(খলিল সিরিজ ৮,৯ এবং ১০ মিলে একটা গল্প। ট্রাইলজি। খলিল আইডেন্টিটি, খলিল সুপ্রিমেসি, খলিল আল্টিমেটাম।)
তার নাম বারেক। তিনি এখন বেশ চিন্তিত। মিটিং শুরু হয়ে যাওয়ার কথা কিছুক্ষনের মধ্যেই। কিন্তু আর্মি ইন্টালেজেন্স এর প্রধান ব্র্যাড আসতে একটু দেরি করছে। ব্র্যাড চলে আসল।
ব্র্যাডঃ স্যার আমি দুঃখিত। একটু বাথরুম এ গিয়েছিলাম।
বারেকঃ এটা কোনো অজুহাত হতে পারেনা। ইউরিন সিস্টেম পজ্ করে রাখা উচিত ছিল।
ব্র্যাডঃ স্যার আমারটা ইন্সটল করার সময় জানি কি সমস্যা হইছিল তাই ছোটো বাথরুম টা পজ্ দেওয়া যায়না। এর আগে একবার পজ্ দিয়েছিলাম তারপর গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বের হয়ে গেল।
বারেকঃ বল কি!!
ব্র্যাডঃ জ্বি স্যার। এই ২৮০০ সালের পৃথিবীতে থেকেও আমাকে বাথরুম চাপলেই বাথরুম এ যাইতে হয় চিন্তা করেন অবস্থা। সবাই যেখানে বাথরুম চাপলেই পজ্ দিয়ে রাখেন যখন খুশি রিসাইকেল বিন ক্লিয়ার করে।
বারেকঃ যাই হোক। বাজে কথা বাদ দাও। পৃথিবীর কথা বল।
ব্র্যাডঃ অবস্থা ভাল না স্যার। অবস্থা খুবি খারাপ। পুরুষ হয়ে জন্মানোর অপরাধ হারে হারে টের পাইতেসি। এভাবে চলতে থাকলে খুব বেশিদিন নাই এই পৃথিবী পুরুষশূন্য হয়ে যাবে।
বারেকঃ এলিহাস এখন কোথায়? কেউ জানে?
ব্র্যাডঃ জ্বি না স্যার। তবে তার অবস্থা এখন এতই শক্তিশালী যে তার হদিস পাওয়া গেলেও কতদুর কি করা যাবে বলতে পারছিনা। পুরা নিউক্লিয়ার শক্তির অর্ধেকটাই তার দখলে। সব থেকে বড় সমস্যা স্যার পুরুষ রা তো আর নতুন প্রজাতি জন্ম দিতে পারেনা কিন্তু নারীরা সেটা পারে। তাই পৃথিবীতে নারীর সংখ্যাই বেশি।
বারেকঃ ব্র্যাড পৃথিবীর সব নারীই কি পুরুষ বিদ্বেষী?
