somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভূত খেকো মজিদ আর আমার অন্তহীন এগিয়ে যাওয়া (একটা ভৌতিক পোস্ট)

২৮ শে জুলাই, ২০১১ দুপুর ১২:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সকাল সকাল মজিদ ভাইকে দেখে অবাক হলাম। সাধারণত উনি ঘুম থেকে অনেক দেরী করে উঠে। আমাকে দেখেই ডাক দিলো। তোমার জন্যই এতো সকাল সকাল বাজারে আসলাম। জিজ্ঞেস করলাম কি ব্যাপার। বললো কালকে তুমি যে ঘটনাটা ঘটাইছো। বলেই দাঁত বের করে হাসলো। কিছুটা দৃষ্টিকটু তার দাঁতের দিকে আমার নজর পরলো দেখলাম দাঁত থেকে রক্ত বের হচ্ছে। মজিদ ভাই বলতেছে ভাবতাছি আজকে তোমাকে জোঁকা বিলে মাছ ধরতে না নিয়ে গেলে তুমি একাই চলে যাও কিনা।কথার মাঝ খানে ওয়াক থু। থুথুর সাথে কিছুটা রক্তও বের হয়েছে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। তুমি রেডি থাইকো আমি রাইত দশটার দিকে তোমারে আইসা নিয়া যাবো। না না এক কাজ কইরো ব্রীজের কাছে চইলা যাইয়ো। আমার ভিতরে উদ্বেগ, কৌতুহল, উৎকন্ঠা সবই এসে ভীড় করলো।

জোঁকা বিল অদ্ভুধ এক নাম। শুনেছি সেখানে জোঁকের প্রচন্ড প্রকোপ বলে এর নাম জোঁকা বিল দেওয়া হয়েছে। আমি অবশ্যই অনেকবার জোঁকা বিলের পাশ দিয়ে গিয়েছি দিনের বেলা। কিন্তু কখনও বিলটা ঘুরে দেখা হয় নাই। অবশ্যই রাস্তা থেকে খানিকটা দূরেই এ বিলের মূল অংশটুকু। দূর থেকে বিলের মাঝখানে একটা হিজল গাছ দেখা যায়। পাতা আসেনা গাছটায়। কভে কখন এই গাছটায় কেউ পাতা দেখেছে কেউ মনে করতে পারেনা। দূর থেকে গাছটাকে কঙ্কালসার মনে হয়।

দশটা বাজার দশ মিনিট আগেই বাজারের রাস্তাটা যেখানে শেষ হয়েছে সেখানে এসে দাঁড়িয়ে আছি। ঘড়ির কাটা সাড়ে দশটায় চলে গেলো মজিদ ভাইয়ের কোন খোঁজ নেই। হাটতে হাটতে ব্রীজটার কাছে চলে গেলাম। এটা পূর্ণিমাও না আবার অমাবস্যাও না। আকাশে চাঁদ নেই কিন্তু মিটিমিটি তারার আলোতে ব্রীজটা বড় অদ্ভুদই লাগছে। শো শো শব্দ করে ব্রীজের নিচ দিয়ে পানি যাচ্ছে। গতকালকের ব্যাপারটা মনে পড়ছে। লক্ষ্য করলাম মাঝে মাঝেই ব্রীজটা যেনো একটু করে কেঁপে উঠছে। আমি ব্রীজ থেকে নামতে যাবো এমন সময়........... মজিদ ভাইয়ের ডাক শুনতে পেলাম। আরে মিয়া তুমি দেহি বিরাট কামেল মানুষ বলেই মজিদ ভাই হেসে উঠলো। আমি উনার মুখে টর্চ মারলাম। দেখি উনার দাঁত থেকে রক্ত বের হচ্ছে। আমি মজিদ ভাইয়ের প্রতি চরম বিরক্তি প্রকাশ করলাম। উনি বার বার দুঃখ প্রকাশ করতে লাগলো। বললো তোমার ভাবীতো আজকে ছাড়তেই চাচ্ছিলোনা। কিছুটা কি লজ্জা! না আতঙ্ক! মনের মাঝে জেগে উঠলো বুঝলাম না। উনার পিছনে পিছনে জোঁকা বিলের দিকে যাওয়া শুরু করলাম...........

