এমনকি পর্তুগালের এমন ক’জন নন্দিত তারকা আছেন, যাদের জন্ম ব্রাজিলেই। তাদের ধমনীতে সাম্বার তরঙ্গ। যেমন ডেকো, পেপে, লিডসন। সুতরাং কাল একটা অসাধারণ সাম্বা নাচ হতেই পারে। সেটা হবে সাম্বা সংস্কৃতিজাত রাজপুত্তুরদের অনন্য মিলনমেলা। সাম্বা নৃত্য পর্তুগালেও ভীষণ জনপ্রিয়।
ব্রাজিল ও পর্তুগাল উভয়ের ভাষা পর্তুগিজ। শুধু সেকারণে কিনা জানি না। তবে আগামী ১১ই জুলাইয়ের ফাইনাল ম্যাচটি ছাড়া আর যে ম্যাচটিতে ফিফার টিকিট বিক্রি সর্বোচ্চ, সেটির আসর কিন' বসছে কাল। স্টেডিয়াম সেজেছে নয়নাভিরাম সাজে। দক্ষিণ আফ্রিকার কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক মহাসচিব মোজেজ মাভিদার নামানুসারে নির্মিত এই স্টেডিয়ামের পিচ যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য ব্রাজিলের অনুরোধ নাকচ করেছে ফিফা। তারা বলেছে, শুক্রবারের খেলার আগে ব্রাজিল বা পর্তুগাল কাউকে খেলতে দেয়া হবে না। জোহানেসবার্গের কলেজ মাঠে মঙ্গলবার প্রশিক্ষণে অংশ নেন ব্রাজিলীয়রা। তবে একজন বাদে। ২২ জনের মধ্যে কাকাও ছিলেন। ছিলেন না শুধু এলানো। তিনি দারুণ ব্যথা পেয়েছেন। সম্ভবত তাকে কাল নাও দেখা যেতে পারে। দুঙ্গা যথারীতি ব্রাজিলের সাংবাদিকের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে আছেন। কাকার স'ান তিনি কাকে দিয়ে পূরণ করবেন তা স্পষ্ট করেননি। মিডিয়ার কৌতূহল প্রচণ্ড। তিনি নীরব। ব্যাপতিস-া, আলভেস, র্যামিরেস কিংবা রবিনহো- যে কাউকে দেখা যেতে পারে কাকার স'ানে। দুঙ্গা বলেন, কাকার স'ানে কে থাকবে তা এখনও ঠিক করিনি। তবে কালকের খেলার মূল আকর্ষণ হতে পারতো দুই বন্ধু কাকা ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। দু’জন হরিহর আত্মা। এছাড়াও শুক্রবারের খেলায় বিশ্বের সবচেয়ে দামি তারকা খেলোয়াড়দেরও একটি সমন্বয় ঘটতে যাচ্ছে। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, প্রথম রাউন্ডের খেলার সবচেয়ে তুখোড় ও আকর্ষণীয় খেলাটি উপভোগের জন্য ফুটবল বিশ্ব অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করবে। মানচেস্টার ইউনাইটেড ছেড়ে বার্নাব্যুতে যোগ দিয়েছেন রোনালদো। রেটটা হলো মাত্র ৮০ মিলিয়ন পাউন্ড। কাকা ৫৬ মিলিয়ন পাউন্ড নিয়ে যোগ দিয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদে। লাল কার্ড নিয়ে রোনালদো-কাকা কথা হয়েছিল সেল ফোনে। কিন' রোনালদো গতকাল মুখ খুলেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি কাকা এমন কিছুই করেনি, যাতে তাকে লাল কার্ড দেখতে হয়েছে। আর সেকারণে তিনি আমাদের বিরুদ্ধে খেলতে পারছেন না। ‘আমি খেলাটি দেখেছিলাম। কাকার লাল কার্ড প্রাপ্য ছিল না। তিনি ওইসময় রাগান্বিত ছিলেন। কিন' খেলা শেষে তিনি শান- হয়েছেন। মেনে নিয়েছেন এটাও খেলার অংশ।’
তবে প্রথম রাউন্ডে শুক্রবারের খেলাটাকেই বলা যাবে বাঘে-মহিষে। এ পর্যন- মেসি জাদুতে যে কোরিয়া উড়ে গেছে তাদের র্যাঙ্কিং অনেক নিচে। তাদের র্যাঙ্কিং ব্রাজিল ১ আর পর্তুগাল ৩। আইভরি কোস্টকে ব্রাজিলের তিনটা গোল দিল। কিংবা আগন'ক উত্তর কোরিয়াকে পর্তুগাল গোলের সুনামিতে ভাসিয়ে দিল। কাল শুক্রবার এমন কোন সম্ভাব্য দৃশ্য হওয়ার নয়। কাকার মন-ব্য হলো- ব্রাজিলের সামনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। আমার দুর্ভাগ্য আমি এমন একটি ম্যাচ খেলতে পারছি না। তবে ওকে। আমরা একটি ড্র করলেও তা আমাদের শীর্ষে পৌঁছে দেবে। তবে একটি জয় আমাদের আস'ার জন্য উত্তম।’ পর্তুগালের তরফেও কিন' সরাসরি কোন আশাবাদ নেই। কূটনৈতিক উত্তর দেন পর্তুগালের কোচ কার্লোস কুইরোজ। তিনি বলেন, ২০০৮ সালে এক মৈত্রী ম্যাচে পর্তুগাল ব্রাজিলের কাছে ৬-২ গোলে হেরেছিল। ফ্যাবিয়ানো করেছিল হ্যাটট্রিক। আর ১৯৫৫ সালের বিশ্বকাপে ছয় গোলে পরাজয়ের গ্লানিটা তো রয়েই গেছে। পুরনো ক্ষত। পর্ব এলেই ব্যথাটা টনটন করে। ব্রাজিল ও পর্তুগাল এপর্যন- ১৮ বার মুখোমুখি হয়েছে। এরমধ্যে ব্রাজিল জয় পেয়েছে ১২ বার। পর্তুগাল জয়ী হয়েছে চারবার। আর ড্র হয়েছে দুবার। পর্তুগালের কোচ কার্লোস মনে করেন, তার দলে এবার রোনালদো আছে। ভাবটা যেন মারাদোনার মেসি আছে। তার আছে রোনালদো। সুতরাং তার জিত চাই। মোজাম্বিকের বংশোদ্ভূত কোচ কার্লোস বলেন, পর্তুগাল এবার শোধ নেবে। তবে তিনি এও বলেন, ব্রাজিলের বিরুদ্ধে ম্যাচ সবসময়ই টাফ। তবে তার পেশাদারি উচ্চারণটাও বেশ। এই দু’দল মিলে শুক্রবার বিশ্বকে একটি সুন্দর ফুটবল উপহার দিতে পারে। তিনি রসিকতাও ছাড়েন না। আমরা আশা করি, দুই দল শুক্রবারে শুধু খেলার দিকেই মনোযোগী হবো। ভুভুজেলার দিকে নয়!
লেখাটা মানবজমিন থেকে কপি পেস্ট : লিঙ্ক : এখানে
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুন, ২০১০ দুপুর ২:৩৪