ব্র্যাডঃ এলিহাস সবাইকে তার দলে ভিড়াচ্ছে। অতি পাপিষ্ঠা নারী। দু-চার জন আমাদের অনুগত আছে কিন্তু কতদূর কি করা যাবে বুঝা যাচ্ছেনা। স্যার আমরা পুরুষরা ক্রমেই কোনঠাসা হয়ে যাচ্ছি। নতুন সব প্রযুক্তি এখন মেয়েদের হাতে। শুনলাম লেজার টাইম মেশিন টাও তারা বানিয়ে ফেলবে।
বারেকঃ ব্রাড আমার মাথায় একটা বুদ্ধি আছে। আপাতত এটা ছাড়া আমি আর কিছু পাচ্ছিনা। আমি বিংশ শতাব্দীর একজন কে লেজার টাইম মেশিন দিয়ে নিয়ে আসব। তার নাম শাহরুখ খান।
ব্র্যাডঃ এর কথা আমি জানি স্যার। ৯০ ডিগ্রী অক্ষাংশে থাকত সে। মেয়েরা তাকে দেখা মাত্র আবেগ এর বশীবর্তি হয়ে যেত। এমন ও আছে তার পশ্চাত দেশ থেকে বায়ু বের হলে যেটাকে পাধ বলা হয় মেয়েরা এটার প্রেম এও পরে যেত।
বারেকঃ তাকে আনার ব্যাবস্থা কর। নর-নারীর সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা ছাড়া পৃথিবীতে আর আমাদের অবস্থা টিকিয়ে রাখা সম্ভব না। কৃত্রিম স্পার্ম আবিষ্কার যে কত বড় ভুল ছিল সেটা হারে হারে টের পাওয়া যাচ্ছে। তাকে আনার সব ব্যাবস্থা কর। লেজার টাইম মেশিন দিয়ে আনো। নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত সবাইকে প্রস্তুত থাকতে বল। আর ব্র্যাড তুমি যখন জান যে তোমার ইউরিন সিস্টেম পজ্ হয়না তাহলে সেটা মনে রাখা উচিত ছিল। তোমার কাপড় ভিজে গেছে।
ব্র্যাডঃ দু;খিত স্যার একদম ভুলে যাই।
আমরা বন্ধুরা খলিল সহ শপিং করছি। রাতেই আমাদের ট্রেন। কক্সবাজার যাচ্ছি। কক্সবাজার যাওয়ার প্রধান শর্ত হাফ-প্যান্ট কিনতে আসছি। সবাই হাফ প্যান্ট কিনায় ব্যাস্ত হটাত দুরে একটা বড়ই লাবন্যময়ী চেহারার মেয়ে দেখলাম। কিযে ভাল লাগল। খলিল এর হাতে ক্যামেরা। কোনোভাবে যদি মেয়েটার ছবি তোলা যেত বড় ভাল হত। খলিল-কে বললাম খলিল পারলে মেয়েটার ছবি তোল। খলিল বলল, কোন মেয়েটা? আমি দেখালাম। খলিল গাধা কোথায় লুকায় মেয়েটার ছবি তুলবে তা না। গাধা মেয়েটাকে ডাক দিল এই যে আপু শুন। কি অবাক মেয়েটাও আসল। খলিল মেয়েটার কাছে ক্যামেরা দিয়ে বলল আমার আর আমার বন্ধুর ছবি তোল। আরি কি আজব। মেয়েটা ছবি তুলে চলে গেল। মেয়েটাকে কি আমাদের ছবি তুলতে ডাক দিলাম নাকি আজব।
একটূ পরে দুপুরে খেতে গিয়েও আবার মেয়েটাকে দেখলাম। বড়ই সৌন্দর্য। মেয়েটা দেখি খলিল এর দিকে তাকায় আসে কি আজব! খলিলের ইদানিং কেমন একটা পরিবর্তন আসছে। সুন্দর মেয়ে দেখলেও বিরক্ত হয় না। বড়ই অবাক করার মত ব্যাপার। মেয়েটা আসল, কিছুক্ষন গল্প করল এবং চলে গেল। পুরাটা সময় মেয়েটা খলিল ছাড়া আর কাউকেই পাত্তা দিলনা। এই প্রথমবারের মত মনে হইল কেন খলিল হইলাম না।