চারদিকে সুনসান নিরবতা। দূর আকাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দুএকটি তারা আমাদের সঙ্গী হয়ে জেগে আছে। বড় বড় রেন্টি, কড়ই গাছের ফাঁক দিয়ে সেই তারার আলো একটা মায়াময় আবহ তৈরী করেছে। কি অদ্ভুধ! সেই আলো-আধাঁরির খেলা। হি-সসসস করে শব্দ করে উঠলো সাপ পাশের ঝোপটায়। মজিদ ভাই ইশারা করলো বামের রাস্তা দিয়ে নেমে যাওয়ার জন্য।

ভ্যাপসা গরম। সরু রাস্তার দুই দিকেই গাছপালা। দূর আকাশের মিটি মিটি তারার আলো সেই গাছপালা ভেদ করে এখানে পৌছাচ্ছেনা। মজিদ ভাইকে বললাম টর্চ জ্বালাতে বললে সে বললো চার্জ শেষ করার কি দরকার! আমার পিছনে পিছনে হাটঁ। আমি মজিদ ভাইয়ের পিছনে পিছনে হাঁটছি। খুব ভয় পাচ্ছি। যদি এই অন্ধকারে মজিদ ভাইকে খুঁজে না পাই। যদি পিছন থেকে কেউ আমাকে ঝাপটে ধরে।

ঘন থেকে আর ঘনও হচ্ছে চারদিকের গাছপালা। মজিদ ভাইকে আমি অনুরোধ করলাম নালবাতি জ্বালানোর জন্য। মজিদ ভাই কিছুটা রেগে উঠে নালবাতি জ্বালালো। নালবাতির আলোতে মজিদ ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম খুবই বিরক্ত হইছে। আমি কিছু না বলে চুপচাপ হেটেঁ চলছি তার পিছনে।

মজিদ ভাই ইশারা করে বললো চলে এসেছি মাছ ধরার সেই জায়গার কাছে। পানিতে কিছু একটা ঝাপিয়ে পড়ার শব্দ শোনা গেলো। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। মজিদ ভাই হোঁ হোঁ করে হেসে বললো, মিয়া এই সাহস ঐদিন ঐ জায়গায় গেছিলা?

অন্ধকার পেরিয়ে ঝোঁকা বিলের তীরে আমরা দাঁড়িয়ে। পানিতে একটা কম্পন দেখা যাচ্ছে। মজিদ ভাই একটা বিড়ি ধরাতে ধরাতে বললো ভোদঁর আমাদের আসার শব্দ পেয়ে এই জায়গায় লাফ দেওয়াতে এমন কম্পন সৃষ্টি হয়েছে।

দূর থেকে হিজল গাছটা দেখা যাচ্ছে। মজিদ ভাইয়ের নালবাতি দিয়ে আমার নালবাতিটাও ধরালাম। হাতে কোচঁটা নিয়ে মাছ ধরার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। মজিদ ভাই এক হাতে কোঁচটা ঠিক করতে করতে অন্য হাতে বিড়িটা পানির কম্পনের দিকে ছুঁড়ে মারলো। সামনের পানিটা মনে হয় কেঁপে উঠলো। অর্ধেক পচেঁ যাওয়া দুইটা গাছের পাতা সরে গেলো। মজিদ ভাই সতর্ক ভাবে পাতার উপর দিয়ে কোচঁ চালালো। গগনবিদারী আর্ত চিৎকারে কানে তালা লেগে যাওয়ার জোগাড়। মজিদ ভাই তার সর্বশক্তি দিয়ে কোচেঁর উপর ধরে রাখলো। পানির কম্পন বাড়ছে। সেই সাথে আর্ত চিৎকারও। আমি কম্পন বরাবর টর্চ মারলাম। উপস ভয়ংকর সেই দৃশ্য। একটা মেয়ের নাক পর্যন্ত ভেসে আছে। মেয়েটা দুহাত দিয়ে তার চুল টানছে। লক্ষ্য করলাম মেয়েটার চুল মজিদ ভাইয়ের কোঁচে প্যাচিয়ে গেছে। আমি মজিদ ভাইকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতেই কোচঁ সহ মেয়েটা পানি ডুবে গেলো। হতভম্ব মজিদ ভাইকে টানতে টানতে অন্ধকার সেই সরুপথ দিয়ে হাটাঁ শুরু করলাম।
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×