেয় না। আর আরবি পরীক্ষায় তো নকল করা যায়েজ আছে। আল্লাহ পাকের কালাম মুখস্থ ভুল লেখার চেয়ে দেখে দেখে ঠিক লেখাটাই ভাল।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৫:৫০