রাতের বেলায় চিটাগাং যাওয়ার ট্রেন এ আমরা সবাই উঠে বসে আছি খলিলের কোনো সাড়া শব্দ নাই। মানে খলিল এখনো পৌছায় নায়। আমরা অপেক্ষা করছি করছি খলিলের জন্য। হটাত একটা অবাক করা ব্যাপার ঘটল। ঠিক এরকম একটা দৃশ্য দিলওয়ালে দুলহানাইয়া সিনেমায় দেখেছিলাম। কিন্ত ব্যাপারটা ঘটল পুরা উলটা। খলিল দৌড়ায় দৌড়ায় আসছে কারন ট্রেন প্রায় ছেড়ে দিচ্ছে। আমরা হাত বাড়িয়ে আছি। কোথেকে ওই লাবন্যময়ী চেহারার মেয়ে আগের কম্পার্টমেন্ট থেকে হাত বাড়ালো। খলিল কে ট্রেন এ তুলে নিল। আমরা আর দৌড়ায় কই কম্পার্টমেন্ট এ গেলাম কিন্তু খলিল কে আর পেলাম না। সে বড় আজব ব্যাপার।
খলিল এর ধারনা সে এখন স্বপ্নের জগতে আছে। লাক্স এর এড এর মেয়েদের মত সে এখন বাথটাব এ শুয়ে আছে। তার আশে পাশে সুন্দর সুন্দর মেয়েরা বাথটাবে গোলাপের পানি ধেলে দিচ্ছে। খলিল এক মেয়েকে বলল এটা কই? কিন্তু কেউ তার কোনো কথার জবাব দিচ্ছে না। তবে তার খাতির যত্ন সেরকম হচ্ছে। তাকে খেতে দেওয়া হচ্ছে একটা আস্ত খাসির ঠ্যাং। খলিল অবশ্য স্বপ্নেই সব কিছু অনুভব করতে পারছে। খলিল এর খাসির ঠ্যাং খাওয়া শেষ হওয়ার পর তাকে ৪ জন মেয়ে এসকর্ট করে কই জানি নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। খলিল খুবি খুশি , মনে মনে আহা আহা করতে লাগল। নিশ্চই কোনো বড় ব্যাপার এবং অবশ্যই সেরকম কোনো ব্যাপার।খলিল কে মেয়েগুলা কোথায় জানি শুইতে বলল। খলিল তো মহাখুশি। খলিল এর ধারনা এখন স্বর্গীয় কোনো ব্যাপার স্যাপার হবে। হটাত একটা মেয়ে কোথেকে বড় তলোয়ার এর মত কি জানি একটা নিয়ে আসল। তলোয়ার দিতে আবার বাতি বের হয়। ঠিক তখনি খলিলের মস্তিস্কে কে জানি কথা বলা শুরু করল। তারপর একটা উড়ন্ত মোটর সাইকেল এ করে কে জানি এসে খলিল কে মটর সাইকেল এ তুলে নিল। দূরে কোথাউ নিয়ে থামল। খলিল চেচামেচি সুরু করল। কান্নাকাটি করে বলতে লাগল স্বপ্নেও কেউ আমাকে শান্তি মত থাকতে দেয় না। যে মটর সাইকেল এ করে তাকে উদ্ধার করল সে একটা বিরাট ঝারি মারল। খলিল তুমি এখন স্বপ্নে না ২৮০০ সালের পৃথিবীতে আছ। তোমাকে লেজার টাইম মেশিন দিয়ে আনা হইসে!! খলিল বেশ অবাক হইল। তাইত বলি এমন এমন লাগে ক্যান। কিন্তু আমি তো ভালই ছিলাম। লোকটা বলল , তুমি কেমন ছিলা সেটা আমি বলব না। সেটা বলার জন্য কেউ একজন আসছে। খলিল তাকায় দেখল বেশ জমকাল একজন লোক আর তার সাথে সাধারন পোশাক পরে আরেকজন আসছে। খলিল জমকালো পোশাকের লোকটা কে দেখে বলল, মহামান্য গ্রূটাস। আপনাকে স্বাগতম। আমি মহামান্য গ্রূটাস নই। আমি ব্র্যাড। আর শুনেন,
২৮০০ এর পৃথিবী জাফর ইকবালের উপন্যাসের মত না। তার থেকেও খারাপ। উনার নাম বারেক। উনার সাথে কথা বলেন। বারেক বলল, মাইকেলসন আর মর্লি মিলে যে প্রমান করেছে ইথার বলে কিছু নাই সেটাকে আবার ভুল প্রমান করা হয়েছে। ইথার আছে তাই আমরা সবাই এক ভাষায় কথা বলছি। খলিল তোমার এই পৃথিবীতে আসার কথা না। তোমাকে আলিহাস এর মেয়েরা নিয়ে এসেছে। খলিল বলল, নিয়ে আসছে তো ভাল করসে। সুখে শান্তিতে ছিলাম। আরামসে ছিলাম। বারেক বলল, ঐ আরাম একটু পরেই শেস হয়ে জেত। এলিহাস কোনো পুরুশ মানুশ ই দেখতে পারেনা। তবে হা কয়েকটা গাধা মানব কে সে তার চাকর বাকর হিসেবে রাখে। তোমাকে আনার প্রধান কারন হচ্ছে এন্টি শাহরুখ বানান। আমরা শাহরুখ কে এনেছিলাম। কারন পৃথিবীর এখন যা অবস্থা তাতে নর-নারীর মধ্যে প্রেম ভালবাসা ফিরায় না আনলে এই পৃথিবী আর টিকবেনা। ৮০০ বছর পর তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছে কিন্তু এখান কোনো দেশের ব্যাপার নাই। নর বনাম নারী। এলিহাস চায় না পৃথিবীতে কোনো নর থাকুক। শাহরুখ কে আনা হয়েছিল যাতে সে প্রেম প্রতিষ্টা করতে পারে কিন্তু তোমাকে আনার কারনে আর সেটাও হচ্ছে না। কারন এলিহাস মনে করে তুমি মেয়েদের আশে পাশে ঘুরলে মেয়েদের মনে হবে প্রেম ভালবাসার দরকার নাই। খলিল বলল যত্তসব বাজে কথা। আমি মানিনা এইগুলা। কই শাহরুখ কই? বারেক বলল, শাহরুখ আছে সে বেহালা বাজাচ্ছে। তাকে রাজ আরিয়ান নামে না ডাকলে সে শুনবেনা।তার মাথাটা ঐভাবে স্ক্যান করা। ঠিক তখন একটা অঘটন ঘটল। কথেকে এক গাদা মেয়ে অস্ত্র সস্ত্র হাতে হাজির হল। তারপর সাবিনা ইয়াসমিন এর মত দেখতে এক মহিলা স্লো মোশনে হাট-টে হাট-তে আসল। বারেক কে দেখে বলঅল, বারেক, তোমাদের আর খুব বেশিদিন নাই দুনিয়াতে। পুরা পৃথিবীর সব কিছু আমরা দখল করে নিয়েছি। তোমাদের বন্দী করে নিয়ে যাব। এই হাদারম খলিল আর অই গাধারাম রাজ ঐটাকেও নিয়ে যাব। সবাই আপাতত বন্দী। খলিল কে যেই লোকটা উড়ন্ত মটর সাইকেল এ নিয়ে আসছিল সে কিছু একটা করার চেস্টা করল কিন্তু তাকে কি একটা অস্ত্র দিয়ে ফ্রিজ করে দেওয়া হইল। খলিল, রাজ, বারেক আর ব্র্যাড সবাইকে বন্দী করা হইল সুধু তারা না। ২৮০০ সালের জীবিত সব পুরুশ মানুস এখন নারীদের হাতে বন্দী। ঠিক এমন অবস্থায় খলিল সিরিজ-৮ শেষ হল। ( টূ বি কন্টিনিউড)
আগের গুলার লিঙ্ক
খলিল ও তার গার্লফ্রেন্ড উইশ (খলিল সিরিজ- ১)
খলিল ও তার ম্যাজিক আপেল (খলিল সিরিজ-২)
খলিল ও তার লিমা দেব (খলিল সিরিজ-৩)
খলিল গেল ভিকারুন্নেসা নুন স্কুল ও কলেজ (খলিল সিরিজ-৫)
খলিলের হইতে হইতেও হইলনা (খলিল সিরিজ-৬)
খলিল ও লাক্স চ্যানেল আই সুপার স্টার (খলিল সিরিজ -৭)
All characters including Khalil appearing in this work are fictitious. Any resemblance to real persons or Khalil, living or dead, is purely coincidental.
খলিল সিরিজ এর আগে ভাল লেগে থাকলে ফেসবুকে খলিল সিরিজের ফ্যান পেজ এ একটা লাইক দিয়েন
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০১০ রাত ১১:৫৩